Wednesday 2 November 2022

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে শেয়ার বাজার?

ভবিষ্যতের শেয়ার বাজার ও অর্থনীতি

পার্থ হালদার


 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আজ জীবনের সর্বত্র অধিষ্ঠিত হয়ে চলেছে। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শেয়ার বাজারেও। কিছুদিন আগে প্রচলিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ফান্ড ম্যানেজমেন্ট আজ সারা বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, যার আরেক নাম ETF বা এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। অনেকেই ভাবেন, এগুলো বোধহয় ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড আসলে ম্যানেজারবিহীন একটি ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা যা মিউচুয়াল ফান্ড বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো পরিচালনা করে থাকে। এটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এমন একটি ব্যবস্থা যা ফান্ড ম্যানেজারেরা কার্যকর করে থাকে, যেখানে কোনও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সেই ম্যানেজারের নেই। স্টক এক্সচেঞ্জগুলি কিছু নির্দিষ্ট প্যারামিটার ও পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন সূচক গঠন করে, ফান্ড ম্যানেজারের কাজ হল সেগুলিকে অনুসরণ করা। তার ভিত্তিতেই বিনিয়োগকারীর পুঁজি বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। 
সেনসেক্স ও নিফটি সর্বপরিচিত সূচক হলেও তার বাইরেও অনেক ধরনের সূচক আছে। মিড্ ক্যাপ, স্মল ক্যাপ,নিফটি নেক্সট, নিফটি আলফা যার অন্যতম উদাহরণ। আর এগুলোকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সূচক।শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করতে গেলে প্রথমেই মনে কয়েকটি প্রশ্ন ওঠে- কোন শেয়ার কিনব? কত পরিমাণে কিনব? কতদিন ধরে রাখব? কখন বিক্রি করব? এই সব কটি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালিত এই সূচক ETFগুলো। নির্দিষ্ট লজিক মেনে পুরো বাজার থেকে মুহূর্তের মধ্যে এরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ম্যানেজারের কাজ সেই তথ্য অনুযায়ী আপনার বিনিয়োগকে পরিচালনা করা। এই পদ্ধতিতে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নবতম সংযোজন নিফটি আলফা। NSE'র তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই সূচকের Compounded Annual Growth Rate (CAGR) ১৯.৮৭ শতাংশ- অর্থাৎ, এই সূচক অনুযায়ী ২০০৪ সালে কেউ যদি ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন, ২০২২ সালে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ লক্ষ টাকা। 

 
সূত্র: ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ 
মজার ব্যাপার হল, এর পেছনে পুরোটাই রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে ১৯.৮৭ শতাংশ CAGR মানে কিন্তু বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের উপর প্রতি বছর ১৯.৮৭ শতাংশ হারে রিটার্ন পাবে, তা কিন্তু কখনই নয়। কখনও এই রিটার্ন বছরে ২০০ শতাংশ আবার কখনও অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। উপরের গ্রাফটি দেখলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে এই সুচক প্রায় ৭০ শতাংশ নেমে গিয়েছিল। কিন্তু যতবারই পতন হোক না কেন, প্রতিবারই সূচক রি-ব্যালেন্সিং'এর মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে। 
এই সূচকটির উপর নির্ভর করে গত বছর ডিসেম্বর মাসে ভারতে প্রথম ETF নিয়ে এসেছে কোটাক মাহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। আশা করা যায়, আগামী দিনে আরও অনেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই ETF  বাজারে নিয়ে আসবে। তবে আবারও বলছি, এই ধরনের বিনিয়োগ কিন্তু ভীষণ উদ্বায়ী। কখনও দেখলেন আপনার বিনিয়োগ হঠাৎ ১৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে আবার কখনও ৫০ শতাংশ পড়ে গেছে। অনেক বিনোয়োগকারী এই দোলাচল সহ্য করতে পারেন না। অনেকেই মুনাফা বেড়ে যাওয়াকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে পারলেও বিনিয়োগকৃত পুঁজির হ্রাসকে মেনে নিতে পারেন না। তাঁদের এই ধরনের বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকা উচিত। তাই, নিজের মানসিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ETF নির্বাচন করাই ভালো। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ETF আছে, যারা ইকুইটি ছাড়া সোনা বা রূপোতে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁরাও এই ব্যবস্থার সুযোগ নিতে পারেন। এই ব্যবস্থাটিকে প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্টও বলা হয়ে থাকে। এ নিয়ে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা NSE'র ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। 
                                                                                                    সর্বশেষে একটা কথা বলা যেতেই পারে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শেয়ার বাজারে আপনার-আমার বিনিয়োগকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। আগামী দিনে ম্যানেজারবিহীন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট জায়গা করে নিতে চলেছে বিনিয়োগের বাজারে। অর্থাৎ, ফান্ড ম্যানেজার নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই চালাবে শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি। এ এক অভিনব উত্তরণ। অতএব, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আর্থিক সাক্ষরতার মাত্রা বাড়লে নিজেরাই ম্যানেজ করতে পারবেন নিজের টাকা।
 

3 comments:

  1. subhas Das, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ। এতে বিনিয়োগকারির শেয়ার বাজারে লাভের সুযোগ অনেক বাড়বে।

    ReplyDelete
  2. Subhas Das, এতে দেশের অর্থনীতির অনেক উন্নতি হবে।

    ReplyDelete