Monday 16 November 2015

প্যারিস প্যারিস



কবিতা স্বপ্ন রোম্যান্স সিটি অব লাইটস্ ও সন্ত্রাসবাদ!
অভিজিৎ রায়





“Imagine all the people living life in peace…”- John Lennon 

মানব সভ্যতার বর্তমান কালপর্ব একদিকে যেমন আশাতীত উন্নয়ন অন্যদিকে জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষ। মানুষের সৃষ্ট নাশকতায় সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের ছায়া। এ যেন ‘সভ্যতার বিরুদ্ধেই সভ্যতার অদমিত সংঘাত’। সন্ত্রাসবাদের কোনো সীমানা নেই, বেয়নেটের খোঁচায় মানবতাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে সে অদ্বিতীয়, বুলেট আর গ্রেনেড সংহারে মানব জীবনে লাইফটাইম ফুলস্টপ পড়ে

বাতাক্লঁ কনসার্ট হল থেকে ক্যাঁরিলোন বার- সন্ত্রাসবাদ প্যারিসকে গ্রাস করেছে! শতাধিক মানুষের মূত্যু, অগুনতি মানুষ আহত ফ্রান্সে ‘শার্লি হেবদো’র আতঙ্ক ফিরে এসেছে। প্যারিসের বাতাক্লঁ কনসার্ট হলে নির্মম হত্যালীলা হৃদয়ে কম্পন মাত্রা বাড়িয়ে স্মরণে আনে ২৬/১১ মুম্বই স্মৃতি।

সপ্তাহের অন্তে সুর আর স্বপ্নের সাগরে ডুবে থাকা প্যারিসের চেনা দৃশ্যটা পালটে দেয় কট্টরন্থী মৌলবাদী ৮টি মানুষ ও তাদের স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্রপ্যারিসের আক্রমণের দায়ের স্বীকারোক্তিতে আইএসআইএস’র বক্তব্য, তাদের উপর ফ্রান্সের বিমানহানার জবাব দিয়েছে তারা। হ্যাঁ জবাব তারা দিয়েছে প্রায় ১২৮ জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের রক্তে প্যারিসকে রাঙিয়ে! শার্লি হেবদোর সাংবাদিকরা ধর্মীয় ভাবাবেগে ‘আঘাত’ করায় তারা জবাব দিয়েছিল। এ জবাব নৃশংসতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সন্ত্রাসবাদের মতো অশুভ শক্তির কোনো ধর্ম নেই কোনো দেশ নেই। ইউরোপের মাদ্রিদ, প্যারিস, ভারতের মুম্বই, আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ট্রেড, পাকিস্তানের সেনা স্কুল- সন্ত্রাসবাদের আগ্রাসন থেকে কেউ মুক্ত হতে পারেনি। আইএসআইএস-তালিবান এগুলি কেবল কিছু সাংগঠনিক নাম, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য একঃ নিরপরাধ মানুষের প্রাণ কেড়ে জয়ধ্বজা ওড়ানো।

প্যারিসের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিকের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় ফুট উঠেছে এক শিহরণ জাগানো দৃশ্য, ‘কোলাহল লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করছিল সন্ত্রাসবাদীরা সন্ত্রাসবাদের এ হেন কাজের প্রমাণ গোটা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে। তারা নিরস্ত্রকে মারার মোক্ষম সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। আমাদের কাছেও যেন বিষয়টা গা সওয়া হয়ে গেছে; বাঁচব নাকি মরব, তা কোনো কট্টরপন্থী নেতা নির্ধারণ করবে।

বাতাক্লঁ হলের মানুষগুলোর অপরাধ তারা ফ্রান্সের বাসিন্দা, মুম্বইয়ের তাজের পর্যটকদের দোষ তারা আমেরিকান, কেউ বা অন্য দেশীয়, পেশোয়ারের সেনা স্কুলের শিশুদের অপরাধ কী তা বোধহয় স্বয়ং বিধাতাও জানেন না- তবু সন্ত্রাসবাদ তাদের ছাড়েনি। ফতোয়া, হুমকি, আক্রমণ দিয়ে গোটা বিশ্বের মানব সমাজকে তাদের ক্রীড়ণকে পরিণত করার বাসনা। সন্ত্রাসবাদীরা কোনো ভিন গ্রহের প্রাণী নয়, চতুষ্পদও নয়, দুর্ভাগ্য সেখানেই তারা দ্বিপদ হয়েও বর্বর, বন্যরাও এদের আচরণে লজ্জা পাবে।

বিপদের আরও আছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির বিবৃতিতে স্পষ্ট হয়, যে সমস্ত ফরাসি নাগরিক আইএসআইএস’এর হয়ে ইরাক, সিরিয়াতে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তারাই সে দেশে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ কী মন্ত্রণায় উদ্বুদ্ধ করে যে স্বদেশি স্বদেশির প্রাণ কেড়ে নেয়! মানুষের মনের প্রকোষ্ঠে একটা ভীতি চিরতরে গ্রথিত করে।

আপাতত বিশ্ববাসী প্যারিসের ক্ষতে প্রলেপ দিতে ব্যস্ত। ‘শার্লি এবদো’র দফতর থেকে মাএ ১০০ মিটার দূরে বাতাক্লঁ সন্ত্রাসবাদী হামলার স্মৃতি নিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর একদল মানুষ জেহাদি স্লোগান তুলে অন্য কোনো দেশে হাজির হবে।

No comments:

Post a Comment