Friday, 10 June 2016

পাঞ্জাবের ডানা

পল্লবী ব্যানার্জি

পাঞ্জাব কিম্বা পিপীলিকা, ডানা যারই গজাক, তা ছেঁটে দেওয়াই বড়কর্তাদের অবশ্য কর্তব্য। আর তাই, উড়তা পাঞ্জাবের পেছনে আদা ছোলা খেয়ে পড়ে গেছেন সেন্সর বোর্ডের কর্তা, মোদীকাকার কর্তাভজা ভাইপো শ্রী পহলাজ নিহালনি। সেন্সর বোর্ড একখানা লম্বা চিঠিতে উড়তা পাঞ্জাব-এর সিনেমাওয়ালাদের কাছে ১৩টা সম্পাদনা চেয়েছে যা গুণে গেঁথে দেখলে প্রায় ৯০খানা কাট। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিনেমার সংলাপ এবং দৃশ্যের মধ্যে থেকে পাঞ্জাব এবং ওই রাজ্যের আরও কয়েকটা জেলার নাম তুলে নিতে হবে। কেন? কারণ সামনে পাঞ্জাবের বিধানসভা ভোট এবং সেখানে বিজেপির বন্ধুদল অকালি দল কে সমানে সমানে টক্কর দিতে উঠেপড়ে লেগেছে আপ এবং কংগ্রেস। আর এই গরম বাজারে আচমকা পাঞ্জাবের ওড়াউড়ি নিয়ে সিনেমা বানিয়ে বাজারে ছাড়লে ব্যালট বাক্সে মানে ইভিএম-এ তার খারাপ প্রভাব পড়তেই পারে।

পাঞ্জাব কেন উড়ছে?

রেড বুল নামক ক্যাফেন পানীয় তাদের বিজ্ঞাপনে দাবী করে থাকে, যে ওটা পান করলে আপনার ডানা গজাবে। পাঞ্জাব অবশ্য রেড বুল খেয়ে ওড়েনি। মূলত বর্ডারের ওপারের পাকিস্তান থেকে আসা কোকেন, হেরোইন চরস, আফিম, গাঁজার হাওয়ায় ভর দিয়েই পাঞ্জাব উড়ে চলেছে। সরকারি বেসরকারি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তথ্য বলছে পাঞ্জাবের যুবসমাজের মোটামুটি সত্তর শতাংশের বেশি ড্রাগের কবলে পড়ে গেছে। গত দু বছরে ড্রাগের সমস্যার আপাত মোকাবিলায় ব্যপক ধরপাকড়ও করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। কিন্তু সেইসব এফআইআর-এর তালিকা ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে যারা ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই ড্রাগ সেবক কিম্বা ছোট মাপের দালাল। আসল বড় বড় মাছ যারা ড্রাগের পয়সা বাড়ি গাড়ি হাঁকিয়ে ফেলছে তাদের টিকি ছোঁয়ার কোনও ইচ্ছে এবং হয়তো ক্ষমতাও পুলিশের নেই।
এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না, এই তথ্য ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে খুবই লজ্জাজনক। আর তাই সরকারে ক্ষমতায় থাকা দল উঠেপড়ে লেগেছে যাতে বিশ্ব সংসারের কাছে পাঞ্জাবের এ হেন লজ্জাজনক ছবি না পৌঁছয়।

একই প্যাটার্ন ফিরে ফিরে আসে

সত্য গোপন করে অথবা বলা ভালো সত্য কেটেছেঁটে তাতে নানারকম পুলটিস লাগিয়ে বিশ্বের দরবারে পরিবেশন করায় নিহালনির মোদীকাকা বেশ দঢ়। কীরকম, সেটা একটা ছোট উদাহরণ না দিলে বোঝাতে পারব না। ২০১১ সালে নরেন্দ্র মোদীর ব্রেনচাইল্ড, বঁড়শিতে শিল্পপতি গাঁথার মহামেলা 'ভাইব্র্যান্ট গুজরাট সামিট'-এ অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই সামিট প্রতি বছর গান্ধীনগরে অনুষ্ঠিত হয়। সামিট শুরু হবার কিছুদিন আগে থেকেই আমাকে মেলাপ্রাঙ্গণে যাতায়াত করতে হচ্ছিল। সেই সময়ে লক্ষ করেছিলাম রাস্তার দুপাশে সার সার ঝুপড়ি। প্লাস্টিক, তেরপল, প্যাকিং বাক্স, পাতার ছাউনিতে সংসার। সামিট শুরু হবার ঠিক আগের দিন সকালে ঐ রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হঠাত খেয়াল করলাম একটাও ঝুপড়ি নেই। দু সেকেন্ড লেগেছিল বুঝতে, যে রাস্তার দু পাশে ঠিক ফুটপাথ যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় আট ফুট উঁচু প্যান্ডেলের দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আর এই এক ফর্মুলায় প্রতিটা রাস্তা মুড়ে ফেলা হয়েছে। সত্যিই তো, দেশ বিদেশের শিল্পপতি, নেতা নেত্রীদের তো আর গুজরাটের রাস্তায় থাকা গরীব লোকের মুখ দেখতে দেওয়া যায় না! আর পহলাজ নিহালনি যেহেতু মোদীকাকার সুযোগ্য এবং আশীর্বাদধন্য ছাত্র, তিনি এই পথে চলবেন এতে আর আশ্চর্য্য কী?

No comments:

Post a Comment