নতুন সরকার নতুন পর্ব
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
এখন দু-তিনটি বিষয় মনে হচ্ছে। যে কণ্টকহীন গুরুদায়িত্ব মমতার সরকারের ওপর অর্পণ করলেন এ রাজ্যের মানুষ তার ফলাফল কী দাঁড়াবে। কারণ, এবারে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে এবং বিরোধীরা কার্যত নিধিরাম সর্দার’এ পরিণত হয়েছেন। তাহলে কি শাসককুল এখন এই খোলা মাঠ পেয়ে যা খুশি তাই করবেন? আবারও বলি, বাস্তবতার নিরিখে এমনতর ভাবার কোনও কারণ নেই; এটা একটা অতিকথা যে তৃণমূল ধান্দাবাজ ও সিন্ডিকেট-নির্ভর একটি পার্টি যার কোনও নিয়মনীতি বা আদর্শ নেই। বরং এটা অনুধাবন করতে হবে, তৃণমূল ও মমতা এক নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ারের ফসল, একটি স্টেটমেন্ট এবং প্রান্তিক মানুষের অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষা। একে অতিক্রম করার সাধ্য তৃণমূল দলেরও নেই। যেদিন তা ঘটবে সেদিন ইতিহাসের অন্য এক বয়ানের সূত্রপাত হবে। মানুষের স্বতঃসারিত আবেগ, স্বপ্ন ও সম্মিলিত চৈতন্যে তৃণমূলের বিস্তার; যে কারণে অন্য দল ভেঙ্গে আসা নেতা-কর্মীরা, নবাগত পেশাদার বা ব্যক্তিরা, সাধারণ ভাবে কাজেকম্মে পারদর্শী ও সামাজিক মানুষেরা তৃণমূলে প্রবেশাধিকার পান এবং অবস্থা বিশেষে তাঁদের কেউ কেউ লাইমলাইটে চলে আসেন, নির্বাচনে দাঁড়ানোর টিকিটও পান বা বিশেষ গুরুত্বের কোনও কাজ। এটাই একটা গণ পার্টির বৈশিষ্ট্য এবং প্রকারান্তরে তলা থেকেই জনমতের চাপে এর গঠন, বিস্তার ও লয়। তা বলে এমনটা ভাবার কারণ নেই যে দলটি ও এদের নেতারা একেবারে ধোয়া তুলসিপাতা। বরং সমাজের ক্লেদ, হিংসা, সঙ্কীর্ণতাও প্রতিফলিত হয় এদের কার্যকলাপে, সমাজের সুদিকগুলির সঙ্গেই।
এবার প্রশ্ন, আগামী পাঁচ বছরের যাত্রাপথটি কী ও কেমন? আপাতত এটুকুই বলা যায়, নির্মম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার ফলে খুব যে বিপদে পড়ে গেল মানুষ, তেমন ভাবনাটা অমূলক বলেই মনে হচ্ছে। জনকল্যাণের মধ্য দিয়ে অগ্রগতি ও বৃদ্ধির হার বাড়ানোর যে পথ মমতা নিয়েছেন, বিপুল জনাদেশ সেই পথেই এগোতে তাঁকে নিদান দিয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নটা কীভাবে মোকাবিলা করবে এই সরকার তা দেখার কৌতূহল রইল। শুধুমাত্র বিরোধীদের মোকাবিলা করার প্রশ্ন নয়, সাধারণ মানুষও অনেক প্রশ্ন তুলতে পারেন, জবাব চাইতে পারেন- সেইগুলোকে কীভাবে এই সরকার সামাল দেবে তা দেখতে হবে। কারণ, এই প্রশ্নে গতবার এঁদের ভূমিকা খুব একটা ভাল ছিল না। তবে নিঃসন্দেহে বলতেই হয়, উন্নয়নের প্রশ্নে মমতা এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন যা তথাকথিত বাম্পন্থীদের যথেষ্ট লজ্জা দেবে।
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
ভোট পর্ব মিটল, ফলাফল
বেরল, শপথ নিয়ে সরকারে আসীনও হলেন শাসকেরা। গত পাঁচ বছরে সদর্থক কিছু কাজ করার ফল
হাতেনাতে পেয়েছেন মমতার সরকার। সে নিয়ে আমরা ‘একক মাত্রা’র মে সংখ্যায় (‘পশ্চিমবঙ্গের
হাল হকিকত') কিছু আলোচনাও করেছি। আমাদের এই সংখ্যাটি প্রকাশ পেয়েছিল এপ্রিলের তৃতীয়
সপ্তাহে, তখনও বোদ্ধারা খুব সংশয়ে ছিলেন ভোটের ফলাফল নিয়ে। মিডিয়া, বিশেষত আনন্দবাজার
গোষ্ঠীর হলুদ সাংবাদিকতায় তখন অনেকেরই মনে হচ্ছে এবার মমতা আর ক্ষমতায় ফিরছেন না।
নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, প্রচ্ছন্ন হুমকি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে- এবার ২০১১’র ‘পরিবর্তনপন্থী’দের
দেখে নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও খুব কড়া হাতে দীর্ঘ সময়ব্যাপী নির্বাচনের
নির্ঘণ্ট পরিচালনা করছেন। এমতাবস্থায় আমাদের সংখ্যাটি যখন বেরল, অনেকেই আমাদের
বিশ্লেষণগুলিকে খোলা মনে নিতে পারেননি, কারও কারও মনে হয়েছে আমরা একটু হেলে আছি
দিদির দিকে। কেউ কেউ, যারা আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, তাঁরাও ভাবছেন আমরা বোধহয় সময়
ও বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়েছি। নিকটজনেরা যখন জিগেস করেছেন ভোটের ফলাফল কী হবে,
নির্দ্বিধায় উত্তর দিয়েছি, তৃণমূল ২০০’র কিছুটা এপাশ ওপাশে থাকবে। বাস্তবিক দেখা গেল, তাই
ঘটল। আমরা সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেছি মাত্র।
এখন দু-তিনটি বিষয় মনে হচ্ছে। যে কণ্টকহীন গুরুদায়িত্ব মমতার সরকারের ওপর অর্পণ করলেন এ রাজ্যের মানুষ তার ফলাফল কী দাঁড়াবে। কারণ, এবারে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে এবং বিরোধীরা কার্যত নিধিরাম সর্দার’এ পরিণত হয়েছেন। তাহলে কি শাসককুল এখন এই খোলা মাঠ পেয়ে যা খুশি তাই করবেন? আবারও বলি, বাস্তবতার নিরিখে এমনতর ভাবার কোনও কারণ নেই; এটা একটা অতিকথা যে তৃণমূল ধান্দাবাজ ও সিন্ডিকেট-নির্ভর একটি পার্টি যার কোনও নিয়মনীতি বা আদর্শ নেই। বরং এটা অনুধাবন করতে হবে, তৃণমূল ও মমতা এক নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ারের ফসল, একটি স্টেটমেন্ট এবং প্রান্তিক মানুষের অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষা। একে অতিক্রম করার সাধ্য তৃণমূল দলেরও নেই। যেদিন তা ঘটবে সেদিন ইতিহাসের অন্য এক বয়ানের সূত্রপাত হবে। মানুষের স্বতঃসারিত আবেগ, স্বপ্ন ও সম্মিলিত চৈতন্যে তৃণমূলের বিস্তার; যে কারণে অন্য দল ভেঙ্গে আসা নেতা-কর্মীরা, নবাগত পেশাদার বা ব্যক্তিরা, সাধারণ ভাবে কাজেকম্মে পারদর্শী ও সামাজিক মানুষেরা তৃণমূলে প্রবেশাধিকার পান এবং অবস্থা বিশেষে তাঁদের কেউ কেউ লাইমলাইটে চলে আসেন, নির্বাচনে দাঁড়ানোর টিকিটও পান বা বিশেষ গুরুত্বের কোনও কাজ। এটাই একটা গণ পার্টির বৈশিষ্ট্য এবং প্রকারান্তরে তলা থেকেই জনমতের চাপে এর গঠন, বিস্তার ও লয়। তা বলে এমনটা ভাবার কারণ নেই যে দলটি ও এদের নেতারা একেবারে ধোয়া তুলসিপাতা। বরং সমাজের ক্লেদ, হিংসা, সঙ্কীর্ণতাও প্রতিফলিত হয় এদের কার্যকলাপে, সমাজের সুদিকগুলির সঙ্গেই।
এবার প্রশ্ন, আগামী পাঁচ বছরের যাত্রাপথটি কী ও কেমন? আপাতত এটুকুই বলা যায়, নির্মম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার ফলে খুব যে বিপদে পড়ে গেল মানুষ, তেমন ভাবনাটা অমূলক বলেই মনে হচ্ছে। জনকল্যাণের মধ্য দিয়ে অগ্রগতি ও বৃদ্ধির হার বাড়ানোর যে পথ মমতা নিয়েছেন, বিপুল জনাদেশ সেই পথেই এগোতে তাঁকে নিদান দিয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নটা কীভাবে মোকাবিলা করবে এই সরকার তা দেখার কৌতূহল রইল। শুধুমাত্র বিরোধীদের মোকাবিলা করার প্রশ্ন নয়, সাধারণ মানুষও অনেক প্রশ্ন তুলতে পারেন, জবাব চাইতে পারেন- সেইগুলোকে কীভাবে এই সরকার সামাল দেবে তা দেখতে হবে। কারণ, এই প্রশ্নে গতবার এঁদের ভূমিকা খুব একটা ভাল ছিল না। তবে নিঃসন্দেহে বলতেই হয়, উন্নয়নের প্রশ্নে মমতা এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন যা তথাকথিত বাম্পন্থীদের যথেষ্ট লজ্জা দেবে।