Pages

Tuesday, 4 July 2017

ভাঙড়ের জমি আন্দোলন


ভাঙড় আন্দোলন নিয়ে দু-চার কথা
আশিস দত্ত

সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের পর ভাঙড়। শাসকের চরিত্র বদলায়নি। পরিস্থিতির কিছু ফারাক অবশ্যই আছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে সরকার কৃষিজমি অধিগ্রহণ করেছিল কর্পোরেট স্বার্থে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি কেন্দ্রিয় সরকারের এবং এর একটা জনস্বার্থ মূলক আপাত ভূমিকা আছে - পরিকাঠামো উন্নয়ন। তাই সরকারি প্রক্রিয়া, ভাঙড়ের বাইরে, জনসাধারণের কাছে মান্যতা পেয়ে যায়। নন্দীগ্রামে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালনার পর সারা পশ্চিমবঙ্গে, দেশে, এমনকি বিশ্বে যে বিপুল আলোড়ন উঠেছিল, যার জেরে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পাকাপোক্ত ভিত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল, তার তুলনায় এই আন্দোলনের প্রভাব মৃদু কম্পন মাত্র। অথচ মনে হয় যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সেই নিরস্ত্র জনতা, সেই পুলিশের গুলি চালনা, সেই চপ্পল পায়ে পুলিশ, অর্থাৎ পুলিশ বেশে শাসক দলের ক্যাডার এবং গুলি চালনার পরে সেই একই ধন্দ - কে চালাল, কেন চালাল? একটু গভীরে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনস্বার্থে সরকারি প্রকল্প রচনা ও তার রূপায়ণ করতে গেলে যে জনসংযোগ এবং জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়োজন সরকার প্রথম থেকেই তার ধারকাছ দিয়েও যায় নি।

জমি অধিগ্রহণ
সিঙ্গুর- নন্দীগ্রামের সেই সাড়া জাগানো আন্দোলনের পর শতাব্দী-প্রাচীন জমি অধিগ্রহণ আইন বদল করতে বাধ্য হল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট লোকসভায় Right to Fair Compensation and Transparency in Land Acquisition, Rehabilitation and Resettlement Act পাশ হয়। রাজ্যসভায় বিলটি অনুমোদিত হয়েছে ৪ সেপ্টম্বর এবং রাষ্ট্রপতি দ্বারা স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর বিলটি গেজেটে প্রকাশিত হয়। ঘোষিত হয় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিলটি কার্যকর হবে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবিত রাজারহাটে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশনের জন্য ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে মা-মাটি-মানুষের সরকার ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন অনুসারে। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে রাজারহাটের পরিবর্তে কাশীপুর থানার অধীন ভাঙড়-২ ব্লকে প্রকল্পটি স্থানান্তরিত হয়। এই অঞ্চলের জমি সিঙ্গুরের মতই তিন-ফসলি। সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে আমরা জেনেছিলাম চিহ্ণিত জমিটি টাটা'র পছন্দ। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই তথ্যটি জনসমক্ষে প্রকাশিত হয় না। পাছে বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তাই তড়িঘড়ি ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। অথচ সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন, '১৮৯৪ সালের দানবীয় অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী মা-মাটি-মানুষের সরকার কোথাও এক কাঠা জমিও নেবে না'। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে ছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। ভাঙড়ে আমরা দেখলাম আরাবুল বাহিনীর দাপট। গায়ের জোর দেখিয়ে, জুলুমবাজি করে, এমনকি প্রয়োজনে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে আরাবুল কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র দামে জমি আদায় করে। ফলে আরাবুল দলের কাছে হয়ে যায় 'তাজা ছেলে'।

সাবস্টেশনের ধাপ্পা
পাওয়ার গ্রিড করর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (PGCIL) লিখিত ভাবে জানিয়েছিল যে এই সাবস্টেশনটি রাজারহাট, নিউটাউন ও ভাঙড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য তৈরি করা হবে। কিন্তু এটি যে পুর্ণিয়া থেকে ভাঙড় পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বৃহৎ বিদ্যুৎ সংবহন প্রকল্পের অংশ, সে কথা চেপে যাওয়া হয়।এলাকার উন্নয়নের কথা PGCIL লিখিতভাবে বিডিওকে জানিয়েছিল। কিন্তু এই গ্রিডটি যে পুর্ণিয়ার ন্যাশনাল গ্রিড-এর সাথে যুক্ত থেকে জিরাট-সুভাষগ্রাম-গোকর্ণ সহ বিভিন্ন সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ তথা আদানপ্রদানের কাজ করবে সে কথা তারা গোপন রেখেছিল। এলাকার মানুষকে বোঝানো হয়েছিল যে আর পাঁচটা মামুলি সাবস্টেশনের মতোই এটি আরেকটি সাবস্টেশন। সেই কারণেই শত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব্যাপক মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়নি। কিন্তু সাবস্টেশন বসানোর বিরুদ্ধে গণসাক্ষর সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেওয়ার মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি জারি ছিল। গ্রামবাসীরা যখন দেখলেন বিভিন্ন দিকে বিদ্যুৎ সংবহনের টাওয়ার বসানোর তোড়জোড় চলছে তখন বাধ্য হয়ে তারা সংঘবদ্ধ প্রতিরোধে নামলেন। গঠিত হল 'জমি জীবিকা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি'। এই কমিটি পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করে, এই প্রকল্পের প্রকৃত তথ্য জনসাধারণের কাছে হাজির করতে। এই দাবি নিয়ে প্রায় দশ হাজার মানুষের এক মহা মিছিল ৭-৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রজেক্ট অফিসে যায়। কিন্তু ডেপুটেশন নেওয়া তো দূরের কথা, পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষ তাদের অফিসে তালা মেরে পালিয়ে যায়। আগে থেকে জানিয়ে রাখা সত্ত্বেও গ্রিড কর্তৃপক্ষ কমিটি তথা জনতার সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসেননি। অথচ PGCIL-এর ওয়েব সাইট খুললে দেখা যাবে - 'স্বচ্ছতাই আমাদের কাজের মূল চাবিকাঠি। যে কোনও প্রজেক্টের কাজ আমরা Public Consultative System-এর মারফত করে থাকি'। মানুষকে বোকা বানিয়ে ধাপ্পা দেবার এমন নির্লজ্জ উদাহরণ আর পাওয়া যাবে না।

প্রযুক্তি গোপন
উচ্চ বিভব সম্পন্ন তড়িৎ সংবহনের ক্ষেত্রে দুই ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে - Gas Insulated Switchgear (GIS) এবং Air Insulated Switchgear (AIS)। এই দুটির মধ্যে GIS প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নততর ও বেশি কার্যকর। এই প্রযুক্তিতে সালফার হেক্সাফ্লোরাইড (SF6) গ্যাস ব্যবহার করা হয়। গ্যাসটি নিষ্ক্রিয়, কিন্ত, এটি গ্রীনহাউস গ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব উষ্ঞায়নে SF6 কার্বনডাইঅক্সাইড থেকে ২২৮০০ গুণ ক্ষতিকারক এবং বাতাসে একবার লিক হলে ৩২০০ বছর স্থায়ী থাকে। SF6 বাতাস থেকে ভারী তাই ওপরে উঠে যেতে পারে না। নিষ্ক্রিয় হলেও এটি অক্সিজেনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে তাই প্রশ্বাসের সঙ্গে বেশি পরিমাণে ফুসফুসে ঢুকলে শ্বাস কষ্ট দেখা দিতে পারে। তবে এই গ্যাস ধাতব আধারের মধ্যে থাকায় বড় ধরনের লিক সাধারণত হয় না। এই SF6 গ্যাস প্রযুক্তিই ভাঙড়ে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। ইঞ্জিনিয়র যখন দলবল নিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত শষ্যক্ষেত্রে নেমে পড়ে তড়িৎ সংবহনের জন্য টাওয়ারের জমি মাপজোখ শুরু করেন তখন গ্রামবাসীরা বুঝতে পারে বড় একটা কিছু হতে যাচ্ছে। তারা ইঞ্জিনিয়রকে ঘেরাও করে ফেলে। চাপের মুখে ইঞ্জিনিয়র কবুল করতে বাধ্য হন যে, এটি স্থানীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি মামুলি সাবস্টেশন নয়। এখান থেকে ষোলটি উচ্চ বিভব সম্পন্ন লাইন ভাঙড়ের শষ্য ক্ষেত, জলাভূমি, মাছের ভেড়ি, ইটভাটা, এমনকি বসতির ওপর দিয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে। অর্থাৎ, স্থানীয় বিদ্যুৎ সমস্যার যে গল্পটি ফাঁদা হয়েছিল তা আসলে একটি ছেলেভোলানো ধাপ্পা। জনগণের উন্নয়ন-প্রকল্পে এত লুকোছাপা কেন! কোনও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে যদি পরিবেশে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে তাহলে তো উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং জনসাধারণকে অবগত করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তা করে নি।

বহিরাগত তত্ত্ব
সিঙ্গুর-আন্দোলনের সময় এই তত্ত্বটা আমদানি করেছিল বামপন্হীরাই। চে গোয়েভারার উত্তরসূরীরা এমন একটি তত্ত্ব, কৌশল হিসাবেও, মগজে লালন করতে পারে তা ধারণাতীত। এটা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবার নিদর্শন। ভাঙড়ের আন্দোলন ভাঙ্গার জন্য বর্তমান সরকার তথা শাসক দলও একই পন্থা নিয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় বর্তমান শাসক দলের নেতা-নেত্রীরাও বহিরাগত ছিলেন। এমনকি রাজারহাটের বিধায়ক যখন সদলবলে ভাঙড়ে প্রবেশ করেন আন্দোলনকারীদের অবরোধ ভাঙ্গতে তখন তারাও বহিরাগত। বহিরাগত তত্ত্ব প্রচারের সময় সে কথা তারা বিস্মৃত হন। নাকি শাসকদল মাত্রই মাওবাদীদের বহিরাগত মনে করে? কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামেও এরাই তো আন্দোলনের সঙ্গী ছিল। তাহলে আজ এরা বহিরাগত হয়ে যায় কোন যুক্তিতে? স্বাধীন সার্বভৌম ভারতবর্ষে যে কোনও জায়গায় বিচরণ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো তো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ নয়।

কুসংস্কার বনাম বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষের সভ্যতা যত এগিয়েছে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়েছে। পৃথিবীর উষ্ঞায়ন এর একটি উদাহরণ। প্রকৃতির ওপর গ্রীনহাউস গ্যাসের প্রভাব বুঝতে মানুষের শতাধিক বছর লেগে গেছে। কেননা এই প্রভাব একটু একটু করে বিশাল আকার ধারণ করলে তা মানুষের গোচরীভূত হয়। উচ্চ বিভব সম্পন্ন তড়িৎবাহী তারের নিচে একটি তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হয়, এ কথা বৈজ্ঞানিক সত্য। এই তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাব মানবদেহ, গাছপালা, পশুপাখি, মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী, এমনকি মাটির সঙ্গে মিশ্রিত বিভিন্ন মৌল বা যৌগ পদার্থের ওপর কী ভাবে পড়ে তা বহু বছরের গবেষণার বিষয়। কেননা এই প্রভাবের তাৎক্ষণিক মাত্রা পরিমাপ-যোগ্য নাও হতে পারে। প্রকৃতির ওপর প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে বিশ্বে অনেক গবেষণা পত্র আছে। আজকাল ইন্টারনেটের দৌলতে তা সহজলভ্য। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিগণ সেগুলি পড়ে দেখতে পারেন। কিন্তু তা না করে, বাস্তুতন্ত্রের ওপর তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাব বিষয়ে আন্দোলনকারীদের প্রচারকে নস্যাৎ করে দেওয়াটাই অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। আন্দোলনকারীদের প্রচারপত্রটিকে সরকার এবং শাসকদল কুসংস্কার বলে দাবি করছে। বহু শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী এতে প্রভাবিত হয়েছেন এবং আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ, আন্দোলনকে ভাঙ্গার জন্য সরকার ও শাসকদল কুসংস্কারের ধারণাটিকে প্রচার করছে।
 
১৩ একরের গল্প
ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রীড সাবস্টেশনের জন্য ১৩.৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সিঙ্গুরে যেখানে ১০০০ একর অধিগৃহীত হয়েছিল এবং নন্দীগ্রামে কথা ছিল ২৫০০ একর জমি জমি অধিগ্রহণের সেই তুলনায় ভাঙড়ের এই জমি তো যৎসামান্য। সে নিয়ে এত বিরোধ কেন? কিন্তু সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সংবহনের জন্য যে জমির ওপর টাওয়ার বসবে তা এর মধ্যে ধরা নেই। টাওয়ারের জমি সরকার অধিগ্রহণ করে না বা এর জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দেয় না। সেই জমি কৃষক চিরতরে হারায়। এর ওপর, বৈদ্যুতিক তারের নিচের জমিতে তড়িৎ চৌম্বকীয় প্রভাবের ফলে কৃষকরা চাষ করতে পারে না। প্রভাবযুক্ত এই জমির বহর ৬০-৮০ মিটার। গ্রীড কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, 'হাই ভোল্টেজ তারের নিচে বা পাশে কোনও বাড়ি ঘর বানানো যাবে না, কোনও লোহার বা বাঁশের খুঁটি পোঁতা যাবে না। এই বিদ্যুতের তারের নিচে বা তার আশপাশে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে গ্রীড কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।' এর থেকেই পরিষ্কার যে প্রকৃতপক্ষে কৃষক আরও কয়েক শত একর জমি হারাবে। এই জমির জন্য তারা না পাবে কোনও ক্ষতিপূরণ, না করতে পারবে চাষ। এর ফলে এই জমির বাজার মূল্য কমে যাবে। চাষী এই জমি বিক্রি করতে চাইলে উপযুক্ত দাম পাবে না।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকারী-সন্ত্রাস
খাতায় কলমে ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু তা শুধুমাত্র ব্যালট বাক্সে সীমাবদ্ধ। জনস্বার্থে প্রকল্প রচনায় ও রূপায়ণে সাধারণ মানুষের ভূমিকা ও অংশগ্রহণকে গুরুত্বই দেওয়া হয় না। তাহলে দেখা যেত, ভাঙ্গড়ের বাস্তুতন্ত্র অনুযায়ী মাছের ভেড়ির আধুনিকীকরণ, মৎস্য রপ্তানিতে সরকারি সহায়তা এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা অনেক বেশি জরুরি। গাড়ির কারখানার জন্য সিঙ্গুরের জমি নির্ণয় যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে পাওয়ার গ্রীডের জন্য ভাঙড়ের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ জনস্থান নির্ণয়ও ভুল। নানা উপায়ে ভাঙড়বাসীর সংঘবদ্ধ আন্দোলনকে ভাঙ্গতে না পেরে সরকার আইনি সন্ত্রাসের পথ নিয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মুখে বলছেন, 'মানুষ না চাইলে পাওয়ার গ্রীড হবে না।' মানুষ যে ঐ জায়গায় পাওয়ার গ্রীড চাইছে না সে তো তাদের ঐক্যবদ্ধ অনমনীয় আন্দোলন থেকেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি প্রকল্প বাতিল হয়নি। বরং, আন্দোলনের নেতা নেত্রীদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা যাবে না বুঝতে পেরে ইউএপিএ ধারা প্রয়োগ করে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, সরকারের চোখে আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রদ্রোহী। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা না করে, সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।

('নিরন্তর' পত্রিকার মে সংখ্যায় প্রকাশিত)

No comments:

Post a Comment