তুই চোর না মুই চোর?
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
নারদ ডট কমের ঘুষকাণ্ড
নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের ১৬ মার্চের সম্পাদকীয়তে বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে
মাত্র ৫ লাখ টাকাকে সৌগত রায় মহাশয় ‘এত টাকা!’ বলে প্রায় ভিমরি খেতে বসেছিলেন! অতএব
তাদের পরামর্শ, রাজ্য সরকার তাদের জমি নীতি বদলাক (জোর করে জমি অধিগ্রহণ মেনে
নিক), সেজ গড়ার অনুমতি দিক এবং শিল্পপতিদের সব আবদার মেনে নিয়ে এখানে কর্পোরেটদের
জন্য সব উন্মুক্ত করে দিক যাতে রাজ্যে ‘শিল্পের বন্যা বয়ে যায়’ এবং সৌগতবাবুরা
তখন আরও বেশি টাকা দেখতে পাবেন এবং ঘুষ খাওয়ার অঙ্কেও এ রাজ্য একেবারে পিছনের
সারিতে থাকবে না। আহা! কী অপূর্ব নিদান!! অর্থাৎ, ঘুষ একটি স্বাভাবিক ঘটনাক্রম
মাত্র এবং এ ক্ষেত্রেও টাকার অঙ্ক এ রাজ্যে এতটাই কম পড়িতেছে যে তা অতিশয় লজ্জার কারণ।
রাজনীতিবিদ ও
জনপ্রতিনিধিরা দেদার টাকা খাবেন ও তার বিনিময়ে পয়সাওয়ালাদের কাজ করে দেবেন এতে আর
আশ্চর্য কী। চুরি ধর্ম মহা ধর্ম যদি না পড় ধরা! নারদের ফাঁদে স্বেচ্ছায় পা দিয়ে
ধরা পড়েছেন এ রাজ্যের কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি। তা সে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রই হোক কি
বিরোধীদের কৌশল, হাতে হাতে গরম টাকা নেওয়ার ছবিটিকে doctored বলে কেউই উড়িয়ে দিতে পারছেন না।
সামুয়েল ম্যাথু, যিনি এই অপারেশনটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনিও এইসব কাজে পাকা মানুষ
এবং কাজটি বেশ গুছিয়ে করেছেন। কবেকার ছবি কবে প্রকাশ পেল, কে টাকা যোগাল,
নির্বাচনের প্রাক্কালেই বা এটা প্রকাশ করা হল কেন – এইসব প্রশ্ন উঠলেও যারা
অভিযুক্ত তাঁরা কিন্তু কখনই বলতে পারছেন না যে তাঁরা এই ছবিগুলিতে নেই বা এরকম কেউ
এসে তাঁদের বাণ্ডিল বাণ্ডিল টাকা দেয়নি। অর্থাৎ, ছবি মোতাবেক টাকা দেওয়া হয়েছে এবং
কুশীলবরা তাঁদের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যে নিজ নিজ প্রকাশে তা স্বহস্তে গ্রহণ করেছেন।
এই পর্যন্ত গেল
বাস্তবতার দিকটি। অপর পারে থাকে নীতিমালা ও করণীয়। এ দেশে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক
দলই কর্পোরেট পুঁজির দেদার টাকায় (প্রকাশ্যে ও গোপনে) চলে ও তাদের স্বার্থরক্ষায়
সর্বাগ্রে মুখর থাকে। বিজয় মাল্য রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের ৯০০০ কোটি টাকা মেরে দিয়ে
দিব্যি দেশের বাইরে পালিয়ে গেল – শাসক রাজনৈতিক দলের বদান্যতা না থাকলে কি তা
সম্ভব ছিল? আদানি-আম্বানিদের লক্ষ কোটি টাকার অদেয় ব্যাংক ঋণ মকুব করল বর্তমান
কেন্দ্রীয় শাসকেরাই। কার টাকা, কত টাকা, দেশ জুড়ে কারা লুঠছে? এগুলোর কোনও স্টিঙ
অপারেশন হয়তো হয়নি। হয়তো প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না কে কাকে কোথায় কীভাবে টাকা
দিচ্ছে। কিন্তু তা বলে যেগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলোকে তো অস্বীকার করা যাবে না।
টাকার পরিমাণ ৫ লাখ হোক কি ৫০০০ কোটি –
তার থেকেও বড় বিপর্যয় এই যে, আমাদের ভোট, আমাদের আস্থা, আমাদের সমর্থনে জনপ্রতিনিধিরা
এইসব করে চলেছেন দিনের পর দিন, প্রতি মুহূর্তে।
দিল্লিতে আপ তাদের চাঁদা
সংগ্রহের একটি স্বচ্ছ পদ্ধতি গড়ে তুলেছে। তাদের এক এমএলএ কিছুদিন আগে ঘুষের
অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। অন্তত, এটুকু তো আশা করা যায়,
যাদের ছবি নারদ কাণ্ডে দেখা গেল, তার একটা দ্রুত তদন্ত করে এঁদের মধ্যে এবার যারা
বিধানসভার প্রার্থী আছেন তাঁদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে নতুন প্রার্থী দাঁড় করানো হবে।
এ কাজ করার হিম্মত যদি না থাকে তবে থোরভরিখারা’র মতো ‘তুই চোর না মুই চোর’ এই তক্ক
চলতেই থাকবে আর তার সঙ্গে লুঠতরাজও। আর আনন্দবাজারও টিটকিরি কাটবে – মাত্র ৫ লাখেই
সব কাত? লোভী চোখগুলো ছবিতে যেমন দেখা গেল, তাতে তো তাই-ই, নাকি?
খুব ভাল লাগল । নির্বাচনী আবহে ঘুষ কান্ডের রাজনৈতিক মোকাবিলা নিয়ে একটা কিছু লেখার বাসনা ছিল । এখনো শরীর পারমিট করছে না । দেখি পরে লিখে উঠতে পারি কি না ।
ReplyDelete