জলবায়ু মহা সম্মেলন থেকে কী পাওয়া গেল?
সুব্রত কুণ্ডু
ইউনাইটেড নেশন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (বা ইউএনএফসিসিসি)'এর উদ্দেশ্য, বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব কমিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা। ১৯৯২ সালে বেশির ভাগ রাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ১৯৯৪ সালে কার্যকর হয়।
প্রত্যেকটি রাষ্ট্র এখানে এক একটি পক্ষ বা পার্টি। সেই কারণেই রাষ্ট্রগুলির প্রধানদের এই সম্মেলনকে কনফারেন্স অব পার্টিস (সিওপি) বা 'কপ' বলা হয়। বর্তমানে ১৯৭টি দেশ এই চুক্তির অংশ। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সম্মেলনটি হল অ্যামাজন বনের পাশে ব্রাজিলের বেলেম শহরে। বাংলায় একে জলবায়ু মহাসম্মেলনও বলা যায়।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মহাসম্মেলন
প্রথম সম্মেলন ১৯৯৫ বার্লিন, জার্মানি;
তৃতীয় সম্মেলন কিয়োটো, জাপান ১৯৯৭ - এই সম্মেলনে ঐতিহাসিক কিয়োটো প্রোটোকল গৃহীত হয়েছিল। এটি একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি যার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলির জন্য নির্দিষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল;
২১তম সম্মেলন ২০১৫, প্যারিস, ফ্রান্স – এই সম্মেলনে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি সাক্ষরিত হয়। ১৯৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে শিল্প-পূর্ব সময়ের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো। এই প্রথম প্রায় সব দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাষ্ট্রগত ভাবে নির্ধারিত লক্ষ্য জমা দিতে সম্মত হয়েছিল;
২৬তম গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড, ২০২১ - এই সম্মেলনে গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এখানে দেশগুলি তাদের গ্রিন হাউস গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়াতে সম্মত হয়। এই সম্মেলনে প্রথম কয়লার ব্যবহার কমানোর কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়;
২৮তম দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ২০২৩ - এখানে প্রথমবার জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার জন্য একটি তহবিল গঠন করার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঠিক হয়, জলবায়ু বদলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্বল দেশগুলিকে সহায়তা করা হবে এই তহবিল থেকে।
বেলেম-এ প্রাপ্তি
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করার পথ নির্দেশিকা এই জলবায়ু মহা সম্মেলন (ব্রাজিলের বেলেম'এ অনুষ্ঠিত ১০ থেকে ২১ নভেম্বর ২০২৫) দেয়নি– উষ্ণায়নের ফলে বিপন্ন দেশগুলির সম্মিলিত চাপ ছিল জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করার। ভারত সহ বহু দেশ আর্থিক বৃদ্ধির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। তাদের আপত্তিতেই এই পরিণতি। পরিবেশ রক্ষার নামে একতরফা ভাবে গৃহীত বাণিজ্যে নীতিতে কোনও বাধা সৃষ্টি করলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে বলে ভারত সহ ৩০টি বিকাশশীল দেশ মত দেয়। এর আগেও একই কথা বলেছে এই দেশগুলি।
আবার এই সম্মেলনেই স্বীকৃত হল যে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে সীমা ধার্য হয়েছিল তার থেকে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছিল, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শিল্প-পূর্ব সময়ের থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। কিন্তু ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু দেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের হার বাড়ছে। ফলে, তাপমাত্রা ২.৬ থেকে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বাড়ছে।
এই সম্মেলনে জোর দেওয়া হয়েছে উষ্ণায়নের নেতিবাচক পরিণতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার। এর জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল বাড়ানোর লক্ষ্যে ধনী দেশগুলি কপ ২৯ বাকুতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০৩৫ সালের মধ্যে অন্তত ৩০০ বিলিয়ন ডলার তারা দেবে। কিন্তু বিকাশশীল দেশগুলির দাবি যে, এটা পর্যাপ্ত নয়, অন্তত ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার দরকার। কীভাবে সেই অর্থ পাওয়া যেতে পারে তার বিশদ পরিকল্পনা ব্রাজিল করেছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ব্রাজিল ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরএভার ফেসিলিটি নামে গ্রীষ্মমণ্ডলের বন সংরক্ষণের জন্য একটি ১২৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের প্রস্তাব করে। তবে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, এতে তারা সরকারি অর্থ দেবে না। সে দেশের বেসরকারি সংস্থা এই তহবিলে বিনিয়োগ করতে পারবে।
ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি এজেন্সি হল নবায়নযোগ্য শক্তির পারদর্শিতা এবং তার ব্যবহার নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থা। বেলেম-এর ৩০তম জলবায়ু মহা সম্মেলনে তারা এক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা ৫৮২ গিগাওয়াট বেড়েছে। তবে ২৮তম সম্মেলনে গৃহীত ১১.২ টেরাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের থেকে এই বৃদ্ধি বেশ কম। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতারণা।' তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছেন এবং মাটির তলার তেল ও গ্যাস তোলার পরিমাণ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন।
শিল্প-কৃষি ক্ষেত্র থেকে ৩০২ জন তদবিরকারী বা লবিইস্ট অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই সম্মেলনে মোট ১৬০২ জন জীবাশ্ম জ্বালানি তদবিরকারী (বা লবিইস্ট) ছিলেন (প্রতি ২৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ১ জন এই তদবিরকারী)। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবেও তারা অংশ নেয়।
জলবায়ু মহাসম্মেলনে ভারত
বিভিন্ন সম্মেলনে ভারত অঙ্গীকার করেছে,
১) ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম নয় এমন জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াট করা হবে। ২০২৪ সালের অক্টোবর অবধি উৎপাদন হয়েছে ২০৩.১৮ গিগাওয়াট। অর্ধেকেরও কম।
২) ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের অর্ধেক নবায়নযোগ্য উৎস (সূর্য, জল, বায়ু, জৈব উৎস) থেকে আসবে।
৩) ২০৩০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা হবে। বাস্তবে ২০০৫-১৪ এই দশ বছরের তুলনায় ২০১৫-২৪ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশে কার্বন নির্গমন কম হলেও মাথাপিছু কার্বন নির্গমন দ্রুত হারে বাড়ছে।
৪) ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। নেট জিরো কার্বন নির্গমন মানে হল, মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস (যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড) নির্গমনের পরিমাণ এবং বায়ুমণ্ডল থেকে সেই গ্যাস অপসারণের পরিমাণ সমান হওয়া। যার ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের মোট পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে।
এই যে মহাসম্মেলন হচ্ছে তার পৃষ্ঠপোষক কারা? মানে কারা টাকা জোগাচ্ছে? এবারের প্রধান স্পনসর (বা অর্থ জোগানদার সংস্থা) গুলি হল ডয়েচে ব্যাংক, বেয়ার (কৃষি ব্যবসা এবং কীটনাশক তৈরির সংস্থা), সিমেন্স, সিমরাইজ এবং সিএফআরএন। এছাড়াও রয়েছে ভ্যাল মাইনিং (লোহা, নিকেল, তামা, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি) খনিজ উত্তোলনের প্রধান সংস্থা। রয়েছে সেনার - ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় কৃষি ব্যবসার তদবিরকারী কোম্পানি; ইউপিএল – ভারতের কীটনাশক তৈরির কোম্পানি। এর সঙ্গে রয়েছে পেপসিকো, কোকাকলার পর সব থেকে বেশি ভূজল ব্যবহারকারী সংস্থা। অর্থাৎ, যারা ৭০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। যারা বেঁচে থাকার আধার প্রকৃতিকে লুঠে শেষ করে দিচ্ছে তারাই আবার জলবায়ু মহা সম্মেলনে টাকা ঢালছে। ভাবছেন তো কেন তারা অর্থ জোগাচ্ছে?
মুনাফাবাজ কর্পোরেটদের ধান্দাটা অন্যখানে। জলবায়ু বদল যে হচ্ছে এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। অস্বীকার করা যাচ্ছে না যে এর জন্য বাজার অর্থনীতি এবং তার কারিগর ওই কর্পোরেটগুলি দায়ী। তবে পরিবেশ সম্মেলনে টাকা ঢেলে তারা তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত নয়, ধান্দার ধনতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে চাইছে। দিনের পর দিন প্রকৃতি পরিবেশ লুঠে নেওয়া কর্পোরেটগুলি এখানেও তাদের ধান্দা খুলে বসেছে মুনাফার জন্য। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে গ্লাসগোর সম্মেলন (কপ-২৬)-এ ১.৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিল তৈরির কথা হয়েছে। এর সিংহভাগই যাতে কার্বন নির্গমন কমানোর কাজে ব্যবহৃত হয়, তার জন্য ধান্দাজীবীরা লাফিয়ে পড়েছে কার্বন নির্গমন কমানোর প্রযুক্তি নিয়ে ভবিষ্যতে বড় ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে।
কেতাবি ভাষায় জলবায়ু বদল ঠেকাতে দুই ধরনের উদ্যোগ দরকার।
এক) মিটিগেশন বা প্রশমন অথবা কমানো। কী কমানো হবে? গ্রিনহাউস গ্যাস। নির্দিষ্টভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড।
আর দুই) অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজন (অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে বা খাপ খাইয়ে নেওয়া)। জলবায়ু বদল হবেই— এ কথা মাথায় রেখে নিজেদের তার সঙ্গে মানিয়ে বেঁচে থাকা। যেমন বৃষ্টির সময় পিছিয়ে যাচ্ছে। ঠিক আছে, তাহলে চাষও খানিকটা পিছিয়ে দাও।
এই দুই উদ্যোগের মধ্যে কোনটি বেশি জরুরি তা নিয়ে চলেছে জোরদার বিতর্ক। কর্পোরেট ও তাদের সহযোগীরা চাইছে, ওই অর্থের বেশিরভাগটা ব্যবহার হোক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তার প্রসারের কাজে, যাতে তাদের মুনাফায় কোনও ছেদ না পড়ে। আর মুলত বিকাশশীল দেশগুলি চাইছে, জলবায়ু বদলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাতে এই বদলের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে তার জন্য অর্থ বরাদ্দ হোক।
এই দুই ধরনের প্রবক্তরাই কিন্তু চলতি উন্নয়ন ব্যবস্থার পক্ষে। ভাবটা এমন যেন নতুন প্রযুক্তি এলে বা মানুষ মানিয়ে নিতে শিখলে জলবায়ু বদল রুখে দেওয়া যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, প্রকৃতিকে লুঠে নেওয়া শিল্প সভ্যতা এবং অতি লাভ ও লোভের সংস্কৃতিকে কেউ প্রশ্ন করছে না। জলবায়ু বদলকে ঘিরে থাকা ন্যায়ের প্রশ্নটিও এখানেই লুকিয়ে রয়েছে, যা বুঝতে কিছু তথ্য দেখে নেওয়া যাক।
২০২০ সালে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা ছিল প্রায় ৩৮ গিগাটন (কোভিডের কারণে সে বছর আর্থিক কাজ প্রায় বন্ধই ছিল)। তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২১০০ সালে ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখতে গেলে ২০৩০-এর মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হওয়া উচিত ১৮.২২ গিগাটন। অর্থাৎ, আট বছরের মধ্যেই, গ্রিনহাউস গাসের পরিমাণ ২০ গিগাটন কমিয়ে আনতে হবে। আর একই সঙ্গে এই হার ধরে রাখতে হবে। প্যারিস চুক্তি অনুসারে বায়ুমণ্ডলে যতখানি কার্বন থাকতে পারে তার ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যেই রয়েছে শিল্প সভ্যতার ‘দান’ হিসেবে। এর জন্য বিকাশশীল দেশগুলির দায় কম কারণ এর বেশিরভাগটাই তথাকথিত উন্নত দেশগুলির জন্য।
ভারতে বছরে মাথাপিছু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ১.৮ মেট্রিক টন, যেখানে আমেরিকায় ১৫.২ মেট্রিক টন। চিনের মাথাপিছু নির্গমন ৭.৪ মেট্রিক টন। সারা পৃথিবীতেই ধনীদের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন একই রকম— তা তারা যে দেশেই থাকুক না কেন। সামগ্রিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী পৃথিবীর ৯ শতাংশ ধনী মানুষ, যারা সংখ্যায় মাত্র ৬.৫ কোটি। এদের মধ্যে ১ শতাংশ ধনী, সামগ্রিক নির্গমনের ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী। মাত্র একশোটি বড় কোম্পানি ৭১ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী।
ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ তাদের বেশ কয়েকটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে জলবায়ু বদলের কারণে। এক নামী দাতা সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, দিল্লি শহরে বসবাসকারী শ্রমিকেরা তীব্র গরমের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে অসহ্য দাবদাহের ফলে ঘরদোর ঠাণ্ডা করার জন্য তাদের মধ্যে ওয়াটারকুলার ব্যবহার বাড়ছে। বিদ্যুতের বিল বাড়ছে। অর্থাৎ, গরম বাড়ার ফলে এক দিকে তাদের আয় কমছে, অন্যদিকে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কাউন্সিল অন এনার্জি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার সংস্থার সমীক্ষা বলছে, উষ্ণায়নের কারণে বাড়বে গরম। তার জন্য বাড়াতে হবে বিদ্যুতের উৎপাদন। আর নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন হবে ২ লক্ষ কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগের।
উদাহরণের কোনও শেষ নেই। পৃথিবীর জলবায়ু বদলে যাদের কোনও ভূমিকা নেই, যারা প্রকৃতি বা পরিবেশ বাঁচানোর লড়াই প্রতিদিন করে চলেছে, তারাই বঞ্চিত হচ্ছে বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে। তাদের ভিটে মাটি চাটি হয়ে যাচ্ছে। শিল্প সভ্যতা, অতিলাভ ও লোভের অর্থনীতি-সংস্কৃতি এবং সম্পদশালীদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার ফল ভুগছে প্রকৃতি, পরিবেশ ও পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষ।
তাই, ধান্দার ধনতন্ত্রের বদলে ন্যায়ের প্রশ্নটি জলবায়ু বদল রোখার জন্য সব থেকে জরুরি। চলতি শিল্প সভ্যতা এবং লাভ ও লোভের সংস্কৃতিকে রেখে ন্যায় ও নৈতিকতার প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দেওয়া অসম্ভব। কারণ, এই সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে অন্যায়। প্রকৃতি ও পরিবেশ শোষণের ইতিহাস।






