Pages

Wednesday, 23 March 2022

সুনন্দ সান্যাল

এক অবিচল প্রতিস্পর্ধী স্বর

অশোকেন্দু সেনগুপ্ত

 

মন ভালো নেই। চলে গেলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী অধ্যাপক সুনন্দ সান্যাল। 

সামান্য এই কয়েকটি শব্দ দিয়ে আমার মানসিক দুরবস্থা বোঝাবো এমন শব্দশিল্পী আমি নই। আরও কিছু কথা বলতেই হয়। বলতেই হয়, প্রাথমিক শিক্ষা  নিয়ে সুনন্দবাবুর সঙ্গে মতান্তরের কথা। 'আজকাল' পত্রিকায় সে বিতর্কে আমার মতো অনেকেই অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদেরই অন্যতম সুনন্দবাবু। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, বাঙালি ছেলেমেয়েরা যে চাকরি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে তার প্রধান কারণ  ইংরেজি না-শেখা। এমন বিশ্বাস আমার ছিল না। বিরুদ্ধে আছি জেনেও, বা মতান্তর থাকা সত্ত্বেও, কদাচ মনান্তরের সুযোগ দেননি তিনি।
 

কেবল কি সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও জঙ্গলমহল আন্দোলনে বারবার গিয়েছি একসঙ্গে? গিয়েছি আরও অনেক জায়গায়। হেঁটেছি একসাথে বহু পথ।  কাকলি ঘোষদস্তিদার বা কবীর সুমনের নির্বাচনী প্রচার, ভূমিরক্ষা কমিটির সভা, টিভির টক শো- কোথায় যাইনি; কত জনসভা,পথসভা, কত মিছিল করেছি। সিঙ্গুরে এক জনসভায় অনেক সময় নিয়ে বললেন তিনি, সম্ভবত তা পছন্দ হয়নি মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মমতা ছিলেন সে সভার মূল আকর্ষণ। 
 

তিনি যে ভালো বক্তা ছিলেন এমন নয়। তবু মানতেই হবে যে মানুষ তাঁর কথা শুনতে আগ্রহী ছিlলেন।
নতুন সরকারের আমলে একই কমিটিতে কাজ করার সুযোগ এসেছে। তাঁর নেতৃত্বে ২০১১'এ গঠিত হয় রাজ্যে উচ্চশিক্ষা প্রসারে এক্সপার্ট কমিটি। তার আগেই বিধাননগর পুরসভায় আমরা দুজনেই পরামর্শদাতার ভূমিকায়; সে কমিটির প্রধান ছিলেন দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরসভার পক্ষ থেকে চেষ্টা হল 'পুরশ্রী'র মতো একটি পত্রিকা প্রকাশ ও একটি লাইব্রেরি গঠনের। পত্রিকা প্রকাশের দায়িত্ব নিলেন সুনন্দবাবু। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলরদের অপদার্থতা ও অযোগ্যতার কারণে তা আর তেমন এগোল না।

 
তিনি যেমন 'গণ পরিষদ' গঠন করেন, তেমন আমাদের 'ফ্রেন্ডস অফ ডেমোক্রেসি' গঠনেও অভী দত্ত মজুমদার বা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই সক্রিয় হয়েছেন। একদা ছাত্র পড়িয়েছেন, লিখেছেনও অনেক। শিক্ষা আন্দোলন, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও জঙ্গলমহল আন্দোলনে বারবার ছুঁটে গিয়েছেন। তাঁর লেখায় জেগে ওঠে পাঠকের প্রতিবাদ ও 'দৈনিক স্টেটসম্যান' (মানস ঘোষের সম্পাদনায়)।

স্ত্রী বিয়োগ ও চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হবার পর তিনি গণ আন্দোলন থেকে সরে যান বলা বোধহয় ঠিক নয়। সেই অসময়ে বুদ্ধিজীবী মঞ্চের দায়িত্ব নিলেন সুনন্দবাবু। বর্তমান এই সরকার তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করে তাতেও কষ্ট পেয়েছেন নিশ্চয়। 
 
এই মানুষটি, যিনি কদাচ কোনও লোভে পা দেননি, যে কোনও অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ জানাতে কুন্ঠিত হননি, তাঁকে ভোলা যায় না, যাবে না। 


No comments:

Post a Comment