Pages

Wednesday, 16 November 2022

ক্রিপ্টোমুদ্রার বাজারে ধস?

আরও বহু পথ বাকী

অনিন্দ্য ভট্টাচার্য

 



অতি সম্প্রতি, বাহামায় অবস্থিত FTX নামে একটি ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জ প্রায়-দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ নিয়ে শুধুমাত্র ক্রিপ্টো বাজার নয়, সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক দুনিয়া সরগরম। ক্রিপ্টো ব্যবস্থার যারা ঘোর বিরোধী, তারা এবার খুব সোচ্চার হয়েছেন এই দাবিতে যে, অবিলম্বে হাইপার-আচরণে সিদ্ধ ক্রিপ্টো ব্যবস্থাপনাকে কঠিন নিয়ন্ত্রণের অধীন নিয়ে আসাটাই সমীচীন।

ঘটনাটা কী?

২০১৯ সালে বাহামায় প্রতিষ্ঠিত FTX হল বিশ্বের চতুর্থ সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টোমুদ্রার এক্সচেঞ্জ। মাত্র তিন বছরেই এর বাজার মূল্য খুব দ্রুত বেড়ে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছিল। এই এক্সচেঞ্জ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ লক্ষ ছাপিয়ে যায় এবং গত বছর এরা লেনদেনের উত্তুঙ্গ শিখরে পৌঁছে ৭০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য করে। এ হেন দানব-সম একটি সংস্থা, যা আবার ক্রিপ্টো-ভিত্তিক, তা গত ১০-১১ নভেম্বর একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে। কেউ কেউ এই ঘটনাকে অভিহিত করেন ‘লেহম্যান ব্রাদার্স মুহূর্ত’ বলে (২০০৮ সালের সাব-প্রাইম সংকটে লেহম্যান ব্রাদার্স’এর মতো সুবৃহৎ সংস্থা এইভাবেই আচম্বিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল)। FTX’এর প্রধান ৩০ বছর বয়সী স্যাম ব্যাঙ্কমেন ফ্রিড (সংক্ষেপে যাকে ‘এসবিএফ’ নামে সম্বোধন করা হয়) পদত্যাগ করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার রাজ্যে FTX দেউলিয়া হিসেবে ঘোষিত হওয়ার জন্য পিটিশন জমা করেছে। আশ্চর্যের কথা, বাহামায় অবস্থিত একটি সংস্থা আমেরিকায় গিয়ে ‘দেউলিয়া পিটিশন’ জমা করছে।

হঠাৎ এই পতন কেন? তাহলে কি ক্রিপ্টো মুদ্রার ‘ফানুস’টাই আসলে ফেটে গেল? ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেন ও তার মূল্য নির্ধারণ আসলে যে এক ‘ফাটকা কারবার’, সেই কথাই কি অতএব সাব্যস্ত হল? এমনতর কথাও কেউ কেউ বলছেন।

কিন্তু তথ্য কী বলছে?

এসবিএফ’এর একদা বাণিজ্য-দোসর, বর্তমানে বিনান্স কোম্পানির (আরও একটি ক্রিপ্টো-এক্সচেঞ্জ ও FTX’এর কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বী) প্রধান চ্যাংপেঙ ঝাও (সংক্ষেপে যাকে ‘সিঝি’ নামে সম্বোধন করা হয়) কিছু মাস আগে FTX’কে অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাব FTX’এর তরফে গৃহীত হয়। সিঝি’র দল অধিগ্রহণের প্রাক-প্রস্তুতিতে তাদের লেনদেন ও বুক অফ অ্যাকাউন্টস পরীক্ষা করতে গিয়ে ক্রেতাদের তহবিলে বেশ কিছু গণ্ডগোলের হদিশ পায় এবং আপাত ভাবে অধিগ্রহণের পদক্ষেপ থেকে পিছু হটে। এ নিয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। এছাড়া আরও একটি বিষয়ে এসবিএফ ও সিঝি’র মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে এসবিএফ অনেক দিন ধরেই সেখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বাণিজ্যপতিদের সঙ্গে মাখামাখি করছিলেন। এবার তিনি ওয়াশিংটনে লবি করা শুরু করলেন যাতে ক্রিপ্টোমুদ্রাকে বেশি বেশি করে মার্কিন নিয়ন্ত্রাধীন ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা যায়। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটনের ওপর মহলে তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে নানারকম বিরুদ্ধাচরণ করাও শুরু করলেন। স্বভাবতই, এইসব কারণে সিঝি এসবিএফ’এর ওপর এবার শুধু ক্ষেপে গেলেন না, জোর এক ধাক্কা দিয়ে সবক শেখানোরও উপায় ভাবলেন। যেহেতু এসবিএফ ও সিঝি এক সময়ের বাণিজ্য দোস্ত, তাই FTT বলে একটি ক্রিপ্টোমুদ্রার ওপর তাদের দুজনেরই দায় ও স্বত্ব ছিল। অধিগ্রহণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে এবার সিঝি প্রায় ৫৩ কোটি ডলার মূল্যের FTT হঠাৎ করে বিক্রি করে দিলেন। ফলে, আচম্বিতে FTT’র মূল্যে ধস নামল। আর এর প্রকোপ গিয়ে পড়ল FTX’এর ওপর। এবার চোটটা হল দ্বিঘাতী: আগেই, FTX’এর ক্রেতা তহবিলে যে বড়সড় গরমিল আছে তা বিনিয়োগকারীদের রীতিমতো শঙ্কিত করেছিল; পরে, FTT’এর মূল্য অবনমনে FTX থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা শুরু হল। গত ১৪ নভেম্বরের মধ্যে FTX থেকে ৬৫ কোটি ডলার প্রত্যাহৃত হয়ে গেল।

অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে, এই ধসের পিছনে যত না স্বতোৎসারিত বাজারের ভূমিকা ছিল, তার থেকেও দুই বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর শোধবোধের অভিঘাত অনেক বেশি কার্যকরী হয়েছে। বিনান্স হল সিঝি নির্মিত বিশ্বে ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জের সব থেকে বড় কোম্পানি। ২০১৭ সালে কেম্যান দ্বীপে এর নথিভুক্তিকরণ হয়। পাশাপাশি, FTX ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জের জগতে তরতরিয়ে উঠে আসছিল। বিনান্স’এর সঙ্গে তাদের সদ্ভাব ভেঙ্গে যাওয়ায় হয়তো আজকের এই পরিণতি। কিন্তু মূল প্রশ্নটা সেখানে নয়। মূল প্রশ্ন হল, FTX’এর এই ধসের ফলে ক্রেতাদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যে স্রেফ হাওয়া হয়ে গেছে, তা কি কোনওভাবে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে? না, নেই। এই পরিণতি দেখে তাই অনেকেই এখন বলছেন যে, ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ন্ত্রণ-বিধি আরোপ করা আবশ্যিক। তা যদি হয়, ক্রিপ্টো দুনিয়া ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির যে অভাবনীয় মুক্ত পরিসরের কথা সগৌরবে বলা হয়ে থাকে, সেই প্রাসঙ্গিকতা কি মলিন হয়ে যাবে না? হয়তো, এ কথার সরাসরি উত্তর দেওয়ার সময় এখনও আসেনি।

FTX বিপর্যয়ের পর সিঝি বলেছেন, এমনতর একটি বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থায় কোনও এক শরিক হয়তো তলিয়ে যাবে, বিপ্রতীপে অন্য কোনও শরিক উঠে আসবে। কিন্তু, এর ফলে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর যে তুমুল আর্থিক বিপর্যয় হতে পারে, তার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে! এটাই বাস্তবতা। কারণ, ক্রিপ্টোমুদ্রার যে এক্সচেঞ্জগুলি গড়ে উঠছে, তা ব্লকচেইন প্রযুক্তির বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থাপনাকে কার্যত নস্যাৎ করে কেন্দ্রীকৃত সংস্থায় পরিণতি পাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটা বিচ্যুতি। ক্রিপ্টোমুদ্রাকে সুরক্ষিত থাকতে হলে কেন্দ্রীকৃত সংস্থা নয়, অযূত বিকেন্দ্রীকৃত ‘silos’ (বা আধার) গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এক বড় সংখ্যক ক্রিপ্টোমুদ্রা ব্যবহারকারীদের মধ্যে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার লালসা ক্রিপ্টোমুদ্রার চালচলনে বিপদ ডেকে আনছে। যথা, FTX’এর লেনদেনে নানারকম গোলমালও তার পতনের এক অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। অর্থাৎ, লোভ, লালসা ও ক্রিপ্টোমুদ্রার বিকৃত ব্যবহার কোনও কোনও ক্রিপ্টো দুনিয়ার পরিসরে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, কিন্তু তার মৌলিক বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামোর জন্য সে বিপজ্জনক ক্ষতি সামগ্রিক ভাবে ক্রিপ্টো দুনিয়াকে অচল করে দিতে একেবারেই অক্ষম।

অতএব, ক্রিপ্টোমুদ্রার চালচলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে এবার বিতর্ক শুরু হবে বলে অনুমান। মূলত, ২০০৮ সালের সাব-প্রাইম সংকটের কালে রাষ্ট্র ও বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার থেকে মুক্ত হয়ে এক সমান্তরাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ-ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করতেই ক্রিপ্টোমুদ্রা ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির উদ্ভব। এই নতুন ব্যবস্থার জোরের জায়গাটাই ছিল নিয়ন্ত্রণহীন এমন এক বিকেন্দ্রীকৃত আঙ্গিক যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা আস্থা ও সুরক্ষার ওপরে ভিত্তি করে মোটামুটি এক সম-পাটাতনে দাঁড়িয়ে বিনিময়ের এক শৃঙ্খল গড়ে তুলতে পারে। যখন দেখা গেল, অতি জনপ্রিয় এই ব্যবস্থায় বহু মানুষ ও সংস্থা একেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গড়ে তুলে (যেমন ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জ) প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠে এক কেন্দ্রীকৃত নির্ভরতার বাতাবরণ তৈরি করে ফেলছে, তখনই এর মধ্যে বিপদের সম্ভাবনাও পাওয়া গেল। ক্রিপ্টো স্ক্যাম এখন তাই নতুন এক শব্দবন্ধ। পাশাপাশি, ক্রিপ্টোর বাইরে যে চলমান বৃহৎ পুঁজিবাদী দুনিয়া, সেখানকার প্রবণতাগুলিও ক্রিপ্টোমুদ্রার বাজারে প্রভাব ফেলছে। যেমন, সম্প্রতি সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বহু বিনিয়োগকারী ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিপ্টোমুদ্রার জগৎ থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিরাপদ আস্তানায় ফিরে আসছে। অর্থাৎ, সবটা মিলিয়ে আমরা এখনও এক পর্বান্তরের মধ্যে রয়েছি, যেখানে ক্রিপ্টোমুদ্রার দুনিয়াকে আরও বহু পথ পেরিয়ে, বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তবে এক আপেক্ষিক সুস্থির চিত্রে দেখা যাবে।

তাই, আমাদের আরও বহু কিছু দেখার আছে। এমনটা নয় যে, FTX’এর ধস দেখে ক্রিপ্টোমুদ্রা থেকে মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নেবে। statista.com’এর তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোমুদ্রা ক্ষেত্র থেকে আয় ২০২২ সালের মধ্যে ৩৪.৭২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। অন্য একটি তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে ক্রিপ্টোমুদ্রা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে; আমেরিকায় ক্রিপ্টোমুদ্রা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪.৬ কোটি যা সে দেশের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। আগেও বলেছি, আবারও বলতে দ্বিধা নেই- ওয়েব ২.০ থেকে ওয়েব ৩.০ জমানায় উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোমুদ্রা এক নতুন রাজনৈতিক অর্থনীতির সূত্রপাত করেছে যার সামগ্রিক ফলাফলকে অবলোকন করতে হলে আমাদের আরও কিছু বছর অপেক্ষা করতে হবে।  

 

Thursday, 3 November 2022

লাতিন আমেরিকা জুড়ে বাম অভ্যুত্থান

‘আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি’

প্রবুদ্ধ বাগচী


 

আমাদের দেশে শুধু নয়, সারা দুনিয়ার বামপন্থীদের মধ্যে একটা সময় সুদীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্রের উপযোগিতা নিয়ে। সনাতন শ্রেণি সংগ্রাম যদি সরিয়েও রাখি, পিছিয়ে-পড়া গরিব মানুষের স্বার্থে কি সত্যি কাজ করা যায় সংসদীয় পথে? এই প্রশ্নে দেশে দেশে কমিউনিস্ট দল বিভাজিত হয়েছে, এ দেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু অন্তত সোভিয়েত পতনের পরে একটা কথা আজ সবাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে, সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে পাথর ছড়ানো থাকলেও এটা একটা পোক্ত ব্যবস্থা যাকে ইংরেজিতে বলা যায় সাস্টেনেবল সিস্টেম। তাছাড়া লেনিন, স্ট্যালিন যে মার্কসবাদের প্রায়োগিক চর্চা করেছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বদল ঘটেছিল। এশিয়ায় মাওজেদং বা ইউরোপে গ্রামশি, আলথুজার প্রমুখরা তার বিবর্তন ধরতে পেরেছিলেন। শুনেছি, স্ট্যালিন নাকি শেষ জীবনে মাও'এর পথ অনুমোদন করেছিলেন। অন্যদিকে, চে গুয়েভারা বা হো-চি-মিনের গেরিলা-যুদ্ধ নীতি বিশ দশকের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্র বিপ্লবের আগুয়ান পঙক্তিতে বসিয়ে দিতে পেরেছিল। ফলে, একবিংশ শতকে এসে দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছেড়ে দিলে নানান আঙ্গিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চাই আজ দুনিয়াদারির মূল ধারা। সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া আগের চেহারায় না-ই বা থাকল, সংসদীয় পথেও দরিদ্র, অবদমিত মানুষের নানা স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা হচ্ছে, যারা করতে চাইছেন তাঁরা বামপন্থী মতের মানুষ।

কিন্তু সত্যি বলতে কি, এখনও যারা সমস্ত রঙের কমিউনিস্ট দলের ওপর পুরো ভরসা না-রেখেও আজও, মানুষের মুক্তি না হোক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানহারা মানুষের সম্মানজনক বেঁচে থাকবার একটা আকাশের দিকে তাকাতে চান, অন্তত আমাদের দেশে তাদের পক্ষে ঘোর আকাল। দেশের দিকে তাকালে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়, বিষণ্ণতা আর বিপন্নতায় অগোছালো হয়ে যায় জীবনযাপন। সম্প্রতি একটা ইউটিউব'এর আলোচনায় সেদিন শুনছিলাম শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন-কাড়া বক্তব্য। মনে উত্তাপের বদলে জমছিল হিম শীতল ভয়ের বুদবুদ। সংসদীয় গণতন্ত্রের আড়ালে গোপন চরণ ফেলে ফ্যাসিবাদ যে কায়েম হতে চলেছে এই দেশে, তার সমস্ত লক্ষণ আজ প্রত্যক্ষ। এমনকি আজ আর তা গোপন, এমন বলাও মুশকিল, কারণ কমলমুকুল দলের মতো সে প্রতিদিনই ফুটে উঠছে সেপ্টোপাসের খিদে নিয়ে। কর্পোরেট আর রাষ্ট্রের সখ্য এখন হিমবাহের মতোই জমাট, তারা দুজনেই তাদের পাওনা বুঝে নিতে চায় যে কোনও মূল্যে। পীড়িত মানুষের স্বার্থ, তাদের চাহিদা, দাবি-দাওয়া, যন্ত্রণা, অপমান রাষ্ট্রের কাছে মল-মূত্রের মতোই বর্জ্য মাত্র। এমনকি নাগরিকের মগজ জবরদখল করে সেখানে আগ্রাসন ও হিংসার ল্যান্ডমাইন পুঁতে দিয়ে আসাটাই কয়েক বছর ধরে প্রধান কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যৌথবাহিনীর। পাশাপাশি ‘মগজ প্রক্ষালন’এর বিরুদ্ধাচারীদের যে ‘লাইফ হেল’ করে দেওয়া হবে, এই স্পর্ধিত বার্তাও আজ ফেটে পড়েছে ‘মন কি বাত’এর খোলস সরিয়ে।

দুর্দিন। ঘোর দুর্দিন। সামাজিক রাজনৈতিক এই অমানিশার মধ্যে দেশ ও রাজ্যের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পরিসরেও কমিউনিস্ট দলের প্রতিনিধিত্ব শূন্যে এসে ঠেকেছে। শুধু কি তাই? কোনও দলের ধামাধরা না হয়েও মার্কসবাদের সপক্ষে, পীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলার সামাজিক পরিসরও ক্রমশ সঙ্কুচিত। কোনও একটি বিশেষ মুখের জয়গান করা ভিন্ন আর কীই বা আমাদের কর্তব্য, তা বুঝে নিতে গিয়ে পথ হাতড়াতে হয়। এমনকি, ইদানিং নাকি রাজ্যের প্রাক্তন শাসক দলের পক্ষে ভাল ভিড় হচ্ছে এই চিত্র অবলোকন করেও বোঝা যায় না এটা মরুদ্যান না মরীচিকা!

এই অন্ধকারে হঠাৎ এক আলোর ঝলকানি হয়ে দেখা দিল সুদূর ব্রাজিলের নির্বাচন। সদ্য সেই দেশের পরাক্রান্ত প্রতিক্রিয়াশীল একনায়ক হারলেন তাঁর বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী লুলা সিলভার কাছে। আমাদের কাছে কৈশোরের ব্রাজিল মানে ফুটবলের ‘রাজা’ পেলে আর কফি, সঙ্গে ভূগোল বইয়ের সিলেবাসে আমাজন অরণ্য। এ কালের তরুণরা অবশ্য 'আমাজন' বলতে অন্য কিছুও বোঝে, সেও এক ছেনালিময় সমীকরণ। কিন্তু ব্রাজিলের এই সদ্য পরাজিত সম্রাট নানা জনবিরোধী কাজের সমান্তরালে একইভাবে কর্পোরেটের হাতে হাত রেখে সেই বনভূমিকেই তাদের মৃগয়াক্ষেত্র করে তুলতে মরিয়া ছিলেন। তাঁর পরাজয় আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনের একরকম বিজয় বইকি! আমাদের ‘সকল দেশের রাণী’তেও একুশ শতকের প্রথম দশক থেকে এই পরিবেশ নিধনের সরকারি সন্ত্রাস গতিশীল। লড়াই এখানেও চলছে, ওখানেও চলেছে। কিন্তু ব্রাজিলের মানুষ আজ আপাতত আশ্বস্ত। তাদের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভরসা দিয়েছেন পরিবেশ নিয়ে এই মুনাফাবাজির বিপরীতেই হবে তাঁর অবস্থান।

লাতিন আমেরিকার ভৌগোলিক আয়তনের মধ্যে বেশ একটা বড় অংশ নিয়ে ব্রাজিল দেশটির অবস্থান। আর গত কয়েক বছরে এই দেশের সরকারের নানা কুকীর্তি বারবার শিরোনামে এসেছে। এর আগের নির্বাচনে বামপন্থী লুলা'কে কারাগারে আটকে রেখে নির্বাচনে লড়তেই দেওয়া হয়নি। এবার হাওয়া ঘুরেছে এবং আপাতভাবে প্রবল পরাক্রমী শাসকের বিরুদ্ধে ফেটে পড়েছে মানুষের ক্ষোভ যার ছাপ পড়েছে ভোটিং মেশিনে। কী অবাক কাণ্ড, পরাজিত প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন ইভিএম নিয়ে! গল্পটা কেমন আমাদের চেনা চেনা লাগছে না? কিন্তু এইসব গপ্পো গুজব পেরিয়ে অনেক দূরের ভারত ভূমিতে বসেও আমরা খুশির শরিক। কে গেলেন বা কে এলেন, এই বিচারের থেকেও বেশি জরুরি, কোন মতাদর্শ জয়ীর নিশান হাতে নিল। এইখানে স্বস্তি, এইখানেই ভরসা। আমাদের আজকের দমবন্ধ রাজনীতির ভুলভুলাইয়ায় এইটুকু স্নিগ্ধ সংবাদ তাই এত হর্ষ-জাগানিয়া হয়ে ঢুকে পড়তে চায় মনের অলিন্দে।

অবশ্য সব শুরুরই একটা আগের সলতে পাকানো আছে। এই তথ্য আমাদের না খেয়াল করলে চলবে না, লাতিন আমেরিকাই সেই একমাত্র মহাদেশ যেখানে সাবেক বামপন্থার দর্শন যুগের হাওয়ায় নিজেকে পাল্টে নিয়ে একেক দেশে একেক চেহারা নিয়ে মানুষের লড়াইয়ে নিজেদের শরিক করেছে। আর লাতিন আমেরিকাই সেই মহাদেশ যেখানে একসময় স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদ তার আস্তানা গেড়ে লুঠ করেছে সেখানকার শ্রম ও বিত্ত। পরের পর্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিজেদের নিগড় পোক্ত করতে বারবার সেখানকার দেশগুলির সামরিক বাহিনীকে উস্কে ও নিজেদের বাহিনিকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে মাথা তুলতে একটানা বাধা দিয়ে এসেছে। 'স্ট্যাচু অফ লিবার্টি'র দেশ পৃথিবীর এই প্রান্তে খুল্লমখুল্লা প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে সেখানকার মার্কিন-পুতুল একেকজন একনায়ককে, সমস্ত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি যেখানে প্রতিহত হয়েছে বিচারহীন কারাগারের দেওয়ালে। লাতিন আমেরিকার কারাগার সাহিত্য বা আন্ডারগ্রাউন্ড ফিল্ম আজও মুক্তিকামী চেতনার সহোদর। আবার নিকারাগুয়ার মতো দেশে বিপ্লবের কাণ্ডারী হয়েছে সাবেক মার্কসবাদ নয়, গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্মের ভিতর থেকে এক নতুন মতবাদ ‘লিবারেশন থিওলজি’— যাজকদের একটা বিপ্লবী অংশ নিকারাগুয়ার বিপ্লবের কারিগর হয়েছিলেন। কেতাবী বামপন্থায় না মিললেও, তাদের ভাবনায় মানুষের সম্মানজনক জীবনযাপনের উপযোগী দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি আছে। লাতিন আমেরিকা তাই সারা দুনিয়ার সামনে এক বিস্ময়। চে-র মৃত্যু আমাদের বাঙালি কবিকে একদিন অপরাধী করে দিয়েছিল, কিন্তু কাস্ত্রো আর মারকয়েজ সেই একই মহাদেশের সন্তান। নেরুদা আর নিকোনার পারা তাঁদের বিবেক। আমাদেরও তো এই ঐতিহ্য কম ছিল না! ফুলগুলি সব কোথায় গেল?

তাই একটু হিসেব করে দেখতেই হবে, সারা দুনিয়ায় যখন দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল রাজনৈতিক শক্তি তাদের দাপট বাড়িয়েছে তখন গত তিন বছরের পরিসীমায় লাতিন আমেরিকার একেকটি দেশে মাথা তুলেছে বাম-মতাদর্শী রাজনৈতিক প্রভাব। এর শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ যখন কিউবাতে জিতে এলেন মিগুয়েল দিয়াজ কানেল, মার্কিনীদের সমস্ত কৌশল আর অবরোধকে প্রতিহত করে। এরপর দু' বছরের মধ্যে হন্ডুরাস, চিলি, পেরু, বলিভিয়া, নিকারাগুয়া, কলম্বিয়া একে একে সব দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেন বামপন্থী প্রেসিডেন্টরা। সব শেষে ব্রাজিল। এই জয়ের পরে বিবিসি লাতিন আমেরিকার একটি রঙিন ম্যাপ প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে মহাদেশের শতকরা আশি ভাগের রং লাল। বিস্ময়কর হলেও সত্যি। কিশোরবেলায় একটা গান শুনেছিলাম, ‘আমাদের প্রিয় রং লাল’- আক্ষরিক অর্থেই আজ লাতিন আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই গানের কথাকে সত্যে পরিণত করেছেন।  

আমাদের আজকের অবস্থান ভৌগোলিক ভাবে শুধু নয়, সবদিক দিয়েই বিপরীত মেরুতে। কিন্তু যে যেমন ভাবেই ভাবি না কেন, আমাদের সচেতন মানবমুখী চেতনার মধ্যেও যত ভাঙাগড়াই থাকুক, সারা বিশ্বে যে যেখানে লড়ে যায় তা কখন যেন আমাদেরই লড়াই হয়ে ওঠে, আমাদের মর্মে জাগিয়ে তোলে স্পন্দন। সেই ছন্দেই আমরা পা ফেলেছি অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট থেকে দেশের কৃষক আন্দোলনে। তাই আজ উদযাপন, তাই আজ এত শব্দের বুনন। অশোক মিত্র মশাই বলতেন, পেশাদার আশাবাদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। সত্যিই নেই। তাই এক্ষুনি এ দেশেও ‘লাল সূর্যের ভোর’ জেগে উঠবে তা এক আপাত-অলীক ভ্রান্তিবিলাস মাত্র। এই বেয়াড়া আশাবাদে পা পিছলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু আজকের ব্রাজিল, আজকের লাতিন আমেরিকা আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া স্বপ্নের ভিতর উজ্জীবনী কোরামিন। আমাদের নতুন করে একটু প্রশ্বাস নেওয়ার স্পর্ধা। বেরঙিন আকালে ‘স্বপ্ন দেখার মহড়া’। ডুবজলে সাঁতার দেওয়ার মরিয়া প্রতিবেদন। উদয়াচলের পথযাত্রীদের এই দুঃসাহসের হাল ছাড়লে চলবে কী করে? রাত কত হল, তার উত্তর তো আমাদের খুঁজে পেতেই হবে, তাই না ?  

 

Wednesday, 2 November 2022

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে শেয়ার বাজার?

ভবিষ্যতের শেয়ার বাজার ও অর্থনীতি

পার্থ হালদার


 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আজ জীবনের সর্বত্র অধিষ্ঠিত হয়ে চলেছে। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শেয়ার বাজারেও। কিছুদিন আগে প্রচলিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ফান্ড ম্যানেজমেন্ট আজ সারা বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, যার আরেক নাম ETF বা এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। অনেকেই ভাবেন, এগুলো বোধহয় ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড আসলে ম্যানেজারবিহীন একটি ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা যা মিউচুয়াল ফান্ড বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো পরিচালনা করে থাকে। এটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এমন একটি ব্যবস্থা যা ফান্ড ম্যানেজারেরা কার্যকর করে থাকে, যেখানে কোনও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সেই ম্যানেজারের নেই। স্টক এক্সচেঞ্জগুলি কিছু নির্দিষ্ট প্যারামিটার ও পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন সূচক গঠন করে, ফান্ড ম্যানেজারের কাজ হল সেগুলিকে অনুসরণ করা। তার ভিত্তিতেই বিনিয়োগকারীর পুঁজি বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। 
সেনসেক্স ও নিফটি সর্বপরিচিত সূচক হলেও তার বাইরেও অনেক ধরনের সূচক আছে। মিড্ ক্যাপ, স্মল ক্যাপ,নিফটি নেক্সট, নিফটি আলফা যার অন্যতম উদাহরণ। আর এগুলোকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সূচক।শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করতে গেলে প্রথমেই মনে কয়েকটি প্রশ্ন ওঠে- কোন শেয়ার কিনব? কত পরিমাণে কিনব? কতদিন ধরে রাখব? কখন বিক্রি করব? এই সব কটি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালিত এই সূচক ETFগুলো। নির্দিষ্ট লজিক মেনে পুরো বাজার থেকে মুহূর্তের মধ্যে এরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ম্যানেজারের কাজ সেই তথ্য অনুযায়ী আপনার বিনিয়োগকে পরিচালনা করা। এই পদ্ধতিতে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নবতম সংযোজন নিফটি আলফা। NSE'র তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই সূচকের Compounded Annual Growth Rate (CAGR) ১৯.৮৭ শতাংশ- অর্থাৎ, এই সূচক অনুযায়ী ২০০৪ সালে কেউ যদি ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন, ২০২২ সালে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ লক্ষ টাকা। 

 
সূত্র: ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ 
মজার ব্যাপার হল, এর পেছনে পুরোটাই রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে ১৯.৮৭ শতাংশ CAGR মানে কিন্তু বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের উপর প্রতি বছর ১৯.৮৭ শতাংশ হারে রিটার্ন পাবে, তা কিন্তু কখনই নয়। কখনও এই রিটার্ন বছরে ২০০ শতাংশ আবার কখনও অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। উপরের গ্রাফটি দেখলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে এই সুচক প্রায় ৭০ শতাংশ নেমে গিয়েছিল। কিন্তু যতবারই পতন হোক না কেন, প্রতিবারই সূচক রি-ব্যালেন্সিং'এর মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে। 
এই সূচকটির উপর নির্ভর করে গত বছর ডিসেম্বর মাসে ভারতে প্রথম ETF নিয়ে এসেছে কোটাক মাহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। আশা করা যায়, আগামী দিনে আরও অনেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই ETF  বাজারে নিয়ে আসবে। তবে আবারও বলছি, এই ধরনের বিনিয়োগ কিন্তু ভীষণ উদ্বায়ী। কখনও দেখলেন আপনার বিনিয়োগ হঠাৎ ১৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে আবার কখনও ৫০ শতাংশ পড়ে গেছে। অনেক বিনোয়োগকারী এই দোলাচল সহ্য করতে পারেন না। অনেকেই মুনাফা বেড়ে যাওয়াকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে পারলেও বিনিয়োগকৃত পুঁজির হ্রাসকে মেনে নিতে পারেন না। তাঁদের এই ধরনের বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকা উচিত। তাই, নিজের মানসিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ETF নির্বাচন করাই ভালো। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ETF আছে, যারা ইকুইটি ছাড়া সোনা বা রূপোতে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁরাও এই ব্যবস্থার সুযোগ নিতে পারেন। এই ব্যবস্থাটিকে প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্টও বলা হয়ে থাকে। এ নিয়ে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা NSE'র ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। 
                                                                                                    সর্বশেষে একটা কথা বলা যেতেই পারে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শেয়ার বাজারে আপনার-আমার বিনিয়োগকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। আগামী দিনে ম্যানেজারবিহীন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট জায়গা করে নিতে চলেছে বিনিয়োগের বাজারে। অর্থাৎ, ফান্ড ম্যানেজার নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই চালাবে শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি। এ এক অভিনব উত্তরণ। অতএব, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আর্থিক সাক্ষরতার মাত্রা বাড়লে নিজেরাই ম্যানেজ করতে পারবেন নিজের টাকা।