Friday, 10 October 2014

আমার প্রতিবেশী খাগড়াগড়



প্রতিবেশীরা ভাল থাকুন

অর্ধেন্দু আর্য বন্দ্যোপাধ্যায় 

বর্ধমানের বাবুরবাগে আমার বাড়ি। এ কথা বললেই আশাকরি যথেষ্ট বলা হল। এই এলাকার উত্তর-পশ্চিমে খাগড়াগড় ও অন্যান্য পুরো বিস্তৃত এলাকা যা আমার বাড়ি থেকে মিনিট ২এর রাস্তা ও মুসলিম অধ্যুষিত - উত্তরে নজরুলপল্লী মুসলিম এলাকা, পূর্বে বাতানপাড়া মুসলিম এলাকা, পশ্চিম ও দক্ষিণে বাবুরবাগ কালিতলার একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ মুসলিম এলাকা। প্রত্যেকটি এলাকা আমার বাড়ি থেকে ১ থেকে ২ মিনিটের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ, আমি চতুর্দিকে মুসলিম অধ্যুষিত প্রতিবেশীদের ঠিক মাঝখানে থাকি – ভীষণ শান্তিতে ও মেলবন্ধনে, যা ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছিআচমকা দুর্গাপুরে থাকতে খবর পেলাম বিস্ফোরণেরতারপর থেকে আজ অবধি যা হচ্ছে তা সকলেই জানেন

বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতির অত্যন্ত স্পষ্ট রূপ হল আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ক। সেখানে বিজেপি এখন বিধানসভা দখলের লড়াইতে নেমেছে যদিও তাদের সংগঠন তেমন জোরালো নয় এই মুহূর্তে। তবে কেন্দ্রে তাদের সরকার হওয়াতে জোর খানিকটা বেড়েছে। সুতরাং, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক, যারা গুজরাতের দাঙ্গা সম্পর্কে সামান্য হলেও অবগত, তাঁদের ভোট অন্যদিকে যাওয়া দুষ্কর। ফলে, সমগ্র হিন্দু ভোট যা তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসে বিভক্ত, তাকে যদি একত্রিত করা যায় তবে বিজেপির সুবিধা ১৫ আনাঅন্যদিকে তৃণমূল যে ভাবে সংখ্যালঘু তোষণ করেছে, ফলে বহু হিন্দুরা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুটছেন, সে কথা বিজেপির অজানা নয়। আরও একটা বিষয় মিডিয়ার মাধ্যমে এসেছে যে সীমান্তে ভারতীয় জনগণ ও সেনার ওপর পাকিস্তানের আক্রমণ এবং ঈদের মিষ্টি ফেরত দেওয়া। ফলে, সেখানে ভারতীয়রা জবাব দিয়েছে এবং একজন বিখ্যাত বিজেপি নেতা (উনি মন্ত্রীও না!) বলেছেন, ‘উনকো সমঝনা চাহিয়ে কি ভারত মে জমানা বদল গয়া’এর মধ্যে হঠাৎ করে পূর্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রায় না থাকা এমন একপ্রকার ঘটনা হিসেবে বর্ধমানের বিস্ফোরণে ইউসুফ শাকিল প্রভৃতি ও সঙ্গে তৃণমূল’এর নাম যেভাবে খবরে আসছে তা পরিস্থিতিকে সন্দেহজনক করছে।
নোয়াম চমস্কি তাঁর ‘গণমাধ্যমের চরিত্র’ গ্রন্থে বলেছেন যে, কোনও দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হলে আগে তার জন্য জনগণের স্বীকৃতির দরকার হয়। যেমন ভিয়েতনাম আক্রমণের জন্য বলা হয়েছিল অন্যের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করার জন্যই এই ব্যবস্থা। একইভাবে জার্মানের ক্ষেত্রেও হলোকাস্টের সময় একই প্রচার করা হয়। সুতরাং যে যাই করুক, সেটা যে ঠিক করছে তার জন্য দরকার হয় গণস্বীকৃতির আর সেটা তৈরি করতে হয়। মতামত তৈরির হাজারটা কৌশল এখন সকলের জানা। এ কাজে মিডিয়া সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেগুজরাতেও কি তাই হয়নি? পশ্চিমবঙ্গেও কি তা হবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে?

এলাকার সাধারণ মানুষের অবস্থা খুব ভয়ানক। কেননা বর্ধমানবাসী এসব কখনও দেখেনি এবং যাদের নাম আসছে তারা প্রায় সাধারণ লোকের সাথে মিশত না। মুসলিম সমাজেও উচ্চ ও নিম্ন স্তর আছে। হজে যাওয়া মুসলিম সাধারণত আলাদা থাকে। এটা ভদ্রলোক ছোটলোকের মধ্যেকার মতো একটা ব্যাপার। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এই অঞ্চলে ঘর ভাড়া দেওয়া একটা রোজগারের অন্যতম উপায়। সে পথে এই ঘটনা বেশ আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে কিছু লোকজন মুসলিমদের দেখলে কিছু মন্তব্য এমনভাবে করছে যে তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার ব্যাপার।

যে ভাবে আমার প্রতিবেশী জনগণ, আমার শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকগণ কথা বলছেন, যে ভাবে হিন্দুরা মুসলিম ভাইদের দেখলেই জঙ্গী বলে মনে ভুল ধারণা করে ফেলছেন, তা দুশ্চিন্তার কারণ। আর এই ব্যাপারকে আরএসএস কিংবা বিজেপি যে কাজে লাগাবে না তা বলি কীভাবে? আমি স্রেফ চাই আমার প্রতিবেশীরা যেন আমাদের একসঙ্গে দীর্ঘদিন কাটিয়ে আসা অতীতের দিনগুলো ভুলে না যান তা যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, যে অবস্থাই প্রচার করে তৈরি করা হোক না কেন। আমি চাই পশ্চিমবঙ্গে আর যাই হোক গুজরাতের সেই রাতগুলো যেন না নেমে আসে। পুলিশ প্রশাসন নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন, দলের কথা পরে ভাববেন, অন্তত এখন নিজেদের পরিবারের কথা ভাবুন।

1 comment:

  1. The Dominant Minority* : Reason and Solution

    দুটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই পড়ার জন্য নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ...

    http://soukumarjyo.blogspot.in/2014/10/the-dominant-minority-reason-and.html

    ReplyDelete