নয়া ভারত
ভাস্কর গুপ্ত
সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী দেশব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে যে কয়েকটা বৈশিষ্ট্য নজরে এল:
১) এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলের ধার না ধেরে ছাত্ররা আন্দোলনের রাশ ধরেছে। জয়প্রকাশের 'নবনির্মাণ আন্দোলন'এও এমনটা ঘটেনি। দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত এই ভৌগোলিক বিস্তৃতিও সেই আন্দোলনে ছিল না। আজ আইআইটি, আইআইএম, আইআইএসসি, টিআইএফআর - কোনও কুলীন প্রতিষ্ঠানও এর বাইরে নেই। ১৯০৫ সালে কার্লাইল সার্কুলার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে রূপান্তর মনে পড়ে যাচ্ছে।
২) মুসলিম জনগণ এতদিন নিজেদের এ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে মেনে নিতে অভ্যস্ত ছিলেন। এই প্রথম তাঁরা তাঁদের নাগরিক অধিকারের কথা জোর গলায় বলছেন। বলছেন, হিন্দুস্তান হামারা হ্যায়। তোমরা যারা মানুষে মানুষে বিভেদ লাগিয়ে দেশকে ভাঙতে চাও তারা ভারত থেকে দূর হঠো। আমরা যারা দেশকে ভালোবেসে এ দেশে আছি তারা কোথাও যাব না।
৩) নতুন করে ক্ষমতায়ন হয়েছে মুসলিম মহিলাদেরও। যে মহিলারা কখনও রান্নাঘর থেকে বেরোননি তাঁরাও আজ পথে। পুরুষতন্ত্র এ ভাষা বোঝে না। তিন তালাক নিষিদ্ধ করে মসিহা সাজার বদলে এ চোখে চোখ রেখে বলে আমার হক আমিই বুঝে নেব।
৪) ভারতীয়ত্ব, সংবিধান এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আমরা এতদিন ভুলে ছিলাম। এই আন্দোলন নতুন করে বিষয়গুলোকে তুলে ধরছে, আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। তাই আজ পার্ক সার্কাসে জাতীয় পতাকা উড়ছে, শাহিনবাগ বলেছে জয় হিন্দ, উকিলরা জমায়েত হয়ে সংবিধান পড়ছেন, যাদবপুরের ছাত্র ইউনিয়নের ঘর থেকে শুনছি দেশাত্মবোধক রবীন্দ্রসঙ্গীত।
৫) এই আন্দোলন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এক অচেনা ঐক্যের জন্ম দিয়েছে। শুরু করেছিলাম ছাত্র-যুব'দের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের কথা দিয়ে। সেটাও কিন্তু মূলত বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এই ঐক্য অর্জন করতে পারেনি। হিন্দু মুসলিম, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র গৃহবধূ সবাই আজ এক লড়াইয়ের সাথী।
৬) সবচেয়ে বড় কথা যে এ লড়াইয়ের জন্ম কোনও রাজনৈতিক দল দেয়নি এবং কেউ একে কুক্ষিগতও করতে পারেনি। এ লড়াই দেশের মাটিতে তৈরি দেশের মানুষের লড়াই। প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় নি।
ব্রিটিশ খেদানোর সময় আমাদের পূর্বপুরুষরা ধর্মকে হাতিয়ার করেছিলেন, আজ ব্রিটিশের দালালদের খেদানোর জন্য প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা হাতিয়ার হয়েছে। RSS সমাজকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে, RSS বিরোধী আন্দোলন সমাজকে আরও সামনে নিয়ে যেতে চাইছে, প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ার কথা বলছে।
ReplyDelete