Pages

Friday, 19 April 2019

ভোট ২০১৯

ভোটের বাইনারি খেলায় আর নয়!
উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায়
 

এখন আমি কেন  জানি না একটা কথা বলতে চাই। হাবিজাবি পড়াশুনা করে শুষ্ক বুদ্ধিজীবী হওয়ার থেকে কিছু কাজ করতে চাওয়া অনেক কঠিন। যাতে সমাজের উপকার হয় এবং নিজেরও উপকার হয় - এমন কাজ। বড় ন্যারেটিভে না ভেবে ছোট ছোট ক্ষেত্রে ভাবা।

আমার মনে হয় যে মানুষটি যে কাজটা পারেন সেটাই ভালভাবে করা বা নতুন কাজ করতে গেলেও পুরনো ধারণার পাশাপাশি নতুন ধারণাগুলোকে ধারাবাহিক ভাবে গ্রহণ করা - এতেই মনে হয় অনেকটাই সুস্থ রাখা যায় নিজেকে ও নিজের চারপাশকে।

কী হবে ভোটাভুটি নিয়ে ঝগড়া, অশান্তি করে! প্রতিটি রাজনৈতিক দলই মৌলবাদ অভ্যাস করে প্রচ্ছন্ন বা প্রকট ভাবে। প্রতিটি। ভোটের জন্য। ক্ষমতায় আসার জন্য - যে কোনওরকম ভাবে। প্রতিটি ক্ষমতাবান নিজেরা নিজের মতো আখ্যান তৈরি করে ও জনমানসকে খাওয়ায়।

প্রচুর লোকসংখ্যা। বাসস্থান কম, খাবার কম, অর্থ কম, স্বাস্থ্য খারাপ ও চিকিৎসা করতে পারেন না অর্থাভাবে। বেশির ভাগ মানুষের এইরকমই প্রাপ্তি।

পুঁজিবাদ নিজের চাকচিক্যের জৌলুষে একটা জায়গায় অন্ধ। সে গোটা মানব প্রজাতিকেই এখন থ্রেট করতে চলেছে। এ ক্ষেত্রে সে একেবারে অপারগ। বনাঞ্চল, জঙ্গল, আকাশ, নদী, পাহাড় সব বেআইনিভাবে বা পুঁজিবাদের স্বার্থে তাকে 'নিয়ম' বা 'আইন' বানিয়ে নিলেও এবং তাই প্রাকৃতিক নিয়মকে দাবিয়ে রাখতে চাইলে যারা পুঁজির ধারক, তারাও কেউ বাদ যাবে না।

ইতিহাসের বিবর্তনে আধুনিকতা যা যা উন্নতি দিয়েছিল, তখন পুঁজিতন্ত্র ছিল নতুন। এখন সেই উপকারী আধুনিকতার মৃত্যু ঘটেছে। তর্কের খাতিরে, মানুষের আহার ও বাসস্থানের সংস্থান যদি হয়েও থাকে  তবুও সুন্দর স্বাস্থ্য চাইলেও আর আসবে না কারণ জল, বায়ু ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা এই আধুনিকতাকেই চ্যালেঞ্জ করছে। যে কোনও রাষ্ট্র তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপরিকাঠামোতেই আর ব্যাখ্যায়িত হতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রই হোক বা তথাকথিত সেই স্বপ্নের সমাজতান্ত্রিক  রাষ্ট্র, ব্যাপারটা একই - সবাই  ক্ষমতায় যেটা উপর থেকে নিচে, অথবা, upside down করে অন্যরকম যেন দেখানো দম্ভ-ক্ষমতার উল্টো দৃশ্য। ব্যাপারটা একই। ক্ষমতার হাতবদল।
যদিও ভিন্ন নাম দেওয়া হয় - উৎপাদনের উপকরণ আর উৎপাদিকা শক্তি এরা নাকি উপরিউক্ত দুরকম রাষ্ট্রে আলাদা আলাদা রকমের চরিত্র। আসলে সবাই আধুনিকতার প্রতিযোগী। একই এবং আসলে একই। তারপর সেইসব স্বপ্নের রাষ্ট্র হয়ে যায় বাস্তবিক ডিক্টেটরশিপ অফ দ্য কমিউনিস্ট পার্টি (ব্যুরোক্রেসি)। কার নামে? ডিক্টেটরশিপ অফ দ্য প্রোলেতারিয়েত'এর নামে। আমরা আর কত যুগ একই চর্বিতচর্বণ করে যাব? আর অত বড় বড় স্প্যানে ভাববই বা কেন? কেনই বা কর্দমাক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কথা নিয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে লোফালুফি আর ঝগড়া করব? এটা তো  দাসত্বই করা।

ভোট যে পারেন যাকে মনে হয় তাকে দিন বা না দিন সেটা আমাদের আলোচ্য নয়। আমরা কন্সার্নড সিটিজেন হয়ে কি সিভিল রাইটস চাইতে পারি না? আমরা ভোটের বাইনারি খেলায় না গিয়ে  নাগরিক অধিকারগুলো নিয়ে কি সরব হতে পারি না? রাজনৈতিক দলগুলো এটাই শেখায় যে গুচ্ছ গুচ্ছ গণতন্ত্র সব গচ্ছিত আছে পরিষদে বা সংসদে। কিন্তু গণতন্ত্রের অভ্যেস আসলে নাগরিকেরাই করতে পারেন, নাগরিকেরাই গণতন্ত্র, আরও উন্নত গণতন্ত্র চাইতে পারেন। আরও প্রসারিত গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে পারেন। প্রকৃত এই লড়াইয়ে কোনও দল এসে চিহ্ন দাগিয়ে সিলমোহর দিতে পারে না। চলুন, সবাই মিলে যে যার নিজের পরিসরটুকুকেই ভাবি ও সেটাই ভাবি।

1 comment:

  1. আন্দোলনে রাষ্ট্র চাপ খায় তাতে অবশ্যই রাষ্ট্র শিথীল হয়। আবার রাষ্ট্র শক্তি সঞ্চয় বাড়তি পেলেই আবার চাপ দেয়। তখন আবার পাল্টা ভাবে মানুষও আন্দোলিত হয়। এগুলো কি হয় না? হয়। আসলে আমি অন্য ল্যাঙ্গুয়েজ এ বলছি।
    তাহলে মীমাংসা কি ? কি সেই ইউটোপিয়া ? এসব প্রশ্ন আমি নিজেকে করছি। আমার কাছে রেডিমেড উত্তর নেই। আমি জানিনা এরকম কোন রাজনৈতিক দল বা গ্রুপ বা ভাবনা আছে কিনা যা সমগ্র শোষিত নিপীড়িত মানুষকে মুক্তি দেবে। এই যে প্রকান্ড একটা মেটান্যারেটিভ ভাবনা যেখানে সব কিছুর উত্তর আছে , আমি সেটারই বিরোধীতা করছি। মেটান্যারেটিভিটি গ্রান্ড-ইলিউশনের জন্ম দেয়।

    যারা ক্ষমতায় থাকে তারা তাদের মতন করে তাদের মূল দর্শনকে সাজিয়ে নেয় , একটা ন্যারেটিভ তৈরী করে। লেনিন বিপ্লব করার ফলে মার্ক্সবাদের মূলাধার ধারণ করে লেনিন ও স্তালিন - এটাই বামপন্থার সবচেয়ে বড়ো ন্যারেটিভ। ইসলাম যতোই শান্তির কথা বলুক ইসলামকে গ্রহণ করে যে পঞ্চাশটা রাষ্ট্র প্রায় তারা সন্ত্রাসী অনেকেই , এটা নাকি ইসলামের জেহাদী ভাবনা(মালয়শিয়ার মতোন দু একটা রাষ্ট্র বাদ দিয়ে)। হিন্দু ধর্মেরও বহুধা ধারা । কিন্তু অপর দিকে সাধারণ মানুষ যখন ইসলাম বা হিন্দু কে গ্রহণ করে যেখানে রাষ্ট্রশক্তি প্রচ্ছন্ন ভাবেও থাকে না। আসলে, ক্ষমতা কেন্দ্রীয় , রাজহীন হয়ে থাকে। কখনো সেখানে আবার তারা মানবিক। কিন্তু ক্ষমতা যখন কারোর হাতে, বিশেষ করে রাষ্ট্রের হাতে , তখন? রাষ্ট্রের হাতে বা রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের হাতে। অনেকদিক থেকেই হিন্দু শাস্ত্রতেও হিংসার ফিকশন আছে। কিন্তু সম্পূর্ণ হিন্দু মত as if যেন ধারণ করছে আর এস এস। যদি কিছুকিছু ক্ষেত্রে ইসলাম হিংসাশ্রয়ী হয় , তবে বলতেই হবে বৌদ্ধ , হিন্দুয কিছু সেক্টগুলোও হিংসাশ্রয়ী।
    অতএব ব্যাদে সব ঠিক আছে - এ ভাবনা ভুল। সেক্ষেত্রে সবই স্বার্থান্বেষী ন্যারেটিভ। একমাত্র civil rights movement ই এই ন্যারেটিভ কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
    মূল গাছটি ভাল কিন্তু তার ফলগুলো খারাপ কারণ মালি খারাপ। অতএব চলা যাক আবার ভাল মালি হোই। না বন্ধু, এ ভাবনা পাল্টাতে অনুরোধ করবো। কোথাও কোন নিশ্চয়তা নেই। সব ধর্মই (দর্শন) একই জায়গায় থাকেনা। কিন্তু রাষ্ট্রের স্থিতিস্থাপকতা কিন্তু রাষ্ট্রকে বাধ্য করে কখনো কখনো নরম করতে - সেখানেই গণতন্ত্র প্রসারিত হবার সম্ভাবনা থাকে , যদি লড়াই জারি থাকে।
    ভোটের বাইনারিতে যা কোনদিনও হয় না।
    এ প্রসঙ্গে লেনিন ভার্সেস রোজা ল্যুক্সেমবার্গের বিতর্ক স্মরণীয়। সেখান থেকে শুরু।

    উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায়

    ReplyDelete