'আমার জীবন ও সাহিত্য' - আনসারউদ্দিন
অরুণাভ বিশ্বাস
উপস্থিত শ্রোতাদের একাংশ
রথ দেখতে এসে যদি কলা বেচা যায়, তাহলে 'একক মাত্রা'র সাম্প্রতিকতম সংখ্যার প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে অতিথি বক্তৃতা শুনে আর হাতে গরম সংখ্যা নিয়ে বাড়ি ফেরাও যায়। এই উদ্দেশ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয় কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের বই-চিত্র গ্যালারিতে পত্রিকার যে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল তাতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাঠকবন্ধুদের উপস্থিতি ছিল আশাতীত। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে মনসিজ দত্ত সাম্প্রতিক উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে সরকারি ত্রাণ ও সাহায্যের অপ্রতুলতার কথা বলে এই প্রসঙ্গে 'একক মাত্রা'র হোয়াট্সঅ্যাপ গ্ৰুপের সদর্থক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। মনসিজবাবুর তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ হাজার নগদ টাকার বন্যাত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও বহু ওষুধপত্র, জামাকাপড়, শুকনো খাবারও সংগ্রহ করা হয়। প্রসঙ্গত তিনি জানান অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ন্যাশনাল হাইওয়ে উঁচু বাঁধের কাজ করায় অতিরিক্ত বৃষ্টির জল বেরতে না পেরে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
'একক মাত্রা'র বন্যাত্রাণের উদ্যোগ নিয়ে বলছেন মনসিজ দত্ত
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে বলছেন বিমল দেব
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তি করলেন ঋত্বিক ঠাকুর
আনসারউদ্দিনের হাতে 'একক মাত্রা'র তরফে স্মারক হিসেবে গাছের চারা তুলে দেন দেবলীনা ভট্টাচার্য
'একক মাত্রা'র সেপ্টেম্বর সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন
বাঁদিক থেকে অমিত চৌধুরী, অনিন্দ্য ভট্টাচার্য, মধুময় পাল ও আনসারউদ্দিন
পাঠক ও শ্রোতাদের সঙ্গে আনসারউদ্দিনের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আলোক চট্টোপাধ্যায়
'আমার জীবন ও সাহিত্য' বলছেন আনসারউদ্দিন
এভাবেই চরম দারিদ্র্য আর অনটনের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা। একে তিনি ভুলতে পারবেন না কোনওদিন। ভোলা উচিতও নয় তাঁর মতে। অভাব বা অনটন তাই তাঁর গল্প উপন্যাসে ফিরে ফিরে আসে। এ নিয়ে তাঁর খেদ নেই। কোনও হীনম্মন্যতা নেই। দারিদ্র্য তাঁর কাছে এক অনুভব যা তিনি "enjoy" করতেন। এখনও তিনি যখন ধান কাটা খড় কাটার ফলে তাঁর দু হাতের ফোস্কাগুলোকে দেখেন তখন নিজের ছোট ছোট দুই ছেলেকে লজেন্স কিনে দিতে না পারার দুঃখ তিনি ভুলে যান। কায়িক শ্রমের চিহ্নস্বরূপ ঐ ফোস্কাগুলোকে মনে হয় ছেলেদের জন্য কিনে আনা লজেন্স। শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান তাঁর নিজের পরিবার বা গ্ৰাম হয়তো অনেক পাল্টেছে। গ্ৰামের ছেলেরা দুবাই মুম্বাই বা কেরালায় কাজ করতে গিয়ে বাড়িতে অনেক টাকা নিয়ে আসছে যা দিয়ে নানান বৈদ্যুতিন গৃহসরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। শিলনোড়া ঢেঁকি কুলো এসব বিরল হয়ে উঠছে। শহুরে অপসংস্কৃতি গ্ৰামকে কলুষিত করছে। গ্ৰামের মেয়ে-বউরা পৃথুলা হয়ে নানা রোগের শিকার হয়ে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি যদি শহুরে মধ্যবিত্ত পাঠকের চাহিদা মাথায় রেখে শহরের কথা লেখেন, নগরজীবনের কথা লেখেন, মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন শহুরে সচ্ছল নরনারীর শরীরী প্রেমের বিবরণ লেখেন তাহলে তা বাংলা টিভি সিরিয়ালের থেকে নতুন কিই-বা হবে! তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের পাল্টা প্রশ্ন করেন -- ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষ গ্ৰামে বাস করলেও ভারতীয় সাহিত্যের কত শতাংশ গ্ৰাম বা গ্ৰামীণ জীবন নিয়ে লিখিত হয়? তাই সাবেক গ্ৰামবাংলার অভাবী বা প্রান্তিক মানুষজনকে নিয়ে লেখালিখিকে তিনি অতীতে নিমজ্জিত থাকা বা অতীত বিলাসিতা বলে মনে করেন না। তাঁর কাছে এটি অতীতের প্রতি দায়বদ্ধতা। দারিদ্র্যকে সম্মান করা। তাঁর মতে, গ্ৰাম এবং গ্ৰামের মানুষের অভাবকে এতটাই কাছ থেকে দেখেছেন যে তিনি যদি এ নিয়ে না লেখেন তবে আর কেই-বা লিখবেন! যেমন গো-রাখালের কথকতা উপন্যাসে যে নিদারুণ দারিদ্র্যের ছবি তিনি এঁকেছেন তা তিনি স্বচক্ষে ছোটবেলায় দেখেছিলেন বলেই লিপিবদ্ধ করতে পেরেছেন। ছেলে যেন ছাগল চরানো থেকে উন্নীত হয়ে গো-রাখাল হতে পারে এটাই রাখালের বাবার প্রার্থনা। বাবুর বাড়ি কাজের সূত্রে জামাপ্যান্ট পেলে অন্য বাড়িতে কাজ করতে যাওয়ার আগে তা গা থেকে জোর করে খুলে নেয় বাবুরা। উদোম হয়ে রাখাল ঘরে ফেরে। ছোটবেলায় নিজের চোখে দেখা রাখালিয়া এই বাপছেলে তাঁর উপন্যাসে প্রাণ ফিরে পায়। তাই যখন উপস্থিত কেউ প্রশ্ন করেন নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে লেখার ইচ্ছা কি তাঁর হয় না, তখন তিনি বলেন লেখকের অভিজ্ঞতার রসের ভিয়ানে সিক্ত না হলে লেখা বড়জোড় একটা "try" হতে পারে, কিন্তু তা ভিতর থেকে উঠে আসা লেখা হয় না।
শ্রোতাদের একাংশ
এই প্রসঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও হানাহানি নিয়ে জনৈক শ্রোতার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন মোল্লাতন্ত্রের ছত্রছায়ায় আইসিস বোকো হারাম আল-কায়দা হিজবুল ইত্যাদি জঙ্গিগোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্ত। অথচ ইসলাম কিন্তু বিদ্যালয় পোড়ানোর কথা বলে না, শিশু হত্যার কথা বলে না, যা এইসব জঙ্গিরা লাগাতার করে আসছে। অন্যদিকে দেশে আজ কেউ স্বাধীনভাবে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে পারছে না। বলিউডের জনপ্রিয় তিন খানও সোশাল মিডিয়ায় বিরূপ মন্তব্যের স্বীকার হচ্ছেন। দেশরক্ষার দায়িত্ব যেন সেনাবাহিনীর হাত থেকে চলে এসেছে কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে। সাধারণ দেশবাসীর মনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর রীতিনীতি আচারঅনুষ্ঠানের প্রতি অজ্ঞতা ও অবহেলা কাজ করছে। গ্ৰামে গ্ৰামে 'কলম' নামক পত্রিকার প্রচার বাড়ছে, কিন্তু কোরান বা হাদিসের সদর্থক উক্তিগুলি প্রচারিত হচ্ছে না। ঈদ-উদ্যোহার দিনে তিনি এই বক্তৃতা দিচ্ছেন। অথচ এ নিয়ে প্রকৃত ত্যাগের কথা কুরবানির কথা কোথাও তিনি আসার পথে শোনেননি। এরই মাঝে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভুল উচ্চারণ ও আদবকায়দায় মুসলিমদের মন পেতে চাইছেন। দ্বিচারী সিদিকুল্লা নমাজে মহিলা হয়েও মমতা ব্যানার্জীর উপস্থিতিকে মেনে নিচ্ছেন আবার তিন তালাকের পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন। এসব দেখে আনসারউদ্দিনের সংবেদী মন ব্যাথিত হয়ে ওঠে। তাঁর মতে ইসলাম ধর্মের একজন রামমোহন বা বিদ্যাসাগরের মতো সংস্কারক প্রয়োজন।
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আনসারউদ্দিন ব্যক্ত করেন যে সঙ্কীর্ণতার উর্দ্ধে যদি ওঠা না যায়, মানুষকে যদি মানুষের মতো করে দেখা না যায়, তাহলে কখনই ভালো লেখা যায় না। ভালো লিখতে গেলে ভালো মন দরকার, প্রসারিত হৃদয় দরকার। সেই সাথে দরকার লেখার বিষয়ের মধ্যে ঢুকে যাওয়া। লেখককে ভুললে চলবে না নিজের গল্প উপন্যাসের চরিত্রের নির্মাতা তিনি নিজে। সেই চরিত্রকে সৃষ্টি করার মালিক তিনিই। আর এই জায়গাতেই একজন লেখক হয়ে ওঠেন ঈশ্বর বা আরও বেশি কিছু। ব্যক্তিগতভাবে আনসারউদ্দিন সেইসব লেখকদেরই উঁচু আসন দিতে চান যাঁরা লিখতে লিখতে নিজেদেরই গড়েন নিজেদেরই ভাঙ্গেন; আর এই ভাঙ্গাগড়ার মধ্যেই চরিত্র নির্মাণ করেন। তিনি আশা করেন একজন লেখকের বাঁচামরা বা জীবনস্রোত তাঁর লেখার বিষয়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হবে। উদাহরণস্বরূপ তিনি শিবতোষ ঘোষ এবং অদ্বৈত মল্লবর্মনের নামোল্লেখ করেন। তিনি আক্ষেপ করেন 'খেলনাপাতি', 'আমগাছ' ইত্যাদি অসামান্য গল্পের লেখক শিবতোষ ঘোষ কোনওদিনই প্রচারের আলো পাননি। আবার জনপ্রিয়তা লাভ করলেও তিতাস একটি নদীর নাম-এর লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মন আজ অবধি আঞ্চলিক ঔপন্যাসিকের তকমাই পেয়ে এসেছেন। যেন প্রান্তিক মানুষের জীবনকথা মূলধারার সাহিত্যরচনার বিষয় হতে পারে না। অন্যদিকে বিভূতিভূষণ আরণ্যক লিখলে বা মানিক পদ্মা নদীর মাঝি লিখলে সেগুলি মূলধারারই ব্যতিক্রমী উপন্যাস হিসেবে গণ্য হয়। জাতিতে মালো বলেই অদ্বৈত মল্লবর্মনের প্রতি অ্যাকাডেমিশিয়ানদের এই দ্বিচারিতা কিনা জানতে চান তিনি। তিনি নিজেও বরাবর প্রচারের আলোর বাইরে। তাই গ্ৰামে তাঁর খোঁজে প্রকাশনা বা মিডিয়ার লোক গেলে তাঁদের মিথ্যে কথা বলে ফিরিয়ে দেন তাঁর হিতাকাঙ্ক্ষী প্রতিবেশীরা যাঁরা ভেবে নেন শহর থেকে নির্ঘাৎ পাওনাদারেরা আনসারউদ্দিনের খোঁজে এসেছে। সরল গ্ৰামবাসীরা ভেবে পান না তাঁদের চেনা আনসারউদ্দিনের সাথে শহরের বাবুদের কি কাজ!
অন্যদিকে জীবনসংগ্ৰামের কোনও অকিঞ্চিৎকর বা কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকেও লেখক সন্ধানী দৃষ্টিতে খুঁজে নেবেন গল্পের রসদ। তাই দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় বহুলোকের মৃত্যুর থেকেও আনসারউদ্দিনকে নাড়া দেয় হাত কাটাপড়া কোনও মানুষের সকরুণ আকুতি যিনি ধর্মবিশ্বাসী হয়েও ঈশ্বরের কাছে আর কোনওদিনই করজোড়ে কিছু নিবেদন প্রার্থনা বা ক্ষমাভিক্ষা করতে পারবেন না। অথবা তাঁর নজর এড়ায় না যে গ্ৰামের কোনও হতদরিদ্র পরিবারে হঠাৎ করে কেউ একটি চাদর উপহার দিলে সেটি শীতের রাত্রে কার গায়ে থাকবে তা নিয়ে মীমাংসা না হলে চাদরটি শেষ পর্যন্ত সারারাত দাওয়ায় টাঙানো থাকে আর ভোরবেলা শিশিরের ফোঁটা চাদরের কোণা বেয়ে কান্না হয়ে ঝরে পড়ে। এই ঘটনাটিকে তিনি 'চাদর' গল্পে রূপায়িত করেন। তবে শ্রোতাদের তিনি সাবধান করে দেন শুধু ঘটনা দিয়ে লেখা হয় না। বীজের ভেতর যেমন প্রাণ সুপ্ত থাকে, পানার নিচে যেমন স্রোত বয়ে যায়, তেমনি ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে থাকে গল্পের রসদ। কখনও কখনও তিনি নিজেও এই রসদ খুঁজে পান না। কী লিখবেন স্থির করতে পারেন না। লেখা না এলে তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। সাদা কাগজকে কাফন বলে মনে হয়। মাঝে মাঝে তিনি ভাবনাবিলাসী হয়ে পড়েন। আবার ভয় হয় ভাবনার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকতা চেপে বসছে না তো। লিখতে বসলেও অতিরিক্ত খুঁতখুতানি চেপে বসে। শ্লথ হয়ে পড়েন তিনি।
একজন জাতলেখক যে কোনও মানুষের জীবন থেকে গল্প খুঁজে নিতে পারেন বলে মনে করেন আনসারউদ্দীন। ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য তিনি দুটি এমন ঘটনা উপস্থিত শ্রোতাদের শোনান যেখানে গল্পের বীজ লুকিয়ে আছে। পরে হয়তো তিনি লিখবেনও। কিন্তু কোন পথে সেই লেখা এগোবে তা তিনি ব্যাখ্যা করেন প্রায় লেখন কর্মশালা (creative writing workshop)-র প্রশিক্ষকের কায়দায়। পরিমল নামে এক আমীন সোনাতলা গ্ৰামে পনের দিন ধরে কাজ করেও জমির মাপজোখ সম্পূর্ণ করতে পারে না শুধুমাত্র নানান শরিকি ঝামেলার কারণে। গ্ৰামবাসীরা কমিশনের বড় সার্ভেয়ারকে ডেকে পাঠালে তাঁর গাড়ি পেট্রোল ফুরিয়ে যাওয়ায় গ্ৰামের দেড় কিমি আগে দাঁড়িয়ে যায়। পায়ে হেঁটে রওনা দিলে পথে লরির ধাক্কায় গুরুতর জখম হন তিনি। বহুদিন পরে ঐ সার্ভেয়ারের সঙ্গে দেখা হয় আনসারউদ্দিনের। তিনি তখনও কর্মরত। কিন্তু ক্রাচে ভর করে হাঁটতে হয়, কারণ অপারেশানের পর একটি পা ছোট হয়ে যাওয়ায় মাটির দু ইঞ্চি উপরে ভেসে থাকে। বাস্তব ঘটনা যেখানে এই পর্যন্ত থেমে যায়, সেখানে আনসারউদ্দিন খুঁজে পান এক irony -- জীবনের অধিকাংশ জুড়ে যে মানুষটাকে জমিজমা মেপে যেতে হচ্ছে তাঁরই একটা পা কোনওদিনই ছোঁবে না জমিকে। দ্বিতীয় যে ঘটনা তিনি শোনান সেখানে এক দর্জির কাছে এক মহিলা এসেছিলেন তাঁর বিয়ের শাড়ির ব্লাউজ বানাবেন বলে। ব্লাউজের কাপড় যে শাড়ির সাথেই দেওয়া আছে তা খেয়াল না করে দর্জি তাড়াহুড়োয় ঐ শাড়ি থেকেই কাপড়ের টুকরো কেটে নেন। এবার যখন শাড়িটি মহিলাটির হাতে ফেরত দেন ঐ মহিলা ক্ষুব্ধ হন এবং ঐ শাড়িটি দর্জিকেই কিনে নিতে বাধ্য করেন। বাস্তব ঘটনার এখানেই ইতি। এরপর আনসারউদ্দিনের কল্পনার জাদুকাঠির ছোঁয়ায় ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। গরিব দর্জি দামি শাড়িটির কাটা টুকরোটা আবার জোড়া লাগিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে উপহার দেন। এমন দামি শাড়ি পেয়ে গৃহিণী খুব খুশি। কিন্তু অচিরেই এই খুশি ক্ষোভে পরিণত হয় যখন সেলাইটা চোখে পড়ে। তখন অভিমানী ক্ষুব্ধ বউকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে দর্জি যে কথা বলেন তা উপস্থিত শ্রোতাদের উপলব্ধির স্তরে উন্নীত করে -- ঐ শাড়ি হয়তো পরতে পরতে ছিঁড়ে যাবে ফেঁসে যাবে, তবুও সেলাইটা কোনওদিনই যেমন খুলবে না, ঠিক তেমনই তাঁদের দাম্পত্য নানা ওঠাপড়ায় ঘাতপ্রতিঘাতে সম্পৃক্ত হবে, তবুও তাঁরা দুজন কোনওদিনই আলাদা হবেন না।
সময় থেমে থাকে না। শহর নির্মাণ হয়। গ্ৰাম নির্মাণ হয়। মৃত্যু অপঘাত জ্বরজ্বালা বন্ধ হয় না। তবু তারই মধ্যে মানুষের বেঁচে থাকা, মানুষের উঠে আসা। আর তারই মধ্যে আনসারউদ্দিন মনে করেন লেখকের ঈশ্বর হয়ে ওঠা। লেখকের নিজেকে ভাঙ্গাগড়া। সব শেষে, নিজের স্বল্প সংখ্যক পাঠককুলের সাথে 'একক মাত্রা'র মতো পত্রিকার প্রকাশ অনুষ্ঠানের অতিথি বক্তা হওয়ার সম্মান ভাগাভাগি করে নেন আনসারউদ্দিন। উপস্থিত সকলের প্রভায় তিনি প্রভাবিত হলেন, সম্মাননীয় শ্রোতাদের উপস্থিতিতে তিনিও সম্মানিত হলেন, এই বলে সকলের শুভ কামনা করে এবং সকলকে তাঁর অভিনন্দন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন।
'একক মাত্রা'র অন্যান্য আড্ডা বা জমায়েতের মতোই এবারেও অনুষ্ঠানের শেষে আগত পাঠকবন্ধুরা পত্রিকার পুরনো সংখ্যা ও বইপত্র কেনেন। কেউ কেউ গ্ৰাহক হন। সব থেকে আনন্দের কথা আনসারউদ্দিনের লেখা বই ঢেলে বিক্রি হয়। এখন পরের সংখ্যার মোড়ক উন্মোচনের দিন ৪ঠা নভেম্বরের জন্য অপেক্ষা। সেদিনের অতিথি বক্তা আশীষ লাহিড়ী। বিষয়ঃ তথ্য নিছক তথ্য নয়।
বক্তব্যের রেকর্ডিং আপলোড করে দিলে আরো ভাল হয়।
ReplyDeleteমাইক ছিল না তাই রেকর্ডিং দুর্বল।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো ।অনুপ্রাণিত হলাম ।
ReplyDeleteপ্রিয় লেখকের বক্তব্য শোনার জন্য সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারার আক্ষেপ কিছুটা হলেও মিটল। ঐ সুগার ফ্রি দিয়ে তৈরি সন্দেশ খাওয়া আর কি!
ReplyDeleteলেখার মধ্যে এক আদ্ভুত ভাললাগার আনুভুতি লক্ষ্য করলাম। লেখক আনসারউদ্দিন গ্রাম বাংলার জনজীবন সম্পর্কে যে ভাবে তার আনুভাতি প্রকাশ করলেন তা আতুলনিও। গ্রামে আমার ছোট থেকে বড় হয়ার আনেক স্মৃতির মিল এই লেখায় খুজে পেলাম। ধন্যবাদ একক মাত্রা কে।
ReplyDelete