Wednesday 6 May 2015

২৫ বৈশাখ ১৪২২



চোখে ন্যাবা, ২৫শে বৈশাখ ও বৌঠান
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য

এই বছর বিশেক আগেও এ রোগের প্রকোপ তেমন মারাত্মক ছিল না। এলাহাবাদ প্রকাশনির পানু ও অচিরেই ভিডিও জমানায় দেদার XXX-মার্কা ছবির দৌলতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালির যৌন জীবনে তেমন প্রকট কোনও অভাববোধ না থাকারই কথা ছিল। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে খোকা–খুকি সেজে সারাদিন নরমসরম ঘুরে বেড়ানো, সাত সকালের রবি প্রণামে চিল-চীৎকারে ‘আফ্রিকা’ পাঠ, সন্ধ্যার পাড়ার মজলিশে ‘হাত ঘোরালে নাড়ু পাবে’ গোছের ‘চণ্ডালিকা’, ‘শ্যামা’- এইসব আমোদ আহ্লাদে বছরের একটা দিন বেশ রসে বশে গানে কবিতায় ‘নির্মল’ হবার দিন ছিল কিন্তু শনৈ শনৈ সময়ের বাতায়নে গেরো দাঁড়াল তিনটিঃ ১)বাংলা সিরিয়ালের রমরমা বাজার ২) রবীন্দ্র লেখার কপিরাইট বিদায় ও ৩) চোখে ন্যাবা পড়া সঙ্গে রইল সব আমোদের সেরা জনঃ দুঃখবাজার পত্রিকা।

ধিঙ্গিপনার এই মিলিজুলি মতলবি আসরে চোখে মনে স্বপ্নে ভাসিয়ে তোলা হল প্যাচপ্যাচে সুরসুর কূটকচালি, বেনারসি শাড়ি পড়ে চিকেন কোপ্তা রন্ধন, একান্নবর্তী পরিবারে লড়াকু নববধু সহ তিন-চারটি শ্মশান-স্বপন মার্কা খুনে ভিলেন, যত্রতত্র ভুরি ভুরি পরকীয়া, যখন তখন যেমন ইচ্ছে সুরে বেসুরে রবীন্দ্র গান (বুড়ো মানুষ হলে ‘রবীন্দ্র আশ্রয়’), রবীন্দ্র লেখাপত্তর নিয়ে নাটক, সিনেমা, গল্প, নিবন্ধে আগাপাস্তলা চটকানো ও সর্বোপরি কাদম্বরী। এই কাদম্বরীতেই এসে বোধকরি সাম্প্রতিক কালে ভদ্রজনেদের চোখে ন্যাবা পড়লকীভাবে জানি সরতে সরতে চোখের সব দৃষ্টি আপাতত এসে এই কাদম্বরীতেই আটকাল চুলোয় যাক আর সব- এই তো যথেষ্ট মেগা সিরিয়াল, এইটুকুই তো রয়েছে মনন-কাঙালের জরাজীর্ণ মগজপাত্রে, এই তো বাজারি আনন্দের হালহদিশ।

যেন অনেকটা শপিং মলের মতো- যেখানে এসে মেগা সিরিয়াল, বৌঠান, রবিবাবু, শাড়ি, গয়না, প্রতিহংসা, পরকীয়া, লোভ, লালসা, কর্পোরেট নাটক, কর্পোরেট ছবি, রকেট ক্যাপসুল, ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন সব একই ছাদের তলায় দাঁড়িয়ে পড়ল পরে চোখের ন্যাবা সরে গেলে (যদি) বোঝা যায়, ‘স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা’

গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস তো বাদ দিন; যে মানুষটা আধুনিক বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের জনক শুধু নন, তাকে ভরা যৌবনের শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন, চিন্তা, মেধা, মননে এক যুগান্তর এনেছেন, মনুষ্যত্বের এক অনির্বচনীয় ভূমিতে আমাদের দাঁড় করিয়েছেন, রেখে গেছেন অনন্ত সুধা সাগর, যিনি দুঃখী মানুষের নিত্য পারাবার, তাঁকে ছিঁচকে চোর পেটানোর মতো করে আমরা খুবলে খুবলে তাঁর শরীর থেকে বার করছি ‘বীভৎস মজা’র সব পাপচিন্থ; তাঁর গল্প, উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলোকে তাঁর সঙ্গে জুড়ে জুড়ে তৈরি করছি নবযুগের মহাপানু। পানুশিল্পের স্বঘোষিত উমেদার যে ব্যক্তিটি ব্যবসায়ীদের পয়সা ঝেড়ে নিত্যদিন রেস্তোরাঁয় ঠেসে খেয়ে তারপর প্রতিবেদন না লেখায় কর্পোরেট সংবাদপত্রের মোটা মাইনের চাকরিটি খুইয়ে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে ফিরে শেষে ‘কাদম্বরীর সুইসাইড নোট’ ও আরও গোটাকতক লিখে নিও-পানু ব্যবসাটির পত্তন করেছিল, তাই এখন মহীরুহ হয়ে শপিং মলপন্থী বাঙালিদের ঘরদোর, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে।

এবার ২৫শে বৈশাখ বরং ঈষৎ নীরব থাকি।

                    

2 comments:

  1. প্রতিবাদ প্রতিধ্বনি হোক... নীরব আলোয় জেগে থাক পঁচিশে বৈশাখ...
    ঋত্বিক ঠাকুর
    ২৪ বৈশাখ, ১৪২২

    ReplyDelete
  2. "All characters appearing in this work are fictitious. Any resemblance to real persons, living or dead, is purely coincidental."- statement টা ভোগে গেলো,অভিবাদন লেখক... বেঁচে থাক সুর তাল ছন্দ প্রেম ভালোবাসা...... নইলে বেচে খাবে কি ওনারা?

    ReplyDelete