ওদের ভাষা আমাদের ভাষা
মালবিকা মিত্র
ভদ্রেশ্বর পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমি। তার পাশের ওয়ার্ড ২০ নম্বরে, আমাদের রাস্তার ঠিক ওপারে, রক্তদান শিবির। মিনিট দশেকের হাঁটা পথ। যেতে গিয়ে পুরনো অভ্যাস মতো চায়ের দোকানে একটু আড্ডা দিয়ে গেলাম। ওখানেই শুনছিলাম, এক ভদ্রলোক পুরী বেড়াতে গিয়ে চরম হেনস্থার শিকার। একে তো বাংলায় কথা বলে, তায় আবার নাম অনীশ। অনীশ নামটা অনায়াসেই আনিস, আনিসুর হয়ে যায়। আর আধার কার্ড, প্যানকার্ড বা ভোটার কার্ড ওগুলো তো কোনও পরিচয়পত্রই নয় বিজেপি শাসিত রাজ্যে। সর্বোপরি, ভদ্রলোক পুরীর মাছের বাজারে গিয়ে, মাছের বাজারটা ছোট হয়ে গেছে, সমুদ্র সৈকতের শহরে মানুষ মাছ-মাংস খাবে না তা কি হয় ইত্যাদি মন্তব্য করে ট্যুইট করেছে। বহু রেস্তোরাঁয় নন-ভেজ বন্ধ হয়ে গেছে, পাননি বলে সরস মন্তব্য করেছেন। এসবই হিন্দু ধর্মের স্বঘোষিত ঠিকাদারদের বানর বাহিনীর কর্ণগোচর হয়েছে। এমনকি এক রাত তাকে থানা লক-আপে আটকে রাখা হয়। ফলত, পাঁচ দিন পুরী থাকার প্রোগ্রাম থাকলেও মাত্র দুদিনেই তা সমাপ্ত করে ফিরে আসেন। তার সকরুণ নির্মম অভিজ্ঞতার কাহিনী শুনছিলাম।
যথারীতি অন্য একজন খদ্দের তিনি সরব হলেন যে, এসব বাজে প্রচার। তার নিজের ছেলে ও বৌমা ভুবনেশ্বরে আইআইটি ও এইমস'এ কর্মরত। তাদের তো কোনও অসুবিধে শোনেননি। বললেন, তাদের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় পরিজনের কথা, যারা অনেকেই হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বা দিল্লিতে কর্মরত। তারা কেউ ডাক্তারি করছেন, কেউ প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, কেউ উচ্চপদস্থ আমলা বা ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক। কেউ তো অভিযোগ করেনি। ঠিকই, এখন পর্যন্ত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো থেকে এই শ্রেণির লোকজনের ওপর হেনস্থার কোনও অভিযোগ নেই। তারা বরং বাংলাভাষী, বাংলাদেশি, মুসলমান, এসব খুঁজছেন মূলত পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে; ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে নয়। ভদ্রলোক অভিযোগ করলেন, এ রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের যেতে হয় কেন? এ রাজ্যে কাজ নেই কেন?
আমার হাতে সময় নেই। না হলে তাকে জানানো যেত যে এ রাজ্য থেকে বছরে কুড়ি লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়। আর প্রায় চল্লিশ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এ রাজ্যে আসেন। চায়ের দোকানের তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনায় না জড়িয়ে আমি দ্রুত পায়ে রক্তদান শিবিরের পথে এগোলাম। শুধু রক্তদান নয় সঙ্গে আছে ওয়ার্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। প্রচুর লোকসমাগম। লোকজনের বসার জন্য সুবন্দোবস্ত, প্রচুর চেয়ার। একটি কাউন্টার থেকে যারা রক্তদান করছেন তাঁদের রক্তদানের পর পুষ্টিকর খাদ্য পরিবেশন, একটি সুদৃশ্য স্মারক, এছাড়াও প্রাত্যহিক ব্যবহারযোগ্য ভালো ব্যাগ, লাঞ্চ বক্স ইত্যাদি উপহার দেওয়া হচ্ছে।
একবার মাইক্রোফোনে ঘোষণা করা হল, দু' ঘণ্টার মধ্যেই ৬৫ জন রক্তদাতা তাঁদের মহামূল্যবান রক্ত দান করেছেন। আধুনিক কারিগরি দক্ষতার কারণে এই মহাদান শুধু ৬৫ জনকেই নয়, রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের মাধ্যমে (প্লেটলেট, প্লাজমা, লোহিত রক্তকণিকা) তিন গুণ মানুষের উপকার সাধন করবে। শুনলাম, গত বছর এই শিবিরে বহু মানুষ রক্ত দিতে এসেও ফিরে যান। কারণ, ১০০ জনের বেশি রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। তাই এ বছর দুটি ব্লাড ব্যাংক থেকে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। এ বছর কমপক্ষে দেড়শো জনের রক্ত সংগ্রহ করা যাবে।
রক্তদান সম্পর্কে আমার একটা ভিন্নতর আবেগ আছে। আমি রক্তদাতা নই, আমি গ্রহীতা। আমার কার্ডিয়াক বাইপাস সার্জারির সময় ফ্রেশ ব্লাডের জন্য রক্তদাতা নিয়ে যেতে হয়েছিল ব্লাড ব্যাংকে। একজন হলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, বাকিরা ইমরান হক, রমেশ প্রসাদ, সমীর দত্ত, শিশির দোলুই; পাঁচজনের কম্বিনেশনটা ভাবুন। শুদ্ধ ব্রাহ্মণ কায়স্থ নিম্নবর্ণ হিন্দু আবার শিক্ষক ছাত্র শ্রমিক সবাই আছেন। আবার বাঙালি অবাঙালিও আছে। আবার হিন্দু মুসলমান আছে। এই সামগ্রিক মিশ্রণে রক্তদানের কথা শুনলেই আমার শরীরে শ্রদ্ধা জনিত আবেগের স্রোত বয়ে যায়।
সে যাই হোক, প্রচুর লোকসমাগম আর কম বয়সীদের ভিড় জমেছে। উদ্যোক্তাদের দাবি ও অনুরোধ মতো আমিও কিছু কৃতি ছাত্র-ছাত্রীর হাতে সম্বর্ধনা তুলে দিলাম। খুব ভালো দামি পিঠ ব্যাগ, একটি স্মারক, কিছু ফুল মিস্টি আর মূল্যবান একটি পেন। প্রায় ৮৫ জনকে এই সম্বর্ধনা দেওয়া হল। এলাকার পৌরসভার কাউন্সিলর, পৌর প্রধান ও উপ পৌর প্রধান সকলেই হাজির। প্রত্যেকেই ভাগাভাগি করে সম্বর্ধনা জ্ঞাপনে অংশ নিলেন। প্রত্যেকেই তাদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করে কিছু বক্তব্য রাখলেন। প্রাক্তন শিক্ষক হবার কারণে বোধ করি আমাকেও কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হল। বলতে পারেন, আমি ছিলাম শেষ বক্তা।
রক্তদানের মহত্ত্ব জেনে বা না জেনে সকলেই রক্তদান করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে কোনও জ্ঞান দানের অধিকার ও অভিপ্রায় কোনওটাই আমার নেই। আমি আগে এই রক্তদানে যোগদান করতে আসার সময় চায়ের দোকানের আড্ডার গল্পটা শোনালাম। এলাকায় একটা এত বড় মহতি কর্মযজ্ঞ চলছে অথচ দেখুন আমি এসে যে কয়েকশো মানুষের ভিড় দেখেছিলাম সেটা মুহূর্তে কত পাতলা হয়ে গেছে। কারণ, ৮৫ জন কৃতি ছাত্রের প্রত্যেকের সঙ্গে ছিলেন কমপক্ষে দুজন বা আরও বেশি মানুষ, মা বাবা কাকা বা পিসি প্রমুখ। একজন করে সম্বর্ধনা নিয়েছে, আর সঙ্গে সঙ্গে তিন বা তার বেশি মানুষ জমায়েত থেকে বিদায় নিয়েছে। এভাবে ৮৫ জনের সম্বর্ধনার শেষে অঙ্কের নিয়মে প্রায় আড়াইশো তিনশো মানুষ একে একে বিদায় নিয়েছে। ফলে, এরপর যারা রইল তারা প্রধানত উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবক রক্তদাতা প্রমুখ। অথচ এই কৃতিরা নিজের চেয়ার ছেড়ে পাশের লম্বা হলে একবার উঁকি দিয়ে দেখতে গেল না কারা কীভাবে রক্ত দেয়, কীভাবে তা নেওয়া হয়, সংগ্রহ করা হয়, রক্তদানের আগের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এসব কিছুই জানলো না।
এভাবেই এক বৃহত্তর সামাজিক পরিসর থেকে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীরা ও তাদের অভিভাবকেরা বিযুক্ত হয়ে থাকছেন। বলা যায়, অভিভাবকরা বিযুক্ত করে রাখছেন। স্বপ্ন, 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে'। এই অভিভাবকই তো চায়ের দোকানে বসে চিৎকার করে গলা ফাটায়-- কই, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপক আইনজীবী কত সহস্র বাঙালি ভিন রাজ্যে আছেন, তাদের তো বাঙালি বলে হেনস্থা করা হচ্ছে না। আসলে এই শ্রেণিটি নিজেরা রক্তদান করে না। কিন্তু বেঙ্গালুরু বা পুনেতে বসে যখন খবর পায় অসুস্থ বাবা বা মায়ের রক্ত প্রয়োজন, সে সরাসরি ফোন করে ওই কাউন্সিলরকে। অমুক কাকু, তমুক দাদা, আমার মায়ের জন্য আমার বাবার জন্য দু' বোতল রক্তের ব্যবস্থা করে দাও।
এখানেই প্রশ্ন; যে ফোন করে অনুরোধ করল, সে কিন্তু কোনওদিন দাতা হয়নি, সে গ্রহীতা। এমনকি সে জানেও না কীভাবে এই রক্ত পাওয়া যায়। বেশ মনে পড়ছে, একটি শিশুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মাছ কোথায় থাকে? সে বলেছিল, মাছ খাবারে থাকে। আবার প্রশ্ন, খাবার আসে কোথা থেকে? সে বলল, রেস্তোরাঁ থেকে। কারা দিয়ে যায়? শুইগি, জোমাটো। কিছুতেই তাকে বলানো গেল না জেলে বা ধীবরদের কথা, যারা মাঝরাতে মাছ ধরতে বের হয়। ভোর রাতে মাছ ধরে ফিরে বাজারে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে হোটেল রেস্তোরাঁয়, লোকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। এই সমাজটাকে সে তো দেখেনি কখনও। এরাই কৃতি ছাত্র হবে, এরাই পড়াশোনা করে অনেক বড় হবে, এরা জানবে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পাওয়া যায়। কিন্তু সে রক্ত সেখানে কোথা থেকে আসে, তা কখনও জানবে না। না জানলেও চলবে।
এই না জানাটাই তো 'উচ্চ মেধা'র প্রমাণ। এই কৃতিরাই অথবা এদের মা-বাবা কাকা পিসিরা বুক ঠুকে বলতে পারবে-- কই, দিল্লি বোম্বাই গুজরাট রাজস্থান মধ্যপ্রদেশ বিহার উড়িষ্যায় তো কোনও বাঙালি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপক আক্রান্ত হচ্ছে না। বাংলাভাষীর উপর আক্রমণ স্রেফ বাজে কথা। প্রাতঃস্মরণীয় বাঙালি পবিত্র সরকার, তিলোত্তমা মজুমদার'রা তো এমন কথাই বলে থাকেন। আর সত্যিই তো, এই শ্রেণি তো নিজের পরিবারেও নিজেরা পরস্পরে বাংলা ভাষায় কথা বলেন না। এদের অধিকাংশ কথাবার্তা জুড়ে থাকে ইংরেজি ও কিছুটা হিন্দি। এদের শিশু বাইরে রেইন দেখে। এরা লায়ন ডিয়ার টাইগার চেনে। এরা ঘরে মা বাবার কথাবার্তায় 'ফাক' শব্দের ব্যবহার শুনতে পায়। বাবা বলে, ফাক ইওর মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট। মা বলে, ফাক ইউর হিউম্যানিজম। এদের প্রত্যেকের কাছেই মাতৃভাষা বাংলাটা থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলা-ফাংলা। ইংরেজি ভাষায় তো কোনও 'কুৎসিত খিস্তি গালাগালি হয়ই না'।
আমি প্রশ্ন করেছিলাম, ভাষা তো ভাবের বাহন। আমি যদি সঠিক ভাবে ভাবতে না পারি, বুঝতে না পারি, তাহলে সেটা প্রকাশ করব কী করে? ভাবটা এ ক্ষেত্রে মুখ্য, ভাষাটা অর্থাৎ প্রকাশ মাধ্যমটা গৌণ। আর ভাবনাটা তো সব সময় মাতৃভাষাতেই হয়। আমি খাই, আমি ভালোবাসি, আমি ঘুমবো, এগুলো কি ইংরেজিতে ভাবা যায়? শুনে একজন বলেছিল, কে বলেছে মাতৃভাষায় ভাবতে হবে! ছোট থেকে যদি ভাবনা শব্দটাই আমার মগজে না থাকে, পরিবর্তে থিঙ্ক শব্দটা স্থান করে নেয়, মিস্টি স্বাদ কি আমার না জানলেও চলে। সুইট সুইটনেস যদি মগজে স্থান নেয়, তাহলে মাতৃভাষা ছাড়াই চিন্তাভাবনা করা যায়। হয়তো বা ঠিক কথাই বলেছেন উনি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কথাটা মাথা থেকে তাড়াতে পারছি না:
'পূর্বে এমন দিন ছিল যখন ইংরেজি পাঠশালা হইতে আমাদের একেবারে ছুটি ছিল না। বাড়ি আসিতাম, সেখানেও পাঠশালা পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিয়া আসিত। বন্ধুকেও সম্ভাষণ করিতাম ইংরেজিতে, পিতাকেও পত্র লিখিতাম ইংরেজিতে, প্রাণের কথা বলিতাম ইংরেজি কাব্যে, দেশের লোককে সভায় আহ্বান করিতাম ইংরেজি বক্তৃতায়। ...দিনের পড়া তো শেষ হইল, তার পরে ক্রিকেট খেলাতেও না হয় রণজিৎ হইয়া উঠিলাম। তার পরে? তার পরে গৃহবাতায়ন হইতে মাতার স্বহস্তজ্বালিত সন্ধ্যাদীপটি কি চোখে পড়িবে না? যদি পড়ে, তবে কি অবজ্ঞা করিয়া বলিব 'ওটা মাটির প্রদীপ?' ঐ মাটির প্রদীপের পশ্চাতে কি মাতার গৌরব নাই? যদি মাটির প্রদীপই হয় তো সে দোষ কার? মাতার কক্ষে সোনার প্রদীপ গড়িয়া দিতে কে বাধা দিয়াছে? যেমনই হউক না কেন, মাটিই হউক আর সোনাই হউক, ....যখন দুঃখের অন্ধকার ঘনাইয়া আসে তখন রাজপথে দাঁড়াইয়া চোখের জল ফেলা যায় না-- তখন ঐ গৃহ ছাড়া আর গতি নাই।'
বুবুন তার কনভেন্ট স্কুলে ঢুকতে বিলম্বের কারণে গেটে অনেক কান্নাকাটি করলেও দারোয়ান তাকে ছাড়েনি। সে বাড়ি ফিরে আসে। মাকে বলে, আমি ইংরেজিতে কাঁদতে পারিনি। তাই ঢুকতে দিল না।
-- তাহলে তোর সঙ্গে তো অদিতি যায়, ও ঢুকল কী করে? বুবুনের মায়ের প্রশ্ন।
বুবুন বলল, ও তো কি সব গড়গড় করে 'ইওর মেমোরেবল রেইনি ডে' প্যারাগ্রাফটা বলতে শুরু করল। দারোয়ান ওকে ছেড়ে দিল।
অদিতি জানে, ইংরেজিতে কোনও ভুল বলা যায় না; কোনও খারাপ কথা বলা যায় না। পবিত্র ভাষা।
👌
ReplyDeleteলেখাটা পড়তে পড়তে আপনার মনের ভেতরটাও অনেকখানি পড়া যায়।
ReplyDeleteইচ্ছে করে, আপনার সাথে অনেক আড্ডা মারি, মতের/ভাবনার আদান প্রদান করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আপনার সঙ্গে যখন পরিচয় হোল, তখন বিস্তর বাঁধা। তবুও চেষ্টা জারি থাকবে সাধ মেটাবার। - কল্যাণ সেনগুপ্ত
আমরা কি আয়না হয়েই রয়ে যাবো ! বড়ো কিছু করে যেতে হবে...
Delete