Pages

Wednesday, 3 November 2021

গৌতম নাভলাখা ও তাঁর বন্ধুজন

কলম বনাম বন্দুক!

অশোকেন্দু সেনগুপ্ত


'এলগার পরিষদ'/ ভীম কোরেগাঁ মামলায় এখন তিনি কার্যত বিনা বিচারে মুম্বাইয়ের আন্ডা সেলে আটক। তাঁর নাকি যোগ আছে মাওবাদীদের সঙ্গে। কখনও শুনছি তাঁর যোগ আছে পাকিস্তানের সঙ্গে। সবই শোনা কথা আর সে শোনা কথার ভিত্তিতে প্রায় অন্ধ এই বুদ্ধিজীবীকে নাকি জামিনও দেওয়া যাচ্ছে না।

কেবল গৌতম ন'ন, এমন আরও অনেক মানুষ জেলবন্দী বিনা বিচারে; আদালত সরকারের বিরোধিতায় তাঁদের জামিনও দিতে চায় না বা পারে না। কে জানে, বাইরে মুক্ত বাতাসে এরা কে কখন কার মাথা চিবিয়ে খায়! যদিও সবাই জানে, সরকার এমন প্রচুর সাজানো মামলায় বহু মানুষকে দেশের নিরাপত্তার নামে আটকে রাখে। আদালতই বা কী করে? দেশের নিরাপত্তা বলে কথা!

অতএব, গৌতম নাভলাখার মতো সুলেখক, সুপ্রাবন্ধিক মানুষকে তো জেলের বাইরে রাখাই যায় না। আর মানুষটা কেবল লেখক নন, সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী, PUCL'এর সম্পাদক। আরও বড় অপরাধ- মানুষটা নাকি কাশ্মীরে গণভোট নেওয়ার পক্ষে।  

এই মানুষটার সঙ্গে কথা হয়েছিল একদিন পাশাপাশি বসে খেতে খেতে। কত বিচিত্র বিষয়ে কথা, কিচ্ছু মনে নেই। মনে পড়ে কেবল যে, লোকটার তখন খাওয়াতেই মন, তর্কে নয়। আমাকে তেমনই যেন পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেন বলেছিলেন- খেয়ে নাও, খেয়ে নাও, তর্ক করার সময় পরে অনেক পাবে।  তখন গৌতমের কী আর এমন বয়স, তখনই বুঝেছিলেন খাওয়ার গুরুত্ব! দেখা হয়েছিল কলেজ আয়োজিত এক সেমিনারে। বিষয় মনে নেই ভালো। মনে পড়ে কেবল তাঁর নাম। মনে পড়ে যে আমি কত বড় হাঁদা যে খাওয়ার গুরুত্ব আজও বুঝিনি। সেদিনের মতো আজও তর্ক করে চলেছি- কী দরকার গণভোটের? দরকার কী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর? আরও কত অধিকার  চাই?

জেলের নিয়মকানুন বিচিত্র, সেখানে যারা বিচারাধীন বন্দী তাদের জন্য পুজো বা ঈদ বা কোনও অনুষ্ঠানে বাড়তি পোশাক ইত্যাদি বরাদ্দের নিয়ম নেই। যারা খুব গরিব মানুষ, থাকেন অজ পাড়াগাঁয়, তাঁরা জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেতেও চান না; নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে থানাতে হাজিরা দেওয়ার হাঙ্গামা কম নাকি? তার ওপর অর্থদণ্ড। হাজিরার দিনগুলোতে দৈনিক মজুরি নেই! খাবে কী লোকটা আর তার পরিবার?

কাশ্মীরবাসীদের ওপর অত্যাচার বেড়েছে, খাদ্যে আমরা নাকি স্বয়ম্ভর তবু দেশের বহু লোক খেতে পায় না, বিরোধী স্বর চাপা দিতে একের পর এক নিবর্তনমূলক আইন, ইউএপিএ'র ধারা, অন্ধ তোষামুদে বিচারব্যবস্থা, পঙ্গু সংবাদমাধ্যম- এসব দেখে আর যে চুপ থাকতে পারি না। কিন্তু ভয়, রাষ্ট্র যদি শোনে! কোনও রাষ্ট্রের কোনও সরকারই আমার বা আপনার কোনও মৌলিক অধিকারই যেন স্বীকার করে না। তারা সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিতে উদ্যত, মানুষকে সে 'সম্মান নিয়ে বাঁচতে' দেবে না। পরে 'লোক দেখানো' উৎসব করে (যেমন দেখা গেল, এবারের ক্রিকেট বিশ্ব কাপ উৎসবে ব্ল্যাক লাইভস ম্যটার বিষয়ক নাটকে, যেখানে সকলকে হাঁটু মুড়ে বসতে হয়), কেউ কেউ মড়া কান্না জোড়ে, কর্তারা সবাই সংবিধানের গুণ গায়, মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়! প্রতিবাদ করা নিষেধ। 

আমার মতো কত মানুষ আছেন চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যারা এসব দেখে প্রতিবাদে ফেটে পড়তে চায়, কিন্তু পারে না। তাদের সংসার আছে, সন্তান আছে। কেউ ভাবে, রোসো, রোসো, ভোট আসছে না। তখন দেখাব মজা। তারা জানে না বা মানে না যে ভোট দিয়ে সে যে বদল আনে সে শক্তি আসলে এক ও অভিন্ন, কেবল সাজপোশাক বদলে সে দুয়ারে ভোট চেয়ে চেয়ে ফিরেছে। আর যেই না বসেছে সে শাসকের আসনে, হুংকার ছেড়েছে- Are the Torture Chambers Ready! জেলে আটকে রেখে বার্তা দেয় রাষ্ট্র- পারবে না হে,পারবে না। তুমি তো শেখোনি ধূর্তামি ও শয়তানী। সে সব আমি জানি। আমার পূর্বসুরীদের মতো আমি জানি, আমার উত্তরসুরীও জানে, কোথায় যাবে?

বর্তমান রাষ্ট্রের ভয়- গৌতম তাদের একসুরে প্রতিবাদ করতে শেখায় যদি। তাঁর কলমের জোর আছে। ওদের বন্দুক, বুট কি কলমের চেয়েও বেশি  শক্তি ধরে নাকি!


2 comments:

  1. আদালত তাদের বিচার বুদ্ধি বন্ধক রেখছে স্বরূষ্ট্র দপ্তরে।
    দেহ মন বিক্রি করে জীবিকা চলছে বিচারকদের।
    এদের কাছে গণতন্ত্রের কোন শিক্ষা নেই। শুধুই শাসকের দালাল।

    ReplyDelete
  2. 🧛🏿‍♂️☠️

    বিচারপতিরা অনেকেই রাষ্ট্রের দালালি করতেই পছন্দ করেন । উপরে উপরে সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ দেখালেও আসলে তারা রাষ্ট্রের বিপক্ষে খুব দরকার না পরলে যেতে ভয় পান মানে রাষ্ট্রের কাছে অনেক কিছু পাওনা তাদের রয়েছে তো তাদের । তাই শুয়োর রাষ্ট্রনেতারা🐷 সময়ে সময়ে এইসমস্ত বিক্রি হয়ে যাওয়া বা বেশ্যাবৃত্তি করা বিচারকদের কলাটা মুলোটা দিয়ে খুশি রাখেন । সবই হয়, তবে আড়ালে; আর হতেই থাকে । মাঝে মাঝে টুকটাক বকাবকি দিয়ে তারা দেখাতে চান সংবিধানের কত ক্ষমতা বা আইনের চোখে সবাই সমান-- এইরকম একটা ভালোমানুষির শয়তানি ঝুলিয়ে রেখে নিজেদের জীবন এগিয়ে নিয়ে চলেন । আর আমরা যারা বাইরে থেকে সব দেখি, যা বোঝায় বুঝি তারপর রাষ্ট্রের গুণগান করি এবং এই সমস্ত নির্ভীক মানুষদের ঘৃণা করি ; নিজেদের জীবন নরকের মধ্যেই কাটিয়ে দিই -- শুয়োরকে শুয়োর বলার ক্ষমতা নেই !!!! আমাদের মধ্যে অনেক ভদ্রলোকই (🖕🏾🖕🏾) বাড়ি-গাড়ি-জমি-টাকা এইসব করতেই ব্যস্ত । তারজন্য আদর্শ, চিন্তাভাবনা, প্রতিবাদ সমস্তকে গর্তে ঢুকিয়ে একটা অসভ্যের মত নরকের জীবনযাপনকে বেছে নিই । ধিক্কার ।
    😡😡😡😡

    ReplyDelete