Pages

Thursday, 30 January 2020

স্বাস্থ্যের অসুখ

২০ শতাংশ চিকিৎসককে দূষিত করো...
উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায়
 
'In the U.S., healthcare is now strictly a business term. Healthcare organizes doctors and patients into a system where that relationship can be financially exploited and as much money extracted as often as possible by hospitals, clinics, health insurers, the pharmaceutical industry, and medical device manufacturers.' (In the U.S. “Healthcare” Is Now Strictly a Business Term
Mar 13, 2018

উপনিবেশিক বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ইতিপূর্বে বহু গবেষণা হলেও সেগুলিতে রোগী ও চিকিৎসকের মানসিক সম্পর্কগুলির টানাপোড়েনের উপর আলোকপাত করা হয়নি বা হয় না। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার সামাজিক ইতিহাস রচনায় এই দিকটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। তাই সমাজের দর্পণ হিসেবে পরিচিতির সাহিত্য থেকে তথ্য উপাদান সংগ্রহ করে সমগ্র ব্যাপারটির উপর বিশেষ আলোকপাত করা দরকার।

প্রথমে দরকার অসুস্থ মানুষের চোখ দিয়ে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাটিকে দেখা। সেই দেখায় এসে যাবে অসুখের ভয়াবহতা, অসুস্থ মানুষটিকে ঘিরে থাকা  সমস্ত মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন। আবার একই ভাবে বিষয়টি চিকিৎসকের চোখ দিয়েও দেখা দরকার। এই ঘরানাটি যে একেবারেই ছিল না তা নয়। ইনভেস্টিগেশন ও এভিডেন্স বেইসড মেডিসিনে উত্তরোত্তর উক্ত ব্যাপারটি মার খেয়েছে। প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। বেসরকারি কর্পোরেট চিকিৎসা ব্যবস্থার সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে সরকারি কাঠামোতেও। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল মন্ত্র ছিল আপনি অসুস্থ হবেন না। বেসরকারি ব্যবস্থায় বলা হয়ে থাকে: দয়া করে অসুস্থ হোন, আসুন এক ছাদের তলায় সব কিছুই পাবেন - একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ। তাই রোগীর প্রয়োজনের আগেও খরচ ও মুনাফা তুলতে হবে বলে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট লিখতেই হবে। অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করতে হবে, যাকে বলতে পারি অতি চিকিৎসা। চিকিৎসক যাতে সে সব লেখেন তার জন্য কমিশন নামক লোভের হাতছানি ছড়াতে হবে। চ্যালেঞ্জ করলেও ব্যাপারটাতে বেনিফিট অব ডাউট রোগী পাবেন না। কারণ, কনসিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট'এর জন্য ক্লিনিক্যাল আই নামক 'নিশ্চিতি নেই' দর্শনটিকে কেন ঘাঁটব? এই যুক্তিতে সর্বদাই রোগী পিছনে আগে চিকিৎসক বলব না, বলব আগে হল ব্যবসা । কাজে কাজেই বিজ্ঞান ও নৈতিকতা এবং বিজ্ঞান বনাম নৈতিকতা - এই আলোচনাটি জরুরি। Health is wealth কথাটির মানেটা হয়ে গেল How 'health' is making wealth। Pharmaceutical Marketing'এ Paritos' Law বলে এক বিধান আছে। তা বলে, Pollute 20% doctors, 80% will follow।

যে দেশে বেসরকারি লোকজন (৮৫ শতাংশ) নিয়ে গঠিত একটি সংস্থা ওষুধের দাম নির্ধারণ করে (সংস্থাটির নাম: National Pharmaceutical Pricing Authority বা NPPA) সেই দেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার কথা আর কি বলব!

Sunday, 26 January 2020

সীমানা ছাড়িয়ে

দুই বাংলার মিলনমেলা
সঞ্জয় মজুমদার
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ইন্দুমতি সভাগৃহে দুই বাংলার মিলনমেলা, কবিতার ছন্দে

জড়োয়ার ঝুমকো থেকে একটা নয়, অনেকগুলো মতি খসে পড়ল ৯ই মাঘ ১৪২৬-এর  সন্ধ্যায় যাদবপুরে, টেগোর সোসাইটি কলকাতা ও বাহার মিউজিকের যৌথ প্রযোজনায়, কবিতার রাখিবন্ধনে, দুই বাংলার যুগলবন্দীতে। অনিন্দ্যদার ঐকান্তিক ইচ্ছায়, 'একক মাত্রা'র পক্ষ থেকে আমি আর অরুণাভ কুড়িয়েও নিয়েছি সেইসব মণিমুক্ত, যতটা পেরেছি। শ্রদ্ধেয় পঙ্কজ সাহা এবং আমাদের কাছের মানুষ, প্রাণের মানুষ বিধান চন্দ্র পালের স্মরণীয় উপস্থাপনায় ২৪ জানুয়ারি অমাবস্যার সন্ধ্যায় ইন্দুমতি সভাগৃহে যেন মতির ছড়াছড়ি।

সাহিত্যচিন্তায়, মননে, লেখনিতে, পরিবেশনায় কবি ও আবৃত্তিকার, সমাজসেবী এবং পরিবেশকর্মী বিধান চন্দ্র পালের অনস্বীকার্য প্রতিভার সার্থক স্ফুরণ হল এই শীতের সাঁঝবেলায়। কবিতায় দুই বাংলার মেলবন্ধনকে কেন্দ্র করে, মঞ্চে উপবিষ্ট দুই বাংলার বিদগ্ধজনেদের বিশ্লেষণাত্মক বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের জন্য গাঁথা ছিল বিধানবাবুর মন ছুঁয়ে যাওয়া একগুচ্ছ কবিতার মালা, যা পূর্ণতা পেল, আরও উপভোগ্য হয়ে উঠল সভায় উপস্থিত এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় আবৃত্তিকারের  অনবদ্য বাচনভঙ্গিতে। কবি তাঁর মনের এবং ভাবের গর্ভজাত আবেগের যথাযথ পরিস্ফুটনের শব্দ খুঁজে চয়ন করেন, আর আবৃত্তিকার, বাচিকশিল্পী শ্রুতিমাধ্যমে ছন্দবদ্ধ শব্দমালাকে সঠিক অনুপাতের স্বরক্ষেপে শ্রোতার মননে কবিতার অন্তর্নিহিত বোধের জন্ম দেন। বিধান চন্দ্র পালের স্বরচিত 'নারীকাব্য' এবং 'আবার জেগে উঠবে মানুষ' শিরোনামের দুইটি কমপ্যাক্ট ডিস্কে বন্দী চল্লিশটি কবিতার শ্রুতিসঙ্কলনে ঠিক এই চিন্তারই অনুশীলন করা হয়েছে।

দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব পঙ্কজ সাহা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার অবকাশ নেই। তবে, তাঁর কবিসত্তার পুনঃপ্রকাশ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম এই অনুষ্ঠানে, সৌম্যেন অধিকারী ও সংযুক্তা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান ও পঙ্কজ সাহার কবিতা নিয়ে 'মানুষকে মানুষের কথা বলতে দাও' শীর্ষক কমপ্যাক্ট ডিস্কের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে। ১৯৭৫-এর ৯ অগাস্ট কলকাতা দূরদর্শনের জন্মলগ্ন থেকে এই মানুষটি আপামর বাঙালির অত্যন্ত পরিচিত মুখ। দুই বাংলার সংস্কৃতিক মেলবন্ধনের নিরলস প্রচেষ্টায় পঙ্কজ সাহার অবদান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই মঞ্চেও তার ব্যতিক্রম হল না। কিছু অনিবার্য কারণবশত, বিলম্বিত লয়ে চলতে থাকলেও অনুষ্ঠান সঞ্চালনার সহজাত এবং স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা ছিল অটুট, প্রয়োজনীয় গাম্ভীর্য আর গভীরতায় পূর্ণ।

অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণটি ছিল পঙ্কজ সাহার সুদীর্ঘ বর্ণময় কর্মজীবনের অমূল্য রতনে পূর্ণ, যার উজ্জ্বলতমটি অবশ্যই বাংলা ভাষাকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের অন্তহীন আবেগ আর আপসহীন সংগ্রাম, ২১ ফেব্রুয়ারি যার সোনার ফসল। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য ওপার বাংলার মানুষের অবিস্মরণীয় ভাষা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা, গর্বের ঘটনা, আর সেই গর্বের প্রতিফলিত আলোকে আমরা এপার বাংলার মানুষেরাও নিঃসংকোচে আলোকিত। জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি, কূটনীতি, দেশকালের সীমানা সমস্ত কিছু ছাপিয়ে একটা ভাষা কীভাবে সুদৃঢ় একতার বন্ধন হতে পারে, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

স্বাগত ভাষণের আর একটি পর্যায়ে পঙ্কজ সাহা তাঁর কর্মজীবনের স্মৃতিচারণায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির আঙিনায় বহু গুণী ও বিদগ্ধ মানুষের সান্নিধ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে যেমন আছেন শম্ভু মিত্র, বিষ্ণু দে তেমনি, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো উজ্জল জ্যোতিষ্কদের আনাগোনা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিআর-এর অধিকর্তা গৌতম দে মহাশয়। দুই বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনধারার মেলবন্ধন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক তাঁর বক্তব্যে উঠে এল। পশ্চিমবাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রায় সব ধরনের ঘটনাবলীর ধারাবাহিক তথ্য পূর্ববঙ্গের নাগরিকদের কাছে নিয়মিত পৌঁছলেও বিপরীত স্রোত কিন্তু খুবই অনিয়মিত। ওপার বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির অগ্রগতি এবং ধারাবাহিকতার  বেশিরভাগ তথ্য পশ্চিমবাংলার মানুষজনের কাছে পৌঁছয় না। এটা সত্যিই আঘাত পাওয়ার মতো বিষয়। বাংলাদেশের সংবেদনশীল মানুষজনের কাছে এ এক যুক্তিযুক্ত অভিমান। মূল সমস্যার জায়গাগুলো অবশ্যই প্রশাসনিক গেরোয় আটকে আছে। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখানে তুলে ধরা সম্ভব নয়, তবে নিশ্চিতভাবেই দুই দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের নিয়মিত আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পরিপন্থী, সেটা স্পষ্ট। কারণ প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে যোগাযোগ কোনও সমস্যাই নয়।

কথা প্রসঙ্গে তিনি দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত চলচ্চিত্র বা কোন সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের নিয়ম-নীতির অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন। এটা যত দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা, ততই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। তবে, দুই দেশের প্রশাসনিক স্তরের উপরেই সব দায় গৌতম দে চাপিয়েছেন এমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। এপার বাংলার মানুষের কষ্টদায়ক উদাসীনতাও এর কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রশাসনিক সমাধান এবং প্রযুক্তি তখনই কাজে আসবে যখন মানুষ থাকে ভেতর থেকে চাইবে। মঞ্চে উপবিষ্ট জামাল হোসেন এবং নান্টু রায় মহাশয়ও দুই বাংলার নিয়মিত সাংস্কৃতিক যোগাযোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শ্রদ্ধেয় জামাল ভাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

অশীতিপর গোলাম মুরশিদের জীবন ও কাজকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করার অবকাশ এখানে নেই। ১৯৮২তে বাংলা আকাদেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপককই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। পুরস্কারের সঙ্কীর্ণতায় গোলাম মুরশিদকে ধরা যায় না। সুদীর্ঘ সময় ধরে শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বহুধা বিস্তৃত কাজকর্মের মাধ্যমে তিনি নিজেই আজ একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি লেখার মধ্যে অবশ্যই বলতে হবে- 'কালাপানির হাতছানি: বিলেতে বাঙালির ইতিহাস', 'মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস', 'বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান', 'কালান্তরে বাংলা গদ্য', 'The Reluctant Debutante', 'Lured by Hope', 'The Heart of the Rebel Poet', ইত্যাদির কথা। বয়স যে একটা সংখ্যা মাত্র, তা তাঁকে সামনাসামনি না দেখলে, তাঁর কথা না শুনলে, চিন্তাভাবনায় জারিত না হলে বিশ্বাস করা কঠিন।  সংক্ষিপ্ত ভাষণে বিধান চন্দ্র পালের এই শুভ উদ্যোগের যথাযথ প্রসংশা করেন এবং ভবিষ্যতেও এই ভাবনাচিন্তা এবং কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা দুই বাংলাতেই জারি থাকবে সেই আশাও রাখেন।

গদ্যপদ্য, আবৃত্তি, বাচিক শিল্প, দুই বাংলার মেলবন্ধন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে আমরা যখন ভাবাবেগে আবিষ্ট ঠিক তখনই প্রখ্যাত লেখক, সাহিত্য সমালোচক, এবং অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তীর ভাষণের সারাংশ যেন ভরা আদালতে, বাস্তববোধের হাতুড়ি ঠুকে, অর্ডার অর্ডার বলে উঠল। ১৯৪০ থেকে ২০২০ অবধি, ইতিহাসের স্রোত বেয়ে, দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মেরুকরণের আতস কাঁচের নীচে দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের ভাবনাচিন্তা ও প্রতিক্রিয়ার যথার্থ কারণ অনুসন্ধান করলেন বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিতে। শিল্পসৃষ্টি, তা সে যে মাধ্যমেই হোক না কেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিতের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে, প্রভাবিত হয়- এই সত্যটুকু স্বল্প সময়ে, সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিলেন। সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।

সভার শেষ পর্বে আমরা পেলাম অধ্যাপক ও গবেষক পিনাকেশ সরকারকে। পিনাকেশবাবুর বলার ধরন, গলার স্বর অতি সুন্দর। কবিতা তাঁর গবেষণার অন্যতম স্থান। কবি ও কবিতার চলন-বলনকে বিভিন্ন সময়ের আঙ্গিকে ধরার চেষ্টা করলেন। কবিতা বলার ধরনে অকারণ নাটকীয়তার, অকারণ আরোপিত আবেগের, দৃষ্টি-আকর্ষণীয় ভঙ্গিমার তিনি বিরোধী। কবিতার মূল সুর থেকে শ্রোতাদের তা বিভ্রান্ত করে। আবৃত্তিকারের সহজ-সরল ভঙ্গিমা, নিয়ন্ত্রিত আবেগের এবং স্বরক্ষেপের পক্ষেই সওয়াল করলেন। আবৃত্তিকে শিল্প হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পিনাকেশ সরকারের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশ উঠতি বাচিক শিল্পীদের যথেষ্ট ভাবাবে এবং অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেই বিশ্বাস। শুধু বক্তব্যেই তিনি থেমে থাকেননি। তাঁর গম্ভীর ও শ্রুতিমধুর কন্ঠে উচ্চারিত পঙ্কজ সাহার একটি কবিতা দিয়েই অনুষ্ঠানের মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়।

অনুষ্ঠান পরিচালনায় পঙ্কজ সাহার সাথে ওপার বাংলার ডালিয়া দাসের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাঞ্জল সহযোগিতা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। ডালিয়া দাস নিজেও একজন দক্ষ বাচিক শিল্পী। আবৃত্তিকারদের মধ্যে আরও যাঁরা বিধান চন্দ্র পালের কবিতা পাঠের মাধ্যমে শ্রোতাদের আনন্দ দিলেন- সর্বাণী রায় চৌধুরী, সুজয় রায় চৌধুরী, শ্রীজা চন্দ, দীপক সেনগুপ্ত, তাপস চৌধুরী, শিখা বিশ্বাস, রত্না দাশগুপ্ত, জয়ন্ত ঘোষ, অভিরূপা ভাদুড়ি, রৌহিন বন্দোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও 'একা নই' নামে শনিবারের বৈঠকের একটি বিশেষ প্রকাশনাও আত্মপ্রকাশ করল আজকের অনুষ্ঠানে যার সম্পাদক বিধান চন্দ্র পাল, বিশেষ উপদেষ্টা পঙ্কজ সাহা এবং প্রকাশক ইনস্টিটিউট অফ অডিও ভিসুয়াল।

অনুষ্ঠানে বা সভায় অংশগ্রহণ শুধুমাত্র কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, তার নেপথ্যে দীর্ঘসময়ের লালিত-পালিত চিন্তাভাবনার প্রকাশ থাকে। দুই বাংলার বিশেষ কিছু মানুষের উদ্যোগে, অক্লান্ত পরিশ্রমে, ২৪শে জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবারের সন্ধ্যায় শুধুই যে দুই বাংলার কবিতার রাখিবন্ধন হল তাই নয়, বিগত ষোল সতেরো বছর ধরে 'একক মাত্রা'র আড্ডায় সংকীর্ণ রাজনীতির সীমানাকে নস্যাৎ করে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দুই বাংলার চিন্তাভাবনার জগৎকে কাছাকাছি রাখার, পাশাপাশি রাখার, বেঁধে-বেঁধে রাখার ভবিষ্যতের অঙ্গীকার আরও জোরদার হল। ২০১৯-এর 'একক মাত্রা'র জুলাই মাসের 'ফিরে দেখা' সংখ্যায় বিধান চন্দ্র পাল মহাশয়ের প্রচ্ছদ নিবন্ধ এই 'নিরবচ্ছিন্ন পথচলা'রই স্মারক। একক মাত্রার 'বাঙালির আত্মপরিচয়', 'গ্রামবাংলা', 'উত্তরবঙ্গের কথা',  'আঞ্চলিকতার বহুরূপ', 'অন্য রবীন্দ্রনাথ', 'সীমান্ত দেশ' সংখ্যাগুলিতে দুই বাংলাকে অভিন্নহৃদয় হিসেবে তুলে ধরার সৎ প্রচেষ্টা অবশ্যই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

Wednesday, 22 January 2020

জয় হিন্দ

ইত্তেহাদ
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
আজ এই সময়ে এই মুহুর্তে এসে সুভাষ বসু মানে ভারতবর্ষ। ধর্ম-জাতি-লিঙ্গ নিরপেক্ষ এক মুক্ত আধুনিক স্বপ্নময় ভারতবর্ষ। আজাদ হিন্দ বাহিনীর বীজ থেকে উত্থিত 'বিবিধের মাঝে মিলন মহান' ভারতবর্ষ। আজাদী। যে বাহিনীর অঙ্কুরে বাস করেন হবিবুর রহমান, প্রেম সেহগাল, আবিদ হুসেন, লক্ষ্মী স্বামীনাথন, গুরুবক্স ধীলোঁ, মোহন সিং, শাহনাজ খান। যে বাহিনীর শ্লোগান - 'ইত্তেহাদ ইতেমাদ কুরবাণী'। ১৯৪৩ সালে সুভাষ বসু প্রতিষ্ঠিত যে স্বাধীন ভারতের অস্থায়ী সরকার 'আর্জি হুকুমত-ই-আজাদ হিন্দ'। যাদের রণহুঙ্কার ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

আজাদ হিন্দ বাহিনী জিততে পারেনি। মইরাং'এ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেও পিছিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সারা ভারতকে এক অকল্পনীয় বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানে সামিল করে দিতে পেরেছিল। লাহোর থেকে অসম, কন্যাকুমারিকা থেকে পঞ্জাব- সারা দেশ এক হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। আজাদী। ব্রিটিশদের আর কোনও উপায় ছিল না, বিদায় নেওয়া ছাড়া। আর যাওয়ার আগে ধর্মীয় উন্মত্ততাকে চাগিয়ে দিয়ে, ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরিয়ে, দেশ ভাগ করে ব্রিটিশ আসলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর 'ইত্তেহাদ' দেখানোর স্পর্ধার প্রতিশোধ নিয়েছিল। সেই রক্তাক্ত অধ্যায় আজ আবারও ফিরিয়ে আনতে চাইছে উন্মত্ত ধর্মান্ধর দল।

গান্ধী সুভাষ সম্পর্কে বলেছিলেন, patriot of all patriots... সেই অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রমিক আমাদের জন্য রেখে গেছেন 'ইত্তেহাদ' (ঐক্য)'এর মন্ত্র। আজাদ হিন্দ বাহিনী সেই ইত্তেহাদ, আমার প্রিয় দেশের বীজ। সাধ্য কী ধর্মান্ধদের! দেশ মাঙ্গে অন্ধেরা সে আজাদী।

#জয় হিন্দ। জয় ভারত।
অনিন্দ্য
২৩ জানুয়ারি ২০২০

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একুশ শতকের রাজনৈতিক অর্থনীতি

তথ্যের ঈশ্বর
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
লেখকের সদ্য প্রকাশিত 
'আশায় বাঁচে চাষা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একুশ শতকের রাজনৈতিক অর্থনীতি' গ্রন্থ থেকে অংশবিশেষ
যখন বলছি তথ্যই আজকের মুখ্য পণ্য, তথ্যের আধারেই নির্মিত হচ্ছে আগামী চলার পথ, তখন স্বভাবতই আমরা নিজেদের যাবতীয় সমস্ত তথ্য নিয়ে জড়িয়ে আছি এক সুবিস্তৃত তথ্য-মহাসাগরে। সেখানে কতিপয় ঈশ্বর আছেন, যাদের হাতে সমস্ত তথ্য তাদের সম্ভাব্য যদৃচ্ছ আকার-প্রকার নিয়ে সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ে পরিব্যাপ্ত। আপনি-আমি কেজো মানুষ, কিছু তথ্যের সন্ধানে বড়জোর গুগলের বলয় অবধি আমাদের দৌড়কিন্তু আমাদের প্রতি মুহূর্তের তথ্য, যা কিছু খুঁটিনাটি, প্রতি ক্ষণে ধরা পড়ছে যত বেশি আমরা তথ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি বা সময় কাটাচ্ছি সাইবার ভুবনে। এইসব তথ্য ঘিরে নির্মিত হচ্ছে আমার প্রোটো-টাইপ, আমার প্রতিচ্ছবি বা অন্তঃমূল, যেখান থেকে আমাকে মাপা হতে থাকবে একটি লক্ষ্যবস্তু হিসেবে। সেই লক্ষ্যে কখনও আমি পুরুষ্ট ক্রেতা বা সম্ভাব্য গুণের ধারক, যে গুণের আবার বাজার দর থাকতে পারে, তখন কী সৌভাগ্য, আমিও বিক্রেতা; অথবা সেই আমিই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শিকার যাকে তার পছন্দের উপাদানগুলি দিয়েই উদ্দিষ্ট রাজনৈতিক অভিধায় সামিল করে নেওয়া যায়; এমনও হতে পারে, আমি পরিস্ফুট রাষ্ট্র-অনুরাগী বা উদগ্র রাষ্ট্র-বিরোধী। যাই হই না কেন, আমি নজরবন্দী।
        
তথ্যের ঈশ্বর অবশ্য জানান দেবেন যে আপনার কথা চালাচালি, আপনার কার্যক্রম এনক্রিপটেড, কেউ জানে না আপনি কী করছেন, কাকে কী বলছেন। এমনকি তিনিও নন কিন্তু তা আপাতভাবে ক্ষণিকের, যতক্ষণ ঈশ্বর ইচ্ছা করেছেন যে তিনি আপনার দিকে নজর ফেরাবেন না। কিন্তু তথ্যের ক্রম-বিশ্লেষণ যদি দাবি করে যে আপনি নজরে পড়ার যোগ্য তাহলে অ্যালগরিদমের অভিমুখ এবার আপনার উপরেই স্থিত। এইভাবে কোটি কোটি মানুষ নিমেষে নানান মাত্রায় ও অভিঘাতে ধরা পড়ছেন বিবিধ উদ্দেশ্যের পরিধিতে। তাই তথ্য, আরও তথ্য, মহা তথ্য হল এ যুগের মুখ্য উপকরণ যাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডিপ লার্নিং নিয়ে চলেছে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উদ্ভাসনে। সেই হল আজকের অর্থনীতির অভিকেন্দ্র।

অতীত থেকে এ এক নির্মম ছেদ। বস্তুগত পণ্য উৎপাদনেই অর্থনীতির এ তাবৎ ব্যস্ততা ছিল। খাদ্যসামগ্রী, কৃষিজ পণ্য, নানান ব্যবহারযোগ্য শিল্প পণ্য ও তাকে ঘিরে আনুষঙ্গিক পরিষেবার মধ্যেই তা চক্রাকারে ঘুরত। যদিও বা পরিষেবা ক্ষেত্র অনেকটা বড় ব্যাপ্তিতে ধরা দিল কিন্তু তা সততই ছিল বস্তুগত উৎপাদনের পরিপূরক হিসেবে। যেমন, ব্যাঙ্কিং বা বীমা শিল্প অথবা শেয়ার বাজার কিংবা পরিবহনআর এই পরিষেবা ক্ষেত্রকে আরও যথাযথ, দ্রুত ও নিখুঁত করতেই এসেছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। সেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপরে ভর করেই আজকের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেখানে মূল কেন্দ্রাভিগ বিন্দুটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে তথ্য ও তার আদিগন্ত ধারণ ও বিশ্লেষণ। অতএব, এই তথ্যকে ঘিরেই আজকের উৎপাদন ও বাণিজ্যের নবতর আঙ্গিক পরিব্যাপ্ত তথ্যের সাহায্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার চিন্তন, কার্যসমূহ ও নির্দেশাবলী নির্মাণ করে নিচ্ছে। ক্লাউড কম্পিউটিং হোক কি ইন্টারনেট অফ থিংস, রোবট বা ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট- এরা প্রত্যেকেই তথ্যের মহাআকরে নির্মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিবিধ প্রয়োগ। অযূত তথ্য ও তার নিত্য মন্থন- তার ওপরেই দাঁড়িয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া অর্থনীতির অবয়বটিই আজ বন্ধ্যা। অতএব, গোটা অর্থনৈতিক বিশ্বের ঈশ্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে কতিপয় তথ্য কারবারী ভার্চুয়াল কর্পোরেট। তাদের নির্মিত ডিপ লার্নিং’এর প্রয়োগ ছাড়া আজ বাণিজ্য দুনিয়ায় এক মুহূর্তও টিকে থাকা সম্ভব নয়। এরা হল সেই সুবিখ্যাত কোম্পানিগুলিই– অ্যাপেল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক, আইবিএম, ইন্টেল, সেলসফোর্স, অঙ্কি প্রভৃতি। এদের বাদ দিয়ে আলাদা করে অর্থনীতির অন্য কোনও গতিপথ আপাতত নেই।  

ইতিমধ্যেই গুগল হয়ে উঠেছে এমন এক আধা-বিচারসভার মতো যারা কোনটা ব্যক্তিগত তথ্য আর কোনটা নয় তার বিচারের যেন স্বতঃঅধিকারীএরা স্বীকারও করেছে, এদের কাছে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণে ৩০ লক্ষেরও বেশি লিঙ্ক মুছে দেওয়ার অনুরোধ এলেও তার মাত্র ৪৫ শতাংশ তারা কার্যকরী করেছে। ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের সাম্প্রতিক রায়ও কিছুটা তাদের পক্ষে গেছে। গুগল ও অন্যান্য ইন্টারনেট সার্চ থেকে স্পর্শকাতর সমস্ত ব্যক্তিগত লিঙ্কগুলি বিশ্বব্যাপী মুছে দেওয়ার জন্য ফ্রান্স সহ কিছু দেশ যে দাবি করেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপিয়ান কোর্ট জানিয়েছে, ইউরোপের সীমানাতেই এই বিধি কার্যকর হবে কিন্তু বিশ্বের অন্যত্র নয়। হয়তো সারা বিশ্ব জুড়ে এ নিয়ে ঝড় উঠতে পারে ও দেখার আছে অন্যান্য দেশগুলি এ বিষয়ে কী অবস্থান নেয়। 

বোঝাই যাচ্ছে, ব্যক্তিগত তথ্যের ওপরে এইসব ভার্চুয়াল কর্পোরেটদের যে দখলদারি তা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিসরে এক অচিন্তনীয় পরিবর্তনের দিশারী। এ যেন মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে দুই রাষ্ট্রের অবর্ণনীয় সংঘাত। একদিকে দেশ, সরকার, সেনা, আইন নিয়ে চিরায়ত রাষ্ট্র, অন্যদিকে তথ্য, নজরদারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্তরালে অগম্য কারিগরি কৌশল নিয়ে ভার্চুয়াল কর্পোরেটদের নবতর রাষ্ট্র তাই, বিশ্ব জুড়ে আর্থিক বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে যে কলরব উঠেছে তার কারণগুলিও বেশ স্পষ্ট। কারণ, নব নির্মিত এই নতুন রাষ্ট্রের হাতেই এখন মুনাফা ও সম্পদের সিংহভাগ। যদি এমনটা হয় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌলতে কিছু অগ্রণী শিল্প গোটা অর্থনীতির শরীরটাকেই নিজেদের সপক্ষে প্রায় আমূল বদলে দিতে সক্ষম তাহলে চিরায়ত দেশ, রাষ্ট্র, সরকারেরও তেমন বিশেষ কিছু করার থাকে না, সম্ভাব্য সংকট এড়াতে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার করা ছাড়া। এমত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’এর কথা আজকাল বেশ আলোচিত ও প্রয়োগ-ভাবনাতেও কোথাও কোথাও দৃশ্যমান।

Tuesday, 14 January 2020

Resignation Letter of Prof Amit Bhaduri


Professor Emeritus Resigns from JNU
 
From:
Amit Bhaduri, Professor Emeritus, Jawaharlal Nehru University.

To:
The Vice Chancellor, Jawaharlal Nehru University, New Delhi-110067.

Dear Mr. Vice Chancellor,

I have learnt from friends and witnessed through public channels with  alarm, and now with increasing disgust how your handling of situations as the administrative and academic head of Jawaharlal Nehru University has led to its steady deterioration paving the way to its intellectual disintegration.

I joined the university as a young professor in 1973; with some years’ gap in between, I left it in 2001. During my years at JNU, it passed through various phases of justified or unjustified student unrest; competent or incompetent handling of situations by the administration; and even temporary shut-down of teaching.  What is different now is not only incompetence of handling of situations by the authorities, but a deliberate attempt to throttle the free, and lively atmosphere of debate and discussion for which JNU was known all over the country. This was a matter of pride for its faculty as well as its students that they were exposed to a whole range of ideas which was something that did not happen anywhere else in India, even I would say from experience, in very few academic institutions in the world. It seems to me that the current attempt by the administration at destroying that atmosphere of freedom of expression is in line with a larger and more sinister plan of which you as the head of JNU also appear to be a pivotal part. You seem determined on imprinting your administration’s narrow minded world view, and shut all other windows of ideas to the students.
It pains me, but I feel it would be immoral on my part without registering my protest to remain a silent observer in this larger, sinister scheme of throttling dissent which is unfolding now at the University. I am protesting in the only way which I find is open to me. I am giving up my emeritus professorship at JNU. Along with some other emeritus professors, I have already been locked out several months ago from the room allotted to me in JNU (with books and some personal effects still in it). In practical terms therefore, it means little. And yet, I do hope that my returning the honour which was bestowed on me by the University sends you the right message of my deep concern at your leadership of the university which is leading that premier institution of learning to its systematic disintegration. For this reason alone, I feel compelled to place this letter also in public domain.
 
Amit Bhaduri 

Saturday, 11 January 2020

নবজন্ম

নয়া ভারত
ভাস্কর গুপ্ত

সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী দেশব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে যে কয়েকটা বৈশিষ্ট্য নজরে এল:

১) এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলের ধার না ধেরে ছাত্ররা আন্দোলনের রাশ ধরেছে। জয়প্রকাশের 'নবনির্মাণ আন্দোলন'এও এমনটা ঘটেনি। দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত এই ভৌগোলিক বিস্তৃতিও সেই আন্দোলনে ছিল না। আজ আইআইটি, আইআইএম, আইআইএসসি, টিআইএফআর - কোনও কুলীন প্রতিষ্ঠানও এর বাইরে নেই। ১৯০৫ সালে কার্লাইল সার্কুলার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে রূপান্তর মনে পড়ে যাচ্ছে।

২) মুসলিম জনগণ এতদিন নিজেদের এ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে মেনে নিতে অভ্যস্ত ছিলেন। এই প্রথম তাঁরা তাঁদের নাগরিক অধিকারের কথা জোর গলায় বলছেন। বলছেন, হিন্দুস্তান হামারা হ্যায়। তোমরা যারা মানুষে মানুষে বিভেদ লাগিয়ে দেশকে ভাঙতে চাও তারা ভারত থেকে দূর হঠো। আমরা যারা দেশকে ভালোবেসে এ দেশে আছি তারা কোথাও যাব না।

৩) নতুন করে ক্ষমতায়ন হয়েছে মুসলিম মহিলাদেরও। যে মহিলারা কখনও রান্নাঘর থেকে বেরোননি তাঁরাও আজ পথে। পুরুষতন্ত্র এ ভাষা বোঝে না। তিন তালাক নিষিদ্ধ করে মসিহা সাজার বদলে এ চোখে চোখ রেখে বলে আমার হক আমিই বুঝে নেব।

৪) ভারতীয়ত্ব, সংবিধান এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আমরা এতদিন ভুলে ছিলাম। এই আন্দোলন নতুন করে বিষয়গুলোকে তুলে ধরছে, আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। তাই আজ পার্ক সার্কাসে জাতীয় পতাকা উড়ছে, শাহিনবাগ বলেছে জয় হিন্দ, উকিলরা জমায়েত হয়ে সংবিধান পড়ছেন, যাদবপুরের ছাত্র ইউনিয়নের ঘর থেকে শুনছি দেশাত্মবোধক রবীন্দ্রসঙ্গীত।

৫) এই আন্দোলন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এক অচেনা ঐক্যের জন্ম দিয়েছে। শুরু করেছিলাম ছাত্র-যুব'দের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের কথা দিয়ে। সেটাও কিন্তু মূলত বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এই ঐক্য অর্জন করতে পারেনি। হিন্দু মুসলিম, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র গৃহবধূ সবাই আজ এক লড়াইয়ের সাথী।

৬) সবচেয়ে বড় কথা যে এ লড়াইয়ের জন্ম কোনও রাজনৈতিক দল দেয়নি এবং কেউ একে কুক্ষিগত‌ও করতে পারেনি। এ লড়াই দেশের মাটিতে তৈরি দেশের মানুষের লড়াই। প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় নি।
 

Wednesday, 1 January 2020

আবাহন

নতুন দশকের কথা
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
২০২০ শুধু নতুন বছর নয় নতুন এক দশকের শুরু। এক সম্ভাব্য যুগান্তকারী দশক। ঠিক একশো বছর আগে এই দশকেরই শেষ পাদে শুরু হয়েছিল বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর মন্দা। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণনাশের মধ্য দিয়ে আবাহন করেছিল তথাকথিত উন্নয়ন অর্থনীতির। আমরা জানি, রেনেসাঁ পরবর্তী ইউরোপের একদিকে ছিল জ্ঞানবীক্ষার উন্মোচন অন্যদিকে অর্থ, সোনা, সম্পদের লোভে তাদের বিশ্ব জুড়ে দখলদারি, লুঠতরাজ ও উপনিবেশ স্থাপনের নির্দয় প্রয়াস। সেই সময়ের কালগর্ভ থেকেই আজকের বাস্তবতা।

২০২০ তাহলে কী বার্তা নিয়ে আসছে? বাস্তবতা হল, প্রযুক্তির নির্মোহ আধিপত্যে বিশ্ব আজ এক নৈর্ব্যক্তিক বলয়ে বাঁধা পড়েছে। এর থেকে আপাতত নিস্তার নেই। দেশ কালের সীমানা অবান্তর হয়ে পড়ছে। ভার্চুয়াল বাস্তবতাই আজ অর্থনীতির নির্ধারক। রাজনীতির আঙ্গিনায় গত দশ বছরে বিশ্ব যদি দেখে থাকে প্রকৃতি বিদ্বেষী, বর্ণ বিদ্বেষী, অভিবাসন, শরণার্থী বিরোধী, ধর্মীয় বিভাজনের কাণ্ডারীদের ক্ষমতায় আরোহণ, তাহলে সদ্য পা দেওয়া নতুন দশক দেখবে এদের অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার করুণ পরিহাস। আসলে পুরনো রাজনীতির বাগাড়ম্বতা ফুরিয়ে আসার সময় হয়েছিল। পুরনো বামপন্থী, উদারবাদী, গণতন্ত্রী, মধ্যপন্থীদের ফুরিয়ে যাওয়াকে সাময়িক ভাবে স্থান পূরণ করেছে তথাকথিত দক্ষিণপন্থীরা। এ যেন প্রদীপের অগ্নিশিখার নির্বাপণের আগে ক্ষণিকের জ্বলে ওঠা।

সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এখন পথে। দিল্লির শাহিনবাগে রাত জাগছে মানুষ, সান্তিয়াগো থেকে হংকং, প্যারিস থেকে লেবানন সর্বত্রই এখন রাস্তার রাজনীতি। যা জানান দিচ্ছে রাজনীতিকদের অপ্রাসঙ্গিকতার কথা। নতুন নতুন দল, নতুন নেতা/নেত্রী চকিতে চলে আসছে জনমানসের সম্মুখ ভাগে। অর্থনীতির জগতেও ফুরচ্ছে স্থায়ী চাকরির জমানা। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ভর করে প্ল্যাটফর্ম ও শেয়ার অর্থনীতি দখল নিয়ে নিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাঙ্গণ। ২০১৯'এ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬৮ কোটি। নিজ উদ্যোগ ও সৃজনশীলতাই এখন কর্মের নতুন আঙ্গিক। পুরনো ঘরানার কাজ চলে যাচ্ছে, আসছে এই ধরনের নতুন কাজের পরিসর। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন উঠছে কাজের সময় ও আয় প্রাপ্তির কারণ-সম্পর্ক নিয়ে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি নির্মাণ করছে অধিক শ্রমব্যয়ে স্বল্প আয়ের অবধারিত অ্যালগরিদম? তাহলে আদতে কার ঘরে যাচ্ছে মুনাফার সিংভাগ? কেন ও কীভাবে বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে এক অকল্পনীয় অর্থনৈতিক বৈষম্য? এই প্রশ্নগুলিকেই নতুন দশককে মোকাবিলা করতে হবে।

এরই সঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে তারুণ্য। বিশ্বের অর্থনীতি যত নৈর্ব্যক্তিক হয়ে উঠছে ততই খসছে পিছুটানের বিড়ম্বনা। ল্যাংটার আবার বাটপাড়ের ভয়! রাজনীতি বা তোষামদের ঘেরাটোপে বন্দী থাকার যন্ত্রণাও অতএব আর নেই। স্থায়ী চাকরি নেই তো কর্ম ও কর্মের অনুষঙ্গেরও বিধিনিষেধ নেই। রাজনীতির প্রাসাদ তাই টলমল।

তবে যাঁরা পড়ে থাকবেন আরও পিছনে তাঁরা কি ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকামের আওতায় এসে তবে বেঁচেবর্তে থাকবেন? ইউবিআই এখন কতটা বাস্তব? এইসব প্রশ্নও এই দশককে আলোড়িত করবে। ক্ষমতাধারী নিকৃষ্টরা মেক্সিকোর সীমান্তে সুউচ্চ পাঁচিল তোলার চেষ্টা করবে, অ্যামাজন অরণ্যে কর্পোরেট বাণিজ্যের লালসায় আগুন লাগাবে, স্বাধীনতার ৭২ বছর পর দেশের নাগরিকদের আবার লাইন দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে বাধ্য করতে চাইবে। এটা আসলে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখার মরীয়া ও উদ্ভ্রান্ত প্রয়াস। কিন্তু গোটা বিশ্বে আর কোনও সীমান্ত নেই যে! তাই পারাপারের কোনও গল্পও নেই। বিশ্ব এখন মুঠোবন্দী। তার কন্দরেই রাজনীতি ও অর্থনীতি, তার লেনদেন, উত্থান-পতন, ভাব-ভালবাসা ও হিংসা-বিদ্বেষ। তবে এই ভুবনের এক বা একাধিক ঈশ্বর আছেন। তাকেই খুঁজে বেড়াবে ২০'এর দশক। এক নতুন দশক।