(আনন্দবাজারে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন বিষয়ে কোনও একটি লেখা নিয়ে facebook'এ বহুজনে তক্ক-বিতক্ক করছে - সে করুক। আমাদের লেখাটি পড়া হয়ে ওঠেনি - সে অবকাশ ও সময় নেই - পিছিয়ে পড়া যে, পড়ার যে খুব ইচ্ছে আছে তেমনও নয়। তবে পুরন্দর ভাট স্বয়ং যে লেখাটি উৎপাদিত করেছেন facebook'এ তা share না করে পারলাম না। এবার মা যেমন রাখেন। সাঁই সাঁই ফ্যাত ফ্যাত- ফ্যাতারুরা ভিক্ষে চায় না মা। কুকুর সামলাও-)
কেবল মৃতদেহে হাত দিয়ে বসে থাকাই নয়।
(একটি বাজারি কুৎসার জবাবে)
পুরন্দর ভাট
গত ১৬ই এপ্রিল আবাপ তে লিটল ম্যাগাজিনের নামে এন্তার কুৎসা আর খেউড় দেখে এট্টু হাসিই পেলো।
লেখক তার ভাড়াটে কলমে চড়ুইপত্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে কিছু অক্ষম ভাঁড়ামি সুলভ রসিকতা করেছেন। সাথে বিদ্যে জাহিরের মরিয়া প্রচেষ্টা!
লিটল ম্যাগের জামাকাপড় খুলে নেওয়া ; ম্যাগাজিন থেকে টোটা বের করে নেওয়া; ভালগার চিন্তার ডাস্টবিন! ইত্যাদি ইত্যাদি
ভালো!
লেখক মশাই এত জানেন আর এটা জানেননা যে বৃহৎ প্রকাশনীর হয়ে উনি কলম ধরেছেন তারা যে লেখক দের পুষে বিগ বাজেটের বলরাম হয়েছে তারা কোত্থেকে এসেছিলেন?
তারা কি মনুর মতো স্বয়ম্ভু? নাকি আকাশ থেকে পয়দা হয়েছিলো?
অবগতির জন্য জানাই সেই মহান লেখকেরা কোনো না কোনো লিটলম্যাগাজিনে লিখেই বড় পত্রিকায় প্রবেশ করেছিলেন।
সাধারণত বুর্জোয়া সংস্কৃতির ধারক ও বাহক পত্রিকাগোষ্ঠীর লেখায় তীক্ষ্ণ মেধা ও তীব্র ঝাঁজ থাকে। উন্নত মানের হয়। এই লেখাটা পড়ে মনে হলো আবাপের মান সত্যিই নেমেছে!
নতুন জেনারেশন এসবের ধার ধারেনা তাই লিটম্যাগ বাসি মড়া?
আহা! অহো! কি যুক্তি!
আসলে কি জানেন সাহিত্যের সৃষ্টিকর্তাদের যখন লোভ পেয়ে বসে সে তখন মেফিস্টোফিলিসের কাছে নিজেকে বিক্রি করে।
মার্লো যেমনটি দেখিয়েছেন ড. ফস্টাসের চরিত্রে।
লেখক , আপনাদের ছুঁড়ে দেওয়া রুটি মাংসের টুকরো যারা কুড়িয়ে নেবেনা পুরস্কার মনে করে তাদেরই নামে কেচ্ছা গাওয়াটাই বুঝি আপনাদের রীতি?
হ্যারল্ড পিন্টার শেষ জীবনে নোবেল পেয়ে কি বলেছিলেন সে শুনলে আপনাদের কান ও অন্যকিছু যুগপত্ ভাবে গরম হয়ে যাবে। ওকথা থাক।
কমলকুমার বা অমিয়ভূষণ মজুমদার নিশ্চয়ই পড়া আছে?
জানবেন আপনাদের সাগরময় বাবু কতোটা পীড়াপীড়ি করেছিলেন অমিয়ভূষণ কে দিয়ে তার পত্রিকায় একখান ছোটগল্প লেখাতে।
তপোবিজয় ঘোষ মিহির আচার্য উদয়ন ঘোষ আপনাদের বাজারে বেসাতি না করেও মননশীল পাঠকের কাছে প্রিয় লেখক।
আপনি বলছেন লিটলম্যাগ দুটো একটা বের করেই লঙ্গরখানার সেবাদাস হয়। বন্ধ হয়ে যায়?
একটু পড়াশোনা না করলে বাজারে লিখবেন কেমনে?
রবীন্দ্রনাথ বঙ্গদর্শন একবারের বেশি পুনপ্রকাশ করতে পারেননি। পরিচয়ের
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পত্রিকা অন্যদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন!
ফ্রন্টিয়ারের সমর সেনের ইংরেজি যে এখনকার স্টেটসম্যান বা অধুনালুপ্ত ইংলিশম্যানকেও লজ্জা দিতো সেখবর জানা আছে?
বাজারে ভাষার লিটলম্যাগ বাসি মড়া হতে পারে কিন্তু আসলে ছোট পত্রিকা ভস্মরাশি থেকে উঠে আসা ফিনিক্স যা বিরাট দৈত্যের চোখে চোখ রেখে বাজারী মুনাফা আর কুরুচীপূর্ণ সাহিত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে ডরায় না।
শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির পণ্যায়নে বিশ্বাস করেনা।
যারা মানিক ব্যানার্জি কে অবহেলা করেছিল পাঁচের দশকে
দেবব্রত বিশ্বাস শ্যামল গাংগুলিকে অপমান করতে বাধেনি
কাছের লোক হওয়া সত্বেও রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরীর কবিতা সংকলনে ঠাঁই দেয়না
কুকুর পোষার মতো লেখক পোষে তাদের কাছে অবশ্য আর কিই বা আশা করা যায়?
বিনয় মজুমদার বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনেও তোষামোদ করেননি আপনাদের তাই মৃত্যুসংবাদ টাও ভালো করে ছাপা হয়নি।
২৩ শে আগস্ট ২০০০. কবি অরুণ মিত্র মারা গেলে ৬ নং পাতার কোনায় খবর হয়। প্রথম পাতায় থাকে পাতাজোড়া কুকুরের ছবি!
এইতো রুচি!
বানিজ্যিক এঁটোকাটা ছেপে যারা সংস্কৃতি র ধারক ও বাহক হয় তাদের কাছে ইহাই কাম্য!
এই লেখাটাও তার নমুনা মাত্র।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ছোট পত্রিকা কি অভূতপূর্ব ভুমিকা পালন করেছিল সে কথা কি ভোলবার?
১৯৩১ ইন্ডিয়ান প্রেস (এমারজেন্সি প্রসেস ) এক্ট একিংবা ভারতরক্ষা আইনে কতনা পত্রিকা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ইয়ত্তা নেই। সম্পাদক রা নিগৃহীত হয়েছেন. জেল হয়েছে কারো কারো। একটির বেশি দুটি বের করা যায়নি (লেখকের ভাষায় শ্মশানে চলে গেছে) তবু সংগ্রামের আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দিয়েছিলো সেদিন
অর্চনা; অগ্রনী ; ভারত; চাবুক; দেশের বানী; হেদায়েত; হিতবাদী; মহম্মদী; সন্ধ্যা (সম্পাদক বারীন্দ্রকুমার ) এর মতো ছোট্ট ছোট্ট পুস্তিকা পত্রিকা চড়ুইপত্র।
বুদ্ধদেব বসুর কোটেশন ঝেড়ে লেখক লিটল ম্যগাজিন মুভমেন্টের ছরাদ করতে চেয়েছেন। ওই লেখাটা কবি শ্রী বসু দেশ এ ১৯৫৩ এর মে মাসে সাহিত্যপত্র প্রবন্ধে লেখেন (তথ্যটি নিবন্ধে নাই. ;))
লেখক যেটা চেপে গেছেন সেটা হলো এই আন্দোলন মার্ক্সের সমসাময়িক যুগের পন্যসাহিত্য বিরোধী বিদ্যমান সমাজ কাঠামো বিরোধী আন্দোলন! যা বাজারে মগজ বেচার কারখানায় তৈরী হয়না।
এডওয়ার্ড ফেভে প্রথম ম্যাগাজিন শব্দটি ব্যবহার করেন ১৮৩১ সালে জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিন বের করে।
প্রথম যুগের লিটল ম্যাগাজিন বলা যেতে পারে একে।
বোস্টন থেকে বেরোল ডায়াল (গণশক্তির নয় )সেথায় ছেপে বেরোল এলিয়টের 'ওয়েস্টল্যান্ড'
১৯১৪ তে বেরলো মার্গারেট এন্ডারসনের লিটল রিভিউ
এরকম অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিন!
যেখানে হাত পাকিয়েছেন. এজরা পাউন্ড
স্যামুয়েল জনসন জেমস জয়েস আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো সাহিত্যিক!
ধুর! এতো কথার দরকার টাই বা কি?
সুবিমল মিশ্র যিনি তার দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে বানিজ্যিক কাগজে একটি লাইনও লেখেননি তার মতে 'বাজার' হলো পটি সাফ করার আদর্শ কাগজ!
কথাটায় বাড়াবাড়ি আছে বটে তবে এই লেভেলের থার্ড ক্লাস লেখা নামালে সুবিমলবাবুর কথাটাই সত্যি হয়ে উঠতে পারে ক্রমশ।
No comments:
Post a Comment