খেলা
ভাঙ্গার গান
পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়
ঋতুপর্ণর
ছবি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। তাঁর লাইফস্টাইল নিয়েও। সেই কথাগুলো আবার বলে তাই
ডাটাবেস-এর বোঝা বাড়াব না। যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন ওনার সম্বন্ধে ওনার কাজের
সম্বন্ধে যেগুলো বলতাম, বলতে চাইতাম, লোকটা মারা যাবার পর হঠাৎ করে দেখলাম সেই কথাগুলো বড়
অপ্রাসঙ্গিক, ছেঁদো ঠেকছে। আজ সকালে, ঋতুর মৃত্যুর এক বছর পর অফিস আসার পথে মোবাইল
ঘেঁটে বের করলাম ‘খেলা’ ছবির টাইটেল ট্র্যাক। একবার, দুবার, তিনবার, চারবার শুনে
থামলাম। মাথার ভেতর ছিনে জোঁকের মতো ঘুরতে লাগলো “কেউ বেসেছিল ভালো/ কেউ খুঁজেছিল
আলো/ কেউ আলো খুঁজে পায়নি বলেই হয়তো নিরুদ্দেশ।"
শুনতে
শুনতে মনে হতে লাগলো একজন মানুষের কথা। সে পুরুষ না নারী, কেরানি না চিত্রপরিচালক
সেটা গৌণ। একজন মানুষ যে প্রেমে পড়ে, প্রেম ভাঙ্গে, একা থেকে দোকা হয়ে ফের একা হয়ে
দোকা হবার সুলুকসন্ধান করতে থাকে। যাকে সমাজ, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন বারবার বুঝিয়ে দেয় প্রকৃতির
আদিম নিয়ম। এখানে সবাই জোড় বেঁধে থাকি। একলা কেবল বুকের ভেতর লাল মাংসপিন্ড। আর
সেই নিয়মের তাড়নায়, খেলায় পিছিয়ে পড়বার ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে সে খুঁজে চলে খুঁজেই চলে একজোড়া
হাত, একটু আদর, মনখারাপ শুষে নেবার একটুকরো ব্লটিং কাগজ। রাতে বাড়ি ফিরে দরজা খুলে
দাঁড়াবার মতো একটা হাসিমুখ। হয়তো খুঁজেও পায়, হয়তো পায় না। নিজেকে দু’ভাগ করে নিজেই
নিজের শখ আহ্লাদ আবদার মেটায়। হুল্লোড়ে মেতে টেনে নিতে চায় স্পটলাইট নিজের মুখে। আলোয়
প্রসাধনে ঢেকে দিতে চেষ্টা করে একাকিত্ব। তারপর সে গান লেখে - “সাথি খুঁজে পেতে হবে/ তবে শুরু হবে খেলা/ একা একা যারা
ফেরে সাথীহারা/ কি হবে তাদের বেলা?”
মঞ্চের ওপরে ধীরে ধীরে
নেমে আসে ভারী পর্দা। প্রেক্ষাগৃহের আলো জ্বলে উঠতেই দর্শক ফেটে পড়ে হাততালিতে। ব্যাকগ্রাউন্ডে
গান বেজেই চলে – “বাঁশি যতবার বাজে/ শুরু শেষ আর মাঝে/ ততবার করে শুরু হয় খেলা শেষ
হতে চায় না যে...।"
No comments:
Post a Comment