কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বলয়ে
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
(একুশ শতকের রাজনৈতিক অর্থনীতি
নিয়ে লেখকের প্রকাশিতব্য গ্রন্থ ‘আশায় বাঁচে চাষা’র অংশবিশেষ। গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যতের অর্থনীতি' শীর্ষক শিশির কুমার পাঠক স্মারক বক্তৃতায় লেখক তাঁর বক্তৃতার অংশ হিসেবে এটি পাঠ করেন।)
এতদিন প্রয়াসটা ছিল, মনুষ্য-শ্রমের
সঙ্গে যন্ত্রের অনুপাতকে ক্রমশ যন্ত্রের দিকে ঠেলে, ফলত মনুষ্য-শ্রম কমিয়ে
উৎপাদনশীলতাকে বাড়িয়ে চলা। কারণ, আমরা আগের আলোচনায় দেখেছি, এইই হল মুনাফার হারকে
পড়তে না দেওয়ার কেরামতি। এই প্রক্রিয়ায় খুব স্বাভাবিক, মনুষ্য শ্রমের অনুপাত কমতে
কমতে একেবারে শূন্যের গোড়ায় এসে ঠেকবে। তাই অবশ্যম্ভাবী ছিল, মনুষ্য-শ্রমকেই বিলোপ করে দিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমেই প্রায়
সমস্ত কর্ম সম্পন্ন করা। অন্য ভাবে বললে, মুনাফার হারের উর্ধ্বগতি বজায় রাখার
লক্ষ্যে শ্রমের মজুরিকে ছাঁটতে ছাঁটতে প্রায়-শূন্যের কোটায় পৌঁছে দেওয়াটাই ছিল
অবধারিত। মজুরি প্রায়-শূন্যে পৌঁছে গেল মানে তো প্রকারান্তরে শ্রমিক বলেই আর কিছু
রইল না। তাহলে কাজ করবে কে? উদ্বৃত্ত মূল্যের যোগান দেবে কে? যন্ত্র। কিন্তু
যন্ত্র চালাতে তো মানুষ দরকার। না, এই যন্ত্র মনুষ্য-তুল্য। একবার নির্মিত হয়ে
গেলে সে মানুষের মতোই কাজ করবে। তার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও কর্মক্ষমতা থাকবে। অথচ
তার কোনও মজুরি নেই। সে অনন্ত কর্মযোগী। তার কাজেরও কোনও বাঁধাধরা সময় নেই। সে ২৪x৭ কাজ করতে সক্ষম যতক্ষণ না অকেজো
হচ্ছে। বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা এই মানব-অনুরূপ সত্তার নাম দিলেন ‘আর্টিফিসিয়াল
ইন্টেলিজেন্স’- বাংলায় আমার ভাষান্তর ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রাতারাতি এসে
হাজির হয়ে পড়েনি। আসরে
সে একাও আসেনি। দীর্ঘ
সময় জুড়ে উৎপাদন ব্যবস্থাদিতে যান্ত্রিকীকরণের যে প্রক্রিয়া চলেছে, তারই অবধারিত
ফলশ্রুতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসেছে। সে তাই সঙ্গে বহন করে এনেছে আরও কিছু
অনুষঙ্গ ও নির্মাণ করেছে নতুন এক ব্যবস্থাপনা। তা শুধু প্রযুক্তিগত নয়,
রাজনৈতিক-অর্থনীতিগতও।
খেয়াল করে দেখুন শিল্প বিপ্লবের
সেই আদি যুগের কথা। হাতে বোনা তাঁতের যন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করছে বিদ্যুৎ চালিত
স্পিনিং যন্ত্র। যে কাপড় বুনতে তাঁতির মাস ফুরত, সে কাপড় অনেকে মিলে স্পিনিং মিলে
তৈরি হচ্ছে অতি দ্রুত ও অধিক পরিমাণে। প্রাথমিক বদলটা ছিল, হাত-চালিত তাঁত থেকে
যন্ত্র-চালিত কাপড় বোনায়। অষ্টাদশ, উনবিংশ ও বিংশ শতকের প্রথম অর্ধ জুড়ে ছিল
ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে প্রযুক্তি-উদ্ভাসনের এই স্বর্ণযুগ। বড় বড় যন্ত্র বসে চলতি
উৎপাদনের হারকে শুধু দ্বিগুণ নয়, দশ বা কুড়ি গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এইভাবে কাপড়,
কাঠচেরাই, জুতো, খাবারদাবার, নির্মাণসামগ্রী, বই, কাগজের মতো সেই সময়ের
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি ও সেই সঙ্গে এইসব উৎপাদনের উপকরণের অনুষঙ্গগুলোর উৎপাদনের
জন্য শুরু হয়ে গেছে এক মহা কর্মযজ্ঞ। ক্রেতামুখি পণ্য উৎপাদন করলেই শুধু চলে না,
সেই উৎপাদনে প্রতিনিয়ত মুনাফার হারকে উর্ধ্বমুখি রাখতে উৎপাদনের উপকরণেও চাই গতি ও
অধিক পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতার হার। তাই, শিল্পমুখি পণ্য উৎপাদনে থাকে গবেষণা-প্রসূত
এমন যন্ত্র বানাবার তাগিদ যা ক্রেতামুখি পণ্য উৎপাদনকারীদের লভ্যাংশ বাড়াতে
সাহায্য করতে পারে। আবার, শুধুমাত্র সেই সময়ের সামান্য চলতি পণ্যগুচ্ছের মধ্যে
আটকে থাকলেও চলবে না! কারণ, উৎপাদনের উপকরণে আধুনিকতা ও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে
পণ্যগুচ্ছেও আসে বদল; এছাড়াও বিবিধ পণ্যের উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাজারকে আরও
প্রসারিত না করতে পারলে গড় মুনাফার হার পড়ে আসে। অতএব, নতুন নতুন উপযোগিতা সৃষ্টি
করে পণ্যের বিবিধ রূপের মধ্য দিয়ে তাকে প্রকাশ করে এক ক্রমপ্রসারমান বাজার তৈরির
প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এক স্থির বলয় বা গুটিকয়েক পণ্য উৎপাদনের মধ্যে আটকে গেলে
মুনাফার হারের অধোগতি হয়। নতুন উপযোগিতা কীভাবে তৈরি হয়? ধরুন, আপনি আগে নখ কেটে
এসেছেন নরুণ বা ব্লেড দিয়ে, এবার এক নতুন পণ্য এল আপনার হাতে: নেইল-কাটার। এতে নখ কাটার অধিক
সুবিধা ও বিপদের ঝুঁকিও কম। এইভাবে পণ্যের বাজার প্রসারিত হয়ে চলে। শুধুমাত্র
প্রসাধনী ও অঙ্গসজ্জার জন্য এতসব পণ্য এসে পড়েছে, যার ব্যবহার আজ থেকে ৫০ বছর আগে
অকল্পনীয় ছিল।
এগুলো এক ধরনের পরিবর্তন। এই
পরিবর্তনে মিশেলগুলি হল: নতুন উপযোগিতার সৃষ্টি, সেই মোতাবেক নতুন পণ্যের উৎপাদন ও
সম্ভার, পণ্যের রূপ ও ব্যবহার রীতির পরিবর্তন, পণ্যগুলির উৎপাদনে প্রয়োজনীয়
যন্ত্রাদি-উপকরণের প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং সর্বোপরি ক্রেতা-সংলগ্ন হওয়ার অভিলাষে
বেশি পরিমাণে উৎপাদন ও বিক্রির পরিকল্পনা। আর এর অন্দরে চলতে থাকে, শ্রমের সঙ্গে
পুঁজির নিখাদ দ্বন্দ্ব। পুঁজি চায়, মনুষ্য-শ্রমকে প্রতিস্থাপিত করে উৎপাদনের
উপকরণের আরও আধুনিকীকরণ, বিশেষত যে কাজগুলি পুনরাবৃত্তিমূলক, তাকে যন্ত্র দিয়ে
অধিক গতিসম্পন্ন ও নিখুঁত ভাবে চালাতে। শ্রম ভীত তার কাজ চলে যাওয়ার আশঙ্কায়; কাজ
গেলে শ্রমের মালিক শ্রমিক অসহায়, বিপন্ন। আবার নতুন উপযোগিতা সৃষ্টিতে নতুন
শ্রমেরও প্রয়োজন দেখা দেয়। কেইনস যেমন বলেছিলেন, প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনে একদিকে
যেমন কর্মসংকোচন হয়, আবার অন্যদিকে নতুন কর্মেরও উদয় হয়। কিন্তু বাস্তবিক, কোন
দিকটা ভারী থাকে, মূল প্রশ্নটি সম্ভবত সেখানেই। আজ ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের
অস্তমিত যুগে বহু পুরনো, একসময়ের জমজমাট কারখানা ও শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিয়ে
আন্দোলনও কম হয়নি ও বন্ধ কল-কারখানা খোলার দাবি আজও নির্বাচনের জ্বলন্ত ইস্যু।
কিন্তু বাস্তবে কারখানাগুলি কেন বন্ধ হয়েছে আর এত চেষ্টাতেও খোলে নাই বা কেন, এ
নিয়ে সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাযুক্তিক আলোচনা না করলে আলেয়ার
পিছনে ছোটার অবস্থা হবে। তা হচ্ছেও। আগে যেমন বলেছি, শিল্প বিপ্লবের গোড়া থেকেই আজ
পর্যন্ত শিল্পের নানা রূপের যে অভিসার, তার পেছনে মোদ্দা কথাটাই হল, প্রতিস্থাপন।
অদক্ষ শ্রমিককে দক্ষ শ্রমিক প্রতিস্থাপন করছে, মনুষ্য-শ্রমকে যন্ত্র, পুরনো
যন্ত্রকে নতুন যন্ত্র, পুরনো উপযোগিতাকে নতুন উপযোগিতা ও অন্তিমে পুরনো পণ্যকে
নতুন পণ্য। যেমন, আজ কেউ বাজারে রেডিও বা গ্রামাফোন রেকর্ড কিনতে যান না, ফাউন্টেন
পেন কেনার চল উঠে গেছে, ক্যামেরার রিল কেনারও কোনও অর্থ নেই, বা পোস্টকার্ড,
ইনল্যান্ড এসবের কার্যত আর কোনও প্রয়োজনীয়তাই নেই। এইসব পুরনো পণ্যগুলির বিকল্প
বেশ জোরালো ভাবে হাজির, আর তা প্রযুক্তির হাত ধরেই।
কিন্তু এতদিন পর্যন্ত যা কিছু
হয়েছে তা মানুষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে যন্ত্রের হাত ধরে যান্ত্রিক ছন্দেই। যন্ত্র
উৎপাদনে গতি এনেছে, পুনরাবৃত্তিমুলক কাজগুলিকে সূক্ষ্মতার সঙ্গে নিপুণ ভাবে সমাধা
করেছে, পণ্যের রূপে, বর্ণে, আকৃতিতে দৃশ্যগত পূর্ণতা ও নতুন নান্দনিকতা এনেছে এবং
ভুলের মাত্রাকে প্রায় নির্মূল করেছে। আর তা করতে গিয়ে যন্ত্র বারবার মনুষ্য-শ্রমকে
প্রতিস্থাপন করেছে। ম্যানুফ্যাকচারিং যুগ থেকে পরিষেবা যুগে বিবর্তনে তা স্পষ্ট
করে বোঝাও গেছে, আর তারই জেরে পরিষেবা ক্ষেত্র অর্থনীতির মূল প্রাঙ্গণেও চলে
এসেছে। কিন্তু এরপর যেন এক ধাপ উল্লম্ফন হল। আমরা ক্রমশ প্রবেশ করলাম কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার বলয়ে যেখানে মানুষকে প্রতিস্থাপন করছে শুধুমাত্র কিছু বোবা যন্ত্র
নয়, প্রায়-মনুষ্য অনুরূপ এমন কিছু যান্ত্রিক সত্তা যার বুদ্ধি, বিবেচনা ও
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। এ সম্পূর্ণত নতুন এক স্তরে উল্লম্ফন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল যন্ত্রের মধ্যে এমন এক
ব্যবস্থাপনা যা অবস্থা ও অন্তর্জাত নির্দেশ বিশেষে প্রায়-এক মানুষের মতোই কাজ করতে
সক্ষম এবং তা অতি দ্রুত ও নিপুণ ভাবে। শুধু তাই নয়, সে ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে
পারদর্শী এবং কাজের বোঝা তার কাছে কোনও সমস্যা নয়। কী ধরনের কাজ সে করতে পারবে?
বলা যেতেই পারে, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ। সে শুধু এক ব্যক্তি মানুষের সহযোগী বা
নিপুণ চাকর মাত্র নয়, একটা গোটা শপিং স্টোর চালাতে পারে, ব্যাঙ্কের শাখায় দৈনন্দিন
লেনদেনের সমস্ত ভার নিতে পারে, একটা অফিসের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে দিতে
পারে। এছাড়াও আরও অগুনতি তার কাজের এলাকা। সে গাড়ি চালাতে সক্ষম, প্রাথমিক
চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়াও তার এক্তিয়ারে পড়ে, সে একইসঙ্গে দশের অধিক ভাষায় কথা বলতে
চোস্ত, আস্ত শহরের দেখভালও সে নিতে জানে। তার কাজের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। তাই
ভবিষ্যতে সে আর কী করতে পারে তা নিয়ে মানুষের শঙ্কা ও স্বস্তিরও শেষ নেই। এ হেন
বিশ্বকর্মার আগমনে, খুব স্বাভাবিক, রাজনীতি, অর্থনীতির মৌলিক অঙ্কগুলিই যাবে
গুলিয়ে। এ তো নিছক যন্ত্র মাত্র নয়, যে নির্দিষ্ট কার্যকালের সময়টুকুর মধ্যেই তার
দক্ষতা ও কারিকুরির যাবতীয় প্রদর্শন। এ হল মানুষের মতোই সদা জাগ্রত এক যান্ত্রিক
চৈতন্য, যা অবস্থা বিশেষে যখন যেমন তখন তেমন কাজের পালন করতে পারে। কখন কী করবে,
সে তার প্রোগ্রামে ঠাসা জটিল অঙ্ক থেকেই সূত্র নিয়ে নিজ সিদ্ধান্তেই যা করার তাই
করবে। এমনটা নয় যে বোবা যন্ত্রের মতো তার সুইচ টিপে দিলে যতটুকু যা করার তাই
পুনরাবৃত্তিমূলক ভাবে সে করে যাবে। সে কার্যত এক প্রায়-স্বাধীন সত্তা। তবে তার এক
অধিকারী আছেন, যিনি তাকে পূর্ণত চেনেন, এবং প্রয়োজন বোধ করলে একমাত্র তিনিই তাকে
নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন। মনুষ্য শ্রমের জগতে যন্ত্ররূপী এই দ্বিতীয়
প্রায়-মানুষের পা ফেলা এক অমোঘ পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসে। আর তা হল,
প্রায়-অধিকাংশ মানুষের হাত থেকে এ তাবৎ থাকা কাজগুলি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। শুধু কাজ করবেন তাঁরাই যারা এই
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গড়নে, চলনে, বলনে প্রাণ প্রদান করেন। বাকী কাজগুলির প্রায়
সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী যান্ত্রিক মানুষগুলির পক্ষে সম্ভব। আমরা এগিয়ে
চলেছি এমনই এক বিশ্বব্যবস্থার দিকে যেখানে মানুষের হাতে কাজ আসবে কমে (তবে কাজের
নিত্যনতুন পরিধিও বাড়বে, বরং মানুষের কাজগুলি অনেক বেশি ব্যক্তিক হয়ে উঠবে), কাজের
সমস্ত ভার গিয়ে পড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারক ও বাহকদের হাতে। নিঃসন্দেহে এ এক
যুগান্তকারী দিক বদল। অনেকটা স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কারের মতো বিস্ময়কর কিন্তু প্রভাব
ও প্রতিপত্তির দিকে থেকে ঐতিহাসিক ভাবে অতুলনীয়।
আমাদের প্রস্তুত হতে হবে, এই
প্রায়-মনুষ্যরূপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যান্ত্রিক অবয়বগুলিকে স্বাধীন মূল্য সৃষ্টিকারী
‘শ্রমিক’ হিসেবে মেনে নিতে। ম্যানুফ্যাকচারিং হোক কি পরিষেবা, কাজের দক্ষতা হোক কি
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ হোক কি গুণ- সর্বক্ষেত্রেই এরা
মনুষ্য-শ্রমের থেকে অধিক অর্থে যুগপৎ পারদর্শী ও নিপুণ। অথচ এদের কোনও নিত্য মজুরি
নেই অতএব মজুরি নিয়ে দরকষাকষিরও প্রশ্ন নেই। হতে পারে, এদের যে প্রথম ক্রয়মূল্য,
তাকে কেউ কেউ বলতে পারেন ‘আগাম মজুরি’। কিন্তু সেই মনুষ্যরূপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
যদি বহু শ্রমিক বা কর্মীকে প্রতিস্থাপন করতে পারে আর তার উৎপাদনশীলতা যদি পূর্বের
হারকে যথেষ্ট ভাবে ছাপিয়ে যায় তবে সে ‘আগাম মজুরি’র মূল্যও নেহাতই তুচ্ছ। আর তার
সঙ্গে সে যদি কাজের এক বড় ব্যাপ্তিকে ধারণ করতে পারে যেখানে অনেকটা প্রক্রিয়া জুড়ে
বহু ধরনের কাজ ও সিদ্ধান্তকে সে সম্পাদন করতে সক্ষম, তাহলে অন্তিম নির্মিত
পণ্যটিতে সে অতি পরিমাণে উদ্বৃত্ত মূল্য যোগ করতে পারে। এখানে এসেই তাই মোড়টি ঘুরে
যাচ্ছে। শুধু যান্ত্রিক ভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেই (যা যন্ত্র বসিয়ে হত) এ থেমে
যাচ্ছে না, সঙ্গে নিচ্ছে তাৎক্ষণিক বহু সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করছে
কর্মপ্রক্রিয়ার গোটা আঙ্গিকটিকেই। এ যেন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা!