স্বপ্ন জমাট বাঁধা
মালবিকা মিত্র
কোথাও একটা সংঘর্ষ হয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছে। তাদের আনা হয়েছে ডাক্তারখানায়। ডাক্তারবাবু একে একে সব রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করছেন, প্রয়োজন মতো পরামর্শ দিচ্ছেন। সমবেত ও উত্তেজিত ছোকরার দল ডাক্তারবাবুকে বলছেন, 'আপনি আগে আপনার ছেলেটাকে দেখুন, ওর অবস্থা খুব খারাপ। আপনার ছেলেটা মরে যাবে, ওকে আগে দেখুন।' গল্পের ক্লাইম্যাক্স'এ ডাক্তারবাবু বলছেন, ও তো আগেই মারা গেছে। ওকে দেখে আর কী হবে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্প 'রক্ত নোনতা'। স্মৃতি থেকে উল্লেখ করলাম। ছেলের দল বলল, 'দেখছেন না, এখনও রক্ত পড়ছে।' ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, 'মৃত্যুতেই রক্তপাত শেষ হয়ে যায় না।'
গল্পটা মনে পড়ছে, কারণ দুটি:
১) চুঁচুড়া থেকে এক পেশেন্টকে রেফার করা হয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ। যথেষ্ট পরিমাণ ওষুধ ইনজেকশন দিয়ে, যাতে এই দীর্ঘ পথ চলতে পারে। কলকাতার ডাক্তার নানা চেষ্টা করে পেশেন্টের সাড়া পেলেন না। তিনি জানালেন, পেশেন্ট কোমায় চলে গেছে। সেই রাতে খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন পড়িমরি ছুটল হাসপাতালে। কোথায় কী? বেড ফাঁকা, পেশেন্ট নেই। কোথায় গেল? কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, বাথরুম থেকে স্নান করে পেশেন্ট বেরিয়ে আসছে। আসলে চুঁচুড়া থেকে যে সব ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তার ফলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। ডাক্তার সেটাকেই ভেবেছে কোমা। মাত্র দিন দশ আগের কথা।
২) আজই (১২ জুলাই ২০২৫) সংবাদে প্রকাশ, ঘরের ভিতরে বাবার মৃতদেহ। বাইরের ঘরে একের পর এক রোগী দেখে চলেছেন চিকিৎসক ছেলে। দুর্যোগের দিনে বৃষ্টি মাথায় করে রোগীরা এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে। তাদের দেখে চিকিৎসা করে তারপরেই বাবার শেষকৃত্যে সামিল হলেন ডাক্তারবাবু। এমনই ব্যতিক্রমী ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়ার ইমামবাজার অঞ্চলে। চিকিৎসকের নাম ডাক্তার শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। চুঁচুড়া পুরসভার কাউন্সিলার ইন্দ্রজিৎ দত্ত (বটা) বলেন, অনেক গরিব মানুষ ডাক্তারবাবুর কাছে আসেন। রাত দুটো-তিনটে পর্যন্ত বসে ডাক্তারবাবু রোগী দেখেন। কোনও নির্দিষ্ট ভিজিট নেই, যে যা সামর্থ্য দেয়। তাঁর কোনও চাহিদা নেই। এমন ডাক্তারবাবুর জন্য গর্ববোধ করি আমরাও।
এই সংবাদ পাঠ করে ভেতর থেকেই খুব তাগিদ অনুভব করি কিছু লিখবার। প্রথমত বলে রাখি, আমার বাড়ি ভদ্রেশ্বরে। স্কুলের শিক্ষকতা করতে যেতাম চুঁচুড়ায়। আমার বহু ছাত্র, অভিভাবক এমনকি সহকর্মীরা প্রায় সকলেই এক বাক্যে ডাক্তার শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা সকলেই ওনার পেশেন্ট। দূরের রোগীদের ট্রেন বাস লঞ্চ পাওয়ার সমস্যা থাকে, তাই তাদের আগে ছেড়ে দেন। বেশি রাতে দেখেন স্থানীয় রোগীদের। আমি নিজে রাত্রি দুটোয় ডাক্তারবাবুকে ফোন করে সমস্যার কথা জানিয়েছি। পরদিন সটান স্কুলে ওষুধ হাজির। কারণ, ওই সময় আমার স্কুলের এক অভিভাবক ডাক্তারবাবুর সামনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর হাত মারফত পরদিন ওষুধ পৌঁছে গেল আমার হাতে।
এক অবিচ্ছেদ্য ২৩ বছরের সম্পর্ক আমার সঙ্গে। প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সকল রোগীর সঙ্গে আমিও অপেক্ষমান। সেখানে চেয়ারে বসে আছেন এক অশীতিপর বৃদ্ধা। সমস্ত রোগীদের সঙ্গে তিনি গল্প করছেন। দেখলাম অনেকের সঙ্গেই তাঁর গভীর পরিচিতির সম্পর্ক। পরিবারের লোকজনের খবরাখবর নিচ্ছেন। একটি উনিশ শতকীয় বাড়ির একতলায় আমরা বসে আছি। এরই মধ্যে ডাক্তারবাবু রোগী ডেকে নিচ্ছেন একে একে। প্রায় সবসময়ই জনা ত্রিশ রোগী থেকে যাচ্ছে। আমি অন্যদের কাছ থেকে জানলাম, ওই বৃদ্ধা ডাক্তারবাবুর পিতামহী। একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, ডাক্তারবাবু খেতে যান কখন? ওপরেই তো ওনার ঘর। বৃদ্ধা উত্তর দিলেন, 'খাওয়া-দাওয়ার কোনও সময়ের ঠিক নেই। ছেলেটা এই করেই অসুস্থ হয়ে যাবে। কোনওদিন চারটে, কোনওদিন পাঁচটা, কখনও বা সাতটায় দুপুরের খাওয়া।' ডাক্তারবাবু আমার ছাত্র না হলেও আমার স্কুলের প্রাক্তনী। তাই, একটু অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার দাবিতে বলতাম, নাতির একটা বিয়ে দিয়ে দিন, তাহলেই একটু নিয়মে বাঁধা যাবে।
একদিন দেখলাম, রোগীদের বসার ঘরে ঠাকুমার সেই চেয়ারটা শূন্য। দেয়ালে ফ্রেমবন্দী হয়েছেন ঠাকুমা। এছাড়া দেখতাম, ফর্সা ধবধবে দীর্ঘকায় ডাক্তারবাবুর বাবা। কখনও উপর থেকে নামছেন, বাইরে যাচ্ছেন। কখনও বা বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকছেন। মুচকি হাসি, অল্পসল্প কথা বিনিময় হত। তিনি একবার দাঁড়িয়ে বলতেন, 'কতক্ষণ?' হয়তো বললাম, প্রায় তিন ঘন্টা। উনি বলতেন, কে জানে আরও কত ঘন্টা! ও নিজেও কি জানে ও কখন খায়, কখন ঘুমায়। এভাবে চললে ও বেশিদিন চালাতে পারবে না। আজ (১২ জুলাই ২০২৫) খবরের কাগজে দেখলাম, সেই দীর্ঘদেহী সুবর্ণকান্তি ভোলেভালা মানুষটা বিদায় নিয়েছেন। এতটুকু আড়ম্বর নেই বাড়িটাতে, মধ্যবিত্ত ছাপ স্পষ্ট। ডাক্তারবাবু আর তাঁর বাবা, ঠাকুমা, যাদের দেখলাম তাঁরা প্রত্যেকেই খুব সাদামাটা আটপৌরে।
জানেন, ছয় ঘন্টাও হয়তো বসতে হয়, লোকাল হলে সাত আট ঘন্টাও হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, ডাক্তার দেখাতে এসে তো রোগী আরও বেশি অসুস্থ হবে। এখানেই আমার বলার বিষয়।
প্রথম দিন আমি গিয়েছিলাম আমার একটা এলার্জি দেখাতে। সারা গায়ে মশার কামড়ের মতো অসংখ্য ফুলে ফুলে যায় ক্রমে সেগুলো একটার সঙ্গে আর একটা জুড়ে যায় ধীরে ধীরে, সারা শরীর ফুলে যায়। চর্ম বিশেষজ্ঞ বললেন, দু' বেলা লেভোসেটরিজিন খেতে। খাই ভালো থাকি। ১৫ দিন খাওয়ার পর যেদিন বন্ধ করলাম, সেদিন আবার যথাপূর্বং। আবার আমি বিশেষজ্ঞকে দেখালাম। বললেন, ওটাই দু' বেলা চলুক। আমার তখন খুব বাড়াবাড়ি। সারা গায়ে ল্যাকটোক্যালামাইন লাগাই, বরফ লাগাই, ডাক্তারবাবু দিলেন এলার্জিক্স লোশন। আমি বললাম, কতদিন? ডাক্তারবাবু বললেন এলার্জি যতদিন থাকবে ততদিন এটা খেয়ে যেতে হবে। আর ওটা লাগাতে হবে। আমার কাছে বিষয়টা খুব যুক্তিপূর্ণ মনে হল না। তখনই প্রথম আমি গেলাম ডাক্তার শিবাশিসের কাছে। ডাক্তার শিবাশিস বললেন, এটা কমাতে পারব, অনেক কমিয়েছি। কিন্তু সারাতে পারব না। এখন আপনি দৈনিক দুটো লিভোসেটরিজিন খান, সেটাকে কমিয়ে সপ্তাহে দুটো করা সম্ভব। আরও ভালো সাড়া পেলে, সপ্তাহে বা দু' সপ্তাহে একটা। শুধু ধৈর্য ধরে ওষুধটা খেয়ে যাবেন। শুরু হল চিকিৎসা। বিশ্বাস করুন, বছর খানেক ওষুধ খাওয়ার পর লেভোসেটরিজিন কমতে কমতে সারা বছরে একটাও লাগেনি। এটা ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা।
আমি একদিন দেখাতে গিয়ে বসে আছি, ডাক্তারবাবু নিজেই আমাকে জানতে চাইলেন, কোনও সমস্যা হচ্ছে? আমি জানালাম, অনেকক্ষণ ধরে একটা মৃদু চেস্ট পেইন হচ্ছে। তখন ডাক্তারবাবু অসম্ভব তৎপরতার সঙ্গে স্টেথো লাগালেন, এক ডোজ ওষুধ দিলেন। পাশের একটি ঘরে আমাকে শুতে বললেন। আধঘণ্টা অন্তর খোঁজ নিলেন। এক ডোজ করে ওষুধ দিলেন। ঘন্টা দুই পর বললেন, এবার একটু ভালো বোধ করছেন? এবার একটা ECG করিয়ে নিয়ে একজন মেডিসিনের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। দেরি করবেন না। এক্ষুনি। কথামতো সবকিছু করলাম। ওই রাতেই আইসিইউ'তে ভর্তি করা হল আমাকে। পরে শুনেছি, আইসিইউ'র ডাক্তার বলেছেন, খুব ভালোভাবে লোডিং ডোজ দিয়ে পেশেন্টকে যেভাবে পাঠানো হয়েছে তার জন্য এতটা পথ আসতে পেরেছেন। সিভিয়ার এমআই। তার সঙ্গে পেশেন্টের রোগা পাতলা চেহারা একটু বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। সেই দিন দেখেছিলাম ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা নয়; ডাক্তার শিবাশিস ব্যানার্জি কুড়ি মিনিট-আধঘণ্টা অন্তর দেখতে আসছেন, ওষুধ দিচ্ছেন। এরপর আমার হার্টের বাইপাস সার্জারি হল।
আমার মুখে জিভের দুপাশে খুব খারাপ রকমের ঘা আছে। কলকাতায় ওরাল স্পেশালিস্ট দেখে, বায়োপসি করে জানিয়েছেন ওটা ইরোসিভ লাইকেন প্লানাস। সমস্ত অ্যালোপ্যাথি ডাক্তাররাই বললেন, এর কোনও রেমেডি নেই, সবই অস্থায়ী। প্রধান চিকিৎসা আইসোট্রেটিনন ক্যাপসুল। কিন্তু সমস্যা হল, ওই ওষুধে লিভার ফাংশন সম্পূর্ণ ঘেঁটে ঘ, লিপিড প্রোফাইল তথৈবচ। আমি পোস্ট-কার্ডিয়াক বাইপাস সার্জারি পেশেন্ট, এসব চলবে না। এদিকে আমার জিভ থেকে রক্তপাত হচ্ছে। লিকুইড খাবার ছাড়া খেতে পারি না। অগত্যা ডাক্তার শিবাশিস ব্যানার্জি। বললেন, সেরে যাবে, সম্পূর্ণ না হলেও ৯০ শতাংশ সারবে। এখন আমি আখ চিবোতে পারি না। লঙ্কা বা টক জিনিস খেতে পারি না। কিন্তু ডাল ভাত তরকারি মাছ মাংস মুড়ি ছোলা বাদাম সব খেতে পারি। এক সময় তো ঝাল টক এমনকি কাঁচা লঙ্কা পর্যন্ত খেতে পারছিলাম। কিন্তু প্রাণঘাতী মারাত্মক কোভিড হওয়ার পর ওগুলো আর পারি না। কিন্তু জিভের কষ্টটা সত্যিই নব্বই শতাংশ কমে গেছে।
ছ' ঘন্টা আট ঘন্টা বসে থাকলে পেশেন্ট বিরক্ত হবেই। কিন্তু পেশেন্ট বিরক্ত হয় না। কারণ, ডাক্তারবাবু নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে অক্লান্ত, রোগী দেখে চলেছেন। এখানেই আসল প্রশ্ন। পেশেন্ট পার্টি যদি দেখে তার রোগী কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু ডাক্তারের দেখা নেই, তখন ভিন্নতর প্রতিক্রিয়া হয়। আর পেশেন্ট পার্টি যখন দেখে ডাক্তার নিজেই নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে অক্লান্ত রোগী দেখে চলেছেন, বিরক্তি বোধ হয় না। আবার এর মধ্যেই এমার্জেন্সি, কোলে বাচ্চা কাঁদছে, মা কাজ ফেলে এসেছে, তাদের নিজে ডেকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এক ডোজ ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বলেন, সন্ধ্যায় এসে বাকি ওষুধ নিয়ে যেও। ডাক্তারবাবুর এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণ হল, সব পেশেন্টের ওষুধ ডাক্তারবাবু নিজের হাতে তৈরি করে দেন। অতএব, সময় লাগবেই। আমার বান্ধবী বলে, নিজের হাতে ওষুধ দেওয়ার একটা ভিন্ন তাৎপর্য আছে। বাড়ির মা মাসি কাকিমা রান্না করে রণে ভঙ্গ দেন না। তাঁরা বসে থেকে নিজের হাতে বেড়ে খাওয়ান এবং সবার শেষে নিজে খান। ডাক্তারবাবুও কাগজের ওপর খসখস করে কলম চালিয়ে দেন না। অত্যন্ত সংবেদনের সঙ্গে নিজের হাতে ওষুধ বানিয়ে দেন। এখানেই একটা বাড়তি মাত্রা যোগ হয় ওষুধের সঙ্গে।
ঠাকুমা চলে গেছেন, বাবা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ও চলে গেলেন। হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে ডাক্তারবাবুর স্ত্রী ও কন্যার ছবি দেখেছি। আশা করি, এদের তত্ত্বাবধানে আমার প্রিয় ডাক্তার শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই দায়িত্বশীল ভাবে আরও দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন।
ডাক্তারবাবুকে নমস্কার জানাই। এমন চিকিৎসকরা নিজের সমস্ত সমস্যাকে পেছনে ফেলে সবসময় নিজের কর্তব্যে অটল অবিচল থাকেন। এমন মানুষের কথা তুলে ধরার জন্য লেখকেও ধন্যবাদ।
ReplyDeleteএই লেখা থেকে পাঠক এক ধরনের ধারণা পেলেন। আমি একটু ভিন্ন ধারণা দিতে চাই। আমার পিঠে সিবেসিস গ্ল্যান্ডে ইনফ্লামেশন হয়েছিল। বেশ শক্ত ডেলা পাকানো ।ডাক্তারবাবু সেটা দেখে বললেন , আমাদের ওষুধ আছে, ভেতর থেকে সমস্ত বের করে দেবে, এটা ফাটিয়ে। কিন্তু সে বড় কষ্টদায়ক হবে আপনার। তার চেয়ে ভালো আপনি একজন সার্জনকে দিয়ে এটা অপারেট করুন। পাঁচ সাত দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
ReplyDeleteআর একবার আমি একজন পেশেন্ট নিয়ে গিয়েছিলাম তার ফাংগাল ইনফেকশন tinlya ডায়াগনোসিস হয়েছে। তিনি দেখলেন, বললেন আমার চিকিৎসায় সময় লাগবে। ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু যতটা বাড়াবাড়ি হয়েছে এটা আগে কমিয়ে নিতে হবে। আপনি বরং সিনিয়র ক্রিম স্পেশালিস্ট ডক্টর ব্যানার্জিকে দেখিয়ে নিন বাড়াবাড়িটা কমিয়ে নিলে তারপর আমি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করব। অর্থাৎ বলতে চাইছি তিনি পেশেন্টকে ধরে রাখেন না। প্রয়োজনমতো এলোপ্যাথি চিকিৎসায় পাঠিয়ে দেন । এমনকি দেখেছি সরিয়াসিস পেশেন্ট কে স্পষ্ট বলছেন আপনি স্কিন স্পেশালিস্ট দেখান। ফলিট্রাক্স জাতীয় ওষুধ দেবে। সেটা ছাড়া কমবে না।
ডাক্তারবাবুর এই উদারতা আমি চিরকাল মনে রাখব।
আমিও সম্প্রতি ওঁকে দেখাতে শুরু করেছি। প্রথম দিনেই যেটা ভালো লেগেছে, ওঁর সততা। আমার কিছু ক্রনিক সমস্যা আছে। পরিষ্কার বললেন যে ওঁর চিকিৎসায় এই সমস্যা পারবে না কিন্তু কষ্টটা যাতে কম হয়, তার ব্যবস্থা করতে পারবেন। আমার গোটা পাড়ার লোক ওঁর কাছে চিকিৎসা করান।
ReplyDeleteউনি কি হোমিওপ্যাথ? কোথাও এর উল্লেখ না থাকায় এবং সবটা পড়ে মনে হচ্ছে বলেই জানতে চাইছি।
ReplyDeleteহ্যাঁ, উনি হোমিওপ্যাথ।
Deleteজেনে ভাল লাগল এমন ডাক্তার আজও আছেন, যারা যথার্থ ভাবে তাদের সেবাধর্ম পালন করে যাচ্ছেন, আশাকরি ওনার চিকিৎসার সাফল্যের কথায় আমার মতো পাঠকদের প্রয়োজনে উপকার হবে, লেখিকাকে ধন্যবাদ, আর একক মাত্রা কে ও , সম্পূর্ণ ভিন্ন এই রকম একটি প্রতিবেদন পেশ করার জন্য
ReplyDeleteডাক্তার শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মূল লেখা ও বেশ কিছু মতামত পড়লাম। আমি একজন পেশেন্ট হিসেবে ভিন্ন একটি বিষয় আলোকপাত করতে চাইছি :
ReplyDeleteপ্রথমত শত শত, হাজার হাজার পেশেন্টের ক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুর ধ্যান ঠিক কতটা বোঝা যায়, তাদের সমস্যাগুলি তিনি কখনই বিস্মৃত হননা। স্পষ্ট বলে দিতে পারেন কার কি সমস্যা। এটা একটা বিস্ময়কর গুণ।
দ্বিতীয়তঃ পেশেন্টের সাথে ডাক্তারবাবুর যে সম্পর্ক সমস্ত ঘটনার মধ্যে প্রকাশিত, তার আঁতুড় ঘর, আমার দৃষ্টিতে ডাক্তারবাবুর পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন। অনেক পরিবারেই ডাক্তার আছেন। কিন্তু ঠাকুমা বসে থাকেন রোগীদের সাথে কথোপকথন চালান। ডাক্তার নাতির এই ডিভোশন ও খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, এর মধ্যে যেন কোথায় একটা গর্ববোধ আছে। তার বাবার মধ্যেও সেটা দেখেছি। পারিবারিক এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিটা ডাক্তারবাবুর দৃষ্টিভঙ্গিকে গড়ে উঠতে ও ধরে রাখতে সাহায্য করেছে ।
এছাড়া বলব, যে এলাকায় ডাক্তারবাবুর বাড়ি, সেই এলাকা অতি ধনী মানুষের বাস। আবার পাশেই এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল আঠারো আনা গরিব মানুষের বাস। সেই হত দরিদ্র মানুষদের দেখেছি, কত সহজে, অনায়াসে, দ্বিধাহীন ভাবে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে দেখা করেন। উপরের ঘরে চলে যাচ্ছেন। ডাক্তারবাবুর বাড়ি এদের জন্য অবারিত দ্বার। এই মানুষগুলোর সাথে ডাক্তারবাবুর এত নরম শান্ত ব্যবহার, এতটুকু বিরক্তিহীন, এটাও আমার চোখে ধরা পড়েছে। বাড়ির অনাড়ম্বর বন্দোবস্ত, সবই মানানসই। দেখলে বোঝা যায় ডাক্তার সমাজ অতিরিক্ত কোন জীব নয়। নৈবেদ্যর উপর নারু নয়। সমাজের সাথে সম্পৃক্ত।
আশা করি আমার কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিক হলো না। একক মাত্রাকে ধন্যবাদ।