Tuesday 16 March 2021

হাতের সুখ!

কফি হাউজ নিপাত যাক

সত‍্য বল


আসলে শিক্ষিতদের টার্গেট করা খুব সহজ। এই যেমন ধরুন কফি হাউসের বাঁদরামি। কফি হাউসে যারা যায়, তারা কেউ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের তথ্যগত দিক থেকে অপদার্থতম সরকারকে ভোট দেবেন না সেটা বলাই বাহুল্য। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক, মহিলা সুরক্ষা, বেকারত্ব, গণতন্ত্র সূচক- এসব জায়গায় বর্তমান সরকার কী কী পদ্ম ফুটিয়েছেন সেটুকু জানতে সামান্য গুগ্‌ল করলেই চলে। সত্তর বছরের দোতলা বাড়ি কী করে বিক্রি করে কুলাঙ্গার ছেলে বিদেশে ট্রাম্পের পোস্টার বয় হয় সেও দেখা হয়ে গেছে। কিন্তু সামনে ভোট। বাংলা তো চাইই চাই! এক কালে দেশের নবজাগরণের কেন্দ্র। প্রেস্টিজ ইস্যু।

সুতরাং টার্গেট করো শিক্ষিতদের। এদের ভোটের সংখ্যা আর কতই বা হবে! একটা করে শিক্ষিত ডাণ্ডা খাবে, আর একশো'টা অশিক্ষিত হুররে বলে চিল্লিয়ে উঠবে। ওই দেখ, এত পড়াশোনা শিখে ওরা ক্যালানি খাচ্ছে আর পদ্ম ব্যাজ পরে আমি 'জয় মিথ্যেবাদীর জয়' বলতে বলতে ধোকলা খাচ্ছি! আর কে না জানে, গণতন্ত্রে একটা শিক্ষিত ভোট একশো'টা অশিক্ষিতের ভোটের চেয়ে ঠিক ঠিক নিরানব্বইটা কম আর একশো ভাগ হালকা।

সুতরাং, আজ কফি হাউস, কাল প্রেসি, পরশু যাদবপুর, তরশু জেএনইউ- যেখানে শিক্ষিত দেখবে রামপাট কেলাও। এসব হয়ে গেলে বিকেলে যারা বাড়িতে এখনও হারমোনিয়াম নিয়ে 'বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহার' বাজায় তাদের ওপর চড়াও হওয়া যাবে। ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করতে হবে এদের। আর অবশ্যই সংখ্যা বাড়াতে হবে। দিলুদা নিদান দিয়েই দিয়েছেন। আগে সংখ্যা। তারপর সব কিছু। এরা যত বেশি জানে, তত কম মানে।

অতএব ছয় পার্সেন্ট শিক্ষাখাতে কমে গেল। চোলায় চোলায় জয়ের ভেরি বেজে উঠল এবং কফি হাউসের মতো জায়গায় কয়েকটা জানোয়ার দাপিয়ে বেড়ালো। এরপরেও কিছু বাঙালি ১৯৪৭ দেখাবে, গোপাল পাঁঠা দেখাবে। মোটামুটি পঞ্চাশ বছর আগে থাইয়ের ধারে যে ফোঁড়াটা হয়েছিল সেটা এখন সেফটিপিন দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলতে হবে। বিষ ওগরাতে না জানলে কীসের দেশপ্রেমিক ভাই!

সুতরাং, নিউ কলকাতায় আপনাকে স্বাগত। নেতাজীর লাথি খাওয়া, রবিদাদুর খিস্তি খাওয়া, স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের পোঁদ চাটা, ধর্ষকদের সমর্থনে একাধিক মিছিল বের করা দেশের অপদার্থতম সরকারকে সমর্থন করে নিজের দেশপ্রেমের পরিচয় দিন। বাঙালি হলে লাথি অবশ্যই পুরস্কারস্বরূপ পেয়ে যাবেন। ত্রিপুরায় যেমন দেশপ্রেম এবং বাঙালি প্রেমের নমুনা দেখলেন। ও, ভক্তদের তো আবার তথ্যের ওপর অ্যালার্জি আছে। একটু ক্ষমাঘেন্না করে গুগ্‌ল করে নেবেন আর কি।

সুতরাং কফি হাউসে গুন্ডামি হয়েছে, বলুন বেশ করেছে। আঁতেল পাবলিক যত্তসব! দেশের কোন কাজে লাগে এরা! সিয়াচেন গেছে কোনওদিন! সুনীল গাঙ্গুলি, শক্তি চাটুজ্জে এরা কেন গিয়ে পড়ে থাকত এসব জায়গায়! খালি বাঙালিদের পেছনে টেনে রেখেছিল এরা। সাহিত্য গান এসব করে কী হবে! দুটো নোবেল আসবে, তাতে দেশের কী আসবে যাবে! রাজাবাজারে লোকে হেলমেট পরবে? সুতরাং স্বাধীনতা সংগ্ৰামে যাদের প্রতি ঘর থেকে একজন করে শহীদ হয়েছে, যাদের লেখা গল্প কবিতা সঙ্গীত ট্রাম্পের দেশেও আলোড়ন ফেলে, সেই মিথ‍্যেবাদী বেনিয়াদের শরণে আসতেই হবে। তবেই প্রতি পাড়ায় একজন করে বিপ্লবী আর দুজন করে সাহিত্যিকের কলকাতা আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। যেমন কাশ্মীর নিয়েছে বা সব কালো টাকা ধুমধাম করে সাদা হয়ে গেছে।

আসলে ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বাপ ঠাকুর্দার সম্পত্তি যে ছেলে রাখতে পারে না সে কুলাঙ্গার। এমন শিক্ষের ক‍্যাঁতায় আগুন! এই ছেলে হল সাচ্চা দেশপ্রেমী! কী বলছেন? হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। এই শিক্ষা রেখেই বা কী হবে! দে বেচে দে! বিএইচইউ'এর প্রফেসর নীতা আম্বানি। এরপরেও বলবেন ভক্তরা পড়াশোনা করে না!

কী বললেন? বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে? সাধু সাধু। যবে থেকে এই ধোঁয়া উঠেছে, দেশের প্রধান দেশপ্রেমিক আম্বানি এবং আদানিদের সম্পত্তি গ্যাসের দামের চেয়েও তীব্রগতিতে বেড়ে চলেছে! এক শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৫৮.৪ শতাংশ সম্পদ। দশ শতাংশের হাতে ৮০.৭ শতাংশ। শুধু তাই নয় রে ভাই, ২০১৪'তে পৃথিবীর পঞ্চম দ্রুততম বৃদ্ধিশীল অর্থনীতি ২০২০'তে এসে ১৬৪। কী ভালো লোক মশাই!

এখন তো আবার ব্যাপারটা কুইনাইন খাওয়ার মতো হয়ে যাচ্ছে। দেশ এবং দশের ভালোর জন্য সরকার উত্তমমধ্যম আইন করছে আর যাদের জন্য করছে, তারা রাস্তায় বসে পড়ছে! কেজরিওয়ালকে বললাম, সাতখানা স্টেডিয়াম জেল বানিয়ে দে! দেশদ্রোহী বলে শুনল না। এখন তো ব্যাঙ্কের দেশদ্রোহীগুলোও ধর্মঘট ডাকছে! তবে চিন্তার কিছু নেই। ডাণ্ডা মেরে সবাইকে ঠান্ডা করে দেওয়া হবে। কফি হাউসে গুন্ডামি তো সবে শুরু! তারপর সেডিশন আছে যার সংখ্যা বেকার সংখ্যার মতোই চড়চড় করে বেড়ে চলেছে।

যাক গে, ওসব বেফালতু কথা ছাড়ুন। ও, বলছিলাম ছেলের চাকরিটা হয়ে গেলে বলবেন কাশ্মীরে জমিটা যেন এবার কিনে রাখে। কী বললেন? চাকরি খুঁজছে? গত অক্টোবরে বেকারত্বের হার ৩৭.৮ শতাংশ ছিল? ২০১৯-২০'তে ৩৯.৪ শতাংশ? ফাটিয়ে দিলেন তো মশাই! কী বলছেন? সব ওদের জন্য? হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলছেন। সব ওদের জন্য। গণ্ডা গণ্ডা বাচ্চা পয়দা করবে, হুটপাট ঢুকে এসে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দেবে! যত নষ্টের গোড়া ওইগুলো! কী বলছেন? হতাশায় হাত পা নিশপিশ করছে?

ওই দেখুন শিক্ষিতদের দল। ওদের কানের গোড়ায় দিলে পাল্টা গান গাইতে পারবে, যুক্তি দিতে আসবে। কিন্তু পাল্টা মার দিতে পারবে না। সুতরাং হাতের সুখ করে আসুন। জীবনে এভাবেই শান্তি ফিরে আসবে।

জোরসে বলুন, ভারত মাতা কি জ্যায়!!

No comments:

Post a Comment