ডুবন্ত মানুষ যাকে ধরবে তাকেই ডোবাবে
মালবিকা মিত্র
'হাত আছে কাজ দাও, নইলে বেকার ভাতা দাও'-- এই স্লোগান একসময়ে ছিল সিপিআইএমের ছাত্র-যুব আন্দোলনের অন্যতম মূল স্লোগান। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ভাবে বক্তৃতার সময় বলা হত, বেকার ভাতা দেওয়া কোনও স্থায়ী সমাধান নয়, কিন্তু এই ভাতা দেওয়ার অর্থ বেকারের কাজের অধিকারকে আইনগত ভাবে মেনে নেওয়া। এর ফলে কাজের দাবিটা অধিকার হিসেবে অনেক বেশি জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর ১৯৭৭ সালে দল ক্ষমতায় এলে বেকার ভাতা চালু করা হয় (যদিও বছর কয়েক যেতে না যেতেই তা নিঃশব্দে অপসৃত হয়)। বলা হত, বেকার যুবক-যুবতীদের এই স্বীকৃতি রাজ্যের বাইরে সারা দেশের ছাত্র-যুব আন্দোলনে এক ঐতিহাসিক জোয়ার নিয়ে আসবে। মানে আমি বলতে চাইছি, ভাতাকে ভিক্ষাই বলি অথবা নাকের বদলে নরুণ, এই ভাতার দাবিটা সিপিআইএম দলের ছাত্র-যুব আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল।
বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের মাসিক রিলিফ বা ভাতা প্রদান, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসিক ভাতা প্রদান, বার্ধক্যকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, এসব তো কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে অঙ্গীভূত ছিল। আমি যতক্ষণ না তোমার সমস্যার কোনও নির্দিষ্ট সমাধান করতে পারছি, ততক্ষণ আপৎকালীন হিসেবে এই ভাতা প্রদান করব। সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও নতুন পে-কমিশন গঠনের পর রিপোর্ট প্রকাশের আগে পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা দেওয়া হয়। ঠিক সেই যুক্তি থেকেই এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা ও কর্মচ্যুতির আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মচারীদের আপৎকালীন একটি ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গেলে তখন নিশ্চিতভাবে এই ভাতার প্রশ্ন আর থাকবে না। কারণ, মনে রাখতে হবে, এই কর্মচারীরা কেউ ছ' বছর কেউ সাত বছর চাকরি করেছেন, নতুন ছকে জীবনযাপন করেছেন, গৃহঋণ নিয়েছেন, কেউ শিক্ষা ঋণ নিয়েছেন সন্তানের জন্য। তাদের জীবনযাত্রায় এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। আজ হঠাৎ করে 'তোমার আর চাকরি নেই' বলে দেওয়াটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। তাদের জীবনের সঙ্গে এখন বহু কিছু প্রশ্ন জড়িয়ে গেছে। সেই কারণেই এই আপৎকালীন ভাতার মানবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। একটি সরকার কখনও দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে বলতে পারে না, আজ থেকে তোমার চাকরি শেষ, এবার তুমি যাও, সপরিবারে রেললাইনে গলা দাও।
সিপিআইএমের পণ্ডিত ও আইনজীবী নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, জনস্বার্থের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ক্ষেত্রে এ ধরনের ভাতা দেওয়া যায় না। আসলে এনারা নিজেদের অতীত বিস্মৃত হয়েছেন। সিঙ্গুরে বড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এক প্রধান শিক্ষক (কৃষক নেতা) দীর্ঘদিন ধরে জেনেশুনে অন্যায় ভাবে উচ্চ হারে হায়ার স্কেলে বেতন ভোগ করলেন। অতঃপর অবসরের সময় তাঁর ঘাড়ে বিপুল পরিমাণ ওভারড্রয়ালের বোঝা। তিনি তৎকালীন নেতা বিধায়ক মলিন ঘোষ, মণীন্দ্র জানা, বলাই ব্যানার্জি এদের সুপারিশ সহ একটি মার্জনার আবেদনপত্র পাঠালেন রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপাল প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ওভারড্রয়াল ক্ষমা করে দিলেন মাত্র এক টাকার বিনিময়। হ্যাঁ, এটা বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনকালের ঘটনা। পার্থক্য একটাই, কোনও একজন ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থে নয়, বর্তমান সরকার একটি সমগ্র প্যানেলের গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি কর্মচারীদের সকলের জন্য সমভাবে এই আপৎকালীন ভাতা দিয়েছে। অথচ, সেই ভাতা বন্ধ করার জন্য আদালতে এখন সেই বাম নেতারাই উকিলের পোশাকে সরগরম। প্রকৃত প্রস্তাবে, এনারা যে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার অধিকারের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নেমে গেছেন, সে বোধটুকু কি বাকী বাম নেতাদেরও লোপ পেয়েছে? চোখে আঙুলদাদা হলে বলতেন, আরে বাপু, এরপরে ওই পড়ে থাকা ৬-৭ শতাংশ ভোটও কি আর আপনাদের জুটবে?
অথচ, সিপিআইএম দলের কর্মসূচি ও কর্মনীতি এই রিলিফকে অনুমোদন করেছে। কর্মনীতির ১১২ নম্বর অনুচ্ছেদটি লক্ষ করুন-- 'Paragraph 112 of the CPIM's party programme outlines the party's approach to forming governments, emphasizing the importance of using all opportunities to bring into existence governments that implement a modest program of immediate relief for the people.'। এরপরে অবশ্য বিপ্লবীয়ানা বজায় রাখতে বলা হয়েছে যে 'such governments can strengthen the revolutionary movement of the working people and aid in building a democratic front. Essentially, it's about strategically using state power to advance the cause of the working class and broader democratic movements.'। শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী সংগ্রাম কতটা প্রবলভাবে শক্তিশালী হয়েছে তার বিচার করবেন জনগণ। সেই আলোচনায় যাব না। কিন্তু যাদের পার্টি কর্মসূচিতে 'ইমিডিয়েট রিলিফ' একটি ঘোষিত নীতি, তারা কী করে ৫-৬ হাজার গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি কর্মীর পেটে অনায়াসে লাথি মারে! আর শুধু তো ৫-৬ হাজার নয়, এদের পরিবারগুলিকে হিসেব করলে সংখ্যাটি ২৫ হাজার হতে পারে। আর এই ২৫ হাজারের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে যুক্ত মানুষের সংখ্যাটি আরও হাজার খানেক হবে নিশ্চয়ই। এটাই কি আজকের সিপিআইএম? তবুও তাদের গায়ে এখনও 'বামপন্থী তকমা'?
এই দলটিই এ রাজ্যে নাকি বাম ঐক্যের নেতৃত্বে আসীন, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-আরএসএস শক্তির চরিত্রকে গোপন করতে আপ্রাণ সচেষ্ট। 'মেইনস্ট্রিম' পত্রিকায় ঐতিহাসিক ও বামপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নলিনী তানেজা সিপিআইএমের পার্টি কংগ্রেসের দলিল সম্পর্কে বলেন, 'nowhere in the document does one get the sense of degree of suffering of people as a result of the actions of this regime, an idea of what the Muslims go through in their daily lives, attacks and lynchings, and threats to physical existence, the NRC and potential denial of citizenship, the detention camps, or the war on tribals and smaller nationalities: in short, the fascist conditions to which certain regions of the country and certain categories of our people are subjected.'। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট, সম্প্রতি পশ্চিমবাংলায় যে বৃহত্তর বাম জোটটি গড়ে উঠছে তার ভিত্তি আর যাই হোক ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা নয়। মৌলালি যুব কেন্দ্র থেকে আসন্ন কালীগঞ্জের উপনির্বাচন, দেখা যাচ্ছে সর্বত্রই এই জোট সক্রিয়। কিন্তু প্রধান প্রশ্নেই তো এরা ঐক্যবদ্ধ নয়– বিজেপি জোট পরিচালিত সরকারগুলির চরিত্র ফ্যাসিবাদী নাকি আধা-ফ্যাসিবাদী, নাকি তা নিছকই এক ফ্যাসিবাদী প্রবণতা! শোনা যায়, এ নিয়ে বিস্তর মতভেদ। তাহলে এই বাম ঐক্যের ভিত্তি কী? আর প্রধান শত্রুই বা কীভাবে একই সময়ে দুটি আলাদা রাজনৈতিক শক্তি হয়?
দেখলাম, 'এই সময়' পত্রিকায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন দলের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদারকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, 'বাংলার বুকে ফ্যাসিস্ট বিজেপি-আরএসএস যুদ্ধ উন্মাদনা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার করে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ধ্বংস করতে চাইছে।' এ থেকে খুব স্পষ্ট মনে হয়, ঐক্যের ভিত্তি হল ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা। কিন্তু ফ্যাসিস্ট চরিত্র নিয়েই তো বাম দলগুলির মধ্যে জোর বিতর্ক। তাহলে? তথাপি, কালীগঞ্জে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জোটের কথা শুনে একটু পরিসংখ্যান দিতেই হচ্ছে। ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২১ সালে তৃণমূলের ভোট এখানে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮৩৮৯৮, ৯৯৮০৯ ও ১১১৬৯৬। উল্লিখিত তিনটি নির্বাচনে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১০৩৭৩, ৬২৬১১ ও ৬৪৭০৯। অথচ, সিপিএম-কংগ্রেসের ওই তিন নির্বাচনে যুক্ত ভোট ছিল ৮৫১২৫, ২৫৪২৪ ও ২৫০৭৬। আমি বলতে চাইছি যে, কালীগঞ্জ আসনটিতে বিজেপি যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা অবস্থায় আছে। এখানে বিজেপির যে বাড়বৃদ্ধি তার সমস্ত কৃতিত্বটাই সিপিএম ও বামফ্রন্টের, কারণ, তাদের ভোটগুলিই এক লপ্তে বিজেপির ঝুলিতে জমা হয়েছে। অতএব, এক কথায় বলতে গেলে, কালীগঞ্জ কেন্দ্রে বাম ঐক্যের সামনে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে হারানোর প্রশ্নই নেই, তদুপরি, ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে তারা নিজেরাও ঐক্যবদ্ধ নয়।
এবার তাহলে সিপিআইএমের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অভিমুখ সম্পর্কে কোনও দ্বিধা থাকতে পারে না। সবটাই লাইনে আছে, কোথাও বেলাইন হয়নি। শত্রু হিসেবে তাদের মূল লক্ষ্য রাজ্যের তৃণমূল সরকার। সমালোচনা হিসেবে তাদের মূল লক্ষ্য সরকারের নানাবিধ আর্থিক ভাতা, রিলিফ, যা তাদের ভাষায় 'ভিক্ষা'। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির ক্ষেত্রে তাদের প্রধান লক্ষ্য দুর্নীতিগ্রস্তদের যথাযথ বিচার ও শাস্তি নয়, দুর্নীতির ফলে ভুক্তভোগী সাধারণ চাকুরিজীবী ও চাকুরী প্রার্থীদের আরও জটিলতর অসমাধানযোগ্য অন্ধগলিতে দিশাহীন করা, যার ফলে রাজ্য সরকার বিরোধী একটা গণ অসন্তোষ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি, যে বামপন্থী ভোটের ৬-৭ শতাংশ এখনও বামের ঝুলিতেই আছে এবং অন্তত এক শতাংশ বামপন্থী ভোট 'নো ভোট টু বিজেপি' সিদ্ধান্তের কারণে তৃণমূলের পক্ষে আছে, এই সমস্ত ভোটটাকে যদি একত্রিত করে অন্তত এর অর্ধেকটা বিজেপির ঝুলিতে হস্তান্তর করা যায়, তবে নিশ্চিত ভাবে এ রাজ্যে তৃণমূলের অপশাসন রোধ করা এবং বিজেপিকে ক্ষমতাসীন করা যাবে। আর সেই কারণেই গা বাঁচাতে বিজেপিকে ফ্যাসিবাদী বলা যাচ্ছে না।
বিজেপি'র বাংলা-বিহার জয় সম্পূর্ণ হলে আরএসএস-বিজেপি'র চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হবে। তখন নিশ্চয়ই সিপিআইএম দল একটি বিশেষ প্লেনারি অধিবেশন আহবান করে বলতে পারবে– কমরেড, কমিউনিস্টরা ভুল করতে ও ভুল স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করে না। সমস্যা হল, সিপিআইএমের এই চরিত্র সাধারণের কাছে স্পষ্ট। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন কেন যে হঠাৎ এই ভুলের অংশীদার হতে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হচ্ছে না।
এঁরা কলুষিত। বেকার বা বঞ্চিত নয়। রাজ্য সরকার নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে এঁদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করছিল। অন্য কোনো ভাতা বা অনুদান কর্মসূচির তো বিরোধীতা করা হয় না সিপিএমের পক্ষ থেকে কিন্তু এই বিশেষ ক্ষেত্রে কেন বিরোধিতা করা হল সেটা গুলিয়ে দেওয়া কি আসলে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও অপদার্থতাকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা নয়?
ReplyDeleteএরা কলুষিত আর রায়টা? এতদিন জানতাম একজন নিরপরাধী যেন শাস্তি না পায় তাতে শতেক অপরাধী ছাড়া পেলে পাক। এই সাধারণ সূত্রটুকুও এই রায়ে কোথাও প্রতিফলিত হয়েছে কি?
Deleteএতদিন যেগুলো জানতেন সেগুলো ভুল জানতেন। একটাই আইন জানেন সেটা ফৌজদারি। এটা ফৌজদারী কেস নয়। নিয়োগের আইন ভালো করে পড়ে নেবেন।
Deleteসরকারি নিয়মে সাসপেন্ডেড কর্মচারীও আংশিক বেতন পায়। কারণ জীবন ধারণের অধিকার বলে একটা কথা আছে। মামলার নিষ্পত্তির পর নির্দোষ প্রমাণ হলে বাকি বেতনটাও পেয়ে থাকে। আর এখানে কে দোষী কে নির্দোষ, কে কলুষিত আর কে নিষ্কলুষ, ঠিকমতো বুঝে ওঠাই গেল না। প্রশাসনিক পদের অনেকেই অভিযুক্ত হলেও জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সব ব্যাটাকে ছেড়ে দেড়ে ব্যাটাকে ধর। অশক্ত, দুর্বল, গ্রুপ সি গ্রুপ ডি কর্মচারীদের ওপরে আদালতের খাঁড়ার ঘা। আর সেটার উমেদারী করছে বিকাশ বাবু, প্রশ্নটা এইখানেই।
Deleteকেউ বলতেই পারেন, হাইকোর্ট তো পুরো প্যানেল কেই বাতিল করেছে। অতএব দোষী নির্দোষ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। সে ক্ষেত্রে মনে রাখবেন রায়টা দিয়েছিলেন শ্রী শ্রী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রায়ের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়।
হে মার্কেটের গৌরবোজ্জ্বল লাল পতাকার বহমানতা যখন এই বাংলায় এসে ধান্দাবাজী ও পেছনে ছুরি মারা নোংরা হাতে তথাকথিত এক বাম পার্টি বহন করে, -- হ্যাঁ, কলুষিত হয় সেই লাল পতাকা।
ReplyDeleteজীবনযাপনের ক্রমবর্ধমান চাপ যখন কেউ একটু দরদী হৃদয়ে লাঘব করতে চায়, সেটাকে নাকচ করার জন্যে 'ন্যায় বিচারের প্রতীক' -- ওই কালো গাউনের অন্ধকার প্রতীকি যখন বিচারালয়ে তান্ডব নৃত্য করে, -- হ্যাঁ কলুষিত হয় সেই বিচারব্যবস্থা।
হ্যাঁ, আপনার মতো নরাধমরা যে এখনো থুতু ফেলে ডুবে না মরে, ইদিকসিদিক বিষ্ঠা লেপে চলেছেন সোস্যাল মিডিয়ায়,
আজ্ঞে, পরিবেশ কলুষিত ইহাকেই বলে।
Abominable, misleading, purposely twisted.
ReplyDeleteপূর্বে ঘটে যাওয়া কোন অপরাধের বিচার ও শাস্তি হয়ে থাকলেও, পূর্ব অবস্থায় সেটা ফিরিয়ে আনা বোধহয় সম্ভব না। কারণ একটা দীর্ঘ সময় এর সাথে যুক্ত থাকে। যে সময় অনেক কিছুই নিয়ে চলে যায়, পরিবর্তন ঘটিয়ে যায়। এই কারণে রামলালার মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া গেলেও, আইন কখনোই মসজিদ ভাঙার নির্দেশ দিতে পারে না। মসজিদ ভাঙাটা ছিল অবশ্যই বেআইনি, আজও।
ReplyDeleteনিয়োগ ব্যবস্থায় দুর্নীতি ছিল এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কে নিয়েছে, কিভাবে নিয়েছে, দুর্নীতির প্রকৃতি, এসবই আদালতের বিচার্য। বহু অভিযুক্ত আদালতের জামিন পেয়ে গেছে। যাদের কলুষিত বলা হচ্ছে তারা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে সেবা কার্য দিয়ে গেছেন। তাদের জীবনযাপনেও কালের নিয়মেই বহু কিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে। এখন তাকে পুনঃ মুষিক ভব বলার অর্থ, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার নির্দেশ দেওয়া। তত্ত্বগতভাবে এ দুয়ের পার্থক্য দেখি না।
একটু মনে করে দেখুন ১৯৭৭ সালের সমগ্র নির্বাচনটায় প্রধান প্রচার ছিল উৎপল দত্তের রচিত পরিচালিত অভিনীত "কালো হাত" নাটক। যে নাটকে কলুষিত অফিসার রুনু গুহনিয়োগীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তারপর ক্ষমতাসীন হল বামফ্রন্ট সরকার। রুনু গুহ নিয়োগীর ক্রম প্রদোন্নতি হল। একসময় মহাকরণের নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনি নিযুক্ত হলেন। দিব্যি এই কলুষিত অফিসার, আরো বহু কলুষিত অফিসারের মতই সসম্মানে অবসর নিলেন। তাদের কিন্তু পূর্বস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠেনি।
কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় অধিবেশন হল প্রচুর ব্যয় করে। বিধান নগরে সভানেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ভবন, বিলাস বহুল কুটির নির্মাণ হল। আমরা সিপিআইএম তখন প্রচুর সমালোচনা করেছি। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের দফতর সংলগ্ন এক লক্ষ টাকা মূল্যের বাথরুম নির্মাণকে সমালোচনা করেছি। এ সবই তো ছিল কলুষিত। পরবর্তী সময়ে মহাকরণে ওই বাথরুমটি মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ব্যবহার করেছেন। বিধান নগরের সেই বিলাসবহুল কুটির ইন্দিরা ভবনে জ্যোতি বসু আমৃত্যু স্থায়ী আস্তানা তৈরি করেছিলেন। তাই বলছিলাম কলুষিত নিষ্কলুষ শব্দগুলো একটু ভাবনা-চিন্তা করে ব্যবহার করুন। আর অতীতে ঘটে যাওয়া কোন অন্যায়কে স্মরণ করানো যায়, যেন ভুলে না যায়, মনে করিয়ে দিতে হয়। কিন্তু পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না।
একজন মন্তব্য করেছেন, অন্যান্য ভাতা বা রিলিফ নিয়ে সিপিআইএমের নাকি আপত্তি নেই। শুনে বেশ হাসি পেল, "ভাবের ঘরে চুরি"। এই সবেমাত্র গত নির্বাচনেও ভাতাকে ভিক্ষা বলা হলো। রাজ্য সরকারের খয়রাতি রেউরি কে তীব্র সমালোচনা করা হলো। এসব বেমালুম ভুলে গেলেন।
দ্বিতীয় কথা বলি। গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতিটা স্কুলগুলিতে কিভাবে চলত একটু খোঁজ নেবেন। আমার এলাকায় অত্যন্ত কম বয়সী একজন গ্রুপ ডি কর্মচারী একটি পলিটেকনিকে চাকরি করেন। শুনলাম আগামী ২০২৭ সালে তার রিটায়ারমেন্ট। শুনে অবাক হলাম। কারণ ছেলেটিকে আমরা জন্মাতে দেখেছি। তাই জানা আছে ওর অবসর আরো ৮-১০ বছর পরে হওয়া উচিত। সে বলল আমার এইট পাশ সার্টিফিকেট জোগাড় করে দিয়েছিলেন এমএল সন্ধ্যা চ্যাটার্জি। জোগাড় করে দিয়ে ছিলেন নৈহাটির এমএলএ নীহার বসু। তিনি ওই সার্টিফিকেট এ আমার বয়স আট বছর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আট বছর আগেই রিটায়ারমেন্ট। মন্ত্রী নিমাই মালের ফোন, আর সাংসদ অনিল বসুর ফোনে সরকারি বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি নিয়োগ হতে দেখেছি।
আরো বলি, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে লিলুয়ায় ক্ষেমকা স্কুল, সোয়াইকা স্কুল, এই সমস্ত স্কুলে জানাশোনা কিছু শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে কথা হচ্ছিল। আমি বলছিলাম দিপ্সিতা ধর মনে হয় ভালো লড়াই করবে, শ্রীরামপুর উত্তরপাড়ায় বেশ পপুলার মনে হচ্ছে। জবাবে লিলুয়ার দু একজন মন্তব্য করেন, শ্রীরামপুর উত্তর পাড়া দিপ্সিতাকে চেনে না। ওর গেট আপে মুগ্ধ, কৃষ্ণকলি। কিন্তু হাওড়া চেনে ওকে, এমএলএ পদ্মনিধি ধর এর নাতনি হিসেবে। ডোমজুড় এলাকার কোন স্কুল, অফিস, ব্লক প্রশাসন, পদ্মনীধির নির্দেশ ছাড়া চলতো না। যত নিয়োগ হত সব দিপ্সিতা র দাদুর নির্দেশে। একা ডোমজুড় ওকে হারিয়ে দিতে পারে। বাস্তবিক সেটাই হয়েছিল। উত্তরপাড়া শ্রীরামপুর এবং চাঁপদানিতে যদি বা মুখ রক্ষার মতো তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল, ডোমজুড়ে গিয়ে মুখে চুনকালি।
এখন স্কুলগুলোতে গ্রুপ সি গ্রুপ ডি নিয়োগে কিছু নিয়মের বেড়াজাল তৈরি হয়েছে। সে যুগে সুপারিশ পাঠানো প্রার্থী কে বসিয়ে প্রধান শিক্ষক একটি দরখাস্ত লিখতে বলতেন। সেটাই হয়ে যেত তার পরীক্ষা। আর গ্রুপ ডির ক্ষেত্রে সে বালাইটুকুও ছিল না। কলুষিত নিষ্কলুষ শব্দগুলো ব্যবহার করার আগে একটু বুকে হাত দিয়ে ভেবে দেখবেন। মনে রাখবেন কারাগার কেও কিন্তু এখন সংশোধনাগার বলা হয়। আর আসামিও জেলে সেখানে মজুরি উপার্জন করে। শব্দ ব্যবহারে সতর্ক হোন। গত ৩৪ বছরের বাম শাসনে কত শত সহস্র এমন কলুষিত আছেন হয়তোবা আমার আপনার ঘরেও।
আপনি তৃণমূলের কোন পদে আছেন? চোরেদের ভাতা দেওয়ার পক্ষে এত লেখা লিখতে পারেন। আপনার উচুঁ পদে থাকা উচিত।
Delete"কলুষিত" প্রসঙ্গে বলি, যাদবপুর বিদ্যাপীঠে একজন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিমান বসু, অনিল বিশ্বাস প্রমুখের মন পসন্দ সুপারিশ ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেই সুপারিশ অগ্রাহ্য করে, ইন্টারভিউতে যে স্বচ্ছ বাছাই হয়েছিল, সেই প্যানেলকেই পাঠিয়ে দেয়। আলিমুদ্দিনের পছন্দের ব্যক্তিটি ছিল চার নম্বরে। বহুদিন ডিআই অফিস প্রধান শিক্ষকের ওই প্যানেল অনুমোদন করেনি। পার্টি থেকেও প্রথমে মৌখিক চাপ ও পরবর্তীকালে হুমকি ভীতি প্রদর্শন চলে। তথাপি প্রধান শিক্ষক অনমনীয়। প্রায় দু'বছর পরে ডিআই অফিস বাধ্য হয়েছিল প্রধান শিক্ষকের পাঠানো প্যানেলকে অনুমোদন দিতে। সেই প্রধান শিক্ষক আসতেন হুগলি জেলা থেকে যাদবপুরে। কিন্তু একদিনের জন্যেও তাকে শিরদাঁড়া বাঁকাতে দেখিনি। সেই শিক্ষক নমস্য ব্যক্তি।
ReplyDeleteসকলের তো শিরদাঁড়া সোজা থাকে না। কতো যে "কলুষিত" শিক্ষক শিক্ষাকর্মী একটা প্রজন্মের কবর খনন করে গেল তার খবর কে রাখে।
সরকারের দুর্নীতির কোন বিষয় না।
ReplyDeleteএত লোকের সিপিএম নিয়ে আলোচনা করছে এখানে সিপিএম আসছে কোথায়?
আপনারা চান যে লোকগুলো অসৎ যাদের জন্য চাকরি গেছে তারা ভাতা পাক?
আপনারা সরাসরি তৃণমূল করুন।
এই ব্লগের বরাবরই তৃণমূলের হয়ে চামচাগিরি করেন । ইনি ইনিয়ে বিনিয়ে সিপিএমকে দোষ দেন, বিজেপির দোষ দেন আর তৃণমূলকে ক্লিনচিট দেন; চালাকি করে তৃণমূলকে ভালো দেখাতে চান অথচ ভাবটা দেখান তৃণমূলের চামচেগিরি মোটেও করেন না । 😡😡😡😡😡😡😡😡😡🐷😡😡🐷😡
ReplyDeleteবাম আমলে সব ধোয়া তুলসীপাতা ছিল তা নয়। তবে বেকার ভাতা দেওয়া আর আদালতের নির্দেশে দু নম্বরি করে চাকরি পাওয়া জালিয়াতরা একপাতে বসতে পারেন না। দুর্নীতি করেছে সরকার ও তৃণমূল দল। তাঁরা এখন গঙ্গাজলে স্নান করে সরকারি টাকায় জালিয়াতদের ভাতা দিচ্ছেন। এর সঙ্গে সিপিএমের ১১২ ধারার কী যোগ বোঝা গেল না। শিক্ষা দফতরের টাকাও নয়, ওটা শ্রম দফতরের টাকা। এইভাবে এক দফতরের টাকা অন্য কাজে ব্যয় করা আর্থিক দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা, যা বর্তমান সরকার প্রায় নিয়ম করে ফেলেছেন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, চাকরি বিক্রি হয়েছে। এই বেনিয়মের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে বঞ্চিত চাক্রিপ্রারথীরা। আইনজীবীরা সিপিএমের দলের কিন্তু তাঁরা পেশাদার। কংগ্রেসের মনু সিংভি সরকারের মামলা করছেন, এতে কি কংগ্রেসের আদর্শ ভেঙে পড়ছে। কেউ কেউ এখনো টিএমসি কে বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি বলে ভেবে মনে বল পান। আসলে তৃণ ও বিজেপি কমপ্লিমেন্টারি। ১১২ ধারার সঙ্গে এই মামলার কোনো বিরোধ নেই।
ReplyDeleteএকটা রাজনৈতিক পোস্ট নিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক সমালোচনা দেখলাম এই প্রসঙ্গে। কিছু সমর্থনে কিছু বিরোধিতায়, একটা উন্মুক্ত বাহাসের পরিবেশ ছিল অটুট। শুধু তাল কেটেছে যে সব অ-সভ্য বানরশাবকেরা, তারা মূলতঃ নকুমাকু এবং সেই চতুষ্পদী পরিচয় তারা বহন করেছে, তাদের গালি ও খিস্তিখেউড়ের মধ্য দিয়ে।
ReplyDeleteএদের চিহ্নিত করে প্রত্যাখ্যান করুন।
কদুষিত প্রসঙ্গে একটা ঘটনা না বলে পারছি না। তাহলে শুনুন, আমার এলাকায় একটি স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগ হবে। আমি নিজে এবিটিএ জেলা সম্পাদককে এক্সপার্ট হিসেবে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলাম। তিনি সম্মতি জানিয়ে চিঠিতে লিখেও দিলেন। কিন্তু ইন্টারভিউর দিন সেই এক্সপার্ট এলেন না। ফলে সমগ্র ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিরা, আগত চাকরি প্রার্থীরা, সকলে ফিরে গেলেন। আমি পুনরায় এবিটিএ অফিসে সেই সম্পাদকের সাথে দেখা করলাম। কেন এলেন না? তিনি জানালেন চুঁচুড়ার পার্টি নেতা ও পৌরসভার চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ, তার স্ত্রী বালিতে একটি স্কুলের শিক্ষিকা। তাকে এই স্কুলে নিয়ে আসার জন্য মনস্থ করেছে জেলা এবিটিএ। কিন্তু লোকাল পার্টি তার এলাকার স্কুলে অন্য একজন কে, নিজেদের এলসিএম এর স্ত্রীকে নিয়োগ করবে বলে মনস্থ করেছে। পদটি ছিল ফিলোসফি। ফলে জেলা এ বি টি এর সাথে লোকাল পার্টির দ্বিমত। এই কারণে ইন্টারভিউ টি হলোই না। পরে লোকাল কমিটি নিজেদের পছন্দমত এক্সপার্ট এনে ইন্টারভিউ করিয়ে নিজেদের প্রার্থীকে নিয়োগ করে। ভাবুন কুড়ি জন প্রার্থী এসেছে যারা, তারা নিতান্তই মুরগি ছানা, তারা জানে না যে তাদের উপস্থিত রেখে একটি রঙ্গশালায় কুনাট্য মঞ্চস্থ হচ্ছে। গোপন কথাটি রবে না গোপনে উঠিবে ফুটিয়া -- সবাই জেনেছিল -- অনেক পরে।
ReplyDeleteদ্বিতীয় কথা হল এই সুবাদে জানলাম সিপিআইএম নাকি লক্ষীর ভান্ডার কন্যাশ্রী পুরোহিত ভাতা ইমাম ভাতা রূপশ্রী বিধবা ভাতা এগুলোর বিরোধী নয়। তারা এগুলো সমর্থক। শুধুমাত্র গ্রুপ সি আর গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার বিরোধী। যাকগে ঠেলায় পড়ে কিছু নতুন কথা শোনালেন ।আমরাও শুনলাম।