Pages

Tuesday, 10 March 2015

লোকান্তরিত মনীষা





অধ্যাপক মুশার্রফ হোসেন

বিধান চন্দ্র পাল

বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক মুশার্রফ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর (. ডিসেম্বর, ১৯৩০)

নির্লোভ এই মানুষটি ভারতবর্ষের পশ্চিমবাংলার মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি (অনার্স) এবং অর্থনীতিতে এম ডিগ্রী লাভ করেন এবং ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকনমিকস'এ আরও একটি এম এবং লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন 
  
অধ্যাপনা, গবেষণা প্রশাসনিকভাবে তিনি বিস্তৃত পরিসরে কাজ করেছেন পূর্ব পাকিস্তান পরিকল্পনা বোর্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ (১৯৫৭-১৯৫৮); পাকিস্তান কর কমিশনের অর্থনীতিবিদ (১৯৫৮-৫৯); রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান এবং সমাজ অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ইংল্যান্ডের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাফিল্ড লিভারহিউম ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন কাজ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ (মুজিবনগর)-এর পরিকল্পনা সংস্থার অন্যতম সদস্য হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনেরও সদস্য (১৯৭২-৭৪) হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ পরিষদ প্রতিনিধি দলে তিনি অন্যতম একজন ছিলেন শেষ জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন 
  
জীবদ্দশায় নানা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট, বোস্টনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, নরওয়ের বেরগেন' খ্রিষ্টিয়ান মিকেলসন ইনস্টিটিউট, ক্যানাডার অটোয়ায় নর্থ-সাউথ ইনস্টিটিউট, ফ্রান্সের প্যারিসে সিডি উন্নয়ন কেন্দ্র, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পপুলেশন কাউন্সিল, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কুইন এলিজাবেথ হাউস এবং ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে অতিথি স্কলার, ফেলো অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাতিসংঘ খাদ্য কৃষি প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতিসংঘ অর্থনৈতিক উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে 
   
মুর্শারফ হোসেন অর্থনীতির শিক্ষা, গবেষণা চর্চার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সম্মাননা - ১৯৯১; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যালামনাই এসোসিয়েশন সম্মাননা- ১৯৯৬; ৩৭তম আন্তর্জাতিক বাংলা শিক্ষা সম্মেলন সম্মাননা - ২০০৫; অর্থনীতিতে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাদেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ- ২০০৮; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিশেষ সম্মাননা স্মারক- ২০০৯; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিশেষ সম্মাননা স্মারক ২০১০, শান্তি, সহিষ্ণুতা, সৌহার্দ্য মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে অবদানস্বরূপ বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা- ২০১০, অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা এবং এতে মৌলিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার - ২০১২ সহ উল্লেখযোগ্য অনেক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে বেঁচে থাকা অবস্থায় আমরা তাঁকে জাতীয় কোনও পদে ভূষিত করতে পারিনি জাতি হিসেবে আক্ষেপ পূরণের সুযোগ আমরা আর পাব না

তাঁর গবেষণার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল সরকারি কর, রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয়, গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি, দারিদ্র্য, খাদ্য পুষ্টি, বৈদেশিক সাহায্য এবং পরিবেশ উন্নয়ন বিভিন্ন সময়ে তাঁর যে সকল গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল: বাংলাদেশে গ্রামীণ দারিদ্র্য, যৌথ রচনা; ১৯৮৫; বাংলাদেশে বন্যা, যৌথ রচনা; ১৯৮৭; ব্যর্থ হামলা; ১৯৮৭বাংলাদেশে কৃষিকাজ; ১৯৯১; মধ্যকালীন টেঁকসই উন্নয়ন, যৌথ রচনা; ১৯৯৩; বাংলাদেশে অপুষ্টির প্রকার ব্যাপকতা, যৌথ রচনা; ১৯৯৮ এবং একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিবেশ কৃষিকাজ, যৌথ রচনা; ২০০১

তাঁর আবদ্ধ যৌক্তিক ক্ষমতা থেকে মুক্ত বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন উৎপাদক মৃত্যুর আগে প্রকাশের আগ্রহ থাকলেও আর প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি যে সকল গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগই ইংরেজীতে আর তার প্রায় সবগুলোই দেশের বাইরে থেকে, বাংলায় যেগুলি এখান থেকে নানা সময়ে প্রকাশ পেয়েছে সেগুলোও এখন আর পাওয়া যায় না বিশেষ কিছু স্থানে এগুলির সংগ্রহ হয়তো থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু জাতিগতভাবে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে, সত্যিকারের দারিদ্র্য নিরসন করতে হলে এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ শক্তিশালী হয়ে উঠতে হলে তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণাকেও আমাদের গুরুত্ব দিয়ে জানতে হবে আর সেই লক্ষ্যে এই গ্রন্থগুলি আমাদের দেশে সহজপ্রাপ্য করাটা একান্ত জরুরি লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জাতি হিসেবে আমরা নানাভাবে উপকৃত হব বলেই বিশ্বাস করি  

bidhancp@gmail.com 
 

No comments:

Post a Comment