Pages

Thursday, 29 December 2016

একক মাত্রা জানুয়ারি ২০১৭

প্রকাশ পেল জানুয়ারি সংখ্যা ২০১৭
প্রচ্ছদ শিল্পী দেবাশিস বারুই

Tuesday, 6 December 2016

মেরে পেয়ারে দেশবাসিয়োঁ......



এই মৃত্যু মিছিলের দায় আপনার প্রধানমন্ত্রীজী

অপূর্ব সাহা

১০ নভেম্বর সকাল সাতটার সূর্য বিশাল মাপের দুটি সরকারি বিজ্ঞাপনের ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতির পাশ দিয়ে যখন কোনোরকমে জায়গা করে প্রকাশিত হওয়ার চেষ্টা করছে তখন দেওয়ালে দেওয়ালে সাঁটানো শতবর্ষে নভেম্বর বিপ্লব পোস্টারের লেনিনের পথ নির্দেশক তর্জনীটি জানিয়ে দিচ্ছে – ধর্মতলা নয়, ব্রিগেড নয়, দিল্লীও নয়- ব্যাঙ্ক চলো।
ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল ধর্মেন্দ্র ভার্মাকেও। সাথে ছিল তার চার বছরের মেয়ে। মেয়ের প্রচন্ড জ্বর। তাই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে তাকে মেয়ের চিকিৎসা করাতে হবে। দীর্ঘ সর্পিল লাইনে একটু পিছিয়েই পরেছিল সে। লাইন এগোচ্ছিল খুব ধীর গতিতে। মেয়ের অসুস্থতাও বাড়ছিল। অবশেষে দীর্ঘ সময় পর যখন সে কাউন্টারে পৌঁছয় তখন দেখে মেয়ে মারা গেছে।

পঁয়ষট্টি বছর বয়সী রমানাথ কুশওয়ারও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন টাকা তুলতে। তার গর্ভবতী মেয়ে ভর্তি আছে হাসপাতালে। টাকা তুলে নিয়েই তাকে ছুটতে হবে হাসপাতালে। খুব ভিড় জমে থাকা ব্যাঙ্কের সামনে দৌড়োদৌড়ি, হুড়োহুড়িতে মাটিতে পড়ে যান তিনি। হঠাৎ করে তৈরি হওয়া উদ্বিগ্ন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যাওয়া মানুষগুলোর জমায়েতের চাপে জখম হন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয় তাকে।
তিনদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা বদলাতে না পারা সিয়ারাম, অনিল ঘোষ, রবীন মুখার্জি, বিশ্বদেব নস্কর কিংবা মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়ানো বাবুলাল সবারই একই পরিণতি হয়েছে।

দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র সুরেশ। কয়েকদিন ধরেই তাকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছিল কলেজের বার্ষিক পরীক্ষার ফিএর টাকা তুলতে। অবশেষে ফি জমা দেওয়ার শেষদিন এসে যায়। প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে না পেরে খুব হতাশ হয়ে যায় সে। যেদিন পরীক্ষার ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল সেদিন রাতেই সুরেশ মায়ের শাড়ি গলায় দিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয় নিজের দেহকে।

ভাগচাষি শিবু মান্ডি, ব্যাবসায়ী সুখেন দে সরকার, ঠিকাশ্রমিক ত্রিভুবন সুমেসেরা, দিনমজুর গোরা মাঝি, আলুচাষি অমিত সরকার এরা কেউই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভিযোজিত করতে পারেনি নিজেরদেরকে। এরা প্রত্যেকেই এখন মৃত।
মৃত্যুর সংখ্যা ৮৪ পেরিয়ে গেছে।

সবই ৮ নভেম্বর রাত ৮টার মাস্টার স্ট্রোকএর পরিণতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাস ধরে কাশ্মীরে জনতা এবং সামরিক বাহিনীর  যে খন্ডযুদ্ধ চলছিল সেখানে সামরিক বাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে নিহত সাধার মানুষের সংখ্যা এর থেকে কম। তাহলে একটা রাষ্ট্রনীতি মেশিনগানের থেকেও ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে। এইরকম একটা নীতি তার আবির্ভাব মুহুর্তেই এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিল। দেশ জুড়ে কয়েক কোটি গরিব এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে এই নীতির সাথে।

যে কারখানার শ্রমিক মজুরি না পেয়ে কারখানার গেটের সামনে বসে থাকছে, যে নির্মাণ শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে খালি হতে ফিরছে, যে কৃষক ধান বিক্রি করতে না পেরে ভাবছে কিভাবে বীজ আর সার কিনবে, যে দিনমজুর গোটা দিনই কাটিয়ে দিচ্ছে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়ে, যে বিক্রেতা তার দোকানের জিনিসপত্র নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছে, যে চা বাগানের কর্মীরা মজুরি না পেয়ে রাস্তায় বসে থাকছে তাদের কাছে ডিমনেটাইজেশন কী আচ্ছে দিন এনে দিল? এদের মন কি বাত শোনা হবে কখন? ক্ষুদ্র এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে অর্থনীতি ভেঙ্গে পছে। অর্থনীতি বিশারদদের মতে এর ফলে আগামী অর্থনীতি মন্দার কবলে পতে পারে।

রাষ্ট্রযন্ত্রের যান্ত্রিক গোলযোগের শিকার এই মানুষগুলো। আর রাষ্ট্র ধৃতরাষ্ট্র হয়ে ব্যস্ত আলমারির শাড়ির ভাঁজে রাখা টাকা বা ঘরে ছোট্ট একটা খুঁটিতে জমানো টাকাকেও করায়ত্ত করতে। ডিমনেটাইজেশনএর চাপে মুম্বাইএর গোভান্ডিতে সদ্যোজাত যে শিশুটি চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল বা আম্বুলেন্সকে একশো টাকার নোট দিতে না পারায় হাসপাতালে যাওয়ার আগেই জয়পুরে যে শিশুটি মারা গেল তার জন্য দায়ী কে? ঘুম থেকে উঠে রোজ দুচামচ করে দেশপ্রেমের সিরাপ খাওয়া আরোপিত জাতীয়তাবাদের নেশায় মাতাল পেটিএম পব্লিক কি এগুলোর ব্যাখ্যায় শর্ট টাইম পেইন, লং টাইম গেইন তত্ত্ব আওড়াবেন নাকি বলবেন কোল্যাটারাল ড্যামেজ? মনে প্রশ্ন জাগছে, এটা কালো টাকার ওপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নাকি মানুষের জীবনের ওপর?

নির্মিত সাদা কালো আবহাওয়ায় দেশপ্রেমের হিস্টিরিয়া ড়ানো ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতির মানুষটিকে যদি কখনও কোনলাইনে দাঁড়াতে হয় তাহলে তার সামনে পরে থাকবে এই ৮৪টা মৃতদেহ। কর্পোরেটের কার্পেটে হাঁটতে অভ্যস্ত মানুষটিকে এই জেনোসাইডএর দায় নিতেই হবে।


কালোকে সাদা না সাদাকে কালো?



জাতির সাফাই অভিযান
অনুরাধা রায়
 
স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্নে বিভোর আজ সমগ্র দেশ নতুন দুহাজারি নোটে জাতির জনকের চশমায় কি তারই প্রতিফলন? কেউ কেউ যদিও বলছেওঁর মুখটা আগে বাঁদিকে ঘোরানো ছিল, এই নতুন নোটে দেখ ডানদিকে অর্থাৎ কিনা উনি বলতে চাইছেন – ‘আগে এই গালে চড় মেরেছিলি, দেখ এবার আরেকটা গাল ফিরিয়ে দিলাম চড় মারার জন্য না না, এসব যারা বলে তারা কুচুটে বদ লোক! আমরা কত ভালবাসি আমাদের জাতির জনককে ওঁকে মেরে ফেলে অমর শহীদ করে দিয়েছি ওঁর অহিংসা নীতির গুণ গাই, আর যখন রিপাবলিক ডে- প্যারেড হয় ওঁরই কাট-আউট সামনে রেখে দুনিয়ার কাছে নিজেদের স্ত্রবল জাহির করি স্বচ্ছ ভারতের প্রকল্পে তো ওঁকে আমাদের স্মরণ করতেই হবে উনি-  তো বলেছিলেন – ‘Sanitation is more important than independence’ আর এটাও তো আমরা অনেকেই জানি যে বিশ্বভারতীতে এসে উনি নিজে হাতে বাথরুম পরিষ্কার করে ছাত্রদেরও সেই কাজে উদবুদ্ধ করেছিলেন উনি যদিও ছাত্রদের রোজ রোজই সাফাইয়ের কাজটা করতে বলেছিলেন, তা তো আর সম্ভব হয় নি; কিন্তু বছরে একবার অন্তত ওঁকে স্মরণ করে ছাত্ররা ওখানে ঘরদোর সব পরিষ্কার করে। তাতে সারা বছরের জমা ধুলো উড়ে চারদিক আরোই ধুলোময় হয়ে যায়, আর সেই উপলক্ষে খাওয়াদাওয়াও হয় জমিয়ে এভাবেই ওঁর স্মৃতিতেগান্ধি পুণ্যাহ পালন করি আমরা। 

ভ্রষ্টাচার সাফ করার ব্যাপারেও উনি আমাদের বড় প্রেরণা উনি অবশ্য তার জন্য সরল সাদাসিধে জীবনযাপনের উপদেশ দিয়েছিলেন, লোভ কম করতে বলেছিলেন বলেছিলেনThe world has enough for everyone’s need, not for everyone’s greed.’  কিন্তু এসব বড় শক্ত কথা বুঝে ওঠা শক্ত, মেনে চলা আরো শক্ত তার চেয়ে চওড়া ছাতি দেখিয়ে রে রে করে কালো টাকা সাফ করা সোজা ছাতির তলায় তো ঐ গান্ধিরই আরাধ্য দেবতা সীতারামের নাম লেখা আরে, বীর হনুমান আমাদের মহান ঐতিহ্য না? তিনিও তো আমাদের দেবতা বটেন সেই হনুমান যে রাবণের অপরাধে গোটা লঙ্কাটাই পুড়িয়ে সাফ করে দিয়েছিল আর মনে আছে তো বিশল্যকরণীর সন্ধানে গিয়ে গোটা গন্ধমাদন পাহাড়টাই কেমন কাঁধে করে বয়ে এনেছিল? সেই বাঁদুরে বুদ্ধি ধার করেই তো আমরা কালো টাকা সাফাই অভিযানের মোডাস অপারেন্ডি ছকেছি কালো টাকা আর সাদা টাকা যদি মিলেমিশে থাকে, সব একসঙ্গে দুরমুশ করে দাও লোভ কমানো-টমানোর গান্ধীয় বাণী মানা কি সত্যি সম্ভব? তাহলে তো বদরক্ত সাফা করে শুরু করতে হবে জাতির সাফাই অভিযান মানে, মাস স্কেলে ব্লাড ট্রানস্ফিউশন তাতে আবার সমস্যা হল সাম্প্রতিক একটা সমীক্ষা বলছে, এ দেশে ৭০ শতাংশ মতো সিরিঞ্জ দূষিত তার চেয়ে যা পারি তাই করিমার ঝাড়ু মার, বিশালাকার সম্মার্জনী হাতে কালো-সাদা সবই ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর। বিরাট ঝাঁটা, সপাং সপাং পড়ছে জনগণের পিঠে। লাইন করিয়ে বেঁধে মারা হচ্ছে। দৈনন্দিনের কেনাকাটা, যে-যার কাজকর্ম – কিচ্ছুটি করতে পারবে না, শুধুই লাইন লাগাবে। জাতির জনক বলেছে না – ‘স্বাধীনতার চেয়ে সাফাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ’? তাই ভারত স্বচ্ছ, জনগণ মুক্তকচ্ছ। লাইনে দাঁড়িয়ে ‘পপাত চ মমার চ’ও হচ্ছে কেউ কেউ। তাতে কী! এ হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুনীতির, অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের যুদ্ধ। সামান্য কোল্যাটেরাল ড্যামেজ তো হতেই পারে তার জন্য!

আবার দেখেছো, মহান সাফাই নাটকের এই অঙ্কটি পুরোদমে চলতে চলতেই রঙ্গমঞ্চের একপাশে আরেক সাফাই অভিযানের দৃশ্য? কালো শিক্ষক সাদা করার অভিযান এ জায়গাটাতেও সেই কবে থেকে জমে আছে ‘ছি ছি এত্তা জঞ্জাল’! এখানেও একই স্টাইলে বুকের ছাতি ফুলিয়ে একই মোডাস অপারেন্ডি। সে কু-লোকে তাকে বিশ্বাসভঙ্গই বলুক আর গাজোয়ারিই বলুক। ৬০ বছর বয়সের পরে আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ নয়, যারা এর মধ্যে পুনর্নিয়োগ পেয়েছে তাদেরও ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর। সবাই তারা অযোগ্য? সবাই কালো? না, সবাই হয়ত নয়, তবে অনেকেই। কী করে বোঝা গেল? সিলেকশন কমিটিতে এক্সপার্টদের এনে, একশ-হাজার নিয়ম মেনেই তো সকলকে নিযুক্ত করা হয়েছে। আঃ, জানো না, ওরা যথাস্থানে ট্যাক্স দেয়নি, তাই কালো। ইনকাম ট্যাক্স বলছ? ন্যাকা নাকি? জানো না, বিদ্বজ্জনদের কী ধরনের কর দিতে হয় রাজা-মহারাজাদের কাছে – মহাভারতের যুগ থেকেই যেটা নিয়ম? এই কর টাকায় নয়, দিতে হয় বশ্যতাপোষ্যতায়। দিলে নিষ্কর জমি, সহস্র গাভী থেকে শুরু করে মহামহোপাধ্যায়, তর্করত্ন ইত্যাদি উপাধি এবং আরো অনেক লোভনীয় বস্তু পাওয়া যায়মুশকিল হল, এখনকার অধ্যাপকদের মধ্যে অনেকেই প্রাক্তন শত্রু-রাজার দরবারে কর দিয়ে অধ্যাপনাবৃত্তিতে ঢুকে পড়েছে! সিলেকশন কমিটির কথা আর না তোলাই ভাল! ‘সাইনিং অন দ্য ডটেড লাইনকথাটা তো এমনকি ইংরেজদের মধ্যেও চালু, যাদের কাছ থেকে আমরা শিখেছি আধুনিক যুগের উপযোগী দুর্নীতি (তাদের গায়ের চামড়া আমাদের চেয়ে ঢের সাদা হলে কি হবে, সাদা হয়েও তারা আমাদের শেখাতে পেরেছিল কালোর কেরদানি!) পূর্বতন শত্রু-রাজা যে কিভাবে সিলেকশন কমিটিকে দিয়ে বিন্দুসমন্বিত রেখার ওপর স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন, বা বিশেষ ক্ষেত্রে সিলেকশন কমিটির সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তা নাকচ করে দিতেনসে গল্প করতে বসলে তো আর শেষ হবে না! এখন আমি রাজা, আমার জমানা! আমি নেব কর, আমি করাব সই আশা করি, এই লজিক মেনে, ৬০-এর কম বয়সি যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তাঁদেরও নিয়োগ শিগগিরি বাতিল করে দেওয়া যাবে। তাঁদের মধ্যে কালো লোকের অভাব আছে নাকি!  

কী বলছো – কালো শিক্ষক সাফা হবে, ভাল কথা; কিন্তু পড়াশোনার কী হবে? আপাতত যে শয়ে শয়ে শূন্য শিক্ষকপদ, সেগুলি না ভরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা আরো কমিয়ে দেওয়াটা হঠকারিতা হবে না কী? ক্লাস চলাকালীন রাতারাতি নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে কীভাবে, ক্লাসে পড়াবার জন্য তাদের প্রস্তুতির সময় দেওয়া তো দূরের কথা? বেশি বাজে বোকো না, অ্যাডভান্স ট্যাক্স দিয়ে রাখা নতুন সাফা শিক্ষক আমরা শিগগিরি নিয়োগ করব! আর প্রস্তুতির কথা কোন আহাম্মক বলে! এই যে রোজ রোজ মাঠে ময়দানে, টিভির পর্দায় এত এত বক্তৃতা হচ্ছে, তাতে প্রস্তুতির কোনও ব্যাপার আছে? তার বেশি প্রস্তুতি আবার হতচ্ছাড়া শিক্ষকদের দরকার আছে নাকি? মৌলিক প্রস্তুতি থাকলে, মানে ঐ ট্যাক্স দেওয়া থাকলে, আর কিচ্ছুটির দরকার নেই! আর নিতান্তই যদি ছাত্রদের অসুবিধে হয়, সহ্য করতে হবে! নোটের লাইনে লোকে কম সহ্য করছে?

জাতির আজ ‘গান্ধি পুণ্যাহ’। বা বলা যায়, জব্বর স্প্রীং ক্লিনিং চলছে - বাসন্তী সাফন্তী। এখন যদি বা শীতের কনকনানির অনুভূতি চারদিকে, সবুর কর – ‘If winter comes, can spring be far behind?’ সবদিকে সাফাই করতে হবে, প্রাণ দিয়েও করতে হবে! তাই সাফাই অভিযান চলছে চলবে, দেশ জুড়ে। তাতে আমাদের যদি চলে যেতে হয়, যাব! কবি কী বলেছেন, মনে নেই? তিনি কিন্তু একেবারেই অন্য শিবিরের কবি - মানে আজ যারা কোনরকম সাফাইয়ে অংশ নিচ্ছে না, বরং খালি বিরোধিতাই করছে, তাদের। একদিন কিন্তু তাদের কবিও বলেছিলেন  – ‘তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি – নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ অঙ্গীকার!’ বড় চমৎকার কিন্তু কথাগুলি! সত্যি, শিশুরাই তো জাতির ভবিষ্যৎ। তবে কিনা একটু চিন্তা হয় - তলায় তলায় আবার শিশু পাচার হচ্ছে না তো?

তা, হলেই বা কী? হোক না! শিরায়-ধমনীতে প্রবাহিত হোক লোভ, যে পারে সে লুটেপুটে নিক। বড় বড় লুটেরাদের সঙ্গে আমাদের দহরম-মহরম চলবে। এ-দল ও-দলের প্রতিযোগিতার আড়ালে হাতে হাত মিলবে লুটের উদ্দেশ্যে। পাশাপাশি অবশ্য সাফাই অভিযানও চলবে। কালো শিশুকে সাদা শিশু করার একটা দুর্ধর্ষ পরিকল্পনাও না হয় আমরা নিয়ে ফেলব! এ ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তারকেও তো সঙ্গে পাওয়া যাবে - সার্জিকাল স্ট্রাইক গোছের কিছু একটা করা শক্ত হবে না!

আমরা কেউ তো আসলে নিজের চোখে, খালি চোখে স্বচ্ছ ভারত দেখতে পাব বলে আশা করছি না! জাতির জনকও তো সে ছবি দেখছেন পরকলার মাধ্যমে, মানে তাঁকে দেখানো হচ্ছে (একেই কি বলে কলা দেখানো?)। তা-ও আবার তাঁর পরকলার একটা কাচে ‘স্বচ্ছ’, আরেকটাতে ‘ভারত’। মানে, এক চোখে স্বচ্ছতা দেখছেন, আরেক চোখে ভারত। দুটো মিলিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না কিন্তু তাঁর পক্ষে। সম্ভব করতে চাইছি না আমরাও!