বিপর্যয়ের অতল খাদে দেশ
প্রশান্ত ভট্টাচার্য
রাজনৈতিক সমাজে কোনও দুর্ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা থাকে না। ঠিক মতো কাটাছেঁড়া করলে দেখা যায়, প্রতিটি দুর্ঘটনার পিছনে রাজনীতির লোকজনদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা আছে। ঘটনার যখন কারণ আপাত প্রত্যক্ষ করতে পারি না, তখনই তো তাকে আমরা দুর্ঘটনা বলি। তাই তো আহমেদাবাদে সাধের এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার ফ্লাইট নম্বর ১৭১ ভেঙে পড়লে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে দেন, দুর্ঘটনাকে তো কেউ আটকাতে পারে না! বাহ! বাত খতম পয়সা হজম। ফলে, দুর্ঘটনা নানান প্রলেপে বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তো এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান ভেঙে পড়া নয়, প্রতিদিনই সড়ক পথে, রেলপথে, জলপথে দুর্ঘটনা ঘটছেই। তার সঙ্গে আছে সেতু ভেঙে পড়ার গপ্পো।
দিল্লি পুলিশের একটি হিসেব বলছে, এ বছরের মে মাসের মধ্যেই দিল্লিতে ২২৩৫টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে যার মধ্যে ৫৭৭ জন মারা গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হিসেবে, এই বছরের মে মাসের মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে যার মধ্যে ৭৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের মধ্যে একটা নিহিত বাতিক, আমরা নথিভুক্ত করি না। ফলে, সর্বগ্রাহ্য পরিসংখ্যান পাওয়া রীতিমতো কঠিন। অর্থাৎ, সেকেন্ড হ্যান্ড উপাত্ত নিয়ে কাজ করা প্রায় অসম্ভব। আর প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ করার মতো টিম আমাদের হাতে নেই। তাই শুধু দিল্লি আর উত্তরপ্রদেশের হিসেবটাই রাখতে পারলাম। আর মজার, এই দুটো রাজ্যেই মোদীর অতিপ্রিয় ডাবল ইঞ্জিন সরকার। আর ভারতীয় রেল!
আমাদের মনে রাখতে হবে, রেলে দুর্ঘটনা যেন এক বাঞ্ছিত সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুটি ট্রেন মুখোমুখি একই লাইনে এসে পড়ছে, কোথাও লাইনচ্যুত হচ্ছে, কোথাও ২টি ট্রেনের বীভৎস ধরনের সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক মানুষ আকস্মিক প্রাণ হারাচ্ছেন। এমনকী, রেল কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো হিসেবটাও দেয় না। তবু রেলের পুনে ডিভিশন জানাচ্ছে, এ বছরের প্রথম পাঁচ মাস ৫১ জন রেল দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে যার মধ্যে দুজন মারা গিয়েছে।
আর সেতু! একটা করে সেতু ভাঙে আর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার তোড়জোড় শুরু হয়। ২০২৫ সালের চলতি মাস অর্থাৎ জুন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সেতু ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মহারাষ্ট্রর পুনেতে ইন্দ্রায়ণী নদীর ওপর একটি সেতু ভেঙে পড়া, যেখানে বেশ কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। কারও মতে সংখ্যাটা ১৫-২০, কারও মতে ৩০ জন। পুরনো লোহার সেতু দিয়ে যান চলাচল আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্ষার সময় নদী ও এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ছবি বা নিজস্বী তুলতে অনেকেই সেতুতে জড়ো হন। আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুর হাল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ৪-৫ বছর আগে সেতুটির মেরামতি হয়। উদ্ধারকারীদের মতে, বর্ষার সময় নদী ছিল খরস্রোতা। জলস্তর বেড়েছিল, তাই বহু মানুষ ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনা ঘটে গেলে রাজনীতিকরা আসবেন না, তা হয় নাকি? ফলে, অকুস্থলে যান শরদ পাওয়ারের মেয়ে তথা এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠীর) সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে। ওদিকে এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। এসব তো ঘটে যাওয়ার পরের কাহিনি ও বাকতাল্লা! কথা হচ্ছে যে এমন একটা লবেজান সেতু না মেরামত করে বা ভেঙে না ফেলে মৃত্যুসেতু সাজিয়ে রাখার মানেটা কী? এরপরও কি বলতে হবে, 'দুর্ঘটনা কেউ আটকে রাখতে পারে না'। আসলে এগুলো apolitical disaster নয়, হাইলি political।
এছাড়াও, কদিন আগে মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতে একটি নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে পড়ে, যাতে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। একইসঙ্গে অসমেও গত ১৮ জুন বুধবার একটি সেতু ভেঙে পড়ে। অসমের কাছাড় জেলায় হারাং নদীর উপর ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরের সঙ্গে সড়কপথে বাকি দেশের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৷ ব্রিজ ভেঙে নদীর জলে তলিয়ে যায় পাথরবোঝাই ডাম্পার ৷ তবে ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি ৷ তবে আশ্চর্যের, মেরামতির এক মাসের মধ্যেই ভেঙে পড়ে এই সেতুটি। এই ঘটনাগুলি থেকে বোঝা যায়, সেতুগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং নির্মাণের গুণগত মান কোন স্তরের। বিশেষ করে, পুরনো সেতুগুলির ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি প্রকট। ভঙ্গরপারের সঙ্গে শিলচর-কালাইনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় হারাং নদীর ওপর এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ৷ অসমের বরাক উপত্যকার দুই প্রধান শহর গুয়াহাটি ও শ্রীভূমির (করিমগঞ্জ) মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল এই ব্রিজ ৷ এই দুর্ঘটনার ফলে বরাক উপত্যকা-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্য— ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরের সঙ্গে সড়কপথে বাকি দেশের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৷ ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা খরচ করে মেরামতির ১ মাসের মধ্যে সেতুর ভবলীলা সাঙ্গ! কই এবার তো মোদী বা শাহ হিমন্ত বিশ্বশর্মা বা মোহন যাদবকে বলছেন না, 'ইয়ে অ্যাক্ট অফ গড নেহি অ্যাক্ট অফ ফ্রড হ্যায়'। কেন বলছেন না? কারণ মধ্যপ্রদেশ ও অসম, দুটোতেই ডাবল ইঞ্জিনের সরকার।
শুধু কি এই? গত রবিবার সকালে কেদারনাথ মন্দির থেকে তীর্থযাত্রী বহনকারী একটি কপ্টার গুপ্তকাশির কাছে বিধ্বস্ত হয়, এতে পাইলট এবং দুই বছরের একটি শিশু সহ সাতজনই নিহত হন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কপ্টারটি আরিয়ান সংস্থার। পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, রবিবার উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার গৌরীকুণ্ডর কাছে গৌরী মাঈ খার্ক এলাকায় জঙ্গলের ওপর ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ভেঙে পড়ে চপারটি। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে স্থানীয় মহিলারা ঘাস কাটছিলেন, তাঁরাই প্রথম দুর্ঘটনার খবর পান। এক্স হ্যান্ডেলে উত্তরাখণ্ড'র মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি শোকপ্রকাশ করেছেন, 'রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার ভয়াবহ খবর পেয়েছি। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল ব্যস্ত উদ্ধারকাজে। কপ্টারের সওয়ারিদের সুস্থতার জন্য বাবা কেদারের কাছে কামনা করি।' দেখুন, গোটা ব্যাপারটা কেদারের হাতে ছেড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিরুদ্দেশ। অথচ ৩০ এপ্রিল তীর্থযাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তরাখণ্ডে ছয় সপ্তাহে চারধাম যাত্রা রুটে এটি পঞ্চম হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা এবং দ্বিতীয় দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা। ৮ মে উত্তরকাশীতে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয়জন নিহত হন। ১২ মে বদ্রীনাথে একটি দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। ১৭ মে ঋষিকেশের এইমস'এর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কেদারনাথে বিধ্বস্ত হয় তবে দুর্ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ৭ জুন কেদারনাথ যাওয়ার পথে একটি হেলিকপ্টার উড়ানের সময় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার পরে হাইওয়েতে জরুরি অবতরণ করে, যেখানে পাইলট আহত হন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনাটি কন্ট্রোলড ফ্লাইট ইনটু টেরেন (সিএফআইটি)'এর ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে দৃশ্যমানতা কম এবং উপত্যকার প্রবেশ এলাকায় বিস্তৃত মেঘ থাকা সত্ত্বেও হেলিকপ্টারটি আকাশে উড়েছিল। বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) কর্তৃক বিস্তারিত তদন্তর মাধ্যমে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ নির্ধারণ করা হবে। মজার ব্যাপার, উত্তরাখণ্ডেও চলছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার।
এখন আহমেদাবাদে জমে উঠেছে নানান কিসিমের তরজা। একদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ প্রসঙ্গ, অন্যদিকে দুর্ঘটনার পিছনে কোনও গভীর রহস্য আছে কিনা। বিতর্ক শুরু হয়েছে একটি ভিডিও-কে ঘিরেও। ১২ জুন যেদিন এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানটি ভেঙে পড়ল, সেদিন ভেঙে পড়ার দৃশ্য সেকেন্ড কয়েক ক্যামেরাবন্দি করেছিল এক ১৭ বছরের তরুণ। বহু মানুষ সেই ভিডিওটি তাঁদের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন। সব টিভি চ্যানেল, ডিজিটাল মিডিয়া ওই ভিডিওটিই সম্প্রচার করেছিল-- কীভাবে এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার ফ্লাইট নম্বর ১৭১ উড়ানটি ওড়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বি জে মেডিক্যাল কলেজ ও সিভিল হাসপাতালের ছাত্রাবাসের ওপর ভেঙে পড়ে। ওই আঁখে দেখো হাল ভিডিওটি করে ১৭ বছরের তরুণটি পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। শনিবারের বারবেলায় রীতিমতো বাড়িতে চড়াও হয়ে তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যায় গুজরাতের পুলিশ। জানি না কেন গুজরাত পুলিশের এই সক্রিয়তা! কেন তরুণকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাকে কি গ্রেফতার করেছে না আটক করেছে, এসব নিয়ে কোনও কথাই বলেনি। হয়তো তাঁদের মনে হয়েছে, ওই তরুণটির জন্যই এই বিমানটি ভেঙে পড়েছে। বিমানের যন্ত্র সংক্রান্ত কোনও সমস্যার জন্য ওই তরুণ দায়ী। গুজরাতের পুলিশ মোদী-শাহ'র বড় ভক্ত। তবে পুলিশ পরে জানিয়েছে, ওরা তরুণটিকে গ্রেফতার বা ডিটেইন করেনি, বয়ান রেকর্ড করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল, তা করে ছেড়ে দিয়েছে।
১৭ বছর বয়সি ওই তরুণটি উত্তর গুজরাতের সবরকণ্ঠ জেলার ইদারের বাসিন্দা। নাম আরিয়ান আসারি। প্রথমবারের জন্য আহমেদাবাদ এসেছিল বই কিনতে। সেখানেই নিজের বাবার ভাড়া বাড়ির ছাদ থেকে হঠাৎ একটি বিমানকে খুব কাছ দিয়ে যেতে দেখে মোবাইলে ভিডিও করা শুরু করে। তখন সে বুঝতেও পারেনি যে এরপরেই ঘটে যাবে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ভিডিও তোলার মাত্র ২৪ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি আগুনের গোলায় পরিণত হয়। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আরিয়ান ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। ভিডিওটা প্রথমে তার দিদিকে দেখায়। আরিয়ানের পরিবার সম্পর্কে জানা যায়, সে তার মা ও দিদির সঙ্গে ইদারে থাকে। তার বাবা আহমেদাবাদে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। আগে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এই প্রাক্তন সেনা জওয়ান এখন নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। যাক, গেরুয়া শিবিরের সুদূর প্রভাবশালী আইটি সেল এখনও পর্যন্ত আরিয়ানকে বিঁধতে পারেনি।
বিমান ভেঙে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছু পরই সমাজমাধ্যমে পোস্ট: 'প্রাইভেটাইজেশন মৃত্যুকে আহ্বান করে।' মানে গোড়া ধরে টান। ২০১৭ সালের ২৮ জুন মোদী সরকার এয়ার ইন্ডিয়া বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া সরকারিভাবে সম্পন্ন হয়। ২০২১ সালের অক্টোবরে একেবারে জলের দরে মাত্র ১৮,০০০ কোটি টাকায় এয়ার ইন্ডিয়াকে টাটার কাছে বেচে দিয়েছিল মোদী সরকার। আক্ষরিক অর্থেই ছিল ‘ফ্রি গিফট’! আর এটা বেচে কেন্দ্রীয় কোষাগারে এসেছিল মাত্র ২,৭০০ কোটি টাকা! বাকি ১৫,৩০০ কোটি টাকার ঋণের দায় নিয়েছিলেন 'টাটাবাবুরা'। অথচ এয়ার ইন্ডিয়ার মোট ঋণ ছিল ৬১,৫৬২ কোটি টাকা। তাহলে বকেয়া ৪৬,২৬২ কোটি টাকা কে মেটাবে? কেন গৌরী সেন কেন্দ্রীয় সরকার! ফলে, বছর-বছর এয়ার ইন্ডিয়ার দেনা শোধ করবে কেন্দ্র। আর মুনাফা যাবে টাটার ঘরে। প্রায় মুফতে সেই সঙ্গেই টাটা পেয়েছিল একশোরও বেশি বিমান, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত পাইলট ও ক্রু, দেশের বিমানবন্দরগুলিতে ৪,৪৪০টি অন্তর্দেশীয় আর ১,৮০০টি আন্তর্জাতিক অবতরণ ও পার্কিং স্লট ব্যবহারের সুযোগ; এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি পেয়েছিল, হিথরো, নিউ ইয়র্ক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, হংকং'এর মতো বিদেশের বিমানবন্দরগুলোতে এমন ৯০০টি স্লট ব্যবহারের সুযোগ। একে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ লুঠ ছাড়া আর কী বলা যায়! সরকার পক্ষের যুক্তি, ওসব ছাড় না দিলে শিল্পপতিরা নেবে কেন? আর দুর্ঘটনা? সরকারি সংস্থা হলেও দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত, যেমন রেলে ঘটে। তবে রেলের দুর্ঘটনার মূল কারণও রাজনৈতিক। সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই রেলে কর্মী সঙ্কোচন, জনসংখ্যার অনুপাত ও যাত্রী পরিষেবার বিচারে পরিকাঠামো উন্নত না করা।
উড়ান দুর্ঘটনার সন্ধেতে মোদী তাঁর ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট অমিত শাহকে পাঠিয়ে দিলেন অকুস্থলে। প্রাথমিক ভাবে শাহ সবটা সালটে দেওয়ার পর শুক্রবার মোদীর পা পড়ল মেঘানিনগরে। লোকটার ফটোগ্রাফি সেন্সটা দারুণ! আর সঙ্গে করে যে সব ফটোগ্ৰাফারদের নিয়ে ঘোরেন তাঁরা প্রচণ্ড পরিশ্রমীও বটে। প্রয়োজনে তাঁরা রাস্তার ওপর শুয়ে পড়েও ওঁকে সঠিক অ্যাঙ্গেল থেকে ধরেন। কারণ, ছবিতে ওঁর উপস্থিতির যে প্রয়োজনীয়তা, সেটাও বোঝাতে হয়। নিন্দুকরা বলছেন, উনিজী কোনও বড় ঘটনা ঘটলে সেখানে ক্যামেরা নিয়ে যান, নিজের ছবি তুলিয়ে তা ফেসবুক, এক্স'এ পোস্ট করে নিজের প্রচার করেন। তবে নিন্দুকরা এ প্রশ্নও তুলছেন, কই মোদীমশাই তো মণিপুরে যাননি এখনও? লে হালুয়া! মণিপুরে তো পলিটিক্যাল ক্রাইসিস, বিজেপি তার স্পনসর, ফলে সেখানে যাবেন কেন? উনি সন্দেশখালিতে আসবেন সন্দেশ দিতে। সব ছেড়ে আলিপুরদুয়ারে আসবেন জঙ্গি তাড়াতে! এসবই ওঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি, যেমন গেলেন আহমেদাবাদ।
বলি শাহজী, এই বিমানটা যদি পশ্চিমবঙ্গে ভেঙে পড়ত তবে আপনি কী বলতেন? বলতেন, 'দিদি কা সরকার খতম হোনে কি সন্দেশ অ্যা রেহি হে। আপ বহুমত ভাজপা সরকার গঠন কর দিজিয়ে।' পাল্লা দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলতেন, 'এর জন্য দায়ী তোলাবাজ ভাইপো ও চটি পিসি। বিমানবন্দর চত্বরে তোলামূলের জামাত বাহিনীদের বসিয়ে রেখেছে। সময় এসেছে হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই।'
ভাল লেখা, অনেক বিস্তৃত ভাবে বলা হয়েছে
ReplyDelete