Pages

Monday, 27 April 2020

ষড়যন্ত্রের গল্প!

করোনা তাণ্ডব
অশোকেন্দু সেনগুপ্ত
- এটা কী তবে কোনও ষড়যন্ত্র?

বিল গেটস নাকি ২০১৫ সালেই জেনেছিলেন করোনা ভাইরাস এক মহামারী  হয়ে আসছে পৃথিবীতে। তিনি আমাদের সতর্কও করেছেন আবার তার সংস্থা এ সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞানের 'পেটেন্ট'ও নিয়ে ফেলেছে। এ কী দূরদৃষ্টি  না ষড়যন্ত্র?  যদি বলি দূরদৃষ্টি তবে বলতেই হয় যে, মহামতি ট্রাম্পেরও দূরদৃষ্টি কম নয়। তিনি ধরে ফেলেছেন যে এমন মারণ ভাইরাস তৈরি হয়েছে চীনে আর তার অতি তৎপর গোয়েন্দাবাহিনী বা কম কীসে? তারা হার্ভার্ডের অধ্যাপক চার্লস লাইবারকে গ্রেফতার করেছে। অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই নাকি চীনের হাতে এই ভাইরাস সৃষ্টির কৌশল তুলে দিয়েছেন,  পাচার করেছেন রাসায়নিক যুদ্ধের এই মারণাস্ত্র।

তবে, ট্রাম্প সাহেব এর আগে লিবিয়া, তারও আগে গড্ডাফির বিরুদ্ধেও রাসায়নিক যুদ্ধের ষড়যন্ত্রের  অভিযোগ এনেছিলেন, কিন্তু তা প্রমাণ করতে পারেননি। তা না পারলেও তিনি পৃথিবীতে  সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতে সফল হয়েছিলেন বেশ কিছুটা। বাকিটুকুর দায়িত্ব নিলেন নরেন্দ্রভাই। দুজনেই জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন এবং ক্ষমতায় না এলে নেতা চেনা যায় না এমন গুজবকে সত্য প্রমাণে ব্যস্ত হয়েছেন। এরা এখন গণতন্ত্র ধ্বংসে ব্যস্ত। কেউ কেউ বলছে ওদের একজন যদি ঢ্যামনা তো অন্যজন ঢেমনি। কে ঢ্যামনা, কে ঢেমনি তা আমি জানি না অবশ্য। কিন্তু জানি তাদের ভারি মিল। একজন যেই প্রশ্ন তুললেন হু'র কার্যপদ্ধতি নিয়ে অন্যজন তারপরই বলে দিলেন হু-কে আর অর্থ সাহায্য দেবে না তারা। ট্রাম্প-অনুরাগী সংবাদমাধ্যম তো আগেই হু-র ডিরেক্টর জেনারেলকে ডিক্টেটর জেনারেল বলে হু-র সমালোচনা শুরু করে দিয়েছিল; করবে না কেন- ভদ্রলোক যে আমেরিকার পছন্দের প্রার্থীকে ভোটে হারিয়ে ঐ পদে এসেছেন। এ তো অন্যায়! তাই ভদ্রলোকের অপরাধের শেষ নেই। ট্রাম্প এখন তাঁর অপরাধের কাহিনি বলে চলেছেন- হু নাকি (মার্কিন বাজারের স্বার্থ না দেখে) চীনের স্বার্থ দেখছে বেশি। অভিযোগ গুরুতর। এদিকে লোক মরছে হাজারে হাজারে,  আমেরিকাতেও। তা মরুক, বাজার বাঁচলেই হল। একে কী মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলা যাবে না? এই ষড়যন্ত্রে কী মোদিভাই আছেন? তা জানি না। তবে তার দল যে আছে তা কে না জানে? তার দলেরই তো কেউ কেউ অতি উৎসাহে ঘন্টা, কাসর বাজাতে বাজাতে বলে বসল, 'আসছে বছর আবার হবে।' তাই হবে বুঝি!

আমার বাড়ির রাঁধুনি অবশ্য ষড়যন্ত্রের  কোনও খবর জানত না। এ বিষয়ে তার কোনও আগ্রহও নেই। বেচারা লকডাউনে বন্দী হয়ে আমার বাড়ি আসতে পারে না, বাজারে যেতে পারে না, খেতে পায় না। একদিন এক ঠেলাওয়ালা সব্জি নিয়ে এল তার উঠোনের পাশে। তবু, তার কেনা হল না সে সব্জি। তার আপনজনেরা বলে উঠল, ওর কোনও জিনিস কেনা যাবে না, ও যে মুসলমান।  লোকটা বলেছিল, আমি চাষি,  তোমরাও যদি ফেরাও তো বেচব কুথায়?  লোকটা যাবার সময় বলে গেছে আমাদের ওখানে সব চাষিই তো মুসলমান। ফসল যদি না বিক্রি হয় তো  আমরা আর চাষ করব না। কেন করব?

এ-ও কী ষড়যন্ত্র?  কে জানে? যারা এই সব গরিব খেটে খাওয়া মানুষ আর চাষির খাওয়া, আয়ের পথ বন্ধ করেছে তারা হয়তো জানে, আমি জানি না। আমি কেবল এটুকু জানি যে ট্রাম্প ও মোদিভাই মানবতার শত্রু, এরা যত দ্রুত ষড়যন্ত্র থামায় তত দ্রুত শান্তি ফেরে পৃথিবীতে। খেটে খাওয়া মানুষ কাজ পায়, খেতে পায়, তাতেই তো তাদের শান্তি, পৃথিবীর শান্তি।

1 comment: