সিনেমা বেঁচে গিয়েছে আম-আদমির অকৃত্রিম আবেগে
অমিতাভ নাগ
বিখ্যাত সমালোচক পলিন কেল
তাঁর একটি প্রবন্ধে একবার বলেছিলেন -“One’s
movie-going tastes and habits change—I still like in movies what I always liked
but now, for example, I
really want documentaries. After all the years of stale-stupid acted-out
stories, with less and less for me in them, I am desperate to know something,
desperate for facts, for information, for faces of non-actors and for knowledge
of how people live—for revelations, not for the little bits of show-business
detail worked up for us by show-business minds who got them from the same
movies we’re tired of.” পলিন কেলের এই ইচ্ছেটা কিন্তু আরো অনেক দর্শকের মধ্যেই ছিল
অনেকদিন ধরেই, এবং তা শুধুমাত্র হলিউডেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় সিনেমাতেও অনেক আগে
থেকেই তাই প্রচলিত ধারা (যাকে বোঝার সুবিধার্থে ‘কমার্শিয়াল’ ছবি বলা যায়)-র পাশে পাশে চেষ্টা হয়েছে কিছু ‘প্যারালাল’ ঘরানার। কখনও নাম ছিল ‘আর্ট’
সিনেমা, কখনো ‘সমান্তরাল’ আর এখন ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ কিংবা ‘ইন্ডি’। এই নামকরণের সার্থকতা কিম্বা তাঁর সংজ্ঞা এখানে বিবেচিত বিষয় নয় – বরং আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই ধারা বিষয়ে কয়েকটি অন্য কথা দেখে নেওয়া যাক।
শিপ অফ থিসিয়াস ছবির
পরিচালক আনন্দ গান্ধী খুব স্মার্টলি একটা কথা বলেছেন সম্প্রতি - “There is a set of people that has
been engaging with world cinema, because of film festivals, retrospectives and
the internet, and know that this kind of introspective film is what they’re
starving for, and crave similar content from India. Even if we’re only talking
about 2% of the total population, that’s about a crore (10 million) people!
Then, there is the potential audience that has not been groomed to this kind of
cinema. They may not immediately fall in love with it when they watch it, but
they will see that this is the kind of cinema that they want to engage with.” কেবল গান্ধী নন, আরো বেশ
কিছু ভারতীয় ‘ইন্ডি’ ফিল্মমেকারদের কথায় এই একটা আশার কথা শোনা যাচ্ছে । কিন্তু এই ২ শতাংশকে পেতে
গেলেও, তাদের ফোকাসে নিজের সিনেমাটা আনতে গেলে অন্তত দুটো জিনিস লাগবে – নিজের ছবিটাকে ব্র্যান্ড করতে হবে ‘আলাদা’ রূপে – ইউনিক কিছু একটা, এবং এর সাথে সাথে কিছু প্রতিষ্ঠিত ফিল্মের লোক কে দিয়ে ছবির
পরিবেশনা করাতে হবে। ঠিক যেভাবে বাকিটা
ব্যক্তিগত ছবির পরিবেশনা করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায় কিংবা শিপ অফ থিসিয়াস
করলেন কিরন রাও। কিরন রাও শিপ অফ থিসিয়াস ছবির উপস্থাপনায় বল্লেন – “It’s not a film that can take a
wide audience. Everybody can’t walk in and watch this film because they are not
prepared for this kind of cinema, and then they might be disappointed.” অর্থাৎ, আপনাকে নিঃসন্দেহে
ইন্টেলেকচুয়াল হতে হবে না হলে এ ছবি আপনি বুঝবেন না জনাব। এটা বেশ একটা মজার
সমীকরণ – যেখানে আপনি হতে চাইবেন এক্সক্লুসিভ ওই ২ শতাংশের একজন, অন্তত সিনেমার
ক্ষেত্রে আপনি তো আর ‘আম আদমি’ নন।
সিনেমার এই গণতান্ত্রিকরণে
অবশ্যভাবে যে কারণটি সর্বাগ্রে মনে আসবে সেটা হল ডিজিটাল রেভলিউশন – এই যে আপনার হাতের হ্যান্ডিক্যামটি ছিল যা দিয়ে আপনিও জানতেন কোন সিনেমা ‘লুক’ আনা যায় না, সেই কনসেপ্ট কে লাথি মেরে ডিজিটাল সিনেমা এখন মোবাইলেও তোলা
হচ্ছে, এবং সবাই দেখছেনও। হলে রিলিজ না হলেও চলে, ইউটিউব আছে না! অর্থাৎ আপনার
মনের ভিতর ভিড় করে আছে যে সব গল্প গুলো সেগুলো আপনি এখন সাহস করে ভেবে ফেলতে পারেন
কিভাবে চলচ্চিত্রায়িত করবেন ।
প্রোডাকশন ও ডিস্ট্রিবিউশন যেমন আপনি প্যারালেলই ভাবতে
পারছেন সেরকমভাবে আরেকটি সমান্তরাল ঘটনা – সমালোচনা । ডিজিটাল যেমন
ভাবে সস্তা করে দিচ্ছে মেকিং ও ভিউইংকে, ঠিক এক ভাবে সে সমালোচককেও করে দিচ্ছে
রিডানডেন্ট। সবার হাতে যেভাবে ক্যামেরা উঠে এল, সেভাবেই সবার হাতে এসে গেল পেন ও,
থুড়ি কীবোর্ড। তাই ফেসবুক হোক বা টুইটার, সর্বত্র বিরাজ করছেন ফিল্ম ক্রিটিক। প্রথাগতভাবে সমাজে সমালোচকের ভূমিকা এবং স্থান একই সঙ্গে সম্মানের
এবং অনেক সময়ে পরিহাসেরও। কিন্তু একজন সমালোচক কখনোই গুরুত্বহীন ছিলেন না। একটি সমালোচনামূলক লেখার মুখ্য ভূমিকা থাকে স্রষ্টা ও
দর্শকের মধ্যেকার সেতুটি গ্রন্থনা করার, তাকে লালন করার, শুধুমাত্র দর্শককে হলে
পাঠানো বা না পাঠানো তার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না।
সামাজিক মিডিয়ায় তথ্য বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর
কনসিউমারকেও প্রভাবশালী
করতে একটি সচেতন প্রচেষ্টা আছে – সেই আম আদমি যার মতামত, ইচ্ছে কিংবা অপ্রীতি জেনে নিয়ে মনে
রাখার সময় হয়েছে বলে ধারণা যেকোনো কর্পোরেট সংস্থারই। এই সুবিশাল তথ্য যার নাম
দেওয়া হয়েছে ‘বিগ ডাটা’ তা থেকে বাজার-প্রবণতা নির্ণয়ের জন্য অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করা শুরু হয়েছে, চলছে
ট্রেন্ড নির্ণয়, ক্রেতার মন বোঝার প্রচেষ্টা । সেভাবেই লক্ষ লক্ষ টুইটার ঘেঁটে যে কোন
সিনেমা সম্বন্ধে ইতিবাচক বা নেতিবাচক অনুভূতি আহরণ করে ধার্য করা
হচ্ছে সোশাল সেন্টিমেন্ট ইন্ডেক্স - সামাজিক ভাবপ্রবণতার সূচক, যা ইন্ডিভিডুয়াল
হয়েও কালেক্টিভ, তথ্য ছেঁচে এই ‘জ্ঞান’ সত্যিই
একটি বিপ্লব। সবচেয়ে বড় কথা, যেহেতু সোশাল মিডিয়ায় মানুষের ভারডিক্ট
সূচককে নির্ণয় করছে অতএব আপনাকে আর সেই তথাকথিত আঁতেল সমালোচকের মতামত স্পর্শ করবে
না। USC Annenberg
Innovation Labএর ডিরেক্টর জোনাথন তাপলিনের মতে - "In
the past, box office receipts indicated success or failure. Thanks to advances
in analytics, movie makers now have the ability to analyze the public
sentiments of their viewers in real time. With technologies such as the Film
Forecaster, movie studios such as Lionsgate can go beyond receipts, to truly
understand the voice of the crowd." - আপনি বেশ কিছু টুইট পড়ুন ইতিবাচক ও
নেতিবাচক এবং তার পর ঠিক করুন সিনেমাটি আপনার দেখার, আপনার সময়ের
যোগ্য কি না ।
আমাদের সেই
আরাম-কেদারীয় সমালোচক কোথায় যাবেন তবে? তিনি হয়ত আরো কিছুকাল থেকে যাবেন,
অভিভাবকের মত, ‘নিউ মিডিয়া’ তথা ডিজিটাল মিডিয়া র মত নবীনদের মাঝেই। কিন্তু যে ডেমোক্রেটিক মেথডে সিনেমা
চলে এল হাতের মুঠোয়, তার শেষ স্টেপে এসে এই পালাবদল অব্যশ্মভাবী। শিপ অফ থিসিয়াস
ছবির শেষে একটি হ্যান্ড-হেল্ড ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা একটি গুহার ভিতর দেখানো
হয়েছে । এই শর্ট ফিল্মের রুপকার সেই মৃত ব্যাক্তি যার বিভিন্ন অঙ্গ বিভিন্ন মানুষ
পেয়ে সুস্থ হয়েছেন । সেই গুহাচিত্র অবিলম্বে মনে পড়াবে প্লেটোর গুহার রূপককে –
সমাজে একজন দার্শনিকের প্রয়োজন আলোর দিশারী রূপে, যে বাকি ‘অন্ধ’ মানুষদের আলোকিত করে রাখবে।
এই ‘দার্শনিক’ ‘ফিল্ম-ক্রিটিক’ সম্পর্কের যে স্কোপ আগে ছিল, তার অভিধা ও অভিঘাত পাল্টে গিয়েছে, সমীকরণ
এক থেকেও। আর ঠিক একারণেই আমি-আপনিই ফিল্ম-মেকার, দার্শনিক, চলচ্চিত্র সমালোচক এবং
সর্বোপরি চলচ্চিত্র-প্রেমী। সিনেমা তাই আর মুষ্টিমেয়র অশ্লীল বুদ্ধি-বৃত্তির ত্র্যাপিজ
খেলা নয়, সিনেমা বেঁচে গিয়েছে আম-আদমির ভাব, ভালবাসা, স্বপ্ন ও সমালোচনার অকৃত্রিম
আবেগে ।।
===
No comments:
Post a Comment