শাশ্বতী ঘোষ এবং তাহাদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি
দেবব্রত চক্রবর্তী
২ ফেব্রুয়ারি
আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘কার মানবাধিকার? নৃশংস ধর্ষকের ?' এই শিরোনামে শাশ্বতী ঘোষ একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন । লেখাটি কেবলমাত্র শাশ্বতী ঘোষের হলে
কথা ছিল কিন্তু লেখাটি রক্তের বদলে রক্ত, চোখের বদলে চোখ ও বদলার পবিত্র কর্তব্যের সমর্থকদের আধুনিক উচ্চারণ। গণতান্ত্রিক দেশে সীমিত দুই একটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে যে যা খুশি
উচ্চারণ করতেই পারেন। কিন্তু তা যদি হয় ধর্ষণের ঘটনার বাহানায় মৃত্যুদণ্ড নামক বর্বরতার সমর্থনে মত প্রচার অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ( এক্ষেত্রে ধর্ষণ এবং হত্যা ) মানবতাবাদ সুরক্ষার সপক্ষে সমর্থন আদপে অন্যায় এই বলে সদর্পে ঘোষণা, তাহলে শাশ্বতী ঘোষকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত,
সিলেক্টিভ মরালিটি এবং বিশুদ্ধ দ্বিচারিতা সমার্থক। যে কোনও
গুরুতর অপরাধ, লুণ্ঠন, হত্যা এবং ধর্ষণ
যদি নিন্দনীয় হয় তাহলে সেই মরাল জাজমেন্ট সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কামদুনির ঘটনার চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
করব আর আসাম রাইফেল দ্বারা মনোরমার ধর্ষণ এবং হত্যার বিষয়ে পাথরের নীরবতা অবলম্বন করব এ এক বিশুদ্ধ দ্বিচারিতা বই অন্য কিছু নয়। যে কোনও নৈতিকতার প্রাথমিক এবং মূল শর্ত তার সার্বজনীনতা - কারও
জীবন নেওয়া যদি গুরুতর অপরাধ হয়, তাহলে সর্বক্ষেত্রেই তা হওয়া উচিত। পেটি সমাজবিরোধীর চাকুর আঘাতে হত্যা অথবা পুলিশের গুলিতে ম্রিত্যু, ডাক্তারের হাতে সূচের ঘায়ে হত্যা অথবা রাষ্ট্রের ফাঁসিকাঠে
ঝুলিয়ে
হত্যাও
একই
অপরাধে
অপরাধী। হত্যা হত্যাই। এক হত্যার শাস্তি হিসাবে ফাঁসিকাঠে অথবা প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে হত্যা -
সেই মরাল জাজমেন্টের প্রাথমিক এবং মূল
শর্ত সর্বজনীনতাকে
অস্বীকার করে ।
গুরুতর অপরাধের শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের ইতিহাস আজকের নয় বরং আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের বহু পূর্বের অনুশীলন
। হত্যাকারী এবং তার গোষ্ঠীকে যতক্ষণ না সমপরিমাণ পাল্টা হত্যার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া যাচ্ছে
ততক্ষণ যেন
শান্তি নেই । হত্যার বদলে হত্যা, রক্তের বদলে রক্ত এবং আঘাতের পরিবর্তে সমপরিমাণ আঘাত এক স্বর্গীয় বিধান। পূর্বপুরুষের প্রতি ধর্মীয় কর্তব্য। এই অবশ্যপালনীয় কর্তব্য প্রকাশ্যে, দিবালোকে এবং সর্বজন সমক্ষে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এই বর্বরতার সপক্ষে স্বয়ং ভগবান বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ হয়েছেন। হত্যার বদলে হত্যা, রক্তের বদলে রক্ত এবং আঘাতের পরিবর্তে সমপরিমাণ আঘাত নামক জাস্টিস’এর সমর্থনে বিভিন্ন এপিক লেখা হয়েছে
দেশে
দেশে
। ঊরুভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত পাঞ্চালী চুল না বাঁধার পণ রেখেছেন । এই জাস্টিস এবং তার সাইকি বিনা প্রশ্নে চারিয়ে গেছে আমাদের রক্তে, ধর্ম, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সমাজনীতির মাধ্যমে । তাই শাশ্বতী ঘোষ প্রতিশোধ স্পৃহা এবং মৃত্যুদণ্ডের সমর্থনে অন্যায় কিছু দেখছেন না বরং মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা তাঁর কাছে বিমূর্ত মানবাধিকারের সমার্থক।
সমাজের বিবর্তনের সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ডের গুরুত্ব ক্রমশ কমেছে, এমনকি তথাকথিত বর্বর সমাজও উপলব্ধি করেছে মৃত্যুদণ্ড কোনও সমাধান নয়। যে হত্যা বা ধর্ষণ তাৎক্ষনিক উত্তেজনায় অথবা পরিকল্পনার ফল হিসাবে ঘটে গেছে তা পাল্টা হত্যা বা ধর্ষণের মাধ্যমে পরিপূরণ করা অবাস্তব।
মৃত্যুদণ্ড
অপরাধীর প্রকৃত কোনও
সাজা বা আদৌ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়।
অনুশোচনার, পরিবর্তনের
ক্ষেত্র
এক
লহমায়
ছিনিয়ে
নেওয়া, প্রতিশোধ
পরিপূরণ
মাত্র। বর্বর সমাজ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত জ্ঞানে ক্রমে মৃত্যুদণ্ডের অসারতা থেকে সরে এসেছে ক্ষতিপূরণের
মাধ্যমে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির
রাস্তায় । এ কোনও
গোবর খেয়ে বা পুরোহিত দক্ষিণায় প্রায়শ্চিত্ত করে পাপস্খালনের
তঞ্চকতা নয় বরং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এত বেশি
যা অপরাধীকে সারা জীবন ধরে শোধ করতে হবে এবং প্রত্যহ তার অপরাধের গভীরতা তাকে স্মরণ করাবে,
অনুশোচিত
করবে, রত্নাকর থেকে বাল্মীকিতে পরিবর্তনের
সুযোগ
দেবে
এবং ক্ষতিপূরণের বীভৎস
পরিমাণ বাকিদের অপরাধের প্রতি নিরুৎসাহিত করবে । এ হল
প্রকৃত অর্থে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি । হত্যার মতো
অপরাধের ক্ষেত্রে
এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হত্যাকারীর সমস্ত সম্পদের কয়েক গুণ - কিছু কিছু আফ্রিকান ট্রাইবদের ক্ষেত্রে ৮০০টি গরু অথবা ১০০টি উট, গরিব আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ৪১৬টি ভেড়া ইত্যাদি। অপরাধী জানে সারা জীবনেও এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয় - সুতরাং যে পরিবারের বিরুদ্ধে সে অপরাধ সংগঠিত করেছে সেই পরিবারের দাস শ্রমিক হিসাবে তাকে সারা জীবন খেটে যেতে হবে । এমনকি এখনও
ককেশাসে অপরাধ ঘটে যাওয়ার পর অপরাধী যে পরিবারের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটিয়েছে সেই পরিবারের সব থেকে বয়স্কা মহিলার স্তন ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করে পুরো পরিবারের ‘মিল্ক ব্রাদারে’ পরিবর্তিত হয় । পরবর্তীতে পরিবার তাদের সমস্ত ক্রিয়াকর্মে এবং সামাজিকতায় অপরাধীকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয় । বিভিন্ন আফ্রিকান উপজাতিতে অপরাধী তার বোন অথবা কন্যাকে যে পরিবারের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটিয়েছে সেই পরিবারে বিয়ে দিতে বাধ্য থাকে অথবা হত্যার কারণে
পরিণত বিধবাকে বিবাহে বাধ্য হয় । এখন আমরা তো আর বর্বর আফ্রিকান অথবা ককেশীয় আদিবাসী নয় যে অপরাধীকে সমাজে প্রতিস্থাপিত করব, অনুশোচনার
সুযোগ
দেব, রত্নাকর
থেকে বাল্মীকিতে
পরিবর্তনের
জমি
প্রস্তুত
করার
উদারতা
দেখাব অথবা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বিপুল ক্ষতিপূরণের দৃষ্টান্তমূলক রাস্তা নেব । তাই শাশ্বতী ঘোষ এবং
তাহারা
- শিক্ষিত, সভ্য উন্নত মানব প্রজাতি আমাদের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসাবে
উপস্থিত
করেন
মৃত্যুদণ্ডের
যৌক্তিকতা। অতি আধুনিক কেউ কেউ আবার লিঙ্গচ্ছেদের
সপক্ষে উচ্চকণ্ঠ ।
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, তার আধিপত্য, ক্ষমতা এবং হায়ারার্কিকাল সিস্টেমের বিস্তারের সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ডের
বিস্তার
প্রাধান্য পেতে শুরু করে। আইনের এবং সাজা দেওয়ার অধিকারের একচ্ছত্র
অধিকার রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত
হতে থাকে। ফিরে আসে নিষ্ঠুরতার উৎকর্ষতা। গরম জলে চুবিয়ে মৃত্যুদণ্ড। ক্রুশবিদ্ধ যিশু। ঘোড়ার পদতলে পিষ্ট করে হত্যা। পাথর ছুঁড়ে। অল্প অল্প করে অঙ্গচ্ছেদ করে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হাজারও
উইচ। এ হল
মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ক উৎকর্ষ থিসিসের
সামান্য নমুনা। অভিজাত
প্রতিনিধিদের
রক্ত
মাটিতে
স্পর্শ
করার
পাপ
থেকে
বাঁচতে
চেঙ্গিস
খানের
পুত্র
'খিলাফত'কে
পার্সিয়ান
গালিচায়
মুড়ে
তার
ওপরে
সমস্ত
আস্তাবলের
ঘোড়া
ছেড়ে
দিয়েছিলেন।
আজকে যারা যৌনাঙ্গ কর্তনের সপক্ষে, তাদের তুলনায় আমাদের পূর্বপুরুষরা মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে অনেক বেশি
উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী ছিলেন বলতেই হচ্ছে। আমাদের এই গণতান্ত্রিক যুগে আর
যাই হোক
আমরা অনেক মানবিক। আমরা এখন লিথাল ইঞ্জেক্সান দিয়ে থাকি। আমরা আবিষ্কার করেছি ইলেকট্রিক চেয়ার, গ্যাস চেম্বার, ফায়ারিং স্কোয়াড এবং লোকচক্ষুর আড়ালে ফাঁসি। যদিও এখনও
মধ্যযুগীয় কিছু কিছু দেশ মস্তক কর্তন বা পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে কিন্তু আমরা তো তাদের বর্বর বলে নিন্দামন্দও করে থাকি, ফেসবুকে পোস্ট করি - আহা মানবিকতা বলে একটা কথা আছে তো ?
শাশ্বতী ঘোষেরা ভুলে যান যে অপরাধ কোনও সমাজবিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী নয়। অপরাধ প্রবণতা কোনও
বিশেষ গোষ্ঠী বা মানব সমাজের জন্মগত গুণও নয়। কেউই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করেন না। বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত ফ্যাক্টর, অর্থনৈতিক কারণ
অপরাধের পেছনে কাজ করে । রাষ্ট্র
এই
সমাজবিরোধী
পরিবেশ, হতদরিদ্র
শ্রমিক, মদের
ভাঁটি, ভেড়ীর
বাঁটোয়ারা, বেশ্যাপল্লী, বেআইনি
আফিম
চাষ
এবং অপরাধের
ধাত্রীভূমির
সমস্ত
কিছুর
থেকে
লাভ
উপার্জন
করে, অথচ
এই
ভয়ঙ্কর
সামাজিক
পরিস্থিতির
কারণে যদি কোনও অপরাধ সংগঠিত
হয়
তাহলে
দিব্যি
দায়
ঝেড়ে
ফেলে
সমস্ত
অপরাধের
দায়িত্ব
চাপিয়ে
দেওয়া
হয়
ব্যক্তি
অপরাধীর
ঘাড়ে।
শাশ্বতী
ঘোষও
তাই
করেছেন।
এখন
যে
কোন
অপরাধের
পেছনে
যদি
কেবলমাত্র
১ শতাংশও
সামাজিক
কারণ দায়ী থাকে
তাহলে
অপরাধীকে
মৃত্যুদণ্ড
শোনানো
যায় না
।
সে
বিচার
পক্ষপাতদুষ্ট
এবং
সামাজিক
পরিবেশের
কারণে অপরাধী সৃষ্টির
যে
আংশিক
দায়
সে
দায়কে
অস্বীকার
করা।
যেমন ধর্ষণের ক্ষেত্রটি হল ক্ষমতা প্রদর্শন, পিতৃতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী
ব্যবস্থা এবং যৌনতা বিষয়ক সামাজিক বিধিনিষেধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। অথচ দেখুন ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রায়,
পশ্চিম
আফ্রিকার
কিছু
কিছু
সমাজে
ধর্ষণ পূর্ণ মাত্রায় অনুপস্থিত । পাহাড়ি জনজাতি এবং আদিবাসী সমাজের মধ্যে ধর্ষণ নগণ্য এবং যে সমস্ত সমাজে এখনও
পিতৃতান্ত্রিকতার প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম এবং যৌনতা বিষয়ে নৈতিকতার বাধানিষেধ কম সেই সমাজে ধর্ষণও কম । ধর্ষণের সামাজিক ভিত্তি তৈরি হয় যৌনতাবিষয়ক নৈতিকতার নাগপাশে । মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুমারীত্ব হরণের অধিকারকে স্বর্গীয় মাধুর্য দেওয়ার নামে, হাজারও
নিমন্ত্রিত অভ্যাগতের সমারোহে আমরা যখন তার বিয়ে দিই, সে যখন অচেনা পুরুষের জৈবিক তাড়নার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়, প্রকৃত অর্থে আমরা তখন
থেকেই
বলাৎকারের জমি প্রস্তুত করতে থাকি। কোন জৈবিক আচরণ স্বাভাবিক আর কোনটা অসভ্যতা তার পাঠ জীববিজ্ঞানে নেই; আছে সমাজবিজ্ঞানে, মরালিটিতে। আর এই নৈতিকতার শিক্ষার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাধুতার নামে কপটতা। পিতৃতান্ত্রিকতার দার্শনিকতা। যে পাশবিক লিঙ্গপরায়ণতাকে এত
দোষারোপ, লিঙ্গচ্ছেদের
মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের সদিচ্ছা সেই লিঙ্গমূর্তিকেই ব্রম্ভান্ডের কেন্দ্রস্থল হিসাবে স্বীকৃতি দান, পূজা পাঠ ইত্যাদি সেই কপটতার
অন্যতম
পুরাণ । পুরুষের একটি বিশেষ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া, স্ফিতলিঙ্গের উপরেই যাবতীয় মাহাত্ম্যপ্রদান । অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে লিঙ্গের অগ্রত্বক ছেদনের অনুষ্ঠান একই মুদ্রার অন্য দিক।
ধর্মের
মাধ্যমে
এই
যে
নৈতিকতার
শিক্ষাদান
তার
মাধ্যমে
সমাজ উৎপাদন এবং তৃপ্তির অগ্রাধিকার পুরুষকেই দিয়ে রেখেছে । তাকেই যথাসময়ে উত্তেজিত হতে হবে, উদীপ্ত হতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে শুক্র রোপণ করার দায়িত্ব নিতে হবে। বদলে সে পাবে ক্ষণিক মৃত্যুর সুখ আর উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি। নারী যদি সেই সুখ উপভোগ নাও করে, তাতে কী
এসে যায়? যে যৌন সঙ্গম নারী উপভোগ করে না, যেখানে তার সম্মতি নেই, প্রেমও নেই তা নিশ্চয়ই বর্বরতা এবং সময় বিশেষে
নৃশংসতাও
।
সম্মতিহীন বর্বর এই ধর্ষণ অধিকাংশ
পরিবারের প্রাত্যহিকতা - শাশ্বতী ঘোষ এবং তাহারা মৃত্যুদণ্ড চাইবেন
তো ? অন্তত কমপক্ষে
লিঙ্গছেদ?
মৃত্যুদণ্ড কেন ? যুক্তি হিসাবে বলা হয়ে থাকে জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যাতে অন্যরা এই ধরনের অপরাধ করার পূর্বে
তিনবার ভাবে । ১৮৫৩ সালে নিউ ইয়র্ক ডেইলি ট্রিবিউনে মার্কস এই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন। স্বভাবসিদ্ধ ভাবে তথ্য সহকারে দেখান যে মৃত্যুদণ্ড দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা উল্টে মৃত্যুদণ্ডের কারণে
অপরাধ বৃদ্ধি পায় । জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড যে অকার্যকরী এ বিষয়ে মার্কস যে প্রথম লক্ষ করেছেন তা নয় কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের অকার্যকারিতা বিষয়ক মতামত সৃষ্টিকারীদের মধ্যে মার্কস অন্যতম ( লেনিনের এ বিষয়ে দ্বিচারিতা এখানে আলোচ্য নয় )। আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ড বিরোধী
আন্দোলনের পুরোধা ডা:
বেঞ্জামিন রাশ তথ্য সহকারে প্রমাণ করেন অষ্টাদশ শতকের গণমৃত্যুদণ্ড উল্টে সেই সময়ে অপরাধের
বৃদ্ধি
ঘটিয়েছে
। সম্প্রতি আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলেছেন,
‘despite 30 years of
empirical research in the area, there remains no
statistical evidence that capital punishment in fact deters potential offenders.’
Amnesty
International বলছে, 'during the last 20 years, the homicide rate in [US] states with
the death penalty has been 48 to 101 percent higher than in states without the
death penalty.’। পৃথিবীর ১০২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড অবর্তমান কিন্তু সেই সমস্ত দেশে ধর্ষণ অথবা হত্যার বন্যা বয়ে যাচ্ছে এইরকম তথ্য তো পাওয়া যাচ্ছে
না। এখন সবাই তথ্যে বিশ্বাস রাখবেন এ আশা না করাই ভালো। তাই বর্বরতাকে অবগুণ্ঠিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে বিচারের প্রহসন চলে । পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি সাজানো হতে থাকে। মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীগণ সুকৌশলে বর্বরতার সমর্থক বনে যান। কেউ কেউ পাঞ্চালীর মতো ঊরুভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত কেশ উন্মুক্ত রাখার প্রতিজ্ঞা রাখেন। এ সেই চোখের বদলে চোখ, রক্তের বদলে রক্তের স্বর্গীয় উল্লাস। অবশেষে ঠাণ্ডা মাথায় কোথাও ধনঞ্জয়, কোথাও আফজল গুরুদের ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। যদিও মৃত্যুদণ্ডের সপক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির
প্রাথমিক যুক্তি তথ্যগত ভাবে মিথ্যা - কিন্তু শাশ্বতী দেবী
এবং
তাহারা
বর্বরতার
সমর্থনে
এই
দ্বিচারিতা
বজায়
রাখেন। কামু আমাদের
এই
সর্বত্রগামী
দ্বিচারিতা
বিষয়ে
জানিয়েছেন, ‘There
could be read on the sword of the Fribourg executioner the words: 'Lord Jesus, thou art the judge’…
And, to be sure, whoever clings to the teaching of Jesus will look upon that
handsome sword as one more outrage to the person of Christ.’
শাশ্বতী দেবী এবং
তাহারা
সেই
ঈশ্বরতুল্য
ক্ষমতাশালী
কবি এজরা
পাউন্ডকে
মনে
আছে
নিশ্চয়?
অনেক
অনেক
‘হোক
কলরবে'
উনি
পথ
হেঁটেছিলেন।
উনিই
আমাদের
পরিচিত
করিয়েছিলেন
এলিয়েট,
জেমস
জয়েস
এবং
হেমিংওয়ের
সাথে।
একই
সঙ্গে
সেই
বিখ্যাত
কবি
বিশ্বের
সর্ববৃহৎ
গণহত্যার
সমর্থনে
দিনের
পর
দিন
রেডিও
ভাষণ
প্রস্তুত
করেছেন।
অর্থের
বিনিময়ে
ইহুদী
হত্যার
সমর্থনে
যুক্তি
সাজিয়েছেন
দীর্ঘ
দশ
বছর
ধরে।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার
অপরাধে
অপরাধী
এজরা
পাউন্ডের
মৃত্যুর
দাবিতে ওদেশের
শাশ্বতী দেবীরা
এবং
তাহারা
যখন
গগন
বিদীর্ণ
করছেন
তখন
এই
বিমূর্ত মানবাধিকারের
সমর্থকরাই যাদের নাকি জীবনযাপনে কোনও
বিপন্নতা নেই,
তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের
হাত
থেকে
বাঁচিয়েছিলেন।
পথে
নেমেছিলেন।
আমরা
এজরা
পাউন্ডের
সেই
নির্মম
অপরাধ
তার
কবিতার
স্বার্থে
ক্ষমা
করে
দিয়েছি।
প্রতিশোধের
ভাষা, হত্যার
সমর্থকের
ভাষ্য
যে
কেবলমাত্র
কতিপয়
বর্বর
ক্ষমতালোভীর, এ আমরা
সেই
সুমেরু
সভ্যতার
সময়
থেকে
জানি
।
পুনঃ শাশ্বতী
দেবী
এবং
তাহাদের
উদ্দ্যেশ্যে কামুর ‘Reflections on the Guillotine' প্রবন্ধটি
পড়ে
দেখবার
অনুরোধ
রইল।
কামু বিমূর্ত মানবাধিকারী
ছিলেন
কিনা
!!
বেশ যুক্তি পুর্ন লেখা
ReplyDelete