Pages

Monday, 14 June 2021

শিক্ষার হালচাল

পরীক্ষা হওয়া না-হওয়া

অশোকেন্দু সেনগুপ্ত 


তুমুল হল্লা চারিদিকে। লেখাপড়া যে উচ্ছন্নে গেল, তার কী হবে? পড়ানো হয় না, মূল্যায়নের বালাই নেই। এভাবে চলে নাকি?  মূলত মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকেরা ক্ষিপ্ত। তাদের ছেলেমেয়েরা যে আর চাকরি পাবে না! যেন চাকরিই জীবনের লক্ষ্য, ধ্যানজ্ঞান। দোষ দেওয়া যায় না। কেনই বা দোষ দেওয়া, দেবেনই বা কেন? 

মূল্যায়ন নিয়েই কথা শুরু করা যাক। এই রাজ্যের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছেলেপুলেদের পরীক্ষা হবে না এই বছর। তা নিয়ে প্রাক্তন কর্তা সুদিনবাবুরা খুব বিরক্ত। এই বিষয় নিয়ে তাঁর একটি লেখা ভাইরাল হয়েছে। স্বীকার করতে সমস্যা নেই যে, তাঁর অভিজ্ঞতা নাকচ করার মতো যুক্তি আমার নেই। কিন্তু, তার যুক্তিগুলো? 

তিনি আক্ষেপ করেছেন শিক্ষায় স্বাধিকার লুপ্ত হচ্ছে দেখে। পরীক্ষা হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত কেন নেবেন  মুখ্যমন্ত্রী? তাঁর আমলে তো এমনটা হত না!  তিনি গোপন করেননি জ্যোতিবাবুর আমলের ঘটনা। যদিও সেই ঘটনার বিবরণ থেকে স্পষ্ট যে, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই, সুদিনবাবুরা ঘোষণা করেছেন মাত্র। তারপর যে জল গড়াতে গড়াতে 'অনিলায়ন' তথা আলিমুদ্দিনের পার্টি অফিসের দিকে এগোয়, তার কথা ভুলে গেলে চলবে? সেদিন তো সুদিনবাবু প্রতিবাদ করেননি? কেন? সেদিন কেন মেনেছিলেন 'স্বশাসন' মানে দলীয় শাসন? যে কারণে সেদিন আপনি প্রতিবাদ করতে পারেননি, সেই কারণেই (আরও অন্য কারণ নিশ্চয় থাকতে পারে) এ কালের কর্তারা ( কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়/ মহুয়া দাস) প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু প্রতিবাদ হওয়া উচিত অবশ্যই। কেন মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও প্রশাসনিক কর্তা এমন সিদ্ধান্ত নেবেন? 

কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর  সিদ্ধান্ত নেবার ধরন নিয়ে। কেন ছাত্র-ছাত্রীদের এত বড় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য এত কম সময় দেওয়া হল? প্রশ্নটা যে বহু ছাত্র-ছাত্রীর স্বার্থের পক্ষে না বিপক্ষে যায়, হুজুররা তা কি ভাববেন না? যারা মত দিয়েছেন (স্বেচ্ছায় দিয়েছেন তো!) অনলাইনে, তাঁরা সব শিক্ষার্থীর কত শতাংশ? বাকিদের অধিকার নেই বুঝি? যারা শিক্ষা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন, তাঁদের কথা না হয় বাদই দিলেন। মোদ্দা কথা, স্বাধিকার আর স্বশাসন। এবং গণতন্ত্র। মুখমন্ত্রী যে পথ বেছে এগিয়েছেন, তা জনপ্রিয় পথ হলেও নিশ্চয় গণতান্ত্রিক নয়। তিনি এগিয়েছেন বটে, কিন্তু শিক্ষা অবশ্যই  পিছিয়েছে। এতে  শিক্ষা ক্ষেত্রে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধিকার ও গণতন্ত্র আহত হল।

কিন্তু, শিক্ষা তথা তার মূল্যায়নের সঠিক পথটা কী, তা কেউ বলছেন না। সুদিনবাবুর দেশ-বিদেশের শিক্ষার হালচাল নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তিনি কিন্তু সম্ভাব্য সমাধানের প্রস্তাব কিছু দেননি। সে আমলে যত জন পরীক্ষা দিত, নম্বর তারা যা পেত, স্বাভাবিক নিয়মে সে সবেরই বদল ঘটেছে। এখন কাড়িকাড়ি নম্বর যারা পায়, তাদের  দোষ দিতে পারি না শিক্ষার গুণগত মান নিম্নমুখি হলেও। পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে বহু গুন।

গোড়াতে বলেছি, মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকেরা কিন্তু ক্ষিপ্ত। মধ্যবিত্ত গণতন্ত্রের এমন অন্তর্জলী যাত্রায় তারা বিমূঢ়। তারা স্বাধীনতা চায় বেশি। তারা চায় তাদের সন্তানরা মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করবে যে তারা উচ্চশিক্ষা তথা চাকরির বাজারে প্রবেশযোগ্য। পারিবারিক শিক্ষা বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা না বলতে চাইলে না বলুক। অনেক অনেক নম্বর পেয়ে টিভি বিজ্ঞাপনে নয় তারা বলবে, 'আমার এই সাফল্যের পেছনে... '। সমস্যা সেখানেই। মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষ শিক্ষার মান নিয়ে ভাবে না।

কেউ কেউ নকশাল পর্বের কথাও তুলছেন। সেই সময় বছর নষ্ট হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার আপাত-মান বজায় ছিল, তার প্রমাণ চাকরির বাজারে (যা শিক্ষার সাফল্য বলে গৃহীত বহু যুগ ধরেই) তাদের অনায়াস  সাফল্য। শিক্ষকদের অবদানও অনস্বীকার্য। অপমান তাদেরই সইতে হয়েছে যারা প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত হয়নি, যারা প্রতিবাদ করতে শেখেনি। 

প্রশ্ন: তাহলে প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত বলতে কী বুঝি?

এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি আগে অনেকবার। তাতে কী? আবারও উত্তর দেব। তবে তা এই লেখায় নয়। এই লেখায় কেবল এইটুকু বলি, সুশিক্ষা যে না পায় সে যেমন সুশিক্ষিত নয়, তেমন নয় সুনাগরিক। সুশিক্ষা সুনাগরিক গড়ে দেয় যার প্রয়োজন দিন দিন বেড়েই চলেছে দেশে দেশে। সুশিক্ষা বাজারের চাহিদা পূরণের শিক্ষা  নয়।


6 comments:

  1. মরবে মধ্যবিত্ত বেচারা

    ReplyDelete
  2. কেউই রাস্তা দেখাতে পারছেন না।
    পঠনপাঠন বন্ধ, কিন্তু পড়ে চলেছে ছাএদল।
    স্কুলে আর সড়া হয়না সব ব্যক্তিডত উদ্যোগে।
    গ্যাটের মাল খসিয়ে।
    পরীক্ষা হতে পরতো ধরণ বদলিয়ে।
    মূল্যায়নের বহু পথ আছে।যা সরকার শুধু জানে না।
    নাটের গুরু মোদি। পোঁ ধরেছে সবাই।

    ReplyDelete
  3. কেরল ত দেখাল পথ
    কেন সকেলে মানল না সেই মত

    ReplyDelete
  4. সুশিক্ষা সুনাগরিক গড়ে দিত; এখন আর দেয় না|

    ReplyDelete
  5. এখানে তো কোনো বক্তব‍্য‌ই নেই!!!

    ReplyDelete
  6. যথাযথ পর্যালোচনা বা পর্যবেক্ষন। ঠিক সুদীন বাবু এই বিষয়ে লিখে বেশ বাহবা কুড়োচ্ছেন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওনার দলীয় রাজনীতির অনুগামীরা বিকল্প কোন প্রস্তাব না রেখে সব গেল সব গেল রব তুলছেন। শুধু তাই নয় নকশাল আমলের কথা তুলে এক নৈরাজ্যের আভাস দিচ্ছেন। হ্যাঁ একথা ঠিক যে এত ছাত্র ছাত্রীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটা সুচিন্তিত পরিকল্পনা সরকার করতে পারত। অনেকেই যেমন কম নম্বরের ভিত্তিতে হোম সেন্টারের পরীক্ষার কথা বলেছেন।

    ReplyDelete