Tuesday 6 October 2015

বিঠুরে একদিন


ধুলোমাখা পুরাণ ও ইতিহাসের মেলবন্ধন
সায়ন্তনী বসু চৌধুরি

পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক খনিজে সমৃদ্ধ উত্তরপ্রদেশের একটি জনপদ বিঠুর। কানপুর থেকে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ২৩.৪ কিমি। মূল গঙ্গার বামতটে অবস্থিত এই নগরটি কানপুরের  অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

রামায়ণ তথা লব-কুশের জন্মভূমি
বিঠুরে পৌঁছে প্রথম যে আধভাঙা মন্দিরের মতো জায়গাটায় গাড়ি থামল সেটাই বাল্মীকি আশ্রম। রাস্তার মাঝে বিশাল দরজা দিয়ে পুরনো সিঁড়ি ভেঙে আশ্রমের প্রবেশ পথ। এই সিঁড়ি স্বর্গের সিঁড়ি নামে পরিচিত। কথিত, রাম যখন সীতাকে পরিত্যাগ করেছিলেন তখন সীতার আশ্রয়স্থল ছিল এই বাল্মীকি আশ্রম। একই সঙ্গে লব–কুশের জন্মস্থান, সীতার পাতাল প্রবেশ, মূল রামায়ণের রচনা; রাম রাজত্বের প্রায় সবকটি ঐতিহাসিক ঘটনার আঁতুড়ঘর এই বিঠুর।

পুরাণ আর জনশ্রুতির সহবাস
এখানকার গঙ্গার তট অনেকটা বেনারসের গঙ্গার মতোই ঘাট ও মন্দিরে সজ্জিত। সেদিক থেকে বিঠুরকে মিনি বেনারস বললেও ভুল হবে না। আমরা যখন নৌকায় বসলাম ঘড়িতে তখন বিকেল ৩টে বাজে। পড়ন্ত রোদের ঝিকমিক আলোয় মনে হচ্ছিল গঙ্গার বুকে হাজার হাজার টুনি বাল্ব জ্বলছে। জায়গাটা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য কোনও গাইড পাইনি। অগত্যা গাড়ির চালক আর মাঝির সঙ্গেই ভাব জমাতে হল।

যা যা চোখে লেগেছে
ব্রহ্মাবর্ত ঘাট: ব্রহ্মদেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মেশ্বর শিবলিঙ্গ ও ব্রহ্মা খুঁটির মাহাত্ম্য সম্বলিত ব্রহ্মাবর্ত ঘাটই এখানকার পবিত্রতম ঘাট। কথিত আছে, এই ঘাটটিই নাকি পৃথিবীর মধ্যস্থল । মনুষ্য সমাজ সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মদেব উৎপলারণ্যে বাস করতে শুরু করেন। সেই সময় পৃথিবীর মধ্যস্থল পরিমাপের জন্য স্বয়ং ব্রহ্মদেব এই ঘাটে নিজের ঘোড়ার ক্ষুরের নালটি পুঁতেছিলেন, সেটাই ব্রহ্মখুঁটি নামে পূজিত হয়। এখানে ব্রহ্মার পাদুকাও পূজিত হয়।
পাত্থর ঘাট: নানাসাহেব পেশোয়ার তৈরি লাল পাথরের এই ঘাট শিল্পকর্মের এক অপূর্ব নিদর্শন।
ধ্রুব টিলা: পরবর্তী কালে ব্রহ্মাবর্ত উৎপলারন্যের রাজধানী হয়, সেখানকার রাজা ছিলেন উত্তানপদ। তাঁর পুত্র ধ্রুব যেখানে কঠিন তপস্যায় মগ্ন হয়েছিলেন সেই স্থানটিই ধ্রুব টিলা নামে পরিচিত। ব্রহ্মা খুশি হয়ে তাকে তারামণ্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার জায়গা প্রদান করেন।
রাজনৈতিক কথা: স্বাধীনতার ইতিহাসে বিঠুরের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাণী লক্ষ্মীবাঈ সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর বাসভূমি এই বিঠুর।

বিঠুরের শোভা বাড়াতে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান যেমন সিদ্ধিধাম আশ্রম, রাধামাধব মন্দির, সাইবাবার মন্দির, রাম-জানকী মন্দির, হরিধাম আশ্রম স্বমহিমায় বিরাজমান।
ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৯টা বেজে গেল। চোখ বুজে মনে হচ্ছিল টাইম মেশিনে চড়ে বহু বছর আগের এক দেশ থেকে ঘুরে এলাম, যেখানে ধুলোমাখা পুরাণ আর ইতিহাস উভয়কেই চোখের ঠিক সামনে ঘটতে দেখা যায়...

                             


No comments:

Post a Comment