ডাক্তারের শঠতা
যদুনাথ মুখোপাধ্যায়
'স্তন কর্তন ধন অর্জন'এর পুরনো ধান্দা অবাধে চলছে উন্নত দেশগুলিতে। এ প্রসঙ্গে আসার আগে, ৭ মে 'আনন্দবাজার পত্রিকা'র সম্পাদকীয় 'শঠ চিকিৎসা'তে বিস্তারিতভাবে উল্লিখিত ক্যানসার চিকিৎসা সাফল্যের বীভৎসতম কুকৃত্যের কথাটা বলে নেওয়া যাক। ইংল্যান্ডের এক শল্যবিদ (সার্জেন) ইয়ান প্যাটারসন এক হাজার মহিলার স্তন কেটে বাদ দিয়ে তাদের ক্যানসার 'মুক্ত' করার পর জানা গেছে যে উক্ত মহিলাদের কারুরই ক্যানসার ছিল না। সার্জেন প্যাটারসন ওই মহিলাদের প্রত্যেককে 'আপনার স্তনে ক্যানসার হয়েছে' এই ভয় দেখিয়ে 'ধর তক্তা মার পেরেক' কায়দায় নির্মমভাবে স্তন কেটে বাদ দিয়েছেন। প্রভূত ধনার্জনের উৎকট লালসায় প্যাটারসন এক হাজার মহিলার বৈবাহিক এবং যৌন জীবনকে বিপর্যস্ত করার জন্য আইনি চক্রব্যূহের নজরে এবং কঠোর সাজা প্রাপ্তিই তার ভবিতব্য হলেও, উন্নততর দেশগুলিতে ক্যানসারজনিত সমস্যা 'সমাধানের' এমনই ধ্যাষ্টামোর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। আসুন, হাড় হিম করা সেই আমেরিকান ক্যানসার চিকিৎসা সাফল্যের সর্বৈব মিথ্যাচারের মুখোমুখি হওয়া যাক।
১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ঘোষণা করলেন যে আমেরিকার দ্বিশততম প্রতিষ্ঠা দিবস (৪ঠা জুলাই ১৯৭৬)'এর মধ্যেই আমেরিকা 'ক্যানসার মুক্ত' হয়ে উঠবে। তিনি দম্ভের সঙ্গে বললেন, 'প্রতিভাধর মার্কিন বিজ্ঞানীরা হেলায় চাঁদের বুকে পদচারণা যদি করতে পারেন, ক্যানসারের মতো তুচ্ছ সমস্যার সমাধান তো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।' এই প্রকল্প রূপায়ণে নিক্সন কুবেরের খাজানা অনুদান হিসেবে দেওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৫ সালের অন্তিম পর্বে এসে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে ক্যানসার প্রকোপ এবং মৃত্যুহার কমার কোনও লক্ষণ নেই, নিক্সনের 'প্রতিভাধর' বিজ্ঞানীরা একটা মোক্ষম চাল দিলেন। ২৬ জানুয়ারি ১৯৭৬ সালের 'দ্য ইকোনমিস্ট' পত্রিকায় হাড় হিম করা খবর ছাপা হল যে বিগত বছরকার তুলনায় আমেরিকায় চার গুণ বেশি ক্যানসার হতে চলেছে। অচিরেই অবশ্য এই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হল। জানা গেল, ৭৫ শতাংশ নিরোগ মানুষকে ক্যানসার-আক্রান্ত শনাক্ত করে তাদের ক্যানসার মুক্ত করার পর তারস্বরে প্রচার চালানো হবে মহান নিক্সনের অকুণ্ঠিত সার্বিক সহযোগিতার ফলে এক লাফে আমেরিকান ক্যানসার নিরাময় হার ৭৫ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে। এর পর আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি (এসিএস) এবং ন্যাশনল ক্যানসার ইন্সটিটিউট (এনসিআই) তদন্তে নামতে বাধ্য হল। একটি ক্যানসার কেন্দ্রের সাফল্যের খতিয়ান খুঁটিয়ে দেখার পর ওই দুই সংস্থা জানাল যে 'স্তন ক্যানসার-মুক্ত ৮৮ জন মহিলাদের কারুরই ক্যানসার ছিল না।' এরপরই Breast Chopping for Dollar Making বক্রোক্তি আমেরিকায় ভাইরাল হয়ে ওঠে।
বলার কথা এটুকুই যে, ইংল্যান্ডে আজ প্যাটারসন শঠতার যে নমুনা পেশ করেছেন বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে উন্নত দেশগুলিতে বহুবার তা ঘটেছে। প্রশ্ন হল, বারবার এমন ভয়ানক খবর উন্নত দেশের শক্তিশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার ফলে ব্যাপক হৈ-হল্লা হলেও ভারতীয় ক্যানসার দুনিয়ার মহারথীরা নিশ্চুপ আশ্রয় থাকাই কেন শ্রেয় মনে করেন!?
যদুনাথ মুখোপাধ্যায়
'স্তন কর্তন ধন অর্জন'এর পুরনো ধান্দা অবাধে চলছে উন্নত দেশগুলিতে। এ প্রসঙ্গে আসার আগে, ৭ মে 'আনন্দবাজার পত্রিকা'র সম্পাদকীয় 'শঠ চিকিৎসা'তে বিস্তারিতভাবে উল্লিখিত ক্যানসার চিকিৎসা সাফল্যের বীভৎসতম কুকৃত্যের কথাটা বলে নেওয়া যাক। ইংল্যান্ডের এক শল্যবিদ (সার্জেন) ইয়ান প্যাটারসন এক হাজার মহিলার স্তন কেটে বাদ দিয়ে তাদের ক্যানসার 'মুক্ত' করার পর জানা গেছে যে উক্ত মহিলাদের কারুরই ক্যানসার ছিল না। সার্জেন প্যাটারসন ওই মহিলাদের প্রত্যেককে 'আপনার স্তনে ক্যানসার হয়েছে' এই ভয় দেখিয়ে 'ধর তক্তা মার পেরেক' কায়দায় নির্মমভাবে স্তন কেটে বাদ দিয়েছেন। প্রভূত ধনার্জনের উৎকট লালসায় প্যাটারসন এক হাজার মহিলার বৈবাহিক এবং যৌন জীবনকে বিপর্যস্ত করার জন্য আইনি চক্রব্যূহের নজরে এবং কঠোর সাজা প্রাপ্তিই তার ভবিতব্য হলেও, উন্নততর দেশগুলিতে ক্যানসারজনিত সমস্যা 'সমাধানের' এমনই ধ্যাষ্টামোর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। আসুন, হাড় হিম করা সেই আমেরিকান ক্যানসার চিকিৎসা সাফল্যের সর্বৈব মিথ্যাচারের মুখোমুখি হওয়া যাক।
১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ঘোষণা করলেন যে আমেরিকার দ্বিশততম প্রতিষ্ঠা দিবস (৪ঠা জুলাই ১৯৭৬)'এর মধ্যেই আমেরিকা 'ক্যানসার মুক্ত' হয়ে উঠবে। তিনি দম্ভের সঙ্গে বললেন, 'প্রতিভাধর মার্কিন বিজ্ঞানীরা হেলায় চাঁদের বুকে পদচারণা যদি করতে পারেন, ক্যানসারের মতো তুচ্ছ সমস্যার সমাধান তো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।' এই প্রকল্প রূপায়ণে নিক্সন কুবেরের খাজানা অনুদান হিসেবে দেওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৫ সালের অন্তিম পর্বে এসে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে ক্যানসার প্রকোপ এবং মৃত্যুহার কমার কোনও লক্ষণ নেই, নিক্সনের 'প্রতিভাধর' বিজ্ঞানীরা একটা মোক্ষম চাল দিলেন। ২৬ জানুয়ারি ১৯৭৬ সালের 'দ্য ইকোনমিস্ট' পত্রিকায় হাড় হিম করা খবর ছাপা হল যে বিগত বছরকার তুলনায় আমেরিকায় চার গুণ বেশি ক্যানসার হতে চলেছে। অচিরেই অবশ্য এই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হল। জানা গেল, ৭৫ শতাংশ নিরোগ মানুষকে ক্যানসার-আক্রান্ত শনাক্ত করে তাদের ক্যানসার মুক্ত করার পর তারস্বরে প্রচার চালানো হবে মহান নিক্সনের অকুণ্ঠিত সার্বিক সহযোগিতার ফলে এক লাফে আমেরিকান ক্যানসার নিরাময় হার ৭৫ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে। এর পর আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি (এসিএস) এবং ন্যাশনল ক্যানসার ইন্সটিটিউট (এনসিআই) তদন্তে নামতে বাধ্য হল। একটি ক্যানসার কেন্দ্রের সাফল্যের খতিয়ান খুঁটিয়ে দেখার পর ওই দুই সংস্থা জানাল যে 'স্তন ক্যানসার-মুক্ত ৮৮ জন মহিলাদের কারুরই ক্যানসার ছিল না।' এরপরই Breast Chopping for Dollar Making বক্রোক্তি আমেরিকায় ভাইরাল হয়ে ওঠে।
বলার কথা এটুকুই যে, ইংল্যান্ডে আজ প্যাটারসন শঠতার যে নমুনা পেশ করেছেন বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে উন্নত দেশগুলিতে বহুবার তা ঘটেছে। প্রশ্ন হল, বারবার এমন ভয়ানক খবর উন্নত দেশের শক্তিশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার ফলে ব্যাপক হৈ-হল্লা হলেও ভারতীয় ক্যানসার দুনিয়ার মহারথীরা নিশ্চুপ আশ্রয় থাকাই কেন শ্রেয় মনে করেন!?
No comments:
Post a Comment