Pages

Wednesday, 15 June 2016

কলকাতার কিডনি

মেয়র কি অমূল্য বাস্তুতন্ত্রের মৃত্যুর জয়ডঙ্কা বাজাচ্ছেন?


দেবব্রত চক্রবর্তী
 শ্রীযুক্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়  মহাশয় কেবলমাত্র কলকাতার মেয়র মাত্র নন, বর্তমানে আমাদের রাজ্যের মহামান্য পরিবেশমন্ত্রীও বটে তাসিংহাসনে অধীন হওয়া এবং প্রমোশন প্রাপ্তির দু' সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই তিনি সম্প্রতি পূর্ব কলকাতা জলাভূমির আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ 'রামসার’ স্বীকৃতির বিষয়ে ভীষণ উষ্মা প্রকাশ করেছেন ১৯৭১ সালে ইরানের রামসার শহরে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিগুলির সংরক্ষণ এবং যুক্তিসঙ্গত দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের স্বার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলি নিজেদের মধ্যে এক চুক্তি সম্পাদন করে ১৯৮২ সালে ভারতবর্ষ এই রামসার চুক্তির সাথে যুক্ত হয় এবং আমাদের রাজ্যের অন্যতম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইকোলজিস্ট ধ্রুবজ্যোতি ঘোষের উদ্যোগে ২০০২ সালে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি 'রামসারস্বীকৃতি পায় আপনারা জানেন, সারা পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ২২০০ গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি রামসার তালিকাভুক্তভারতের মাত্র ২৬টি জলাভূমি এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অধিকারী এবং তার মধ্যে অন্যতম আমাদের পূর্ব কলকাতার  জলাভূমি উল্লেখ্য, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য উড়িষ্যার  ভিতরকনিকা ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং জলাভূমিও এই রামসার তালিকাভুক্ত

আমাদের পরিবেশমন্ত্রী বলেছেন 'রামসার' তালিকায় নাম থাকার দরুণ পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় ঠিকঠাক উন্নতি করতে পারছেন না। এদিকে কলকাতার প্রতিটি প্রবেশ পথে বিশাল হোর্ডিং ঝুলছে, Come to Bengal Ride the Growth আমাদের রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর মতে, কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির বিভিন্ন ইনফ্রাস্টাকচার প্রোজেক্ট, উন্নয়নের নীলনকশা পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ জমি আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি রামসার স্বীকৃতির কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না কলকাতার মেয়র হিসাবে তার বক্তব্য, রামসার স্বীকৃতির সময়ে এই বিষয়ে কলকাতা কর্পোরেশনের সাথে পরামর্শ করা হয়নিঅথচ ২০০২ সালে বিভিন্ন ব্যক্তির প্রয়াসে এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি যখন রামসার তালিকাভুক্ত হয় তখন কলকাতা কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ ছিল তৃণমূলের হাতে এবং কলকাতার মেয়র ছিলেন সুব্রত মুখার্জি আমাদের পরিবেশমন্ত্রী বুঝতেই পারছেন না যে এই পূর্ব কলকাতার জলাভূমির ভেতরের ভেড়ি এবং চাষিদের কাছ থেকে উচিত মূল্যে জমিগুলি কিনে নিয়ে সেখানে উনি বিভিন্ন প্রোজেক্ট করতে পারবেন না কেন? একদিকে কলকাতার মেয়র হিসাবে তিনি রামসার স্বীকৃতি বাতিল করার জন্য দরবার করছেন অন্যদিকে ওনার অধীনে পরিবেশ দপ্তর পরিবেশের ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে পূর্ব কলকাতার জলাভূমির অভূতপূর্ব চরিত্র বজায় রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত 

শোভনবাবুর হাতে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এবং জাইকা' কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট  বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রলোভন অথচ জমির অভাবে সেই প্রোজেক্টগুলি বাস্তবায়িত হতে পারছে না বাইপাসের পশ্চিম দিকে যখন হোটেল, হাউসিং কমপ্লেক্স সমেত বড় বড় প্রজেক্ট তখন বাইপাসের পূর্বদিকে বিপুল পরিমাণ জমি জলাভূমি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক চুক্তি রামসার স্বীকৃতি প্রাপ্ত হওয়ায় হুড়মুড়িয়ে উন্নয়নের রথ চালানো যাচ্ছে না আর যথারীতি বাকি রাজনৈতিক নেতাদের মতো রাগ গিয়ে পড়ছে পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের নামে উন্নয়ন বিরোধী মতামতের ওপর অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাদের মতো আমাদের মেয়র এবং রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মনে করেন পরিবেশ বাঁচানো এক অর্থহীন প্রয়াস এবং সেটা উচ্চারণ করতে তিনি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করেন না। তিনি বলেন, জলাভূমি সংরক্ষণ means little to the common man.

কলকাতার পূর্ব প্রান্তের প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট ১২৫০০ হেক্টরের এই জলাভূমি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং অত্যাশ্চর্য এক প্রাকৃতিক কিডনি পূর্বলকাতার জলাভূমি ময়লা জল এবং জঞ্জাল পুনঃব্যবহার, পরিশোধন এবং বর্জ্য থেকে উৎপাদনের অনন্যসাধারণ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম নজির ঐতিহাসিক কাল থেকে বর্তমানের লবণ হ্রদ  অঞ্চল থেকে পিয়ালি পর্যন্ত বিদ্যাধরী  নদীর একটি খাত বজায় ছিল এবং ব্রিটিশ জমানার প্রাথমিক যুগে সেন্ট্রাল লেক চ্যানেল মারফত কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা এই বিদ্যাধরী খাতের সঙ্গে যুক্ত ছিল পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে বিদ্যাধরীর এই খাত মজে যাওয়ায় ক্রমশ কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা সঙ্কটগ্রস্ত হয়ে পড়ে অবশেষে ক্লার্ক সাহেবের পরিকল্পনায় কলকাতা শহরের ময়লা জল হুগলি নদীতে ফেলার পরিবর্তে ১৮৭৫ সালে কলকাতা শহরের ভূগর্ভ পয়ঃপ্রণালী তৈরি হয় ৩৮ মাইলের ইঁটের এবং ৩৭ মাইলের পাইপের পয়ঃপ্রণালী কলকাতা শহর ছেয়ে ফেলে সমস্ত ময়লা জল বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পাম্প করে সেন্ট্রাল চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হতে থাকে  বিদ্যাধরী নদীর মুখে পরবর্তীতে গঙ্গা দূষনের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেল যে গঙ্গার তীরের প্রতিটি বড় শহর যখন শহরের বর্জ্য সরাসরি গঙ্গায় ফেলে গঙ্গা দূষণ ঘটাচ্ছে তখন একমাত্র কলকাতা শহর গঙ্গার পরিবর্তে শহরের বর্জ্য এবং ময়লা জল আজ থেকে ১০০ বছর আগে থেকেই শহরের পূর্বপ্রান্তের বিস্তীর্ণ জলাভূমির মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে শোধন করে গঙ্গার উল্টোদিকে চালান করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী এই অসাধারণ দৃষ্টান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ

বর্তমানে আমাদের শহর প্রত্যেক দিন প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন লিটার ময়লা জল এবং ২৫০০ টন কঠিন জঞ্জাল উৎপন্ন করে কলকাতা শহর স্থাপিত হওয়ার পর থেকে  আজ পর্যন্ত কোনও সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়নি  - শহরের সমস্ত নোংরা জল খোলা এবং ভূগর্ভের পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনে গিয়ে জমা হয়, পাম্পিং স্টেশনগুলি সেই জল বিন্দুমাত্র শোধন না করে পাম্প করে ফেলে বিভিন্ন খালে  তিলজলা, তপসিয়া, বেলেঘাটা, কেস্টপুর, বাগজোলা খাল ইত্যাদি আর সেই খালের পচা, অপরিশোধিত প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন লিটার ময়লা  জল প্রত্যহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক, মনুষ্যসৃষ্ট খাল, উপখালের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় প্রায় ২৫০ ওপর ভেড়িতে এবং অবশেষে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রায় পরিশোধিত অবস্থায় ব্যবহৃত হয় চাষের জমিতে, মিলে যায় কুলটি গাঙে এবং বিদ্যাধরী নদীতে ১৯৫৬ সালে কলকাতার পূর্বপ্রান্তে এইরকম ময়লা জলে মাছ চাষ করার ভেড়ি  ছিল প্রায় ৮০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে, তারপর থেকে অপরিকল্পিত উন্নয়নের ঠেলায় শুরু হয়েছে কমার পালা আজ থেকে প্রায় ৪০-৪৫ বছর আগে কলকাতার এই অমূল্য  কিডনির পচন ধরা শুরু হয়েছিল সল্টলেক স্থাপনের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের কথা মাথায় না রেখে, এই সমস্ত ভেড়ি, জলাভূমি বুজিয়ে প্রথমে গড়ে ওঠে পরিকল্পিত নগরী বিধাননগর; তারপরে সেক্টর , ইস্টার্ন মেট্রপলিটান বাইপাস, কসবা শিল্পাঞ্চল, মুকুন্দপুর এবং রাজারহাটের একটি অংশ ১৯৯২ সাল নাগাদ বামফ্রন্ট সরকার এই অমূল্য জলাভূমির ২২৭ একর এলাকা  বুজিয়ে এক আন্তর্জাতিক বিজনেস সেন্টার  গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে। অবশেষে এই অদূরদর্শী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে  বনানী কক্করের  পিআইএলের ফলে কলকাতা হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায় দেয়- সেই থেকে একদল বিজ্ঞান সচেতন  মানুষ আমাদের কলকাতা শহরের এই প্রাকৃতিক  কিডনি রক্ষা করার প্রয়াস চালাচ্ছেন আর সরকার বদল হলেও সেই একই মানসিকতায় রাজনৈতিক দলগুলি অদূরদর্শী উন্নয়নের নামে এই অমূল্য সম্পদ বেচে দেওয়ার চক্রান্ত চালাচ্ছে

বর্তমানে ১২৫০০ হেক্টরের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই প্রাকৃতিক কিডনির মধ্যে ৫৮৫২ হেক্টর জলাজমি এবং ভেড়ি (জলকর) ৪৭১৮ হেক্টরের মতো নিচু ধানের জমি, ৬০২ হেক্টর মতো বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং চাষের জমি এবং মধ্যে মধ্যে ১৩২৬ হেক্টরের মতো বসত জমি  দুই ভেড়ির মাঝে চলার পথ, মানুষের বসতি, ছোট ছোট গ্রাম বর্তমান কলকাতা শহরের প্রত্যহ ৭৫০ মিলিয়ন লিটার ময়লা জল বিনা পয়সায় শোধন হয়ে যায় এই প্রাকৃতিক জলাভূমির মাধ্যমে অনবদ্য দক্ষতায় অঞ্চলের মৎস্য চাষিরা কলকাতা শহরকে এই দূষিত জলের ভেড়ি থেকে উপহার দেয় ১১০০০ টনের থেকেও বেশি মিষ্টি জলের মাছ রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, মৃগেল, সিলভার কার্প, চারাপোনা, ট্যাংরা, গ্রাস কার্প গরিব মানুষের পাতে সস্তায় প্রোটিন যোগায়। এখনও মাত্র ৩০ টাকায় কলকাতা শহরে মাছ ভাত পাওয়া যায় এই অনবদ্য দক্ষ চাষিদের কারণে  জলা জমির কচুরিপানা শোষণ করে নেয় ময়লা জলের তেল কঠিন জঞ্জালের সারের ফলে উৎপাদন হয় ৩৭০০০ টনের ওপর চাল এবং কলকাতা শহরের প্রায় অর্ধেক সবজি, কলা সরবরাহ হয় এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১২৮০-১৩০০ কোটি টাকার সম্পদ সৃষ্টি হয় এই প্রাকৃতিক কিডনির সহায়তায় মেকানিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের বিপুল খরচা বাঁচায় কর্পোরেশন এবং বিপুল পরিমাণ কার্বন শোষণ করে এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি অঞ্চল আর এই বিপুল কর্মকাণ্ডের পেছনে ব্যাঙ্কের কোনও অনুদান নেই, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিগত কোনও সাহায্য নেই, এলাকার রাজবংশী, বাগদি, আদিবাসী এবং নমশূদ্র জনসম্প্রদায়ের দক্ষতা, ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য, সৌরশক্তির এক চমৎকার সংযোজনে গড়ে উঠেছে এই স্বনির্ভর প্রযুক্তির অননুকরণীয় নজির এই অঞ্চলের ওপর নির্ভর প্রায় ১০০,০০০ অধিবাসী, রাজ্যের অন্যান্য কৃষক বা কৃষি শ্রমিকের তুলনায় ঈর্ষণীয় পরিমাণ বেশি উপার্জন করেন, কলকাতা শহরের টাটকা সবছি মাছ ইত্যাদির দাম সস্তা রাখতে সাহায্য করেন এবং বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিজ দক্ষতায় ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যে পরিষ্কার করেন সাধারণ জনতার এই জ্ঞান এবং দক্ষতার পরিচয় অনুভব করতে যে কোনও কলকাতাবাসী একবার বানতলা চর্মনগরী ঘুরে আসতে পারেন; সেখানে বসানো হয়েছে ভারতের সর্ববৃহৎ সেডিমেন্টেসন ট্যাঙ্ক, কিন্তু নিশ্চল নিথর অন্যদিকে শয়ে শয়ে সচল ভেড়ির মধ্যে পড়ে আছে বানতলা চর্মনগরীর অচল যন্ত্রদানব

পূর্ব কলকাতার জলাভূমি একাধারে ফ্রি সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, অভূতপূর্ব জলজ বাগান এবং বন্যা প্রতিরক্ষার উপায় এই প্রসঙ্গে গত বছর নভেম্বরের চেন্নাই বন্যার কথায় বলি। ২০ বছর পূর্বে চেন্নাইতে ৬৫০র ওপর জলাভূমি ছিল; আজকের দিনে উন্নয়নের ঠেলায় সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭’এ। তার ফলে বিপুল বর্ষার জল নিকাশি ও শোষণের উপায় না থাকাতে চকচকে এয়ারপোর্ট থেকে আধুনিক ভবনের প্রান্তর ভাসিয়েছে অসময়ে বৃষ্টি কলকাতাও চেন্নাইয়ের মতো নিচু এলাকা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র মিটার উঁচুপূর্ব কলকাতার জলাভূমির বিলুপ্তি এই শহরের বাসযোগ্যতাকে  যে বিপদের মুখে  ঠেলছে তার পরিণাম  অনুমান করার ক্ষমতা দুঃখজনক ভাবে আমাদের পরিবেশ মন্ত্রীর অনুপস্থিত রামসার চুক্তি অনুসারে, স্থানীয় সরকার (এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার) এবং কলকাতা কর্পোরেশনের মাসের মধ্যে জলাভূমি সংরক্ষণ এবং ম্যানেজমেন্টের প্ল্যান প্রস্তুত করার কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে ১৪ বছর অতিক্রান্ত- আমাদের রাজ্য সরকার এবং কলকাতা কর্পোরেশন আজ পর্যন্ত কলকাতার এই অমূল্য সম্পদ রক্ষা করা এবং ম্যানেজমেন্টের প্ল্যান প্রস্তুত করে উঠতে পারেনি। উল্টে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিগত দফায় ক্ষমতায় আসার পরে এই বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা ২৫০০০ বেআইনি বিল্ডিংকে আইনানুগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন আর আমাদের রাজ্যের বর্তমান পরিবেশমন্ত্রীর স্টেটমেন্ট আরও সাংঘাতিক। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এক ডেলিগেশনকে তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষের কাছে জলাভূমি সংরক্ষণের তুলনায় সিভিক সার্ভিস বেশি গুরুত্বপূর্ণ

 বিগত ৩০-৩৫ বছর ধরে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা, সমস্ত রাজনৈতিক দল কলকাতাবাসীর বিপুল ক্ষতি করে একটু একটু করে এই অমূল্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যেতে, দখল করে নিতে, আইনি স্বীকৃতি  দিয়ে অধিগ্রহণে উৎসাহ দিচ্ছেন আর অতি দ্রুত পুরো কলকাতাকে ঠেলে দিচ্ছেন এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে কলকাতা শহরের ঢালই পূর্বদিকে, অতি বর্ষা জমা জলের স্বাভাবিক গতিপথ পূর্বদিকে- এই গতি রুদ্ধ করে দিলে কলকাতা জলে ভাসবে, গরমে অতিষ্ঠ হবে, ১০০,০০০ মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী বাস্তুচ্যুত হবে এবং রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতা গোটা কলকাতা তার বাসযোগ্যতা হারাবে উন্নতির মরীচিকায় বাঙ্গালোর আগামী ২০২৫ সালের পরে বাসযোগ্য থাকবে কিনা এই বিষয়ে যখন সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে, জলাভূমি বুজিয়ে উন্নতির কুফল হিসাবে যখন আমাদের চেন্নাইয়ের বন্যা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, তখন আমাদের মেয়র রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী পূর্ব কলকাতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অমূল্য বাস্তুতন্ত্রের মৃত্যুর জয়ডঙ্কা বাজাচ্ছেন আমাদের উদাসীনতার ফায়দা ওঠাচ্ছেন অবিবেচক রাজনৈতিক নেতৃত্বসমূহ

1 comment:

  1. কলকাতায় বসবাসকারী এবং পরিবেশ সচেতন মানুষজনের ঐক্যবদ্ধভাবে এই জলাশয় এবং জলাভূমি লুঠের প্রয়াস কে রুখতে হবে । না হলে কলকাতা বাঁচবে না

    ReplyDelete