নির্বাচনী মসকরা ও বর্বরতার কথা
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
নূতন কুমার। বাবার
দেওয়া নাম। বড় হয়ে নূ’কে পালটে করলেন ‘নিউ’ আর ‘তন’কে ‘টন’- নিউটন। সেই থেকে তিনি
নিউটন কুমার। সরকারি চাকরি পাওয়ার পর বাবা-মা নিয়ে গেলেন পাত্রী দেখাতে। গিয়ে
দেখেন পাত্রীর বয়স ষোল। বেঁকে বসলেন, নাবালিকা বিয়ে করবেন না। এ হেন নিউটন কুমার
এবার চলেছেন দণ্ডকারণ্যের মাওবাদী অঞ্চলে লোকসভা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে।
গল্পটা বলে দিলে ছবি
দেখার উত্তেজনাটাই মাটি হবে। বলার এইটুকুই, যে গ্রামের স্কুলে নিউটন অবশেষে
পৌঁছলেন ভোট নিতে, সেই গ্রাম ও স্কুল তখন ভগ্নস্তূপ। গ্রামের মানুষেরা আশ্রয়
নিয়েছেন সরকারি রিলিফ ক্যাম্পে আর স্কুলটি পড়ে আছে ভাঙ্গাচোড়া চেহারা নিয়ে। কেন? নিউটনের
করা এই প্রশ্নে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারের উত্তর, ও নিয়ে আপনি ভাবছেন কেন,
আপনি ডিউটিতে এসেছেন আমরাও ডিউটি করছি। সঙ্গে থাকা স্থানীয় মেয়েটি জানিয়ে দিল,
এখানে খনির কাজ হবে, তাই মাওবাদী দমনের নাম করে নিরাপত্তারক্ষীরা গ্রামটিকে
জ্বালিয়ে দিয়েছে।
ভোট পর্বের আয়োজন
শুরু হয়। বেলা গড়ায়। একটি মানুষকেও দেখা যায় না ভোট দিতে আসতে। ওদিকে ডিআইজি ফোনে
জানান দেন, বিদেশি এক টেলিভিশন crewকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আসছেন মাওবাদী অঞ্চলে
নির্বাচনী পর্ব কত শান্তিপূর্ণ ভাবে হচ্ছে তা দেখাতে। আধা-সামরিক বাহিনী নেমে পড়ে
তৎক্ষণাৎ। বন্দুকের ডগায় ভোটার ধরে আনতে। বাকীটা দেখে নিন ছবিতে।
সরকারি অফিসের এক
সামান্য কেরানি নিউটন তাঁর স্বাভাবিক ডিউটির খাতিরেই বিধি অনুযায়ী যে ভাবে
নির্বাচন সমাধা করার কথা, সে ভাবেই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় নির্বাচনী
মসকরার বীভৎস মজা এই যে, তা বাস্তবের মাটির সঙ্গে একেবারেই মেলে না। পদাধিকারীরাও
চান না তা মিলুক। তাই যা হবার তাই হল। লাঞ্ছিত, প্রহৃত নিউটন অবশেষে প্রাণে বেঁচে
ফিরলেন। মাঝখানে ঘটে গেল যা ঘটে, যা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে।
অমিত মুসকারা
পরিচালিত ‘নিউটন’ ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থার এই করুণ ও হাস্যকর চিত্রটি দ্ব্যর্থহীন
ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছে। নিউটনের ভূমিকায় রাজকুমার রাও অনবদ্য অভিনয়ে এক সাধারণ
মানুষের ভেতরের যন্ত্রণা ও কিছু করার তাগিদকে তুলনারহিত ভাবে পেশ করেছেন।
এই ছবিটি
থেকে যাবে বালকের সেই দ্বিধাহীন প্রশ্নবাণের মতোঃ রাজা তোর কাপড় কোথায়?
ছবিটা তো দেখতেই হচ্ছে!
ReplyDeleteআমাদের বন্ধুরা দেখেছে।
ReplyDeleteঅবাক কাণ্ড, কেউ কোনো বিসদৃশ্য কিছু ঝুঁজে পেয়েছে এমন মনে হলনা। রঙ দে বাসন্তী যখন মেইন স্ট্রিম সিনেম হয়, তখন সেটা আশা জাগায় বটে, কিন্তু খুব বেশি নয়।
নিউটন কতটা ধাক্কা মারতে পারবে, আমাদের মতো এই সবজান্তাদের গায়ে, সন্দেহ আছে।