‘ফ্রন্টিয়ার’ পত্রিকা তার সাতচল্লিশ বছরের অফিসঘর থেকে উৎখাত
হওয়ার পথে
রবীন চক্রবর্তী
কলকাতার ধর্মতলা এলাকায় ৬১ নং মট লেনের বাড়িটি ষাট ও সত্তর দশকের ছাত্র-যুবাদের কাছে
অতি পরিচিত ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। ওই বাড়িতেই ছিল সেই সময়ের সাড়া জাগানো পত্রিকা ‘দর্পণ’এর
অফিস। তার পাশের ঘরেই যাত্রা শুরু করে কবি সমর সেন প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ফ্রন্টিয়ার’
পত্রিকা। সেই আটষট্টি সালে। এবং শুরু করেই পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন টালমাটাল সামাজিক
ও রাজনৈতিক ঘটনাবলীর ক্ষুরধার বিচার বিশ্লেষণ প্রকাশিত হতে থাকে এই পত্রিকার
পাতায়। অচিরেই তখনকার রাজনীতি সচেতন ছাত্র-যুবাদের কাছে অতি-প্রিয় হয়ে ওঠে
সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ার।
ষাট-সত্তর দশকের ছাত্র-যুবারা বৃদ্ধ
আজ। কিন্তু সেদিনের ফ্রন্টিয়ার পত্রিকার প্রতি তাদের ভালবাসা আজও অটুট। সেটা টের
পাওয়া গেল ফ্রন্টিয়ার-পত্রিকা তার অফিসঘর থেকে উৎখাত হতে চলেছে এই খবর জানাজানি
হতেই। এদের অনেকেই এখনকার ফ্রন্টিয়ারের পাঠক কিনা সন্দেহ। কিন্তু এই খবর পেতেই মুখে
মুখে খবর ছড়িয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে কলেজ স্ট্রিটে বইচিত্রের ঘরে বসেছিলেন
আলোচনা করতে যে এই অবস্থায় কীভাবে সাহায্য করা যায় ফ্রন্টিয়ারকে। সেদিনকার আলোচনার
সূত্র ধরেই গত কয়েক দিনের দৈনিক পত্র-পত্রিকায় খবর ও চিঠিপত্র আকারে প্রকাশিত
হয়েছে ফ্রন্টিয়ারের অফিস ঘর থেকে উৎখাত হওয়ার সম্ভাবনার কথা। স্বাভাবিকভাবেই অনেক
দূরের বন্ধুদের কাছেও পৌঁছে গেছে এই খবর। তাঁরা টেলিফোন এবং মেল করে জানতে চাইছেন
ঘটনাটা কী?
ঘটনাটা কলকাতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু
নয়। কলকাতার অজস্র পুরনো ভাঙাচোরা ভাড়া-বাড়ির মালিকেরা যা করে থাকেন এখানেও সেটাই
ঘটেছে। মালিক বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাড়িটির অবস্থা খুবই সঙ্গীন। যে কোনও দিন
ভেঙ্গে পড়তে পারে। বাড়ির নতুন
মালিক এই সুযোগটা নিয়েছেন। বাড়ি সারানোর অজুহাতে মাপজোক করার জন্য লোকজন পাঠাতে
শুরু করেছেন ওই বাড়িতে। একদিন তারা জিজ্ঞাসাবাদ না করেই ঘরে ঢুকে ঘরের মাপজোক শুরু
করে দেন। তখন ফ্রন্টিয়ারের অফিস-ঘরে
উপস্থিত ছিলেন একমাত্র মহিলাকর্মী একাই। তিনি স্বভাবতই খুবই ঘাবড়ে যান। এবং এই
অবস্থায় কাজ করা তার পক্ষে ভয়ের ব্যাপার বলে জানান।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন বাড়ির মালিক
এমন আচরণ করলেন? তিনি তো জানেন যে ওখানে একটি পত্রিকার অফিস রয়েছে। এবং দীর্ঘদিন
ধরেই রয়েছে। তবু লোকজন পাঠানোর আগে কেন আলোচনা করলেন না। এর একটাই উত্তর হয় -
সম্ভবত তিনি ভাবছেন যে এইভাবে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে যদি এদের উৎখাত করা যায়।
এই অনুমানের কিছু ভিত্তি আছে বোঝা
গেছে এই ঘটনার পর থানায় ডায়েরি করতে গিয়ে। নিউ মার্কেট থানার অফিসার প্রথমে নানান
অজুহাত দেখিয়ে ডায়েরিই নিতে চাননি। অবশেষে নিয়েছেন যদিও।
এরপর তো কাগজেপত্রে এই নিয়ে লেখালেখি
শুরু হয়েছে। এখন দেখার যে বাড়ির মালিক আলোচনার পথে আসেন কিনা। আমরা আশা করব যে
বাড়ির মালিক পত্রিকার সম্পাদক মশায়ের সাথে আলোচনা করবেন এবং একটা সমঝোতার সুত্র
বের করবেন। তারপর তিনি বাড়ি মেরামতির কাজে হাত দিন।
No comments:
Post a Comment