Sunday 24 May 2020

বই আলোচনা

বর্তমান প্রজন্মের কাছেও অনন্য আকর্ষণ
সঞ্চারী ভাদুড়ী
 
সম্প্রতি অনিন্দ্য ভট্টাচার্যের 'আশায় বাঁচে চাষা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একুশ শতকের রাজনৈতিক অর্থনীতি' বইটি পড়ে আমি যারপরনাই বিস্মিত ও অভিভূত হলাম। সুদীর্ঘ কাল ধরে আধুনিক বাংলা গদ্যের, বিশেষত বাংলা প্রবন্ধের ছক ভাঙ্গার এক অনলস প্রচেষ্টা তিনি করে চলেছেন। সেই বিষয়ে তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। ইতিপূর্বে তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে 'ইত্যবসরে' পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। তাঁর লেখা যখনই পড়েছি অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছি। বাংলা ভাষার আকর্ষণ কতটা বহুমুখী হতে পারে, তা তাঁর স্বাদু গদ্যশৈলীই প্রমাণ করে। সাম্প্রতিক কালের প্রবন্ধ সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর আর এক অভিনব সংযোজন হল এই 'আশায় বাঁচে চাষা' বইটি। প্রচলিত কথাকে অপূর্ব প্রতিশব্দে প্রতিস্থাপন করে ঝকঝকে স্মার্ট ও নির্মেদ গদ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আর একটি অসামান্য উপহার দিলেন তিনি আমাদের। বইটি কেন আমাকে বিস্মিত ও অভিভূত করল তা বলি...

যে বিষয়টি তিনি নির্বাচন করেছেন তা অত্যন্ত জটিল অথচ অতি প্রয়োজনীয়। তা নিয়ে বাংলা ভাষায়ও যে এমন চিত্তাকর্ষক, উপাদেয় ও  তথ্যসমৃদ্ধ বই লেখা যায় তা তিনি প্রমাণ করে ছাড়লেন। এর আগে বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্ত বা অশোক মিত্ররা বাংলা ভাষায় অর্থনীতির যে অসামান্য লেখনিগুলি আমাদের সামনে রেখে গেছেন, তাঁদের কথা সসম্মানে মনে রেখেই বলছি, দীর্ঘকাল ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলায় আধুনিক প্রজন্মের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতির দুরূহ বিষয়গুলি নিয়ে এমনভাবে চর্চা বোধহয় এর আগে কেউ করেননি।

অর্থনীতির প্রতিটি কোন্দরে লুকিয়ে থাকা রাজনীতি, সামাজিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তার বিশ্লেষণ, তিনি ছবির মতো ফুটিয়ে তুলেছেন। এমন একটি গুরুগম্ভীর বিষয় লিখতে গিয়ে যে এমন রসিকতাও করা যায় এটাও আমার কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। বইটা পড়তে গিয়ে দেখতে পাই একটা চমক ভাঙ্গতে না ভাঙ্গতেই আর একটা উপস্থিত, যা কোনও গোয়েন্দা গল্পের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়। একুশ শতকের রাজনীতির অর্থনৈতিক বীক্ষণ তিনি যথার্থভাবেই তুলে ধরেছেন।

আরও চমকে উঠলাম এটা দেখে যে, আধুনিক ভার্চুয়াল অর্থনীতির আকাশে কৃত্রিম চাঁদও থাকছে। বর্তমান প্রজন্ম, যাদের মধ্যে সিংহভাগই যারা ভার্চুয়াল পৃথিবীর অধিবাসী, যান্ত্রিক উপায়ে মননচর্চায় আসক্ত এবং বই পড়ায় অনাগ্রহী, তাদের কাছেও বইটি এক অনন্য আকর্ষণ এনে দিয়েছে। তাদের জীবনচর্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত এই বইটি বাংলা বই পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াতে কিছুটা হলেও সহায়ক হয়েছে। বাংলা ও বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে এটা বেশ আশার কথা।

ভবিষ্যৎ অর্থনীতির দিশা ঠিক কোন দিকে? এই দিশাহীন যান্ত্রিক ও ভোগসর্বস্ব পৃথিবীর চোখে তিনি আঙ্গুল দিয়ে সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। চরম পুঁজিবাদের কদর্য কুটিল আবর্তের পাশাপাশি চলতে থাকা মানব কল্যাণী মোহিনী রূপ এবং তারও অন্তরালে লুকিয়ে থাকা যে দূষিতান্তকরণ, তা তিনি অত্যন্ত সুচারু বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন।

এর থেকে উত্তরণের পথের কথাও চমৎকার ভাবে এসেছে বইটির শেষে। সব ইজমের উর্ধ্বে সার কথা হল এই যে, ব্যক্তি মানসের আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক স্তরের উত্তরণ ঘটাতে হবে। মনুষ্যত্বের সেই বিকাশ ও উন্মোচনই যুগে যুগে প্রমাণ করে এসেছে যে বহু সহস্রাব্দের বিকশিত পরম্পরায় ও নিরন্তর প্রচেষ্টায়  গড়ে ওঠা মনুষ্য সম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোলে বেড়ে ওঠা ভার্চুয়াল অর্থনীতির করাল গ্রাসে এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে না। সে যন্ত্র যতই উন্নত, উচ্চগুণমান সম্পন্ন ও শক্তিশালী হোক না কেন তা মনুষ্য সম্পদ ও মনুষ্যত্বের বিকল্প হতে পারে না। আর এখানেই তিনি  সঠিকভাবে সেই অমোঘ প্রশ্নটি তুলেছেন যে, ঠিক কোথায় ও কেন বারবার আমাদের শ্রীঅরবিন্দ, গান্ধীজী বা কার্ল মার্কসকে ফিরে দেখার ও পুনর্মূল্যায়ন করার প্রয়োজন আছে।

7 comments:

  1. বইটা পড়ার ইচ্ছে থাকল

    ReplyDelete
    Replies
    1. বইচিত্রে পাবেন। এখানেও অনলাইন অর্ডার দিতে পারেন:
      https://boighar.in/product/ashaye-banche-chasa/

      Delete
  2. গঠনমূলক সমালোচনা।

    ReplyDelete
  3. বইটা হাতে পাবার ইচ্ছে রইলো....

    ReplyDelete
    Replies
    1. এখানে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসে ডেলিভারি পেতে পারেন:
      https://boighar.in/product/ashaye-banche-chasa/

      Delete