Pages

Saturday, 2 May 2020

ভোকাট্টা!


রাজনীতিকদের হম্বিতম্বির প্রাসঙ্গিকতা কতটা?
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য

এই ব্লগে কিছুদিন আগে কোভিড১৯ আক্রান্ত বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতা নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম। মনে হয়েছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল অর্থনীতি গত চার-পাঁচ বছরে যে গতিধারায় এগোচ্ছে, তাতে কোভিড১৯ এসে আরও ইন্ধন জোগাল। অর্থাৎ, কাজের রীতিনীতিকে আমূল বদলে, মনুষ্য শ্রমকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে আরও সঁপে দিয়ে, ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রকে প্রান্তে ঠেলে ডিজিটাল অর্থনীতির যে সার্বিক উত্থান ও আধিপত্য, তা আরও ত্বরান্বিত হল। ইতিমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতি এক সর্বব্যাপী পরিবর্তনের পরিসরে ঢুকে পড়েছে ও নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আগামী ছ’ মাসের মধ্যে এক বৈপ্লবিক রূপান্তর সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

কিন্তু এই পরিবর্তন শুধু অর্থনীতির প্রাঙ্গণেই নয়, রাজনীতির বলয়েও দ্রুত হয়ে চলেছে। আর সে কারণেই, বলার অপেক্ষা রাখে না যে গত চার-পাঁচ বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আহূত অর্থনীতির আমূল বদল রাজনীতির অঙ্গনকে বাদ দিয়ে নয়। অর্থাৎ, রাজনীতির দুনিয়া, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনৈতিক দল ও নেতা, মতাদর্শ ইত্যাকার বিষয়গুলিও এক ঘোরতর পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই বদলে যাচ্ছিল। কোভিড১৯ এসে তাকে আরও জোর ধাক্কা দিল, বলটা আরও দ্রুত গড়িয়ে চলল লক্ষ্যের দিকে।

খেয়াল করলেই বুঝবেন, গত কয়েক বছরে অর্থনীতির আঙ্গিনায় যে পরিবর্তনগুলি সাধিত হয়েছে তা স্বভাবতই রাজনীতির প্রাঙ্গণকেও সঙ্গে সঙ্গে রেখেছে। কারণ, অর্থনীতির বাঁক বদল বা উত্তরণ রাজনীতিকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ হতে পারে না। অর্থনীতি যে যে ভাবে তার কর্মপ্রক্রিয়াকে ডিজিটাল জগতে স্থানান্তরিত করেছে, সেই সেই ভাবেই তার দেশকালের সীমানা ঘুচে গেছে ও অনুরূপ ভাবেই, রাজনীতির জগতেও দেশকাল নিরপেক্ষ এক রাজনৈতিক আখ্যানের নির্মাণ পর্ব চলেছে। সেটা কীভাবে ও কতটা, তা নিয়েই এই লেখায় কিছু বলার চেষ্টা করব।

যেমন ধরা যাক রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচির কথা। ভারতবর্ষে আজ থেকে ১৫ বছর আগেও ভিন্ন ভিন্ন দলের নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলি তাদের নিজ নিজ রাজ্যে কত বিনিয়োগ ও কোন কোন শীর্ষ ব্র্যান্ড শিল্পকে তাদের রাজ্যে জমি-শ্রম-জল-জঙ্গল প্রায়-বিনামূল্যে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ডেকে এনে ‘শিল্পায়নের রথ’কে ছোটাতে পারবে, তা নিয়েই ছিল চরম ধুন্ধুমার ও আকচাআকচি। সে ব্যাপারে ডান-বাম’এর মধ্যে কোনও ছুৎমার্গ’ও ছিল না। সে দিন গিয়েছে। এখন আর সে সব কথা কেউ বলে না। এখন বরং গরিব মানুষকে কতটা কী আয় বা খয়রাতি দেওয়া যায় তা নিয়েই সব দলের উৎকণ্ঠা ও উচ্ছ্বাস। সে কেরলের বিজয়ন হোন কি অন্ধ্রপ্রদেশের জগন রেড্ডি অথবা পশ্চিমবঙ্গের মমতা বা উড়িষ্যার নবীনবাবু কিংবা দিল্লির কেজরিওয়াল বা তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও, মায় কেন্দ্রীয় সরকারের মোদিজী, সকলেরই ঘোষিত উদ্দেশ্য ‘জনকল্যাণ’। আর তার বাস্তব রূপ- কিছু টাকা (কোনও কোনও ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য) সরাসরি গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভরে দাও। এ শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এখন এই একই আওয়াজ বা কার্যসূচি: গরিব মানুষের কল্যাণ। প্রশ্ন হল, এমত এক সাধারণ একমাত্রিক অবস্থানে কীভাবে সকল রাজনৈতিক দল পৌঁছে গেল যেখানে আগে তাদের রাজনৈতিক-অর্থনীতিগত ভিন্ন ভিন্ন নীতি ও অবস্থান ছিল? বুঝতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশ্রিত আধুনিক অর্থনীতিই এর মুখ্য কারণ ও নিয়ন্তা।

অর্থাৎ, আজকের অর্থনীতির গতিপথে আলাদা করে কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিত্বের আর তেমন কোনও প্রভাব বা আদর্শ কাজ করছে না। কারণ, অর্থনীতি বিকাশের সূত্র ও স্টিয়ারিং চলে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে যেখান থেকে প্রায়-অবধারিত ও নৈর্ব্যক্তিক এক কর্মধারা প্রবাহিত হচ্ছে আপন নিয়মে। সেখানে মূল গতিধারায় রাজনীতিকদের আর বিশেষ কিছু করার নেই। শুধু রাজনীতিক বলি কেন, অর্থনীতিবিদ বা সমাজতাত্ত্বিকদেরও আর কিছু বলার নেই। কিন্তু এই মূল প্রবাহের যে অবশ্যম্ভাবী প্রান্ত, যেখানে জায়গা নেবে মূলস্রোতের ‘অবাঞ্ছিত’রা, তাদের বেঁচেবর্তে থাকার জন্য যে করণীয়টুকু, সেটুকুর কথাই আজকের রাজনীতিবিদেরা বলতে পারেন বড়জোর। আর তা হল ‘জনকল্যাণ’ যা আধুনিক পরিভাষায় সর্বোচ্চ স্তরে ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’এর ভাবনায় পরিণতি পেয়েছে।

তাহলে রাজনীতিবিদদের চলবে কী করে? নানা দল, নানা মতাদর্শ, বিবিধ ভাবনাচিন্তা, নির্বাচনী লড়াই- এসবের কি আর কোনও মূল্যই থাকবে না? থাকবে, কিন্তু তা সীমিত পরিসরে। নির্বাচন বা কোনও সংকটের সময় কোনও বাগাড়ম্বরতার আবরণে; কিছু চমক সৃষ্টি বা আলঙ্কারিকতার উচাটনে অথবা ক্ষমতার লোভে সংঘাত সৃষ্টির বাতাবরণে, আর যা কিছু এমনতর তা মূল কক্ষপথকে বিড়ম্বিত না করেই।

গত চার-পাঁচ বছরে সারা বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাদের উত্থানপর্বগুলি খেয়াল করুন এবং তাদের বাচনগুলি মন দিয়ে লক্ষ করুন। কেউই অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিন্তু নতুন কোনও নীতি বা দিগদর্শন আনছেন না। বরং, তাদের ভাবনাচিন্তায় প্রকাশ পেয়েছে হম্বিতম্বি ও বাহ্যিক হুঙ্কার। যেমন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চিৎকার করছেন, আমেরিকা আমেরিকাবাসীদের জন্য, মেক্সিকো’র সীমান্ত জুড়ে পাঁচিল তুলছেন, তখন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি বোলসোনারো অভিযোগ করছেন অ্যামাজনের বৃষ্টি-অরণ্যে আগুন লাগার পেছনে অভিনেতা ডিকাপ্রিও’র অর্থ আছে। এমনকি এই কোভিড সংকটের সময় হু’কে অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিতেও ট্রাম্প কুন্ঠা বোধ করেননি। আর এই পদক্ষেপগুলি জনতার এক অংশের, কখনও কখনও বড় একটি অংশের সমর্থনও পাচ্ছে। একইভাবে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসা বা ভারতে নিরলস ভাবে যে কোনও সমস্যার জন্যই একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বারবার টার্গেট করা- এসবও হল অসহায় রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় আরোহণ বা টিকে থাকার মোক্ষম হাতিয়ার। এতে অর্থনীতির মূল কক্ষপথের কিছুই যাচ্ছে আসছে না। বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে যাদুকাঠিতে অর্থনীতির এক আপন গতিপথ নির্মিত হয়েছে, সেই প্রযুক্তিগত কলাকৌশলকে রাজনীতিবিদরা আয়ত্ত করে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও ক্ষমতায় টিকে থাকার নানাবিধ উপায় বের করার চেষ্টা করছে। তা চীন থেকে রাশিয়া, আমেরিকা থেকে ভারত অথবা ব্রিটেন থেকে ব্রাজিল সর্বত্রই প্রযোজ্য। কিন্তু সকলেই জানেন, শুধুমাত্র তথ্যের ভাণ্ডার গড়ে, নজরদারি চালিয়ে ও আলঙ্কারিক ভাষণ দিয়ে নিজ নিজ শাসন লাগাতার অটুট রাখা যায় না। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার দিকেও ফিরে তাকানো আবশ্যক। আর সে কারণেই আজ অতীব গুরুত্ব পেয়েছে পড়ে থাকা সবেধন নীলমণি ‘জনকল্যাণ’এর রাজনীতি।

কেন ‘জনকল্যাণ’এর রাজনীতি? আসলে, অর্থনীতির জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এনেছে তার ধারা-উপধারাকে এতটুকু বদলাবার ক্ষমতা কোনও রাজনৈতিক দলের নেই। বরং, সে বুদ্ধিমত্তার নির্দেশ মোতাবেক সামাজিক ও রাজনৈতিক-অর্থনীতির পরিসরে যে অভিঘাতগুলি তৈরি হবে তাকে সুবোধ বালকের মতো ‘জনকল্যাণ’এর প্রলেপ দেওয়াটাই রাষ্ট্র ও রাজনীতিবিদদের এখন অন্যতম কাজ। কিন্তু সে কাজগুলি যে রাষ্ট্র সব সময় ঠিকঠাক করে উঠতে পারবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই তাকে নানারকম বাগাড়ম্বরতা, আলঙ্কারিকতা ও হুঙ্কারের রাজনীতিও চালিয়ে যেতে হবে। ফলত, রাজনৈতিক সমস্যার বীজগুলিও প্রকারান্তরে বিশ্ব জুড়ে জমা হচ্ছে, যার নানাবিধ প্রকাশে জনতার মধ্যে সঞ্জাত দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের আবহাওয়া পাকিয়ে উঠছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে অর্থনীতির রশি ছেড়ে রেখে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে আর যাই করা হোক না কেন তার সম্ভাব্য ফলাফল অতীব সীমিত। কিন্তু এছাড়া আর করণীয়ই বা কী? তাই দেখা যায়, বাম ও ডান কিংবা উদারবাদী ও রক্ষণশীল- এই সীমারেখাগুলি আজ ক্রমশই ম্লান।

বারবার বলার চেষ্টা করেছি, অর্থনীতি কার্যক্রমের বলয়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দখল নিয়ে নেওয়াতে ও ভার্চুয়াল ক্ষেত্র ক্রমশ প্রধান সড়কে চলে আসার কারণে কতিপয় কর্পোরেট হাউজ ও বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদের হাতেই চলে যাবে দুনিয়ার মুখ্য গতিমুখ; যা অধরা, সূত্র-চালিত ও অদৃশ্য। বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ (স্বশিক্ষিতও হতে পারে) ছাড়া এর নিয়মনীতি কারও জানার কথা নয়, বিরুদ্ধাচরণ তো আরও দূরের বিষয়। পুঁজি ও মুনাফা এখানেও প্রথম ও শেষ কথা। যারা পড়ে থাকবেন এই বলয়ের বাইরে (স্থায়ী ভাবে নয়, কে কখন কাজে আসে সেও অনিশ্চিত), যেমন এক সুবিশাল আপাত কর্মহীন মানুষের দল, তাদের দেখভাল ও জীবনপ্রবাহকে সুস্থির রাখাটাই হবে রাজনীতিকদের একমাত্র কাজ। নয়তো সমাজ জুড়ে বিস্ফোরণ হবে যে! আর এই নিদান বারংবার দিয়ে চলেছে কর্পোরেট মহারথীরাই। অতএব, কোনও কোনও রাজনৈতিক দল জনতার মধ্যে বিরাজমান নানান দ্বন্দ্বগুলিকে উস্কে, আবার কেউ কেউ অন্যরকম সত্য-মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছড়িয়ে নিজেদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করে যাবে। মোদ্দা কথাটা হল, অর্থনীতির মূল কক্ষপথে হাত দেওয়ার কারও কোনও উপায় যখন নেই তখন ‘জনকল্যাণ’এর দোহাই দিয়ে প্রাসঙ্গিক থাকার প্রতিযোগিতা। সে অর্থে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তেমন কোনও ফারাকও অতএব নেই, নানাবিধ কিছু হুঙ্কার ছাড়া।

কোভিড১৯ এই গোটা কর্মপন্থাকে এক ধাক্কায় আরও ওলটপালট করে দিয়েছে। খেয়াল করে দেখুন, আজ আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত’কেও প্রকাশ্যে বলতে হচ্ছে, নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জমায়েত নিয়ে গোটা সম্প্রদায়কে দায়ী করা ঠিক নয়। উচ্চহারে মুনাফার তাড়নায় পুঁজির যে সর্বগ্রাসী দখলদারি তা অবশেষে প্রকৃতিকেও রেয়াত করেনি। স্বভাবতই প্রকৃতি তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। সে মানুষকে দীর্ঘকালের জন্য ঘরবন্দী করেছে দখল হয়ে যাওয়া নিজ পরিসরকে উদ্ধার করতে। ঘরবন্দী মানুষ নিরুপায়- সে আজ আর যুদ্ধ করতে পারে না, দাঙ্গা লাগাতে পারে না, খুন-খারাপি, লুঠতরাজও করতে পারে না। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি তাই পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা, সন্দেহ ও উষ্মারও আপাত অবসান ঘটাবে। হয়তো কিছু শব্দ-বাক্যে, উচ্চারণে সে সব থেকে যাবে, যেমন আমরা চলচ্চিত্রে দেখি। যেমন, ট্রাম্প এখনও হাত গুটিয়ে তাঁর নিজের দেশের অর্ধলক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য চীনকে দুষে চলেছেন।

আর এইসব নাটকীয়তার মধ্যে সম্প্রতি পরস্পর বিরোধী দুই উল্লেখযোগ্য বয়ান রেখেছে ফেসবুক ও টেসলা’র প্রধান যথাক্রমে মার্ক জুগেরবার্গ ও এলন মাস্ক। জুগেরবার্গ যেখানে লকডাউনের পক্ষপাতী সেখানে মাস্ক বলছেন অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের কথা। তার কারণও সুবিদিত। জুগেরবার্গ’এর চাই ঘরবন্দী মানুষ, যারা আসলে হয়ে উঠবেন সার্ভার বা ক্লাউড-নির্ভর, আর মাস্ক’এর চাই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি উৎপাদন ও বিক্রির জন্য উন্মুক্ত কর্মপরিসর। ভার্চুয়াল দুনিয়ার উপযোগিতা বনাম ত্রিমাত্রিক বস্তুগত উপযোগিতা- এই দুইয়ের দ্বন্দ্বে পুঁজি ও মুনাফার ভার কোনদিকে থাকবে তাই এখন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মূল টাগ-অফ-ওয়ার। যদিচ ত্রিমাত্রিক বস্তুর উৎপাদনেও মনুষ্য শ্রমের অংশভাক ক্রমশই ক্ষীণতর তবুও তার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে লকডাউন এখন প্রতিবন্ধক। পক্ষান্তরে, সার্ভার বা ক্লাউড নির্ভর কর্মপরিসরে লকডাউনের উৎপাত সে অর্থে প্রায় নেই। ভবিষ্যতে লকডাউন যখন থাকবে না ততদিনে ক্লাউড-নির্ভর অর্থনীতির আঙ্গিকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে মনুষ্য প্রজাতির সিংহভাগ। এই যেখানে অর্থনীতির অভিসন্ধি, সেখানে থোড়বড়ি খাড়া রাজনীতিবিদদের ছেদো কথায় আর কিছু যায় আসে কী! 

তবুও সোশ্যাল মিডিয়া উপছে উঠছে রঙ্গ-ব্যঙ্গ, মিম, রসিকতা, পোস্ট, আলোচনা, তক্কে-বিতর্কে। পাল্লা দিয়ে রাজনৈতিক দল ও নেতারা, টিভি'র আলোচকেরা, রেডিও জকিরা সকলেই নানাবিধ মত-অমতে রুদ্ধ, বিদ্ধ, পরাক্রান্ত। কিন্তু তাতেই বা কী? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ভার্চুয়াল দরবার তার গভীর সূত্র ধরে সকলকে ছাপিয়ে আগুয়ান সর্পিল গতিতে। তাতে ওই দু-চার ফোঁটা চোনায় কী আসে যায়? এই অবরুদ্ধ সময়েই তো হোয়াটসআপ আর জিওমার্ট ঘর বাঁধল দুয়ার এঁটে! ভোকাট্টা! 

2 comments:

  1. ‘রাজনীতিকদের হম্বিতম্বির প্রাসঙ্গিকতা’ খোলসা করে বোঝাতে গিয়ে লেখক বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপিত করেছেন এই লেখাটিতে। লেখকের সমকালীন রচনাগুলির মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিকতা রয়েছে, যা সময়ের পরিবর্তনের সাথে আরো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে উঠছে। সমগ্র বিশ্বে প্রত্যহ প্রযুক্তি, বাণিজ্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে যা কিছু বিশেষ ঘটে চলেছে লেখক সেই তথ্যের ভিত্তিতেই নিজের মৌলিক বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরেছেন, যা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
    যে প্রযৌক্তিক ঘুড়ি বিশ্ববাণিজ্যের আকাশে রাজনৈতিক ঘুড়িকে ভোঁকাট্টা করে, তার লাটাইটা আবার যার হাতে তার পা কিন্তু বহুতলের ছাতের আলসেতে টলমল করে। মাটিতে অপেক্ষমান কাটা ঘুড়ি সন্ধানী দামাল বালকের দল একদিন নিশ্চয়ই আজকের বিজয়ী ঘুড়িটি লটকে নেবে তাদের কঞ্চীতে।
    Gig economy-র আবহে নয়া পুঁজীপতিরাও কিন্তু নিরুদ্বিগ্ন নয়। নিজেদের বৈভবে ক্রমবর্ধন ঘটাতে না পারলে এদের পতনও অনিবার্য। এদের সংকটের খবর কিন্তু বিশ্বে অপ্রতুল নয়। এই বিষয়ে একটু আলোকপাতের প্রয়োজন ছিল এই লেখাতে যা বিকল্প চিন্তার অবকাশ রাখে।

    ReplyDelete