'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে...'
মালবিকা মিত্র
প্রাথমিক স্তরে অঙ্কের প্রশ্ন করেছি, একটি ঝুড়িতে ৫০০টি আম ছিল, তার মধ্যে ২০টি আম পচা। তাহলে ঝুড়িতে ভালো আম কটা রইল? সহজ গণিতের বুদ্ধিতে এর উত্তর মিলবে না। যদি ফলওয়ালার হিসেবে ধরেন, সে হিসেবও মিলবে না। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ঝুড়িতে চার-পাঁচটি পচা আম থাকলে ঝুড়ি সমেত আম ফেলে দিতে হয়। অঙ্ক বা ব্যবসার বুদ্ধিতে এর থই পাওয়া যায় না। অবশ্য, কিছু পচা আমের সঙ্গে থাকা বাকী সকল ভালো আম ফেলে দেওয়া আর কিছু পচা মানুষের সঙ্গে একই গণ্ডির ভিতরে থাকা বাকী সব ভালো মানুষদের ভাতে মারা তুল্যমূল্য কিনা সে প্রশ্ন তিনি তোলেননি। কারণ, জনগণ তো বিকাশবাবুদের গোটা ঝুড়িটাকেই ফেলে দিয়েছে।
ঝুড়িতে যে পচা আম ছিল সেটা বোঝা গেছে। নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে এটা প্রমাণিত। তার জন্য এসএসসি ও রাজ্য সরকার দায় এড়াতে পারে না। সেও মান্য। ফলে, তাদের মন্ত্রী ও কর্তাব্যক্তিরা গ্রেফতারও হয়েছেন। অনেককে সিবিআই হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। আবার অনেককেই জামিনে মুক্ত রাখা হয়েছে। মামলা এখনও বিচারাধীন। কিন্তু দুর্নীতি প্রক্রিয়ার সর্বনিম্ন স্তরে এক ধাক্কায় ২৫,৭৫২ জনের নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া হল যাদের অধিকাংশের সঙ্গেই দুর্নীতির কোনও নামগন্ধই ছিল না। বিচার হবে, কারা দোষী তা চিহ্নিত হবে, তাদের শাস্তি হবে-- এগুলোই তো আশা করেছিলাম। না সে সব কিছুই হয়নি। ঝুড়ির কিছু পচা আমের সঙ্গে বাকী সব ভালো আমকে বিসর্জন দেওয়ার মতোই ২০১৬ সালের সমগ্র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগকেই বাতিল করা হল। অথচ কোর্ট বলল, যোগ্য প্রার্থীদের মাইনে ফেরত দিতে হবে না এবং তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ, যোগ্য কারা কোর্ট জানে; এবং জানে বলেই তাঁদের আরেক দফা সুযোগও দিল চাকরি ফেরত পেতে। এ তো হাত ঘুরিয়ে নাক দেখানো! এই অযাচিত কসরত কেন?
অতএব, আমজনতার মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠল:
১) ২০২৪'এর নীট পরীক্ষায় হরিয়ানা, গুজরাত, বিহার ইত্যাদি রাজ্যের বহু কেন্দ্রে শোনা গেল প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ সম্পর্কিত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা দফতরের জানা ছিল। এমনকি পরীক্ষা পরিচালকমণ্ডলী (এনটিএ) সে কথা কবুল করেছে। তথাপি, সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা বাতিল করেনি বা কাউন্সেলিং বন্ধ রাখেনি। যুক্তি ছিল, কিছু অনিয়মের জন্য এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করা যায় না। সাধু সাধু! কী অসাধারণ পর্যবেক্ষণ। কিন্তু, ২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিল করবার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, গোটা প্রক্রিয়া বাতিলের মাপকাঠি হল sanctity of the process যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে এবং কোর্ট মনে করেছে এ ক্ষেত্রে সেটা হয়েছে। নীট ২০২৪'এর ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্ট মনে করেছিল যে sanctity of the process লঙ্ঘিত হয়েছে। দুটি মামলার ক্ষেত্রে কোর্টের মনে হওয়াটা একই। কিন্তু রায় পৃথক হল কেন?
২) মহারাষ্ট্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট শেষ হবার পর, এমনকি প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ঘোষণা হবার পরও দেখা গেল, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত হিসেবে ভোটের হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছিল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের পরেও। লোকসভা নির্বাচনের পরেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য ছিল, এই সুবিপুল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এটুকু সামান্য হিসেবের হেরফের বা ভ্রান্তি হতেই পারে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিব্রত করা উচিত হবে না;
৩) আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার নির্যাস হিসেবে এমনটা বলা হয়ে থাকে যে, দশজন দোষী ব্যক্তি যদি ছাড়াও পেয়ে যায়, একজনও নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কখনই সাজা না পায়। অথচ, ঝুড়িতে কিছু পচা আম পাওয়া গেছে এই অজুহাতে সেই মৌলিক নীতিকে অস্বীকার করেই ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করা হয়েছে। কেন?
৪) ২০১৭ সালে 'অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম' (এডিআর)'এর পক্ষ থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার শুনানি তখন স্থগিত রাখে। বলা হয়, আপাতত এটা চলতে থাকুক, পরে ভাবা যাবে। অতঃপর ২০১৯ সালে লোকসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শুরু করে, তারপর ঘোষণা করে ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক। অথচ, এই অসাংবিধানিক বন্ড নিয়েই ২০১৯'এ বিজেপি ৩০৩টি আসন জিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই অসাংবিধানিক সরকারটিকে কোনওভাবে শাস্তি দিতে পেরেছিল কী?
৫) একটি প্যানেল তৈরিতে বেশ বড়সড় আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এসএসসি'র কাছে পুরনো ওএমআর শিট না পাওয়া গেলেও নয়ডায় জনৈক বনশলের বাড়ি থেকে সিবিআই যে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছিল সেখানে ওএমআর শিটের মিরর কপি পাওয়া যায় এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় তা যথাযথ বলে কোর্টে জমাও করে। সেখানে দেখা যায়, ফাঁকা বা অসম্পূর্ণ ওএমআর শিট জমা পড়েছে, প্রার্থীর নামও আছে, ফলে কারা অভিযুক্ত তাও বোঝা যাচ্ছে। অতএব, অভিযুক্ত ৮ কি ৬ হাজারকে বাদ দিয়ে এই প্যানেলকে ত্রুটিমুক্ত করে বাকীদের নিয়োগের যাথার্থ্য দেখানোই যেত। এটাই তো তদন্তকারী সংস্থার কাজ ও বিচার-প্রত্যাশা। তার ওপর সেই প্যানেলের নিয়োগ কবেই হয়ে গেছে, তাঁরা ছ' বছরের বেশি চাকরিও করেছেন, এই সময়টায় এসে আম সুদ্ধু ঝুড়ি ফেলে দিয়ে কার বা কাদের সুবিধা করা হল? এই চাকুরিরতা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা পাঠদান, মূল্যায়ন, গৃহঋণ, চিকিৎসা ঋণ, বিবাহ, সন্তান, অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছুটা জীবন পার করে ফেলেছেন। এ কেমন ন্যায় যা নির্দোষের বাঁচার অধিকারকে হরণ করে?
৬) অতীতে সংঘটিত কোনও অন্যায় নিয়ে তদন্ত হতেই পারে। সেই তদন্তে যুক্ত অপরাধীর শাস্তিও হতে পারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এমন বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে যায় যেগুলোকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। অবশ্য যে বিচারে দ্বাদশ শতকের 'মন্দির' ফিরিয়ে আনা যায়, সেখানে সবই সম্ভব। যে ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হল, তাঁদের সাহচর্যে যে কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই ছয় সাড়ে ছয় বছরে পাঠ লাভ করল, সহযোগিতা পেল, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠিত হল, তার কী হবে? যদি গোড়ায় গলদ হয়, নিয়োগটিই অবৈধ হয়, তাহলে এদের দ্বারা যে মূল্যায়ন ও পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে তা কী করে বৈধ হয়? সেগুলোকে কি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব? বিগত ছয় বছরের প্রদত্ত শ্রমের সবটাই বেগার? বেগার শ্রম তো আইনত অপরাধ। এই শিক্ষকরা অনেকেই চলতি বছরে সদ্য সমাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষক। তাহলে এ বছর পরীক্ষার মূল্যায়ন সম্পন্ন হবে কীভাবে? যে সমস্ত স্কুলে পাঁচজন, ছয়জন, ন'জন করে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিল হল, সেই স্কুলগুলির পঠন-পাঠনের কী হবে? আসলে, আড়ালে থেকে কেউ কি একটা সামগ্রিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইল?
৭) আচ্ছা, এই যে দুর্নীতি ধরার সংস্থা সিবিআই/ ইডি/ আয়কর ইত্যাদি, এরা ছাড়াও এক নতুন সংস্থার কথা জানলাম; বিচারপতিদের বাড়িতে আগুন লাগলে দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে গিয়ে উদ্ধার করে আনে আগুনে আধ পোড়া কোটি কোটি টাকা। এখন ওই বিচারপতির কী হবে? কোনও শাস্তি হবে? যদি শাস্তি হয় তাহলে প্রশ্ন উঠবে, নিশ্চয়ই কোনও বিচারের রায়দান কেনাবেচার ফলেই এই উপার্জন, তাই না? সেই সমস্ত রায়গুলোকে কি পুনরায় বিচার করা হবে? যদি কোনও মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়ে থাকে তাহলে কী হবে? ন্যায়বিচার কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?
৮) যে বিচারপতি কালো গাউন গায়ে চাপিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রায় দিলেন, ক্যালেন্ডার'এর পাতা ওলটানোর আগেই গেরুয়া আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে সাংসদ হয়ে গেলেন। এক্কেবারে ব্রেখটের নাটকের দৃশ্য। জমিদার পুলিশের ডায়ালগ বলছে, আর পুলিশ জমিদারের ডায়লগ বলছে। এই বিচারপতির দেওয়া সমস্ত রায়কে নিরপেক্ষ বলা যায় কী? তাহলে কি সেগুলোর পুনরায় বিচার হবে?
৯) বামফ্রন্ট সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলাই রায় Judicial excess বা Judicial overreach সংক্রান্ত আলোচনায় হুগলি মহসিন কলেজে এক সেমিনারে বলেছিলেন, মাঝেমধ্যেই বিচারকরা কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো রায় দান করে থাকেন। হাওড়ার রেল স্টেশন গঙ্গা দূষণের একটি প্রধান উৎস। হাওড়ার জনস্বাস্থ্যের ওপর হাওড়া স্টেশনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এসবই সত্য হতে পারে। প্রত্যহ কোটি কোটি মানুষের মলমূত্র বর্জ্য খাবার-দাবারের প্যাকেট পাতা ঠোঙা ইত্যাদি সেখানে জমা হয়। কিন্তু তাই বলে বিচার বিভাগ বলতে পারে না হাওড়া স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হোক। অবশ্য, ইদানীং বিচারপতিদের এই ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। হয়তো কোনদিন তারা গঙ্গা দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের কারণে হাওড়া স্টেশন বন্ধ করতে বলবেন। বিচারপতি সহজেই বলে দিতে পারেন, রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল। তবে, এক হাজারের বেশি মানুষ থাকবে না, অস্ত্রশস্ত্র বহন করা যাবে না, এ কথাও বলে দেন। কারণ, জমায়েতের নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সংখ্যা হাজার ছাড়াল কিনা, অস্ত্র বহন করা হল কিনা, উত্তেজনা ছড়াল কিনা, এগুলো তো দেখার দায়িত্ব বিচারপতির নয়। এই দায়িত্বহীন ক্ষমতা কি এক বিপজ্জনক দিক নয়?
আমাদের নজর থাকবে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। আগ্রহ থাকবে ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জমায়েত ও সিদ্ধান্তে। নজর থাকবে সরকারের পদক্ষেপেও। আইনি কোনও সুযোগ আর আছে কিনা সে কৌতূহলও থাকবে। একজন সহ-নাগরিক হিসেবে এতগুলি পরিবারের অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশঙ্কিত। স্পষ্টতই এ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল সমূহ আহ্লাদিত; তারা ভাবছে কিছু মানুষের চাকরি গেলে যেটুকু ক্ষোভ অসন্তোষ হত, সমগ্র প্যানেল বাতিল হওয়ার ফলে অসন্তোষের আকার অনেক বাড়বে। কম্বলটা যত ভিজবে ততই ভারী হবে। সমাজ মাধ্যমে অসংখ্য পোস্ট দেখতে পাচ্ছি। আন্তরিকভাবে এতগুলি পরিবারের ভয়ঙ্কর দুরবস্থার কথা কেউ বলছেন না। খুব স্বাভাবিক, সরকার কোনও ভুল করলে, তদুপরি সেই ভুলের কারণে বিচার ব্যবস্থা বিরূপ হলে, বিরোধীরা ঝড় তুলবেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ক্ষমতালাভের তড়িঘড়ি বাসনায় অসহায় মানুষের লাশের ওপর দিয়ে সে ফায়দা তুলতে হবে, অথবা, গুজবের মধুভাণ্ড নিয়ে মাঠে নামতে হবে। প্রতিটি ঝড়েই 'অতি ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম'। কিন্তু শেষাবধি ঝুলি ফাঁকাই থেকে যায়, বেলা ফন্ট'এর সেই গানই সত্য হয়, 'There is a hole in the bucket.'।
চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কী ভাবছেন বা কোন পথে নিজেদের জীবন-জীবিকার লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, সহমর্মিতার দৃষ্টি নিয়ে সেদিক পানেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলাম।
“স্পষ্টতই এ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল সমূহ আহ্লাদিত; তারা ভাবছে কিছু মানুষের চাকরি গেলে যেটুকু ক্ষোভ অসন্তোষ হত, সমগ্র প্যানেল বাতিল হওয়ার ফলে অসন্তোষের আকার অনেক বাড়বে।” এই অংশের সঙ্গে একদমই একমত নই। কারণ কিছু অংশের চাকরি গিয়ে অধিকাংশের চাকরি বেঁচে যেত যে রায়ে, সেই হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় মেনে নিলে আজ এই দিন দেখতে হত না। আসলে নায্যদের চাকরি বজায় রেখে দাগীদের চাকরি গেলে এবং মাইনে ফেরৎ দিতে হলে গোটা রাজ্যে চাকরির নেটওয়ার্ক ব্যবসাটাই লাটে উঠত। ঘুষের টাকা ফেরৎ দিতে হত। ন্যায্যদের ঢাল করে দাগীদের বাঁচাতে রাজ্য সরকার কেন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল তার জবাব আগে দিক।
ReplyDeleteকোনোরকম টেন্ডার ছাড়া ভুঁইফোড় সংস্থাকে ওএমআর শিটের দায়িত্ব দেওয়া, পাতি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সংস্থাকে দিতে ওএমআর স্ক্যান করানো, তাও আবার স্ক্যান্ড পিডিএফ না হয়ে এডিটেব্ল ফরম্যাটে ফাইল করা, সেই ফাইলের সঙ্গে এসএসসি’র হার্ড ডিস্কে সংরক্ষিত মার্কস ফয়েল না মেলা, তিনবার তিন রকম দাগীদের তালিকা পেশ করা, সর্বোপরি ‘এর বাইরে আর দাগী নেই’ এই মর্মে হলফনামা পেশ না করা, শুনানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর খামবন্দি হিসেব দাখিল করার বালখিল্য আচরণ— কোথাও কি মনে হয় রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা ছিল নায্যদের বাঁচানোর? এই অভিযোগটা না তুলে গোলগাল কথা বলে কী লাভ?
অসন্তোষের ব্যাপকতা যেকোনো গণতন্ত্রেই বিরোধী দলের পুঁজি। শাসকদলের ক্ষমতাসীন নেতামন্ত্রী হব, আবার বিরোধীদের অসন্তোষের রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে সমঝে নিতে পারব না– এমন যদি দাবি হয় তাহলে শাসকের দণ্ড হাতে রেখে লাভ কি?
নিট ২০২৪ সংক্রান্ত বক্তব্যের সঙ্গেও একমত নই। কারণ:
১. নিট’২০২৪ মামলায় পাটনা ও হাজারিবাগের পুলিশ যে ১৩ জনকে অ্যারেস্ট করেছিল তারা সাধারণ অপরাধী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বা তার বশংবদ আমলারা নন।
২. প্রশ্নফাঁস বাদে অভিযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও কোনও সেন্টারে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়েছে, ওএমআরে নম্বর বাড়ানো হয়েছে এবং যাচ্ছেতাই ভাবে গ্ৰেস দেওয়া হয়েছে যার সংখ্যাটা সারা দেশের নিরিখে মাত্র ১৬০০। এদিকে ২০১৬ এসএসসি পরীক্ষায় ১৭ রকমের কারচুপি ধরা পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এবং কারচুপির মোট সংখ্যাটা এতদিনে সবাই জেনে গিয়েছে।
৩. সুপ্রিম কোর্ট ‘systemic breach’ হওয়ার সম্ভাবনার কথা নিট’২০২৪ প্রেক্ষিতে বলেছিল। অন্যদিকে ২০১৬ এসএসসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং তাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টার দিকে সরাসরি আঙুল তোলা হয়েছে। এই লজ্জা প্রশাসনের। অন্যদিকে এই প্রশাসনের হয়ে কুযুক্তি সাজানোটা নাগরিক সমাজের লজ্জা।
৪. নিট’২০২৪ প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল ‘there is no evidence of widespread malpractices’, অন্যদিকে আমাদের রাজ্যে হয়তো একটা ব্লকও বাদ নেই যেখানে স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতারা তাদের নেটওয়ার্ককে এই কাজে লাগায়নি এবং সেখানকার কোনও দাগী চাকরীপ্রার্থী তার সুফল ভোগ করেনি।
আর ভোটের সময়ে ভুয়ো ভোটার বা অন্যান্য নান কারচুপি যত কম আলোচনায় আনা যায় তত ভালো। এই ব্যাপারে আমরা যারা ভোট করাতে যাই তাদের সাথে তর্ক একদম নয়, কেমন।
এ বাদে অপ্রসাঙ্গিক whataboutery নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কারণ এই লেখার দুর্বলতা প্রকাশে তা self-explanatory।
কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায় -
Deleteকত জনের কারচুপি কে "মাত্র " বলা যায়?
লেখাটা কি তৃণমূলকে, বিশেষত মমতা এবং তার ভাইপোকে আড়াল করতে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং তাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা? ভালোই হল অরুণাভকে পড়তে পেয়ে। এই সব পয়েন্টই তো আসলে সাংবাদিকদের ওঠানোর কথা ছিল। অথচ ভাবখানা এমন দেখাচ্ছে যেন কোর্টই আসল ভিলেন। একটা 'কলরব' হওয়া দরকার।
ReplyDeleteমাইনে ফেরত দিতে বাধ্য করা শ্রম অধিকার নীতির বিরোধী।
ReplyDeleteকিন্তু আইন কখনই আর নীতির পন্থা ধরে?
সামগ্রিক ঘটনায়, তলিয়ে দেখতে গেলে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এমনিতেই এই ব্যবস্থাকে বিভিন্ন উপায়ে দুর্বলতর করে বেসরকারিকরণের পথ প্রস্তুত হচ্ছে। শহরাঞ্চলে শিক্ষার্থীর অভাবে বহু স্কুল বন্ধ হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে যেসব স্কুলে প্রচুর শিক্ষার্থী, সেখানে দীর্ঘকাল নিয়োগের অভাবে অপর্যাপ্ত শিক্ষক। শিক্ষাকর্মীর অভাব স্কুলের পরিবেশকে নরক করে তুলতে পারে, অভিজ্ঞরা জানেন। এইরকম অবস্থায় এতগুলি পদ শূন্য হয়ে যাওয়া কী ভয়ঙ্কর দিনের সূচনা করল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক, আগামী ৩০ এপ্রিল গরমের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। কতদিন ধরে চলবে সে-বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা নেই। বোধহয় স্কুল বন্ধ রেখে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে ভাবছে সরকার। এত বড় ঘটনায় আত্মসমালোচনা দূরস্থান এখনই নির্বাচনী তাস খেলছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ReplyDeleteকিন্তু সিবিআই নামক তদন্তসংস্থাটি "বৈধ নিয়োগতালিকায় লুকিয়ে থাকা অবৈধ"-দের খুঁজে বের করতে যে পারল না এর জন্য সিবিআই আধিকারিকদের কর্তব্যে গাফিলতির অপরাধে চাকরি যাবে কি? অপরাধী এসএসসি-র কাছে তার অপরাধের স্বীকারোক্তি সম্পূর্ণভাবে আদায় করার দায়িত্ব কি তদন্তকারী সংস্থার নয়? সে-ক্ষেত্রে অপারগতার দায়িত্ব নির্দোষ প্রার্থীদের উপরে কীভাবে বর্তায়?
প্রশ্ন রয়ে গেল— দুর্নীতিগ্রস্তের দেনা শুধলেন দুর্নীতির শিকার মানুষেরা?
"অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে
আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার।"
—উটপাখি, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
নিট পরীক্ষার "বিলম্বে" দুর্নীতির একটু নমুনা বলি। বেশি বলবই বা কি করে। ফাঁক থেকে যা একটু দেখা গেছে। কেউ তো ঝাঁপি খুললই না। শুধু তো প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়, সেই প্রশ্ন ও উত্তরপত্র হোটেলে বসে বিশেষ প্রশিক্ষকের সাহায্যে মুখস্ত করানো হয়েছে। রাতারাতি সব উত্তর মুখস্ত করতে না পেরে কোন কোন ছাত্র ফিজিক্সে ১০০ শতাংশ আর কেমিস্ট্রিতে দুই শতাংশ নম্বর পেয়েছে। হোটেল কারা বুকিং করেছিল, তার নাম ধামও উঠে এসেছে। কান ধরাই সার। টানা হলো না। তো মাথা দেখবেন কি করে। ২১ জুলাই, ২০২৪, সংবাদে প্রকাশ, গুজরাটে রাজকোটের একটি কেন্দ্র থেকে ৮৫% পরীক্ষার্থী সফল হয়েছে। এদের মধ্যে বারো জন ৭০০ এর উপরে নম্বর পেয়েছে। ৬৫০ এর ওপর নম্বর পেয়েছে ১১৫ জন। আর ২৫৪ জন পেয়েছে ৬০০র উপরে নম্বর। পরীক্ষা কেন্দ্রটির নাম ইউনিট স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, যেখানে পরীক্ষার্থী ছিল ২২৭০১ জন। মোদিজীর গুজরাট, অতএব ঘটনা তো "সামান্য" হবেই ? এমন এক কেন্দ্র যেখানে বাইশহাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়? আবার এও শুনেছি বিহারের পরীক্ষার্থী, উড়িষ্যার পরীক্ষার্থী, বিশেষ বিশেষ কেন্দ্র নির্বাচন করেছে ভেনু হিসেবে গুজরাট, হরিয়ানায়। ওই ভেনুতে রোল নাম্বার পাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। এটাও কি পরীক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির অন্তর্গত নয়? আবার এমন তথ্য সামনে এসেছে যে ওই সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীকে বলে দেওয়া হয়েছিল যে, প্রয়োজনে সাদা ওএমআর জমা দাও, যা জানো না তা লিখবে না। পরে ওই ওএমআর শীট এক বিশেষ কেন্দ্রে বসে পূরণ করা হয় ও পুনরায় সিল করে ক্যুরিয়ারে পাঠানো হয়। গুজরাটের গোধরার স্কুলে উড়িষ্যা, কর্নাটকের ছেলে ভেনু চাইছে। যেখানে যাতায়াতের সুবিধাটুকুও নেই। হরিয়ানার স্কুলে উড়িষ্যার ছেলে ভেনু চাইছে। এরকম কয়েকটি ভেন্যু বেছে নিয়ে সেখান থেকে এই ১০০ শতাংশ নির্ভুল উত্তর পত্র পূরণ হয়েছে। এরপরেও বলা হবে, বুঝতে বাকি থাকবে, প্রক্রিয়ার মধ্যে গোলমাল আছে কি নেই। গোলমাল থাকতেই পারে না। মোদি হ্যায় না? সবই যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে অনতিকাল পরে অনুষ্ঠিতব্য নেট পরীক্ষার ডেট বাতিল করা হয়েছিল কেন?
ReplyDeleteবলা হলো, কিছু নাকি গ্রেসমার্ক দেওয়া হয়েছে। প্রথমত মেডিকেলের প্রবেশিকার মত পরীক্ষায় গ্রেস মার্ক দেওয়ার রীতি আছে কিনা সেটা প্রশ্নাধীন। এ বিষয়ে আদালতের যে নির্দেশ আছে সেই নির্দেশিকায় মেডিকেলের প্রবেশিকা পরীক্ষার কথা তো উল্লেখই নেই। তাছাড়া পরীক্ষা সাঙ্গ হওয়ার পরেই কেন জানানো হলো না যে, কটা কেন্দ্রে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ও গ্রেসমার্ক দেওয়া হবে। জানানো হলো তখন, যখন প্রকাশিত ফল নিয়ে চতুর্দিকে শোরগোল পড়ে গেছে। গোবরটা লেজে লেগে গেছে তখন। প্রশ্ন তো উঠবেই, কারণ তাড়াহুড়ো করে যেভাবে ১০ দিন আগে নিট ইউজি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো, ঠিক লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন। প্রিয়দর্শনের সিনেমার সংলাপ মনে পড়ছে - নাহানে কা টাইম কোই পিসাব কিয়া কি নেহি কিয়া কৌন সমঝেগা।
অতএব আমরা জানি এসএসসি র দুর্নীতি বেনজির। ওই মহিলা কে নবান্ন থেকে টেনে নামাও। সব সমস্যার একটাই সমাধান। অথবা হয়তো সমাধান থেকে ব্যাক ক্যালকুলেশন করেই সমস্যার সৃষ্টি।
" সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না" - প্যানেল বাতিল করে চাকরি পাবার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
ReplyDeleteঅন্য কিছুই মন্তব্য করছি না। শুধু বলব শিরোনামের আগের ও পরের অংশটা মনে থাকে যেন।
ReplyDelete"ও তুই নিজের সুখের তরে
আগুন দিলে পরের ঘরে।"
আর তারপরে আছে
"ভেবেও তো দেখলি নারে, কি হবে তোর পরে" শ্যামল মিত্রের গান। যারা আম কুড়াবেন ভাবছেন তাদের জন্য বললাম। লেখাটার জন্য সাধুবাদ জানাই।
লেখাটির অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন থাকল। লেখক একজন বিদগ্ধ শিক্ষক ও ভাবুক বলেই জানি। বন্ধু সাংবাদিক ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিকের ফেবু পোস্ট শেয়ার করলাম। লেখাটির প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে মানানসই..
ReplyDelete".... যোগ্যদের কাঁদাতে নয়, বাঁচানোর জন্য প্রাণপাত করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই মামলার রায় দেওয়ার আগে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে, অতীতে সুপ্রিম কোর্টেরই দেওয়া মোট ১১ টি মামলার রায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছে, প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। রায়ের প্রতিলিপির ৭ নম্বর থেকে ১৮ নম্বর প্যারাগ্রাফ পড়ুন। দেখুন সেই ১১ টি দুর্নীতি মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অতীতে কী বলেছিল ? প্রতিটি রায় দিতে গিয়ে ঠিক কোন নীতি নির্দেশ বা পথ নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট বলছে,
১.যদি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে সুচিন্তিত, সুসংহত দুর্নীতি প্রমাণিত হয়, যদি বোঝা যায়, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ারই কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, তাহলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা ছাড়া আদালতের সামনে আর কোনও উপায় থাকে না।
২. আমরা জানি, যোগ্য এবং সৎ প্রার্থীদের এতে চূড়ান্ত হয়রানি হবে, কিন্তু যখন এটা প্রমাণিত যে, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গভীর দুর্নীতি করেছে, তখন সেই দুর্নীতির হাত থেকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাঁচাতে হলে, পুরো নিয়োগ বাতিল করতেই হবে।
৩. সুবৃহৎ একটি ষড়যন্ত্রমূলক দুর্নীতি যখন প্রমাণই হয়ে গেছে, তখন, আপেলের ঝুড়িতে কোনটা পুরো পচা, কোনটা আধপচা, কোনটায় একটু দাগ আর কোনটা তরতাজা, তা বাছার দরকার নেই।
এবারে প্রশ্ন হল, আদালত কী করে বুঝল, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে ? এটা বুঝতে, আসুন, রায়ের কপির ২৩ নম্বর প্যারাগ্রাফ পড়ি। দেখুন তো কী বলেছে আদালত। আদালত বলছে,
১. স্কুল সার্ভিস কমিশন স্বীকার করেছে, মেধাতালিকার বহু নীচে থাকা প্রার্থীর চাকরি হয়েছে। মেধাতালিকার উপরে থাকা প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছেন।
২. প্যানেল নামই নেই, এমন বহু প্রার্থীর চাকরি হয়েছে।
৩. স্কুল সার্ভিস কমিশন নামই দেয়নি, এমন বহু প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দিয়েছে বোর্ড।
৪. ওএমআর শীটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।
এই সর্বব্যাপী দুর্নীতি ধরল কে ? কলকাতা হাই কোর্ট নিযুক্ত প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ কমিটি আর সিবিআই। কিন্তু তা সত্ত্বেও যোগ্যদের কেন বাঁচানো গেল না ? কারণ, স্কুল সার্ভিস কমিশন, পরম মমতায়, তথ্য লোপাট করেছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়েছে।
খলনায়ক ২ : বিকাশ ভট্টাচার্য।
এমন একটা “এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই” নিয়োগ প্রক্রিয়া কি সত্যিই একা হাতে কাঠি করে দিলেন, সিপিএম বিকাশ ? আচ্ছা দেখুন তো, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মামলাটা ঠিক কে করেছিল ? রায়ের কপির একদম শুরুতে যান। দেখুন তো কী লেখা ? মামলাকারী মানে Appellant আসলে কে ? কী লেখা ? বড় বড় করে লেখা নেই, যে মামলাকারী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ? আছে তো ? তাহলে বিকাশ ভট্টাচার্য দিল্লি দৌড়ে গিয়ে খুঁচিয়ে ঘা করেননি। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মামলা আসলে করেছিল রাজ্য। কেন ? কারণ, ঠিক একবছর আগে, ঠিক একই কায়দায় পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। লোকসভা ভোটের বাজারে সেই ধাক্কা সামলাতে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় ঝাঁপ মেরেছিল রাজ্যই।
খলনায়ক ৩ : বিজেপি। আরও স্পষ্ট করে বললে, একদা কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি এবং বর্তমানে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন বিচারপতির রাজনীতি প্রবেশ এই লেখার বিষয় নয়। এই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির মূল ধরে টান যাঁর হাতে শুরু, তাঁর নাম প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই যে কমিশন আর পর্ষদ মিলে প্রায় নিখুঁত ভাবে, এত বড় দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ প্রায় সবটাই লোপাট করে দিয়েছিল, তা সত্ত্বেও প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে হাতেনাতে সব ধরতে পেরেছিলেন, তার একটা প্রেক্ষাপট আছে। কলকাতা হাই কোর্টে দীর্ঘদিন আইন সাংবাদিক হিসেবে কাজের সূত্রে জানি, আইনজীবী থাকাকালীন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের হয়ে মামলা লড়তেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর সেই সূত্রেই জানতেন, চুরি হয় কী করে। চুরি ধামাচাপা দেওয়ার কায়দাই বা কী। বিচারপতির চেয়ারে বসে, চুরি ধরতে তাই সুবিধে হয় অভিজিৎ বাবুর।
তাহলে কী দাঁড়াল ? খলনায়ক কে ? কারা ?"