Pages

Friday, 30 June 2017

পাহাড়ের কথা



পাহাড়ে ও সমতলে বাঙালি, গোর্খা, নেপালি, আদিবাসী ও বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে বিভেদ ও আগুন লাগানোর যে চেষ্টা চলছে তার বিরুদ্ধে সমস্ত জাতির মানুষেরা এক হয়ে আজ (৩০ জুন) শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক থেকে বিকেলে এক বিশাল নাগরিক মিছিল বের করবেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এই মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা সৌমেন নাগ শিলিগুড়ি থেকে এই লেখাটি পাঠিয়েছেন (লেখাটি ইংরেজিতে যাতে সমস্ত ভাষাভাষীর মানুষেরা বুঝতে পারেন):

United We Stand!
Soumen Nag

Darjeeling is not smiling. Those who saw the smile only, they did not take any pain to peep into the minds of the people of the hill where poverty, sorrow and a feeling of alienation were encompassing the entire population over the years. To understand the mind and get a true picture of the people, one should have stepped down from the authoritarian chariot unto the ground and make up their mind to feel the heart beat of the marginalised people.

The demand for Gorkhaland and their agitation is not an issue of law and order and this cannot be solved sitting on the throne of power by bullets and lathi. It cannot be solved by throwing them into a state of starvation as some began to think in that way. It cannot be solved by shouting 'Bengalees would give their blood but not allow dividing Bengal'. Such thoughts aggravate the situation towards worse. It is neither an Armageddon between hill and plain nor an issue between Bengalee and Nepali. It is a question of ethnic problem which needs a wide and sensitive mind to understand if one is really interested to reach at permanent solution. In order to fetch political gain, a nefarious attempt is being made to convert it into a communal division between Bengalees and Nepali. By doing this, one may get political dividend considering the Bengali sentiment due to their overwhelming demographic majority in terms of ballot paper but it will be at the cost of unity and fraternity between the communities which have developed through social process throughout the centuries.

The issue of self-respect and self identity along with their ethnic identity is not the lone issue of Darjeeling but it is a global issue. The immediate task is to restore the understanding between the majority and the minority communities and let them feel that the Bengalees were not there to dominate them .They live with them in brotherly relationship with equal status and respect. It should be kept in mind that our Constitution provides the provision to reconstruct a state. So to raise a a call for a separate state within the boundary of India cannot be termed as a separatist movement; but whether it is viable or not that may be an important question to discuss across the table.

Wednesday, 7 June 2017

বর্ধমানের আড্ডা

রাঢ়বঙ্গের লোকাচার ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি
অরুণাভ বিশ্বাস

 উপস্থিত জনেরা

গত ৪ জুন 'একক মাত্রা'র পাঠকবন্ধু শর্মিষ্ঠা সেন, শামিমদা ও তাঁদের সহযোগী অহনাদি, নিবেদিতা, পারমিতা, অভী ও ভালোদা আন্তরিক আতিথেয়তা ও নিখুঁত আয়োজন সহকারে বর্ধমানের জাগরী ভবনে 'রাঢ়বঙ্গের লোকাচার ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি' শীর্ষক একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিলেন। আড্ডার সঞ্চালক ছিলেন রঙ্গনকান্তি জানা। 'একক মাত্রা'র আড্ডার ধারায় এ ছিল আরও একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

শুরুতে রফিকুল ইসলামের থেকে শ্রোতারা জানতে পারেন folklore কথাটি সর্বপ্রথম William Thoms ১৮৪৬ সালে ব‍্যবহার করেন। বাংলা ভাষায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ‍্যায় এ প্রসঙ্গে 'লোকযান' এবং আশুতোষ ভট্টাচার্য 'লোকশ্রুতি' কথা দুটি ব‍্যবহার করেন। অর্থাৎ, এঁরা দুজনেই লোকসংস্কৃতির আবহমান মৌখিক প্রবহমানতাকেই গুরূত্ব দিয়েছেন। এই গতিময়তার কারণে লোকসাহিত‍্যকে রফিকুলবাবু দেশ-কালের গন্ডীতে আবদ্ধ রাখতে চান না। উদাহরণস্বরূপ তিনি জার্মানির গ্ৰীমভাইদের রূপকথার উল্লেখ করেন যে কাহিনিগুলির অনেকগুলি বণিক বা নাবিকদের মুখে মুখে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে নানারূপে সংযোজন ‌ও পরিবর্তন সহ। সব শেষে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শংসাপত্র নয়, লোকসংস্কৃতির উৎসাহী ছাত্র ও গবেষকদের লক্ষ‍্য হ‌ওয়া উচিত আন্তরিকতা ও আনন্দের সাথে লোকসংস্কৃতি চর্চার নতুন ধারা উন্মোচিত করা।
রফিকুল ইসলাম বলছেন

নীরদবরণ সরকার রাঢ়ের আঞ্চলিক স্বাভিমানকে বর্ধমান রাজবংশের ‌অবদান বলেন। রাজারা পাশাপাশি মন্দির ‌ও মসজিদ নির্মাণ করে, রাজবাড়িতে মুসলিম রাঁধুনি বহাল রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ‌এক বাতাবরণ গড়েছিলেন। নীরদবরণবাবু বলেন মহাভারতে বর্ধমানের নাম পাওয়া যায় এবং এ অঞ্চলের গৌরবময় ইতিহাস শুরু হয় ১৬৫৭ সালে বর্ধমান রাজবংশের পত্তন হ‌লে। কথাপ্রসঙ্গে নীরদবরণবাবু জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের নাম অনুসারে বর্ধমান নামকরণ হয় এই তথ‍্যটিকে ভিত্তিহীন মিথ বলে দাবি করেন। অবশ্য সঞ্চালক রঙ্গনকান্তি জানা The Sacred Book of East (vol.17)-এ ম‍্যাক্সমুলারকৃত পাদটীকার উল্লেখ করে জানান যে মহাবীর 'ladh' (লাঢ়)-দেশের কয়লাখনি অঞ্চলে এসেছিলেন তা প্রমাণিত।

অতীশচন্দ্র সাহা দক্ষিণবঙ্গ ও রাঢ়বঙ্গের লোকসংস্কৃতির তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে সঙ্গীত ও রাঢ়বঙ্গে নৃত‍্যের প্রাধান‍্য রয়েছে তা বোঝান। লোকশিল্পীরা এই দু জায়গাতেই অবহেলিত হ‌ওয়া ও নানান ছোটখাট বিভেদ থাকা সত্ত্বেও এই দু জায়গাতেই লোকসংস্কৃতিকে ধর্মভাবনা অবদমিত করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে তিনি উঃ চব্বিশ পরগণার বারাসতের পূর্ববঙ্গ উদ্বাস্তু সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতার উল্লেখ করে বলেন এ ধরনের সংহতিমূলক কর্মকাণ্ড যত আয়োজিত হবে বিভেদকামী শক্তি হিসাবে ধর্মের ভূমিকা তত কমবে। শেষে তিনি এই খেদ ব‍্যক্ত করেন যে বর্তমানে অত‍্যন্ত অনভিপ্রেত ভাবে অধিকাংশ ভারতীয়ের কোনও সংস্কৃতি নেই, আছে কেবল ধর্মচেতনা।

ঝর্ণা বর্মণ প্রথমে রাঢ় কথাটির ভৌগোলিক তাৎপর্য ব‍্যাখ‍্যা করেন। বাংলায় তুর্কি আক্রমণ ও সুলতানি শাসনের ইতিহাসকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পুনর্নির্মিত করা ও তার জন‍্য মধ‍্যযুগের বাংলায় আরাকানের মুসলিম কবি সৈয়দ আলাওল, দৌলত কাজী প্রমুখের পাশাপাশি রাঢ় অঞ্চলের মুসলিম কবি ও গীতিকারদের অবদানের কথাও স্মরণ করতে বলেন। আরাকানের কবিরা রাজানুগ্ৰহ লাভ করলেও রাঢ়ের মুসলিম কবিদের কিন্তু স্বজাতীয়দের থেকে আসা প্রতিকূলতাকে লড়তে হয়েছিল।

গৌরীশঙ্কর বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় 'Globlization and the Morbidity of the Age-old Folk Tradition' শীর্ষক দ্বিভাষিক বক্তৃতাতে লোকসংস্কৃতির বিপন্নতা প্রসঙ্গে বিশ্বায়নকে দায়ী করেন। তাঁর মতে, লোকসংস্কৃতি এমন একটি সামাজিক পরিসর যেখানে বহু ভাষা বহু জাতির মানুষ একত্রিত হয়ে এক বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলে। বিপরীতে বিশ্বায়ন এমন একটি আগ্ৰাসী প্রক্রিয়া যা এক monolithic global culture এমন ভাবে সর্বত্র চাপিয়ে দেয় যে এক comprehensive cultural uniformity গড়ে ওঠে। গৌরীশঙ্করবাবুর মতে, ছোটো দেশগুলিতে আদিম জনজাতি, দেশজ ও লোকজ সংস্কৃতির বিপন্নতা বিশ্বায়ন পরবর্তী যুগে অভাবনীয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ মানবজাতির ইতিহাসে কোনও সময়েই এমন কোনও সংস্কৃতি ছিল না যার নিজস্ব ঐতিহ‍্যশালী লোক‌উপাদান ছিল না। ঐ উপাদানগুলির মধ‍্যে জনপ্রিয়তম ছিল লৌকিক দেবদেবী সমন্বিত লোকধর্ম যাকে বলা হয় 'never a religion of the past, but a phenomenon constantly happening'। কারণ, মানুষের এমন প্রাথমিক চাহিদাগুলি (যথা প্রজনন, কৃষি) থেকে ঐ দেবদেবীদের উৎপত্তি যা চিরন্তন। এজন‍্য‌ই Charles Porter'এর মতে folk-religion হল 'a protected repository of popular religious tradition' অথবা 'a lively fossil which refuses to die'। শেষে গৌরীশঙ্করবাবু রাষ্ট্রসংঘের Human Development Report পড়ে শোনান বিশ্বায়নের অবশ‍্যাম্ভাবী সক্রিয়তার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে লোকশিল্পী ও গবেষকদের তিনটি করণীয় রয়েছে -- (i) to enhance reason and responsibilities; (ii) to build up an inherent respect and reciprocity; and (iii) to maintain cultural diversity। রাষ্ট্রসংঘের মতে 'Cultural diversity is as essential for mankind as biodiversity for nature'।

গিরিধারী সরকার বর্ধমানরাজ কীর্তিচাঁদের সময়ে (১৭০২-৪০) ৫০০০ বর্গমাইল ও বিজয়চাঁদের সময়ে (১৮৮৭-১৯৪১) ৪০৬১ বর্গমাইল রাজত্বের বিশালতা উল্লেখ করে আউল বাউল সুফি ও বৈষ্ণবদের সহাবস্থানের কথা বলেন। মোগলদুর্গ সংস্কার করে বানানো রাজবাড়ি থেকে পৃথক একটি পথ বানানো হয় সন্নিকটস্থ খক্কর শাহের দরগা পর্যন্ত যেখানে হিন্দু মহিলারাও মানত রাখতেন। কেষ্টপুর অঞ্চলে মহরমের তাঞ্জাম সোনায় মুড়ে দেওয়া হয়। ১৭৫৭ সালের পলাশি যুদ্ধে বর্ধমানরাজ তিলকচাঁদ বর্গী ভাস্কর বর্মনের হত‍্যাকারী হিন্দু সেনাপতি মানিকচাঁদকে প্রচুর ঘোড়স‌ওয়ার ও সৈনিক সহ সিরাজের পক্ষ নিতে পাঠান।

সর্বজিৎ যশের‌ও বিষয় ছিল বর্ধমানের সম্প্রীতির পরিবেশ গঠনে রাজপরিবারের ভূমিকা। বর্ধমান রাজারা বৈষ্ণব ছিলেন না, খাঁটি হিন্দু ছিলেন এবং দুই জায়গায় ১০৯টি করে মোট ২১৮টি শিবমন্দির স্থাপন করেন। তবুও মসজিদ ক‍্যাথলিক গির্জা পীরের দরগা ইত‍্যাদি স্থাপনে অকাতর দান করতেন রাজারা। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে বোম্বাই রায়টের সময় বড়বাজারের মসজিদের ২০০ হাত দুর পর্যন্ত কোনও হিন্দুধর্মীয় বাদ‍্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ হয়। আধুনিক ও উদারমনস্ক রাজা প্রতাপচাঁদ পরিস্থিতি অনুযায়ী হিন্দু ও মুসলিম টোটেমযুক্ত দুরকম মুকুট পরে রাজকার্য করতেন। রাজবংশের লোগোতেও দুই ধর্মের নানা চিহ্ন যেমন ঘোড়া ঢাল তলোয়ার চাঁদ ইত‍্যাদি ছিল। প্রসঙ্গান্তরে সর্বজিৎবাবু ত্রিবেণীতে মোগল বাদ্‌শাহ ফিরোজ শাহর সেনাপতি জাফর খান প্রতিষ্ঠিত মসজিদটিকে (১২৯৮) বাংলার প্রথম মসজিদ বলেন। গোহত‍্যা বন্ধে ত্রিবেণীর রাজা আদেশ দিলে জাফর খান যুদ্ধে তা‍ঁকে পরাজিত করে মন্দির লুণ্ঠন করে ঐ মসজিদ বানালেও পরে গাজী উপাধি নিয়ে ত্রিবেণীতেই বসবাস করেন। কথিত আছে তিনি ব‍্যাসকৃত গঙ্গাস্তব আবৃত্তি করতেন। মৃত‍্যুর পর ত্রিবেণীতে তাঁর সমাধিতে দরগা (১৩১৫) গড়ে ওঠে।

জাহির আব্বাস আলোচনার কালপর্ব মধ‍্যযুগ বা রাজ আমল থেকে বার করে সমসাময়িকের প্রেক্ষিতে রাঢ় অঞ্চলের সম্প্রীতির নানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতা শোনান। এই অঞ্চলে পীরের থানে হিন্দুদের মানত, মহরমের সময় হিন্দুদের উপবাস থাকা, হনুমান জয়ন্তীর সময়ে মুসলিমদের সাথে লাঠিখেলা ইত‍্যাদি নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

এরপর আরও ছড়িয়ে আড্ডা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হলে শর্মিষ্ঠা সেন বর্ধমানের রাজ আমলে সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরির পিছনে কতখানি রাজবংশের কৌশলগত পদক্ষেপ আর কতখানি প্রজাগণের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ কাজ করেছিল সে সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে ঝর্ণাদেবী হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়কে চাল ও জলের সাথে তুলনা করে রাজবংশের অবদানকে আগুন অর্থাৎ তৃতীয় শক্তি বলেন। এক্ষেত্রে সাদা ভাত আর সম্প্রীতির বাতাবরণ সমার্থক। এরপর শ্যামসুন্দর কলেজের জনৈক তরুণ শিক্ষক সোশাল মিডিয়াকে লোকসংস্কৃতির পক্ষে বিপজ্জনক আখ‍্যা দিয়ে কী করণীয় তা জানতে চাইলে এই প্রতিবেদক সোশাল মিডিয়াকে বিপদ হিসেবে না দেখে দূর-দূরান্তের লোকশিল্পীদের মধ‍্যে পারস্পরিক আদানপ্রদানের এমন মাধ‍্যম হিসেবে দেখেন যা বিশ্বায়নের বিরূদ্ধে তাঁদের সংগ্রামের হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

গৌরীশঙ্করবাবু প্রতিবেদকের মত সমর্থন করেন। এরপর প্রতিবেদক লোকসংস্কৃতির 'আর্যাবর্তায়ণ' বা উত্তর-ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্ৰাসনকে বিশ্বায়নের মতোই বিপজ্জনক হিসেবে গণ‍্য করেন। জবাবে সঞ্চালক আর্যাবর্তায়ণ শব্দটিকে প্রত্নতত্ত্বের পরিভাষা হিসেবেই একমাত্র ব‍্যবহার করা উচিত এই মর্মে প্রবল আপত্তি ও উষ্মা প্রকাশ করলে বক্তাদের মধ‍্যে গৌরীশঙ্করবাবু ও শ্রোতাদের মধ‍্যে মোনালি পাল্টা আপত্তি জানিয়ে ঐ শব্দটিকে সমাজবিদ‍্যা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষা হিসেবেও ব‍্যবহার করা যায় সেই মর্মে মতামত দেন যাকে ঝর্ণাদেবী সমর্থন জানান। এই প্রেক্ষিতে শ্রোতাদের মধ‍্যে নীরদবরণ মজুমদার মূল আলোচনা কেন শুধু মধ‍্যযুগ ও রাজ‌ আমলেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরপর প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ইতিহাস নির্মাণে কিভাবে ব‍্যবহৃত হয় সেই প্রসঙ্গে archeology of knowledge এবং knowledge of archeology-র তুলনা এনে একটি প্রতর্ক উথ্থাপন করেন যা সময়াভাবে অসমাপ্ত রয়ে যায়।

৪২°সে. গরম উপেক্ষা করে কলকাতা থেকে ১১ জন, দুর্গাপুর-আসানসোল থেকে ৫ জন সমেত মোট জনা পঞ্চাশ-ষাট মানুষের এই জমায়েত 'একক মাত্রা'র পক্ষে খুব‌ই শ্লাঘার বিষয়। আলোচনাও শ্রোতাদের ঋদ্ধ করে নানা ভাবে।  তবে আলোচনা মূলত সম্প্রীতির সংস্কৃতিতেই আবদ্ধ থাকে। লোকাচার কীভাবে এই সম্প্রীতির সংস্কৃতি নির্মাণে ভূমিকা নেয় তা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। যাবতীয় তথ‍্য ও ঘটনার উল্লেখ কিছুটা বর্ধমান কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে যেখানে বৃহত্তর রাঢ়বঙ্গ খানিক উপেক্ষিত হয়। বর্ধমানের ক্ষেত্রেও আলোচনা অনেকাংশে বর্ধমান রাজপরিবারের আবর্তেই সীমাবদ্ধ ছিল। সমাজবিজ্ঞানের আলোচনা মূলত ইতিহাসের আলোচনায় পর্যবসিত হয়। আবার ইতিহাসকে শুধুই জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিচার করা হয়। সাবঅল্টার্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নির্মাণে লোকাচারের ভূমিকা কার‌ও আলোচনাতেই স্থান পায়নি। সর্বোপরি, লোকশিল্প ও লোকাচারের নানা মাধ‍্যম বা প্রকাশভঙ্গিগুলি কিছু কিছু উল্লিখিত হলেও মূলত অনালোচিত থেকে গেছে।  খুব স্বাভাবিক যে, সময়ের অনুশাসনে কোনও আলোচনা বা আড্ডাতেই সবকিছুর আশাও করা যায় না। তাই এই আড্ডার পরম্পরা চলতেই থাকে।

কলকাতা থেকে দূরে শহর মফস্বল গ্ৰামে এরকম আর‌ও আলোচনা বা বিতর্ক সভা অথবা ঘরোয়া আড্ডা অনুষ্ঠিত হোক। 'একক মাত্রা'র পক্ষ থেকে উদ‍্যোক্তাদের অশেষ ধন‍্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা র‌ইল। এবার অপেক্ষা রামপুরহাটের আড্ডার জন‍্য।