Thursday 16 March 2023

সন্দীপ দত্ত

উজান পথের পথিক

প্রবুদ্ধ বাগচী


(২৪ জুলাই ১৯৫১ - ১৫ মার্চ ২০২৩)

সেদিন ওঁর বাড়ির সেগুন কাঠের সাবেক দু-পাল্লার দরজাটায় যখন কলিং বেল দিয়েছিলাম, ভিতর থেকে আওয়াজ এসেছিল, ‘কে?’ অভয় পেয়ে দরজা ঠেলে যখন ভিতরে ঢুকলাম, প্রথমে চিনতে পারেননি। তারপর একটু চোখ সইয়ে নিয়ে বললেন, ও তুমি, এসো। অনেকদিন পর। সত্যিই অনেকদিন পর মুখোমুখি বসলাম আমরা। এই তো মাত্র মাসখানেক আগেই। এক শীতের দুপুরে। ওঁর কিংবদন্তি লাইব্রেরি তখন সদ্য খুলছে, পাঠকের ভিড় তখনও বাড়েনি। চারদিকে বই আর বই, তারই মধ্যে কম্পিউটারের প্রিন্ট করা বিষয়ের নাম। আমায় বললেন, 'তুমি অনেকদিন পরে এলে। দ্যাখো, আমরা আমাদের সমস্ত সংগ্রহগুলোকে ৬৫টা বিষয়ে ভাগ করে রেখেছি।' ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কবিতার বইয়ের সংগ্রহগুলো? উনি দেখালেন পাশের ঘরটা। বললেন, দক্ষিণ কলকাতায় একজন বইপ্রেমী তাঁর বাড়ির একটা তলা আমাদের ছেড়ে দিচ্ছেন, ওখানেই সব কবিতার বইয়ের সংগ্রহ চলে যাবে আস্তে আস্তে। ওই পাশের ঘরটায় ঢুকতেই এক ঝলক পুরনো স্মৃতির পালক উড়ে এল আমার ভিতরে। 

সেটা ১৯৯৩-৯৪ সাল হবে। নানা রকম লেখালিখির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখব বলে মনে মনে ভেবে ফেলেছি তখনই। আর সেই সময়ই অব্যর্থ ভাবে আলাপ হয়ে গিয়েছিল এই আশ্চর্য মানুষটির সঙ্গে। যিনি প্রথম দিন থেকেই উজান পথের পথিক। তখন কবিতা আর কবিতা-বিষয়ক নিবন্ধ লেখায় পেয়েছিল আমায়। ‘রক্তকরবী’ পত্রিকার অধুনা প্রয়াত সম্পাদক বলেছিলেন, বাংলার মহিলা কবিদের নিয়ে লিখতে। সেই লেখার মালমশলা, কবিতার বই সবই জুগিয়ে দিয়েছিলেন এই প্রিয় অভিভাবকসম মানুষটি। তখন থেকেই ওই কবিতা-ঘরে আমার আসা যাওয়া। এরপরে যখন ষাটের দশকের বাংলা কবিতার বিভিন্ন আন্দোলনগুলি বিষয়ে লিখব বলে ঠিক করলাম তখনও মুশকিল আসান করে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। এক রথযাত্রার বৃষ্টিস্নাত  বিকেলে তাক থেকে বই পেড়ে দিচ্ছেন সন্দীপদা আর আমি নোট নিচ্ছি আমার খাতায়— এই দৃশ্য যেন স্থির হয়ে আছে আমার স্মৃতির পটে।

সেইসব দিন থেকেই সন্দীপদা চিনতেন আমায়, আমি তাঁকে। মনে পড়ে সেই কবেকার কলকাতা শহরের পথে আপনার সঙ্গে আমাদের দেখা, আপনার ঘরে বসে কথা-বলা, পুরনো বইয়ের ধুলো ঘেঁটে সোনা খুঁজে বেড়ানো আর পাপড়ভাজা সহযোগে চা-খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই, এই সেদিন যখন দেখা হল, নিজের মনেই বললেন, দেখতে দেখতে তোমার সব চুল দাড়ি সাদা হয়ে গেল! সেই কতদিন আগে তুমি আসতে, তখন তোমার তরুণ বয়স। কী করব, সন্দীপদা? সময় যে মস্ত বড় ঘাতক! না হলে কি আজ আপনাকে এইভাবে এসএসকেএম'এর সাদা বিছানায় নিথর হয়ে শুয়ে থাকতে হয়? আর আপনাকে নিয়ে আমায় বুনে যেতে হয় অতীতচারিতার অক্ষরমালা?

শুরুটা হয়েছিল তাঁর ছাত্রাবস্থায়। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে যাতায়াতের সূত্রে তাঁর চোখে পড়ে লাইব্রেরির একটা ঘরে অবহেলায় স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে বিপুল লিটল ম্যাগাজিনের সম্ভার। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ ওগুলি নষ্ট করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন, কারণ, ওগুলো নাকি ঠিক মতো সংরক্ষণ করার নানা অসুবিধে। বিদ্রোহী সন্দীপ প্রতিবাদ করেন এই ঘটনার। দেখা করেন আচার্য সুকুমার সেনের সঙ্গে; তিনি বলেন, কেন ওইসব আবর্জনার স্তুপ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন! অতঃপর বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে সন্দীপ সিদ্ধান্ত নেন, সাহিত্যের চিরকালীন ধারা বয়ে চলেছে যে লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যে দিয়ে তাদের সংরক্ষণের জন্য তিনিই কিছু করে দেখাবেন। শুরু হল তাঁর পথচলা। নিজের বাড়ির একতলার তিনটে ঘরে প্রতিষ্ঠা হল তাঁর লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি। 

নিয়মিত চাকরির বাইরে একটি দৈনিক পত্রে পার্ট-টাইম চাকরি, টিউশনি— এই বাড়তি অর্থের সবটাই খরচ হয়ে যেত নতুন নতুন পত্রিকা কিনে লাইব্রেরি সাজানোয়। গোড়ার দিকে বিকেলের মুখোমুখি 'পাতিরাম' বুক স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন তিনি, উৎসাহী পাঠকদের ডেকে ডেকে নিয়ে যেতেন তাঁর স্বপ্নের লাইব্রেরিতে। এইভাবে তিল তিল করে নিজের সর্বস্ব দিয়ে, নিজের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনকে কিছুটা পাশে সরিয়ে রেখে গড়ে তুলেছেন একটা প্রতিষ্ঠান, যা ক্রমশ অঙ্গীভূত হয়ে উঠেছে আমাদের সাহিত্যের সঙ্গে, আমাদের সাংস্কৃতিক গবেষণার সঙ্গে— আমাদের বইপাড়ার ঐতিহ্যে যুক্ত করেছে আরেকটা পালক। 

আজকের কলেজ স্ট্রিট মানে প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্কৃত কলেজ, কফি হাউস  বা পাতিরাম বুক স্টল আর নয়- ১৮/এম টেমার লেনের এই ‘কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র’ আজ এই শহরের সারস্বত সাধনার অন্যতম উৎকর্ষ কেন্দ্র। অন্তত বাংলা সাহিত্য বা সামাজিক বিজ্ঞানের নানা শাখায় যারা গবেষণা করেন, তাদের কোনও না কোনও সময় হাজির হতেই হয় এই প্রতিষ্ঠানটির দরজায়। যতদূর জানি, লাইব্রেরির সংগ্রহে এখন প্রায় এক লক্ষ বই, পত্র-পত্রিকা- মধ্য কলকাতার এক সাবেক বাড়ির একতলায় নিয়মিত পাঠক গবেষকের আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে লাইব্রেরির ইট কাঠ পাথর কড়ি বরগা- আর তাঁর প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্ত, সকলের সন্দীপদা। 

কাল থেকে কী হবে সন্দীপদা? কে দরজা খুলবে লাইব্রেরির? কে নিবিড় নিষ্ঠায় হাজারও তথ্য জুগিয়ে তুলে দেবে উৎসুক পাঠকের হাতে? কে গবেষকদের দাবি মতো ফটোকপি করা লেখার বান্ডিল গুছিয়ে রাখবে? কে উৎসাহী কবি লেখক গবেষকদের পাশে বিরাট ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকবে? কে সীমিত সাধ্যের মধ্যে প্রতি বছর তরুণ কবি প্রাবন্ধিক গবেষক ও লিটল ম্যাগাজিনকে পুরস্কৃত করবে কাল থেকে? প্রশ্নগুলো আজ এই স্তব্ধ হয়ে যাওয়া শোকের ভিতর থেকেও ভারী হয়ে উঠে পথ আটকাচ্ছে আমাদের।

হয়তো ‘প্রতিষ্ঠান’ শব্দটা খুব পছন্দের ছিল না সন্দীপদার। কারণ, যিনি লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে ঘর করেছেন, যিনি কলকাতা বইমেলার মাঠে সেই আশির দশকের শেষ থেকেই মাথায় প্রকান্ড কাগজের টুপি মাথায় ঘুরে বেড়াতেন, যাতে লেখা থাকত— ‘লিটল ম্যাগাজিন কিনুন, লিটল ম্যাগাজিন পড়ুন, লিটল ম্যাগাজিন ভাবুন’- তাঁর চোখে ‘লিটল ম্যাগাজিন’  মানেই স্রোতের উজানে চলা, তথাকথিত প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করে নিজেদের পথ খুঁড়ে খুঁড়ে চলা। কিন্তু সাড়ে চার দশকের সময়ের স্রোতে এই ব্যঞ্জনাগুলি যে ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে, এটা বুঝতে তাঁর দেরি হয়নি। তাঁর এই টুকরো ভাবনা ভেসে আসতে দেখেছি গত কয়েক বছরে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লেখা বিক্ষিপ্ত মন্তব্যে, অসহায় উচ্চারণে। যে লিটল ম্যাগাজিনের স্বপ্নে তিনি সর্বস্ব পণ করে তাদের জন্য নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন একটি অপাপবিদ্ধ ভূমিতল— সে ভূমি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে তলায় তলায়— এটা বুঝে নিতে তাঁর অসুবিধে হয়নি। তাই তাঁর নামের পাশে ‘প্রতিষ্ঠান’ শব্দটি ব্যবহারে আজ আর তাঁর আপত্তি থাকত বলে মনে হয় না। ‘প্রতিষ্ঠান’ মানেই খারাপ, এমন সঙ্কীর্ণ স্বতঃসিদ্ধ থেকে দূরে থাকার কথাই ইদানিং ভাবছিলেন তিনি। তাই লাইব্রেরির উন্নতির জন্য নানা প্রতিষ্ঠানের অনুদান নিয়েছেন। বেশ করেছেন। কারণ, ওই অর্থে তাঁর ভাত কাপড় হয়নি, ক্রমশ নানা উৎকর্ষ ঘটেছে লাইব্রেরির, নানা প্রাচীন পত্রিকার ডিজিটাইজেশনের কাজ এগিয়েছে তারই সূত্রে। আর এটা তো সকলেই আজ জানেন, ১৯৭৮ থেকে চালু হওয়া এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগে এক আনা পয়সাও সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়নি ‘সংস্কৃতির স্বর্গরাজ্য’ এই পশ্চিমবাংলায়! ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা ফেলনা নয়।  

সন্দীপদাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে আরেকটা প্রসঙ্গের উল্লেখ জরুরি। তাঁর লাইব্রেরির 'হোলটাইমার' হয়েও নিজের পড়াশোনা ও গবেষণায় তাঁর কিন্তু কোনও ঘাটতি ছিল না। এমন বেশ কিছু প্রকাশনা তিনি করেছেন যা রীতিমতো সমীহ আদায় করে নেওয়ার মতো। যেমন বাংলার অশিষ্ট ভাষা নিয়ে 'স্ল্যাংগুয়েজ' বা বাংলার বিবাহের নানা রীতিনীতি নিয়ে তৈরি 'বিবাহ-মঙ্গল'। এছাড়া 'পত্রপুট' প্রকাশনার উদ্যোগে তাঁর সংকলিত 'উজ্জ্বল উদ্ধার' সিরিজের বইগুলি আজও সাহিত্যপ্রেমী মানুষের হাতে হাতে ফিরবার মতো আইটেম। এই হলেন তিনি। নিরলস উদ্যোগী, নিরন্তর পাঠক, সোৎসাহী গবেষক। অনীক দত্ত পরিচালিত 'মেঘনাদ বধ রহস্য' ছবিতে তাই ছবির চরিত্র এক অধ্যাপককে (চরিত্রাভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী) দেখা যায়, একটা তথ্যের খোঁজে তিনি এসেছেন 'লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি'র সন্দীপ দত্ত-র কাছে- ওই চলচ্চিত্রের খণ্ড দৃশ্যে অন্তত এইটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে এমন একটি প্রতিষ্ঠান কলকাতায় আছে যেখানে প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপককেও তথ্যের সন্ধানে ঢুঁ মারতে হয়। এটাও এক ধরনের স্বীকৃতি বইকি!

এইসব মিলিয়েই তিনি। আমাদের সঙ্গে তাঁর তুমুল সখ্য, অনাবিল প্রশ্রয়, অবিমিশ্র শ্রদ্ধা। আজ সেই স্মৃতির সরোবরে কেবলই বিষাদের ঢেউ- আমাদের শহর ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, সন্দীপদা! মনে পড়ে, এক সময় আপনি প্রতি বছর কবি-লেখকদের জন্মদিনে নিজে হাতে পোস্টকার্ড লিখে তাঁদের শুভেচ্ছা জানাতেন। আমিও অপেক্ষা করতাম কবে আপনার অলংকরণ করা পোস্টকার্ড উঁকি মারবে আমার ডাকবাক্সে। এমনই ছিল আপনার নিবিড় ভালবাসা। পোস্টকার্ডের দিন গিয়েছে আর সেই সঙ্গে আমাদের জীবন থেকেও হারিয়ে গিয়েছে এই সব কোমল স্পর্শের আখ্যান।

সন্দীপদা, আপনার কি মনে পড়ে, আপনি আপনার প্রকাশনা থেকে একসময় 'জন্মদিন' শিরোনামে একটি সংকলন করবেন বলে আমার থেকে লেখা নিয়েছিলেন। আমি সেই লেখায় লিখেছিলাম, 'নায়ক' ছবির অরিন্দমের মতো আমিও ক্রমশ মৃত্যু বিষয়ে 'ক্যালাস' হয়ে পড়ছি। আপনি সেই লেখা পড়ে আমায় বকে দিয়েছিলেন। আজ এই মৃত্যু-মাখা গোধূলিবেলায় আপনার অনুপস্থিতি সত্যিই আমার মধ্যে আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছে সেই 'ক্যালাস' মনোভঙ্গিমা... বিশ্বাস করুন। এত এত মৃত্যুর মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্রমশ অবশ হয়ে আসে ইন্দ্রিয়ের সংবেদন। উদাসী হাওয়ার পথে পথে জীবন থেকে ঝরে গেল আরও একটি মুকুল। আমাদের দাঁড়াবার জায়গার বড় অভাব হয়ে গেল আজ!


8 comments:

  1. অসম্ভব আন্তরিক এই নিবেদন। সমৃদ্ধ হলাম

    ReplyDelete
  2. উজান পথের উদাসী বাউলকে নিয়ে এক যথোপযুক্ত স্মৃতি চারণ উপহার দিলেন আপনি । 🙏

    ReplyDelete
  3. খুব আন্তরিকভাবে লিখেছেন। এখন এই ঘটনাগুলিই সম্বল

    ReplyDelete
  4. মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।

    বেঁচে থাক তার কীর্তি।
    শ্রদ্ধা জানাই।
    অসিত

    ReplyDelete
  5. Kakali Chakraborty16 March 2023 at 19:38

    সন্দীপদার সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তিতে আমার অনুভূতির অনেক সাধর্ম্য খুঁজে পেলাম। এমন শিক্ষানুরাগী, বইপাগল মানুষ বোধ হয় আর একজনও নেই। ঘন ঘন লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতে গেলে ভীষণ খুশী হতেন, হাতে তুলে দিতেন অনেক দুষ্প্রাপ্য বই-পত্রিকা। আবার বহুদিন লাইব্রেরী মুখো হই নি বলে phone করেও বকুনি দিয়েছেন। আপনি যথার্থই বলেছেন, "আমাদের দাঁড়াবার জায়গার বড়ো অভাব হয়ে গেল আজ"।

    ReplyDelete
  6. এমন মানুষ কালেভদ্রে জন্মান। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।

    ReplyDelete
  7. লিটল ম্যাগাজিন এর প্রতি উৎসর্গকৃত প্রাণ 🙏🏻🙏🏻

    ReplyDelete
  8. খুব দরকারী লেখা

    ReplyDelete