Pages

Thursday, 5 January 2023

ব্যতিক্রমী বিচারক বি ভি নাগরত্ন

নোটবন্দীর রায়

অশোকেন্দু সেনগুপ্ত

 


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য চারজন পুরুষের বিপ্রতীপে একা একজন মহিলা তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বি ভি নাগরত্ন সংবিধান বেঞ্চের একজন চার-পাঁচ বছর পর (২০২৭) তিনি অলংকৃত করতে পারেন দেশের প্রধান বিচারপতির পদ, প্রথম মহিলা রূপে সত্যিই তাই হবে তো?

সংশয় থেকে যায়। কেন্দ্রে আমরা যে সরকারকে ক্ষমতায় এনেছি তারা মানবে তো! না মানার জন্য মাঠে নেমে পড়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রিজিজু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকাঢ়’রা। তাঁরা অনেকে বর্তমান কলেজিয়াম ব্যবস্থা যে পছন্দ করছেন না, তা প্রকাশ্যে জানিয়েও দিয়েছেন সে সব জেনেও বিচারক নাগরত্ন নোটবন্দীর ঘটনাকে সাংবিধানিক বলতে রাজি হলেন না ই অবস্থানকে দুঃসাহস বলতেই হয়, বলতেই হয় যে তিনি যেন দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ অবশ্য, তাই বা বলি কেমন করে! কী করে ভুলি গগৈ সাহেবের কেরামতি তথা ডিগবাজির কথা তাই দ্বিধা তবে ভরসাও আছে বৈকি, তিনি যে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ভেঙ্কটরামাইয়ার কন্যা তিনি  অন্য এক মামলায় (নেতা-নেত্রীদের কথায় লাগাম টানা) বিরুদ্ধ মত প্রকাশে দ্বিধা করেননি

নোটবন্দী নিয়ে রায়টা কেমন হল? সরকার বুঝি ভাবেওনি, তাদের নভেন্বর ২০১৬-র সেই আচম্বিত খেলার জন্য এভাবে তারা পরিত্রাণ পাবে মারাত্মক সে খেলা! যাবতীয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট সরকার বাতিল করল মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে বলা হল, এতে নাকি দেশের যত কালো টাকা আছে তা ধরা পড়বে মোটেই তা হল না হবার কথাও নয় কে কবে কালো টাকা নগদে রেখেছে? তার জন্য সোনা আছে, সুইস ব্যাঙ্ক আছে, জমি-ঘর-বাড়ি আছে কেবল সাধারণ মানুষের অশেষ দুর্ভোগ হল যারা অসংগঠিত ক্ষেত্রে (যা আমাদের অর্থনীতিকে মার্কিনি প্রভাব থেকে মুক্ত রেখেছিল বহুদিন) কাজ করতেন তাঁরা রাতারাতি কাজ হারালেন। তাঁরা নগদ টাকায় সংসার চালাতেন। নগদ টাকার ব্যবহার কমলবাড়ল পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কাজ হারিয়ে, টাকা না পেয়ে তাঁরা হাঁটা দিলেন নিজ নিজ গৃহের দিকে কিছু মানুষ নোট বদলানোর কাজ নিয়ে দাঁড়ালেন ব্যাঙ্কের সুদীর্ঘ লাইনে ব্যাঙ্কগুলিরও, বিশেষত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, রাতারাতি টাকা ছাপানো, টাকা ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে পৌঁছে দেওয়ার খরচ বাড়ল আর্থিক ক্ষতি হল দেশের ভারতীয় অর্থনীতি দুর্বল হল লম্বা লম্বা লাইন পড়ল ব্যাঙ্কের সামনে বহু মানুষ, বিশেষত বৃদ্ধ মানুষেরা প্রাণ হারালেন বলা হল, এসে গেছে নগদহীন অর্থনীতির যুগ। অথচ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের তুলনায় আজ বাজারে নগদের উপস্থিতি প্রায় ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। তথ্য দেখাচ্ছে, মার্চ ২০১৭'এ যেখানে বাজারে নগদের পরিমাণ ছিল ১৩.১ লক্ষ কোটি টাকা, তা ২০২২'এর মার্চে এসে দাঁড়িয়েছে ৩১.৯২ লক্ষ কোটি টাকায়; গত ২৩ ডিসেম্বর (২০২২) তা বেড়ে হয়েছে ৩২.৪২ লক্ষ কোটি টাকা। তাহলে, নোটবন্দীর এই খেলায় কার কী লাভ হল? নগদ-নির্ভর ছোট-মাঝারি শিল্প, গ্রামীণ বাজার, খুচরো বাজার, শ্রমজীবী মানুষ তো নিঃস্ব হয়ে গেল! তাতে কী? বিচারপতিরা কি কদাচ রাস্তায় নেমেছেন তাদের খোঁজ নিতে?

নাগরত্ন জানিয়েছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যথেষ্ট মনোনিবেশ না করেই এই প্রক্রিয়ায় সায় দিয়েছে তারা যে স্বাধীনভাবে চিন্তা করে না তা স্পষ্ট এই বক্তব্যে। আর গরিব মানুষের ভালোর জন্য যে সে উদ্যোগ ছিল না, তাও বুঝি স্পষ্টতর হল তবে কি বলব যে, দেশের বিচারব্যবস্থায় গরিবের জন্য আলাদা করে কিছু ভাবার কোনও সুযোগই নেই! হয়তো তাই এবং এও সত্য যে, এই ব্যবস্থাকে যদি নিরপেক্ষ রাখতে চাই তবে মানতে হয় যে এই ব্যবস্থা গরিবের অনুকূল নয় তাই অপছন্দ হলেও স্বীকার করতেই হয় যে মানুষ পেয়েছে 'সেরা রায়' মানুষ যেমন সরকার চেয়েছে (ভোটে) তেমন সরকারই এসেছে এবং তারা তাদের ইচ্ছেতেই পথ খুঁজেছে পথটা (নোটবন্দীর) ঠিক কিনা সাংবিধানিক বেঞ্চ তারই বিচার করেছে মাত্র উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল কিনা, বেঞ্চ তা দেখার চেষ্টা করেনি কত মানুষের কতটা ক্ষতি হল তা বিচারের আওতায় এল না মানুষ নোট বদলের জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছে, এতেই তুষ্ট চার-বিচারক

তুষ্ট শাসকল বিজেপিও তারা চায়, কংগ্রেস এই নিয়ে যে হল্লা করেছিল তার জন্য তারা ক্ষমা চাক কংগ্রেস রাজি হয়নি তারা পালটা তোপ দেগেছে শাসক দলের দিকে তবে কি কংগ্রেস গরিবের কথাও ভাবে! বলতে পারলে খুশি হতাম খুশি হতে পারছি না তবে কেউ যে দাঁড়িয়েছে মানুষের পক্ষে, তাও কম নয় এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মানুষ কাউকে পাশে পাচ্ছে তা বড় কম পাওয়া নয় এবং আরও একবার বলি, জয় হোক তোমার হে বিচারক নাগরত্নজী। মহিলা শক্তি দেশটাকে আরও এগিয়ে দেবে সে ভরসা পেলাম যেন তোমার জন্যই 

 

2 comments:

  1. অনেক অনেক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। এই ব্যতিক্রমী বিচার বিস্তারিত ভাবে
    জানানোর জন্য সম্পাদক কে ও আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা

    ReplyDelete
  2. Like Father like Daughter, বাপ কি বেটি!!!

    ReplyDelete