Pages

Friday, 19 June 2020

মানুষের অধিকার!

সিদ্ধান্তহীনতার মহা গেরো?
অশোকেন্দু সেনগুপ্ত

অথবা প্রশ্নটা এভাবেও করা যায়: পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ? সেও এক সিদ্ধান্তহীনতা বা দিশাহীনতা মুখ্যমন্ত্রীকেও আজ দিশাহীন লাগছে কেন? উদাহরণ অনেক যেমন, পরিবহন ক্ষেত্র মুখ্যমন্ত্রীর দলের একজন নেতা এক টিভি চ্যানেলে বললেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হয়তো কোনও খবর আছে গণ-পরিবহন বিষয়ে হতে পারে, গোপন খবর (নাকি, কেন্দ্রের চোরা কিল?)। আমরা জানি না, দেখছি শুধু এই যে লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেল চালু হয়নি এমতাবস্থায় অফিসে কর্মচারীরা আসবেন কী করে? সড়কপথে (জলপথে অতি সামান্য মানুষই আসা-যাওয়া করতে পারেন)? তার জন্য তিনি কখনও নির্দেশ দিচ্ছেন, কখনও পরামর্শ দিচ্ছেন, কখনও অনুরোধ করছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না যে! মুখ্যমন্ত্রী বারবার তাঁর নির্দেশ বা পরামর্শ পাল্টাচ্ছেনও 

একে তো সরকার সচল রাখতে কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে সব অফিস খুলতে হয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে করোনা আমফানের বিষ-থাবা আসছে নাকি ডেঙ্গি! সরকার কোনদিকে যায়?

বাস পরিষেবা দিয়ে সকল অফিসযাত্রীকে অফিসে আনা সম্ভব নয়, আর সরকারের হাতেও নেই যথেষ্ট বাস ধীরে ধীরে পরিবহন ব্যবস্থা, কলকাতা শহরেও, বেসরকারি হাতে গেছে। তাহলে? মানতেই হয় যে মুখ্যমন্ত্রী ঠকে গেছেন, বেসরকারি পরিবহন মালিকরা লাভের অঙ্ক না দেখে কেবল তাঁর কথায় জনসেবায় নামবেন না আসরে, এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং সেটাই স্বাভাবিক তারা তো পুণ্যলোভে ব্যবসায় নামেননি জরুরি পরিষেবা বেসরকারিকরণ করলে যা হবার তাই হয়েছে

যারা বিরোধী তারা বলছেন, সরকার তো বাস দখল করে নিয়ে চালাতে পারত পারত বৈকি, সরকারের সে ক্ষমতা আছে কিন্তু সে বাস চালাবে কে? বিরোধীরা সে বিষয়ে কিছু বলেনি, সরকারপক্ষের কেউ তেমন প্রশ্ন তোলেনি কেন? সরকারপক্ষের সমস্যা হচ্ছে এই যে, দল প্রশাসন বলতে একটিই মানুষ তার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি দল চালাচ্ছেন যাদের সাহায্যে তাদের অযোগ্যতা অপদার্থতা যেমন, তেমন তাদের দুর্নীতিতে ঝোঁক মন্ত্রী থেকে কর্মী সবাই যেন ব্লটিং পেপার হয়ে আছে দল চালানোর যোগ্য যথেষ্ট লোক নেই একই কথা খাটে প্রশাসনিক কর্তাদের ক্ষেত্রেও

কয়েকটি বিষয় তাঁকে এখনই বুঝতে হবে, মানতে হবে মানতে হবে যে, এই রাজ্যের লোভী, কর্তাভজা প্রশাসনিক কর্তারা মাথা ঘামিয়ে, নড়েচড়ে কিছু কাজের কাজ করে ফেলবে এমন হবার নয় তেমন যোগ্যতাই তাদের নেই তাই এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিজ দলে যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব থাকলে তো তাঁকে বাইরে তাকাতেই হবে সে পথটা ভেঙ্গে বা ব্রিজটা পুড়িয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তাহলে কোনও উপায় কী নেই?

নিশ্চয় আছে তিনি চাইলে এখনও নিশ্চয় কাছে অনেকে আসবে সব দুঃখ ক্ষোভ ভুলে, আসবে বামপক্ষ (বামফ্রন্টের বাইরেও কিছু বামমনস্ক দল আছে) কংগ্রেস (রাজ্য বিজেপি আসবে না, না আসাই মঙ্গল, কারণ তারা স্পষ্টতই ভারতীয় তথা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এবং এক অতি অযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর ভক্ত) অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের আসতেই হবে যদিও আত্মহত্যার অধিকার আছে সব বিরোধীদের, তবু বলব, দোকান যখন খুলেছেন তাঁরা নিশ্চয় চিরতরে দোকানের ঝাঁপ ফেলতে চান না আপনারা নিশ্চয় জানেন মানেন (যদি না জানেন বা না মানেন তো আপনাদের জন্য নিশ্চয় শোকবার্তা লিখে ফেলা যায়) যে আপনারা কোনওভাবেই আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন না এখনই তবে আপনাদের অন্তত এটুকু আশ্বাস পেতেই হবে যে ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে গায়ের জোরে কোনওপক্ষই অন্য পক্ষের জমি কেড়ে নিতে ব্যস্ত হবেন না আর ছাড়তে হবে দখলদারির নোংরা রাজনীতি

সব পক্ষকেই কিছু কিছু অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, নতুন করে শিখতে হবে কিছু যেমন, সব রাজনৈতিক কর্তাদের বুঝতে হবে যে সাধারণ মানুষ, নিজেরা কখনও দাম্ভিক বা মিথ্যা পথে হাঁটলেও, দম্ভ মিথ্যা পছন্দ করে না এই দ্ম্ভ মিথ্যা যে বামফ্রন্টের পতনের প্রধান কারণ তা অস্বীকার করার অর্থ সত্যকে অস্বীকার করা তৃণমূল কংগ্রেসি মতাদর্শ মেনে গড়ে ওঠা দলকে বুঝতে হবে যে, তোষণের রাজনীতি বা ধনী সম্প্রদায়ের দালালি আর চলবে না এতে কিছু মানুষ কিছুদিনের জন্য খুশি হলেও বহু মানুষ চিরদিন বা বহুদিনের জন্য বিমুখ থাকেন অন্তত এই রাজ্যে কৃষি অসংগঠিত কৃষক বা শ্রমজীবী মানুষকে ঠকানোর কোনও চেষ্টা কোনও শ্রেণির মানুষই মেনে নেবে না এখানে বহু সংগ্রামের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেছে মানবাধিকারের ধারণা, তা কেউ হারাতে চায় না ভুললে চলবে না যে বাঙালিরা স্বভাবত বামপন্থী 

আরও আছে এই রাজ্যের মানুষ ধমকও যেমন পছন্দ করেন না, তেমনই পছন্দ করেন না চমক এই দুটো দোষ থেকে শাসককে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতেই হবে কে করবে তা? কোনও একজন প্রশান্তকুমারের সাধ্য নেই সে কাজ করার এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে ফিরে যেতে হবে বাম শাসনকালে সে আমলের শেষের দিকে মমতার পাশে যাঁরা ছিলেন প্রধানত সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে, তাঁদের উপস্থিতিই দলের অন্য নেতা-কর্মীদের অনেক কিছু শেখাত তাঁরা কই? অনেকেই আজ তাঁরা পাশে নেই। কেন? কেউ পরপারে, কেউ অসম্মানিত কিন্তু সন্দেহ নেই যে তারা সকলেই বহুস্বর গণতন্ত্রের পূজারী তাই তাঁরা প্রায় কেউই শত প্রলোভনেও শিবির বদলাতে চাননি বদলে যারা এসেছেন তাদের লোকে সে সম্মান দেয় না, বিশ্বাস করে না শিক্ষক সম্প্রদায় সরকারি কর্মচারীদের যে সমর্থন পরিবর্তনের পালে হাওয়া জুগিয়েছিল, তাদের আজ দূরে ঠেলার চেষ্টায় সদাব্যস্ত পার্থবাবুরা তাঁরা ট্রোজান হর্স কিনা তা দলই বলতে পারবে, কিন্তু শিক্ষক সম্প্রদায় সরকারি কর্মচারীদের সংশয় বেড়েই চলেছে দলের মধ্যেও অসন্তোষ বেড়ে চলেছে             

এসব করলেই কি পরিবহন সমস্যা মিটবে? কমবে মানুষের দুঃখকষ্ট? থামবে সমালোচনা? নিশ্চয় না কিন্তু যা বাড়বে তা হল শাসক দলের বাইরে মমতার কাজগুলির প্রশংসার লোক তিনি যে অনেক ভালো কাজ করেছেন তা তো অস্বীকার করা যায় না তারপরও যেন সরকারটা অচল হয়ে রয়েছে কেন? মমতার সংশয়, দিশাহীনতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব কী এর জন্য দায়ী নয়?

সরকার পরিচালনায় যে ঘাটতি চোখে পড়ছে তার কিছুটা মেটাতে পারে এমন লোকজনকে মাঠে নামতে দেখলে দলীয় সমর্থকরাও উজ্জীবিত হবে, তাদের আর নিত্য বলে দিতে হবে নাঅনুপ্রেরণা কথা কেবল কৌশল বা ভঙ্গিতে সরকার চলে না, সরকারের দৃঢ়তা চাই আশা করতে পারি যে, বাড়তি সমর্থন নিয়ে মমতা হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন আরও জোর দিয়ে মোদীদের চোখে চোখ রেখে বলতে পারেন,নিজের চরকায় তেল দিন, আচমকা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের অপ্রস্তুত করার খেলা থামান।’ বিরুদ্ধ পক্ষকে বলতে পারবেন, আপনাদের পরামর্শ মেনে বাসের দখল নেব, আপনারা বাস চালাতে ড্রাইভার ইত্যাদি দিন বাস মালিকদের তিনি বলতে পারবেন, আপনাদের পরামর্শ মেনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য কমিটি গড়ে দিয়েছি আপনাদের আর কোনও দাবি আর কোনও আবদার এখন মানব না, মানতে পারব না বাস নামান নয়তো তা কেড়ে নেব রাজনীতির জন্য বন্দীদের জেলখানায় না পুরে এইসব লোভাতুর স্বার্থমগ্ন মালিকদের যদি তিনি ধরে ধরে জেলে পোরেন মানুষ খুশিই হবে

মানুষ চাইছে দেশটা চলুক, চাইছে করোনা আতঙ্ক থেকে মানুষ বাঁচুক আরও আছেআমফান, ডেঙ্গি ইত্যাদি কোনও সমস্যাই তুচ্ছ নয়, সরকারকে সবদিকই দেখতে হবে এখন সরকারের প্রধান যদি দিশা হারান বা সংশয়ে ভোগেন তবে তো দানবেরই লাভ

No comments:

Post a Comment