Friday, 16 September 2016

জল যখন বিবাদ

কাবেরীর জল নিয়ে ধুন্দুমার
স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়
কাবেরীর জল বণ্টন নিয়ে উত্তাল কর্ণাটক তামিলনাড়ু রাজ্য ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে কর্ণাটকে জনজীবন প্রভূত পরিমাণে ব্যাহত হয়েছে রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি পুড়েছে, পেট্রল পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাস ডিপোতে বাস পোড়ানো হয়েছে অসংখ্য, দোকান, স্কুল অলিখিতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দুই রাজ্যের মধ্যে জল নিয়ে সমস্যা কিন্তু আজকের নয়। অন্তত দেড়শ বছর ধরে কাবেরীর জল দুই রাজ্যের মানুষকে শত্রু বানিয়ে আসছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ সরকারের আমলে মাইসোর মাদ্রাজে কাবেরী নদীর জল ভাগ করে ব্যবহারের আইন করা হয়েছিল, যাতে দুই রাজ্যের মানুষই সমানভাবে জল ভাগ করতে পারে প্রসঙ্গত, কাবেরী দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী কুর্গ থেকে নদী উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকের কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু হয়ে পন্ডিচেরীকে স্পর্শ করে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে কাবেরীর জল কিন্তু বৃষ্টি নির্ভর, তাই জুন সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি বায়ুর জন্যে বৃষ্টিপাত হলে নদী গর্ভিণী হয়ে ওঠেকিন্তু তামিলনাড়ুতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস অবধি বৃষ্টি খুবই কম হয় তাই ওই সময় কর্নাটকের থেকে কাবেরীর জল না পেলে গোটা তামিলনাড়ু জলের অভাবে শুষ্ক হয়ে ওঠে কর্ণাটক থেকে জল পেলে তামিলনাড়ু পন্ডিচেরীকে কিছু জল দিতে পারে সুতরাং, কর্ণাটকের কাবেরীর জল আরও দুটো রাজ্যকে জীবিত রাখে কর্ণাটক কিন্তু এই জল দিতে নারাজ তাই দুই রাজ্যে বন্ধুত্বের বদলে শত্রুতার আবহ দেড়শ বছর ধরে চুক্তির পর চুক্তি হয়েছে, ভেঙেছে, পাশাপাশি দুই রাজ্যের মানুষের অন্তরে তিক্ততা নদীর মতোই গভীর অনন্ত হয়ে বয়ে চলেছে কর্ণাটকীরা কাবেরীকে বিভিন্ন বাঁধে বেঁধে জল ধরে রেখে তা কৃষিকাজ ছাড়াও বিভিন্ন উদ্দেশ্যমূলক কাজে ব্যবহার করে চলেছে কেরালার কিছু নদী থেকে কাবেরীতে জল এসে মেশে এরা সে জলও ধরে রেখে প্রতিবেশী রাজ্যকে বঞ্চিত করে চলেছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি চেয়েছিলেন, কাবেরীর জলকে সমানভাবে বন্টন না করতে চাইলেও অন্তত কর্ণাটকের অধিবাসীরা তামিলনাড়ুকে প্রয়োজনের জলটুকু যেন দেয় তাই নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন সেভাবেই কিন্তু সে নির্দেশ মানেনি কর্ণাটক তাই তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তামিলনাড়ু যেখানে কুড়ি হাজার কিউসেক জল তাদের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে, কর্ণাটক দশ হাজারেরও কম জল দেবে হয়তো দয়া করে সুপ্রিম কোর্ট ১৫০০০ কিউসেক জল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু কর্ণাটক বিমুখ। তাই অবশেষে ১২০০০ কিউসেক জল যাতে তামিলনাড়ুকে কর্ণাটক দেয় দশ দিনের মধ্যে এমন নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছে কর্ণাটকীরা এটাও মেনে নিচ্ছে না রাজনীতির কূটপক্ষ এদের সহায়ক হয়েছে কর্ণাটকের রাস্তায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে মিছিল বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে দুই রাজ্য কর্ণাটকে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে মাদ্রাজিদের কাফে, মিষ্টির দোকান, বেকারি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাদ্রাজি ভেহিকেল নম্বরওয়ালা গাড়ি, মোটরবাইক অনুরূপভাবে তামিলনাড়ুতেও একই কাণ্ড চলেছে তারা পোড়াচ্ছে, নষ্ট করছে কর্ণাটকীদের জিনিস, যানবাহন, দোকান
পরিস্থিতি কবে শান্ত হবে বলা মুশকিল কর্ণাটকবাসীরা যদি নমনীয় না হয় সমস্যা আরও বেড়ে যাবে আরও আগুন জ্বলবে একটা নদী যে মানুষের মধ্যে এত ব্যবধান আনতে পারে কাবেরী তার প্রমাণ

No comments:

Post a Comment