শাসক-জনতার দূরত্ব কমিয়ে আনার লড়াই
শাহেদ শুভো
'The creatures outside looked from pig to man, and from man to pig, and from pig to man again; but already it was impossible to say which was which.' (Animal Farm, George Orwell).
ব্যক্তিগত ভাবে অরওয়েলের 'অ্যানিমেল ফার্ম' উপন্যাসের এই লাইনগুলো আমার কাছে ৫ অগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রায়-প্রতীকী মনে হয়! হাসিনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আসলে আজ কোথায় দাঁড়িয়ে? এই 'একক মাত্রা'র ব্লগে গত বছরের (২০২৪) ৯ অগস্ট প্রকাশিত লেখার শেষ অংশে যে আশঙ্কার কথা বলেছিলাম, তার প্রায় অনেকাংশই কি দৃশ্যমান হচ্ছে? অথচ এত মানুষের হত্যা, তাদের আহত ও আক্রান্ত হওয়া-- সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হাসিনা-শাসনের অবসান, এরপর নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনিসের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলনের নেতা সমূহ ও সিভিল সোসাইটির কয়েকজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে সরকার গঠন, ফলত, গত এক বছরের শাসনে বাংলাদেশে কি কোনও গুণগত পরিবর্তন এসেছে নাকি বাংলাদেশ এখনও সেই পুরনো চক্করেই ঘুরপাক খাচ্ছে? এই প্রশ্নটিই সকলকে ভাবাচ্ছে।
প্রায় রাজনীতি-শূন্য (জুলাই অভ্যুত্থানে কোনও একক রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ছিল না, সেই অর্থে তা রাজনীতি-শূন্য) এই জনপদের মানুষের এক ফ্যাসিস্ট শাসকের প্রতি ক্ষোভ, সঙ্গে সেই জনপদের মানুষকে স্রেফ ন্যূনতম নাগরিক না মনে করা, তাদেরই করের টাকায় কেনা সামরিক যানে ছাত্র হত্যা করে তার লাশ 'এপিসি'র (সামরিক যান) ছাদে তুলে মানুষকে দেখানো যে, দেখ, আমি হাসিনা অথবা হাসিনা বাহিনী কত শক্তিশালী, আমরা জনগণকে থোড়াই কেয়ার করি, প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে মানুষ ছিল একটা সংখ্যা মাত্র! দৃশ্যমান ফ্যাসিস্ট শাসন তার গোটা সরকারি অধীনস্থকে কীভাবে একটা রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলে, তার প্রকৃত উদাহরণ ছিল বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, লুটেরা ব্যবসায়ী, নানা পরিচয়ে পার্টিজান কর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক-- কোন অংশ ছিল না যারা হাসিনার বশ্যতা স্বীকার করে নেয়নি? আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, নানা পরিচয়ে হাসিনা এক সর্বব্যাপী রাষ্ট্র তৈরি করেছিল, যা মাফিয়া-স্টেটের সঙ্গে তুলনীয়। গত ১৫ বছরের দুঃশাসন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষকে জুলাই ২০২৪'এ এক জায়গায় নিয়ে এসেছিল; তা ছিল খুনী হাসিনা ও তার বাহিনীর বিচার। এটা সর্বাত্মক সত্য, যদিও তখনও রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠান হাসিনার আনুগত্যাধীন ছিল। 'রাষ্ট্রের কোনও ছবি নাই' সম্ভবত সুমন মুখোপধ্যায়ের কোনও নাটকের শিরোনাম। রাষ্ট্র নিজে কোনও দৃশ্যমান অবয়ব নয়। তা একটি বিমূর্ত শক্তি, যার অস্তিত্ব বোঝা যায় তার কাজ, নিয়ন্ত্রণ, দমন-পীড়ন, আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে। হাসিনার এই বিমূর্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই মানুষ দাঁড়িয়েছিল। সেই লড়াই ছিল রাষ্ট্র বনাম জনগণের।
৫ অগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ এক নতুন বাংলাদেশে বিনির্মিত হবে-- এই স্বপ্ন অনেকেই দেখেছিলেন। যদিও গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হলে আদৌ কি সেখানে বাস্তবিক কোনও সুসংগঠিত রাজনৈতিক কর্মসুচী ভিত্তিক আকাঙ্ক্ষা থাকে? আবার জুলাই অভ্যুত্থানের চরিত্র কিন্তু কোটা আন্দোলন উদ্ভূত, যা ছিল মূলত সিভিল রাইটস মুভমেন্ট, অবশ্যই দল নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে শুরু হয়েছিল। প্রথমে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন, যে আন্দোলনকে হাসিনার 'রাজাকার' ট্যাগ দেওয়া, এরপর তা দমন করতে রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক বাহিনীকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর লেলিয়ে দেওয়া। তারপর দেশ জুড়ে গণহত্যা চালানো, তারই ফলশ্রুতিতে সর্বস্তরের মানুষের রাস্তায় নেমে আসা ও হাসিনার বিদায়। প্রশ্ন হতে পারে, কেন ১৫ বছরে হাসিনার পতন হল না? মানুষ কেন জাগলো না? আসলে, কোন সূত্র মানুষের আত্মমর্যাদায় কখন আঘাত করে তা কি বলা যায়? রাস্তায় নেমে মানুষ যখন দেখেছে হাসিনার বাহিনী পশুর মতো মানুষ মারছে, এমনকি নিজের ঘরের বারান্দায়, ছাদেও মানুষ নিরাপদ নয়, তখনই মানুষ পালটা লড়াই করেছে, যা কোনও রাজনৈতিক দল তার একক কর্মসুচী দিয়ে করে উঠতে পারে না। সারা দুনিয়ার অভ্যুত্থান-আন্দোলনের ইতিহাস পাঠ করলে এমন সময় বারবার দেখা গেছে।
হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ প্রায় তিনদিন সরকারবিহীন ছিল। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা ও কর্মীরা এই আতঙ্ক ছড়াত যে হাসিনার পতন হলে এক রাতেই ৫ লক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী মারা যাবে, সংখ্যালঘুদের বাংলাদেশ ছাড়তে হবে! হাসিনা পতনের পর নানা আশঙ্কা থাকার পরেও আসলে বিরুদ্ধ মতের ওপর তেমন কোনও বড়সড় আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র সমাজ ও ডঃ ইউনুস এবং বিভিন্ন সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গেল? যে আন্দোলন সর্বাত্মক ছিল, সেই আন্দোলন পরবর্তী সরকার কি সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি যারা কিনা বাংলাদেশের এলিটোক্রেসির অংশ, তাদের কব্জায় চলে গেল? প্রথমে বিপ্লব তারপর অভ্যুত্থান এরপর রাজ বদল (রেজিম চেঞ্জ)-- ‘জুলাই অভ্যুত্থান'কে নিয়ে নানা ন্যারেটিভ তৈরি করা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সোসাইটি সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, অথচ 'জনপরিসর' শব্দটি এই বুদ্ধিবৃত্তিক সোসাইটি ব্যবহৃত জনপ্রিয় টার্ম হলেও আসলে কি জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশকে এই বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পেরেছে? আমাদের এই প্রশ্ন সমস্ত রাজনৈতিক দল, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাকে আমরা অভ্যুত্থানের সরকার মনে করি, তাদের কাছে; অথবা আমাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি যারা পরবর্তীতে ‘এনসিপি' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, যাদের প্রতি এই সরকারের আনুকূল্য দৃশ্যমান, তাদের কাছেও! তাদের রাজনৈতিক কর্মসুচী আসলে কী? সেখানে উল্লিখিত 'সাধারণ মানুষের রাজনীতি' আসলে কী? এই প্রশ্ন এখন জনমনে উঠেছে। 'দিল্লি না ঢাকা'-- এই শ্লোগান আদৌ কোনও রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান না আসলে এক ধরনের ধর্মীয় উসকানি? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউনুস সরকারের নানা চুক্তির প্রসঙ্গ উঠলেও এই ছাত্র নেতারা নীরব। দলের মধ্যে বহুত্ববাদের কথা বললেও ইসলামিস্ট অংশের প্রচ্ছন্ন শক্তি টের পাওয়া যায়; শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামাত ইসলাম সহ অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে তাদের যোগ দৃশ্যমান। বাংলাদেশে এই ধরনের রাজনীতি এক সময় বিএনপি করেছে, এরশাদের 'জাতীয় পার্টি' করেছে এবং আওয়ামী লীগও করেছে! বাংলাদেশের মানুষ এই সুবিধাবাদের রাজনীতি বোঝে! সে কেন আরেকটা সুবিধাবাদের রাজনীতিকে সমর্থন করবে? প্রশ্ন, ছাত্র নেতৃত্বের এই দল কি আসলে কোনও নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করতে পেরেছে? বরং তাদের প্রিয় কিছু বুদ্ধিজীবীর শেখানো পাঠ চিন্তাকে নিজেদের বয়ান মনে করছে এবং অন্যান্যদের মতো বরাবর ভাবছে জনগণ কত বোকা। এরা ৭১'এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে ২৪'এর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, যা জনগণ প্রত্যাখান করেছে। মুক্তিযুদ্ধ এক সর্বব্যাপী জনযুদ্ধ ছিল এবং এক-ভাষা ভিত্তিক জাতি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, আর অন্যদিকে জুলাই ২০২৪ ছিল স্বরাষ্ট্রের নাগরিকের বিরুদ্ধে শাসক শ্রেণির আগ্রাসন!
বহু আলোচিত বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নানান সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও এক সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে এই সরকার কতটা আন্তরিক? এই প্রশ্ন প্রায় সব বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আছে। বাংলাদেশের এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রথম থেকেই নির্বাচনের দাবি করছে, যদিও গত ১৫ বছর ধরে প্রায় অধিকাংশ বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে লড়াই করছিল তার অন্যতম দাবি ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন, কারণ, গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাটাকেই আওয়ামী লীগ প্রহসনে পরিণত করেছিল। তাই, ৫ অগস্ট ২০২৪'এর পর অধিকাংশ বিরোধী দল আশা করেছিল এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুতই এক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে। কিন্তু এই সরকার এজেন্ডা আকারে আনল সংস্কার এবং হাসিনা আমলের গণহত্যা, গুম খুনের সঙ্গে যুক্তদের বিচার। যদিও এই দাবি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সকল বিরোধী দলই করেছে কিন্তু তার সাথে সাথে নির্বাচন প্রক্রিয়াও গুরুত্ব পেয়েছে। এই সরকার বেশ কিছু কমিশন করলেও এবং তাদের অধিকাংশ রিপোর্ট পেশ হলেও জনপ্রশাসন ও পুলিশে আদৌ কোনও সংস্কার হয়নি। তবে, তারা খুব গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু পলিসি লেভেলের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘ঐক্যমত কমিশন' নামে সংস্কার বিষয়ক মোড়লগিরি শুরু করেছে। টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হচ্ছে এই ঐকমত্য কমিশনের আয়োজন, যেন সরকারের একটা পক্ষ বলতে চাইছে, 'দেখুন, এ দেশের রাজনীতিবিদেরা কত খারাপ, আমরা বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসে যে সব সংস্কারের আইডিয়া দিচ্ছি এটা তারা মানছে না!'
বাংলাদেশের রাজনীতি ঘোলাটে হওয়ার অন্যতম কারণ, এখানে আদৌ কোনও রাজনৈতিক দলের বিকাশ ঘটেনি। বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যারা কিনা ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্ববহ, এই দুই দলই সরকার গঠনের যোগ্যতা রাখে। অনেক অভিযোগ থাকার পরেও শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী দলটাকে একটা 'হাইব্রিড রেজিমে' পরিণত করেছিল। ৫ অগস্টের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা অসম্ভব। যদিও তাদের বিশ্বাসী সমর্থক গোষ্ঠী তা মনে করে না, কিন্তু এই ১৫ বছরের অন্যায়ের দায় নিতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক ত্যাগী নেতা ও কর্মীরা আগ্রহী নয়। বিএনপি এরপর সবচেয়ে বৃহৎ দল, যদি ভোট হয় বিএনপি ক্ষমতা আসছে এটা নিশ্চিত। কিন্তু বিএনপি'র রাজনীতির প্রধান সমস্যা তাদের তৃণমূলে পার্টি কর্মীরা বিভিন্ন পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিএনপি'র মূল নেতৃত্ব অনেকাংশে প্রগতিশীল হলেও এটা একটা মধ্যপন্থী দল এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন ডানপন্থার রাজনীতির অভিযোগ আছে। ২০০১ থেকে ২০০৭-- বিএনপি তাদের জোটসঙ্গী জামাতকে নিয়ে ইসলামি উগ্রপন্থার অংশ হয়েছিল। ভোটের রাজনীতির অংশ হতে গিয়ে এই দলটিতে এক ধরনের মিশ্র চিন্তার বিকাশ ঘটেছে যা নির্ভর করে ভোটের পাল্লা কোন দিকে বেশি তার উপর। যদিও এত কিছুর পরেও বিএনপি'তে অনেকেই আস্থাশীল।
ইসলামপন্থী দলগুলো ভোটের রাজনীতিতে খুব শক্তিশালী না হলেও বদরুদ্দিন উমর থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছেন, ৫ অগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বিকাশ হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে আবারও গত ৯ অগস্টের (২০২৪) আমার লেখাতে ('একক মাত্রা' ব্লগ) ফিরে যাই, সেখানে লিখেছিলাম দলহীন অথবা জোটবদ্ধ নৈরাজ্যবাদ ফ্যাসিজম হটায় কিন্তু তারপর আমলাতান্ত্রিক ফ্যাসিজমে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হয়। আর তাদের অন্যতম টুলস নানা উপায়ে ঘৃণাবাদ, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, কালচার ওয়ার শব্দের আড়ালে 'কনফ্লিক্ট জোন' তৈরি করে ভবিষ্যৎ সাম্রাজ্যবাদী অবস্থান নিশ্চিত করা। এই সরকার সেই কাজই করছে। যুক্তরাষ্ট্র সহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে তারা আঁতাতে মত্ত, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে ‘সিক্রেট অ্যাক্ট'এর ব্যবহার হচ্ছে (এগুলো শেখ হাসিনাই করত)।
বাংলাদেশে বাম ধারার দুটো অংশ বিদ্যমান-- একটা অংশ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাম পরিচায়ক, আরেকটা তরুণ বামপন্থীরা, অনেকটা দল শূন্য অথচ নৈরাজ্যবাদী নয়। দুই অংশের দ্বন্দ্ব আছে। দ্বিতীয় অংশ মূল ধারার বামদের অস্বীকার এবং হাসিনার ফ্যাসিজমের জন্য তারা পার্টিগুলোকেই দায়ী করে। আবার এই অংশ জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এখন ইসলামপন্থীদের দ্বারা নানা পরিচয়ে ট্যাগড হচ্ছে, যা এদের জুলাই কেন্দ্রিক অভ্যুত্থান সম্পর্কে মোহভঙ্গের কারণ। যদিও এই অংশ জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করে এবং হাসিনার বিরুদ্ধে যে মধ্যবিত্ত অংশটি প্রথম দিকে রাস্তায় নামছিল না, তাদের রাজপথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। তবে তাদের অনেকেই এনসিপি ও ছাত্র নেতাদের প্রতি মোহগ্রস্ত ছিল। শেখ হাসিনা সকল রাজনীতিকে এক প্রকার নিয়ন্ত্রণ করার পরও ইসলামী দলগুলো নানা উপায়ে তাদের রাজনীতির বিকাশ ঘটিয়েছে; এতে হাসিনারও প্রচ্ছন্ন মদত ছিল, সে বিশ্বকে দেখিয়েছে তার দল ছাড়া সবাই ইসলামপন্থী। তাই তার ফ্যাসিজম যেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ৫ অগস্ট'এর পর জামায়াত ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনেকেই নিজ পরিচয় দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে যারা কিনা ছাত্র জীবনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারাই হুট করে নিজেদের এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ও মূল নেতৃত্বদানকারী শক্তি হিসেবে দাবি করছে। ক্যাম্পাসগুলোকে বিভিন্ন পরিচয়ে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ঘোলাটে। জুলাই ২০২৪ আর ২০২৫ এক নয় নিশ্চয়ই। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন অংশীজনের নানা ফন্দিফিকির বেরিয়ে আসছে এবং এটাই স্বাভাবিক যে কেউ কেউ বলছেন, ৫ অগস্ট পরবর্তীকালে সামাজিক অথবা সাংস্কৃতিক সংগ্রাম করা যায়নি; না হলে পরিস্থিতি নাকি অন্যরকম হত। কী হত বা কী হতে পারত, তা না বুঝলেও এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাকে অভ্যুত্থানের সরকার বলা হয়, তারা সাধারণের উপর গুলি চালিয়েছে। গোপালগঞ্জে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ইউনুস সরকার। প্রশ্ন উঠবে, শেখ হাসিনার শাসনামলের পর বাংলাদেশের জনগণ কী পেল? 'অ্যানিমেল ফার্ম'এর শেষ অংশে অরওয়েল লিখছেন, 'খামারের প্রাণীরা জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছে, নেপোলিয়ন সহ শূকররা মানুষদের সঙ্গে একসাথে বসে খাচ্ছে, খেলছে এবং চুক্তি করছে। শূকর ও মানুষদের মধ্যে যে ভেদরেখা একসময় ছিল, তা মুছে গেছে। উভয়ের মুখাবয়ব, আচরণ ও লোভ একই হয়ে গেছে।'
আসলে ক্ষমতা পেলেই কি মানুষ বদলে যায়? কিন্তু কেন? আর যে মানুষগুলো জীবন দিল, আহত হল, যারা রাজপথে লড়াই করল, তারা কী পেল? তাই, 'জুলাই অভ্যুত্থান' এখনও চলমান, যতদিন শাসক আর জনগণের দূরত্ব না ঘুচবে এরকম 'জুলাই' বারবার ফিরে আসবে।
প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার বাইরে বাংলাদেশ। দিশাহীন নিরাপত্তাহীন বাংলাদেশ। কোন ভবিষ্যত নেই সুস্থ সমাজের।
ReplyDeleteপ্রগতিশীল চিন্তার বাইরে বাংলাদেশ নয় একটা লড়াই হচ্ছে সেটা প্রগতিশীলদের সাথে ইস্লামিস্টদের!
Deleteবাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে না রসআতলে যাবে, সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
ReplyDeleteহাওয়ায় উড়ছে সব আওয়াজ পারলে নাও চিনে?
ReplyDelete