Pages

Monday, 12 March 2018

আই লিগ


অপরূপ দিগন্তের সন্ধান পেল মিনার্ভা পাঞ্জাব
সূর্য শেখর দাস

শুধু বড় টিম বড় টুর্নামেন্ট জেতে - এ কথাকে নস্যাৎ করে দিয়ে গত বছরই আই লিগ জিতেছিল মিজোরামের আইজল এফসি আইজলের খেলায় ভেসে উঠেছিল বন্য রক্তিম লিলির অনবদ্য স্নিগ্ধতা এবং পাহাড়ি ঝরনার প্রাণোচ্ছ্বল প্রকাশইসলামিক স্টেট'এর বোমায় গুড়িয়ে যাওয়া সিরিয়া থেকে আগত আল আমনা এবং প্রিয় ক্লাব মুম্বই এফসি'তে গলা ধাক্কা খাওয়া কোচ খালিদ জামিলের দুর্দান্ত অলিখিত যুগলবন্দী আইজলকে ভারতের শ্রেষ্ঠ ক্লাব-সম্মান এনে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের চেনা ছককে ভেঙে দিয়ে মিজোরামের এই ক্লাবের অনবদ্য উত্থানএবার আবার সবাইকে চমকে দিয়ে সাফল্যের সরণিতে আপাতত অখ্যাত মিনার্ভা পাঞ্জাবমাত্র ১.৪ কোটি টাকা বাজেটের টিম। আই লিগের ইতিহাসে এত কম বাজেটের দল এর আগে খেতাব জেতেনিপাঞ্জাবের মিনার্ভার ফুটবল মঞ্চে হাজির হয়েছে রঞ্জিত সিং-ভগৎ সিং'এর দৃঢ়তা এবং অকুতোভয় মেজাজমিনার্ভা পাঞ্জাব তো ফুটবল মহলে Warriors নামেই  পরিচিত গত আই লিগে মিনার্ভা অবনমনের চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছিল আর এবার সাফল্যের শীর্ষেএ যেন ব্যর্থতার শূন্য খাঁচা থেকে মুক্ত পাখি হিসেবে সীমাহীন সাফল্যের আকাশে নির্ভার বাধাহীন উড়ান বলিউডের 'উড়তা পাঞ্জাব' ছবিটা মনে আছে? যেন সমগ্র পাঞ্জাব ডুবে যাচ্ছে ড্রাগের চোরাবালিতেএখানে মিনার্ভা অবিশ্বাস্য মানসিক দৃঢ়তার দৌলতে লিখল প্রাণে ভরপুর এক নতুন কাহিনি যা সিনেমার চিত্রনাট্যের সম্পূর্ণ বিপরীতনিশ্চিতভাবেই যা পাঞ্জাবি লোকগাথার অটুট কাহিনিতে পরিণত হবেসেই ১৯৯৭ সালে তৎকালীন জাতীয় ফুটবল লিগ জিতেছিল পাঞ্জাবের জেসিটি আজ ২১ বছর পরে ভারতের শ্রেষ্ঠ ফুটবল লিগের শিরোপা পঞ্চ নদের ঘ্রাণে এবং বিশুদ্ধতার টানে আবার পাঞ্জাবে গেল 

নেরকা এফসি  আইজলের মতোই মনিপুরের  নেরকার খেলায় বিশুদ্ধ ঝরনার স্বাভাবিক প্রকাশএর সঙ্গে মিশেছে নীল পিম্পেরনাল, অনবদ্য কমেলিনা এবং বেগুনি  অক্সালিসের মতো স্বাধীন পাহাড়ি ফুলের শিল্পিত প্রকাশ এবার আই লিগে মারাত্মক লড়াই করে রানার্স হল নেরকাঅল্প বাজেটে তৈরি নেরকার খেলায় বারবার ফুটে উঠেছে সকালের শুভ্রতা

এবার খেতাব জেতার প্রবল সুযোগ ছিল লাল-হলুদ বাহিনীরক্লাবে হতেই পারত আর একটা  বসন্ত উৎসব। কিন্তু এবারেও স্বপ্নভঙ্গ হল একশো বছরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সুপ্রাচীন ক্লাবেরশেষ দুটো ম্যাচ জিতলে যেখানে লিগ জিতে যেত ইস্টবেঙ্গল, সেখানে আবার ব্যর্থ হল লাল-হলুদ ব্রিগেডপ্রশ্ন উঠতেই পারে, ইস্টবেঙ্গল কি তাহলে ক্রিকেটের দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে গেল? দক্ষিণ আফ্রিকা প্রত্যেকবার দুর্দান্ত টিম নিয়ে বিশ্বকাপে যায় আর খালি হাতে ফেরত আসে লাল হলুদের সেই আগুনে মেজাজ গেল কোথায়? রক্তের স্বাদ পাওয়া চিতাবাঘের মতো তেজিয়ান সেই পুরনো ইস্টবেঙ্গল কি শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়ল? হাতে  পড়ে থাকা ভোঁতা পেন্সিলের মতো চতুর্থ স্থান পেল লাল-হলুদ বাহিনী

মোহনবাগান আজ থেকে তিন বছর আগে শেষবার আই লিগ জিতেছিল, গত দুবার অল্পের জন্য খেতাব পায়নি, রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেডকেএবার আই লিগের শুরুতেই বাগানের ভরসার বড় বট গাছটা সমূলে উপড়ে  যায়-- সনি নরদে ছিটকে যান চোটের জন্যতবু বাগানে আসতেই পারত সবুজ বসন্ত  ভাবুন দ্বিতীয় ডার্বিটার  কথা-- হট ফেভারিট ইস্টবেঙ্গল... তবু দিপান্দা ডিকার করা অনবদ্য জোড়া গোলে বাগানে ক্রমশ ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া  থেকে শিমুল-পলাশ... এ যেন সব অর্থেই সবুজ তারুণ্যের মধ্যে মেরুনের এক আশ্চর্য পূর্ণতা তবু থমকে গেল পরিপূর্ণ সবুজ বসন্তঘরের মাঠে বারবার পয়েন্ট নষ্ট করায় বাগানে শেষ পর্যন্ত যেন শুধুই চাঁদের ম্লান আলোমিনার্ভার ক্যানভাসে যখন রামধনু উদ্বেলিত, বিষণ্ণ  মোহনবাগানে তখন ঝরে পড়েছে আধফোটা শিমুল-পলাশশুধু সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে লাল-হলুদের আগে তৃতীয় স্থান পেয়ে লিগ শেষ করল সবুজ-মেরুনবাকিটা শুধুই যন্ত্রণার আখ্যান