Pages

Thursday, 4 August 2022

ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি কী?

একটি আরটিআই আবেদন ও দু' বছরের গড়িমসি শেষে

নীলকন্ঠ আচার্য

পর্ব ১

দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী'র কি নিজের নাগরিকত্বের পক্ষে কোনও প্রামাণ্য নথি আছে? নিশ্চয় থাকবে। থাকার তো কথা। থাকা উচিত- এমন ভাবাটা তো অযৌক্তিক কিছু নয়। শুধু তাঁর কেন, বর্তমান মন্ত্রীসভার সমস্ত সদস্য-সদস্যা সহ সমস্ত সাংসদদেরও তো তা থাকার কথা। কারণ, কংগ্রেস দল সহ বর্তমান সরকার এবং এর পূর্ববর্তী বাজপেয়ী সরকারের প্রবক্তারাই ভারতের নাগরিকত্বের বিষয়টাকে নিয়ে অনেক জল ঘোলা করেছে এবং এখনও করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এরা সরকার, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার যৌথ উদ্যোগে গোটা অসম জুড়ে NRC নামক অভিযান চালিয়ে ৩১ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত মোট ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জন দেশবাসীকে 'প্রামাণ্য কাগজ' দেখাতে না পারার কারণে নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এর ফলে, এইসব অধিকাংশ প্রান্তিক ও অসহায় দেশবাসীকে আজ নিদারুণ যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে বিভীষিকাময় দিনযাপন করতে হচ্ছে।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, দেশবাসীর কাছে নাগরিক হিসেবে কী এমন মহামূল্য ও যথার্থ ধরনের প্রামাণ্য নথি বা কাগজপত্র থাকার কথা যা না থাকলে যে কোনও দেশবাসীকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে ও হবে? তদুপরি, এইসব কাগজপত্র বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রবক্তাদের কাছে নিশ্চয়ই থাকবে যারা এই ধরনের প্রামাণ্য নথির পক্ষে ওকালতি করে চলেছেন?

অতএব, ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য প্রামাণ্য নথিটি ঠিক কী- তা ঠিকমতো জানার জন্যই আমি গত ১১ মার্চ ২০২০ তারিখে তথ্য জানার অধিকার আইন, ২০০৫ অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংশ্লিষ্ট তথ্য আধিকারিকের কাছে বিধিসম্মতভাবে আবেদন করি। আবেদনটি ছিল, 'আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ কোনও প্রামাণ্য নথি থাকলে তা আমাকে অনুগ্রহপূর্বক জানানো হোক।' এর উত্তরে বহুদিন বাদে ঐ সংশ্লিষ্ট তথ্য আধিকারিক আমাকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের চিঠিতে জানান যে, 'ভারতের নাগরিকত্বের বিষয়টি নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এবং এর অধীনস্থ নিয়মাবলীর দ্বারা নির্ধারিত হয়। এ সম্পর্কিত তথ্যের জন্য এই ওয়েবসাইটটি দেখুন: https://indiancitizenshiponline.nic.in।' (নিচে দ্রষ্টব্য)।


বস্তুত, এই প্রত্যুত্তরে কোথাও জ্ঞাতব্য নির্দিষ্ট তথ্যটি পাওয়া যায়নি। ফলে, আমি এই বিষয়টি মুখ্য তথ্য আধিকারিককে জানাই (২ জানুয়ারি ২০২১) এবং লিখি যে, 'আমাকে আমার নির্দিষ্ট জ্ঞাতব্য তথ্যটি (অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিকত্বের প্রামাণ্য কোনও নথি দেখানো) না জানিয়ে আমাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মুখ্য তথ্য‌ আধিকারিককে অনুরোধ করছি, উনি হস্তক্ষেপ করুন এবং আমাকে আমার জ্ঞাতব্য বিষয়টি জানানোর ব্যবস্থা নিয়ে আমাকে বাধিত করুন।' (নিচে দ্রষ্টব্য)।


এর প্রত্যুত্তরে ভারতের কেন্দ্ৰীয় তথ্য কমিশনের প্রধান দফতর থেকে ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে লেখা একটি শুনানির নোটিশ (Hearing Notice for Appeal, File No. CIC/PMOIN/C/2021/102959) আমাকে ডাকযোগে পাঠানো হয় যা আমি গত ৩০ জুলাই ২০২২'এ হাতে পাই। এতে বলা হয়, আগামী ৮ অগস্ট ২০২২ তারিখে 'অনলাইনের' মাধ্যমে মুখ্য আধিকারিকের সমীপে বেলা ১২টায় আমাকে এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংশ্লিষ্ট তথ্য আধিকারিককে উপস্থিত হতে।' আমার উপস্থিত হওয়ার ঠিকানা জানানো হয়, বারাসাতের (উত্তর ২৪ পরগণা ) জেলাশাসকের প্রশাসনিক ভবনের NIC (National Informative Centre) District Centre'এর দফতরে। অনুরূপ, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংশ্লিষ্ট তথ্য আধিকারিককেও দিল্লিস্থিত কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের দফতরে হাজির হতে বলা হয়। উল্লেখ্য, উক্ত নোটিশে আমাকে আবেদনকারী (Appellant)/ অভিযোগকারী (Complainant) এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য আধিকারিককে অভিযুক্ত (Respondent) নামক শব্দে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (নিচে দ্রষ্টব্য)।


যেহেতু তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও কাজের ধারায় (Powers & Functions of Information Commission) কোথাও এই ধাঁচের শুনানির কথা লেখা নেই,‌ তাই আমি জনৈক বিশিষ্ট অধিকারক্ষা কর্মীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার পর কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের দফতরে একটি আবেদন (২ অগস্ট ২০২২) পাঠিয়ে জানতে চাই যে, RTI Act, 2005-এর ঠিক কোন ধারা বা অনুচ্ছেদের আওতায় এই শুনানির নোটিশ জারি করা হয়েছে?

আরও উল্লেখ্য, এই শুনানির নোটিশে দুই পক্ষকেই তাদের স্ব-স্ব অনুমোদিত প্রতিনিধি সহ উপস্থিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি গত ৪-৫ দিন ধরে বারাসাত ও কলকাতায় এই বিষয় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক মহলের বন্ধু, সমাজকর্মী ও অধিকার কর্মীদের কাছে একজন সহযোগী আইনজীবীকে ঐদিন আমার সঙ্গে থাকার জন্য কোনও ব্যবস্থা করা যায় কিনা বিবেচনা করতে অনুরোধ করি। এর মধ্যে একাংশ আমাকে তাঁদের যথাসাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্য অংশটি বড়ই অদ্ভুতভাবে নির্লিপ্ত থাকে ও এমন দায়সারা ভাব দেখায় যা আমাকে বেশ অবাক করে।

যাই হোক, আগামী ৮ অগস্ট ২০২২'এ নির্ধারিত স্থান ও সময়ে উক্ত শুনানিতে আমি উপস্থিত হতে চলেছি এবং আশা করছি মুখ্য তথ্য আধিকারিক দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাগরিকত্বের কোনও প্রামাণ্য নথির অস্তিত্ব সম্পর্কে যে আবেদন আমি বিধিসম্মতভাবে করেছি তার সুরাহা করবেন।

পরিশেষে জানাই, ৮ আগস্টের শুনানির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমার দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি যথাসময়ে উপস্থাপন করব।

 

4 comments:

  1. খুব প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করেছেন শ্রী নীলকণ্ঠ আচার্য।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ। চেষ্টা তো করে চলেছি।দেখা যাক!

      Delete
  2. একটা সাহসী কাজ

    ReplyDelete
  3. অসম্ভবের পায়ে হেঁটে আমাদের আনন্দ।
    প্রণাম রইলো আপনার জন্য।

    ReplyDelete