Pages

Monday, 29 September 2014

বিশ্ববিদ্যালয় কাদের?

সায়ন্তন মাইতি

ওরে বাবা! এত কালো কেন? জুকারবার্গ তো নিজে থেকেই ফেসবুকটাকে নীল-সাদা বানিয়ে রেখেছে। এমএস অফিসের ফণ্টটাও কী সুন্দর নীল-সাদা রঙেরপায়ের তলায় হাওয়াই চপ্পল থেকে মাথার উপর শরতের আকাশ প্রাকৃতিক কী অপ্রাকৃতিক সবই নীল-সাদা। তাহলে ফেসবুক কেন কালো?
কাদের জন্য কালো হল? যারা ক্যাম্পাসে বসে মদ খায়? স্বল্প পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়? যারা কলচর এর মাথা খাচ্ছে? এদের জন্য সবাই কালো করছে প্রোফাইল পিক?
ফেসবুকের কালো আসতে আসতে আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছে ঠিকই। সমাজের কালো এখনো যায়নি। দুই ছাত্রের গ্রেফতার হওয়াকে অনেকে আলো দিশারী ভাবতে পারেন। ভাবতে পারেন আন্দোলনরত ছাত্র বনাম পুলিশের বৈরীতার ঝড় একটু হলেও উল্টো মুখ ঘুরল। ভাবতে পারেন, প্রসঙ্গান্তর করার একটা ব্রহ্মাস্ত্র কর্তৃপক্ষের হাতে চলে এল। কিন্তু আমি ভাবছি, এতে কালির পরিমাণ আরো বেড়ে গেল। প্রমাণিত হল, ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে অবস্থানরত ছাত্রছাত্রীরা কোনো ভুল দাবী করে নি। প্রমাণিত হল, শ্লীলতাহানি বলে দুদিন পরে আসার যে নির্দেশ উপাচার্য দিয়েছিলেন, সেটা তার চরম অযোগ্যতা। প্রমাণিত হল, যে ঘটনাকে অঙ্কুরে বিনাশ না করায় বর্বরতা এত দূর গড়ালো, প্রকৃতপক্ষে সেটা ঘটেছিল। আর সব থেকে বেশি কালি ছিটল শাসকদের মুখে। সিভিল আর মেকানিক্যালের যে দুজন গ্রেফতার হয়েছে, তাদের উপর কোনো রঙের ছিটেফোঁটা নেই। অথচ শাসকদল যেভাবে প্রথমে উপাচার্য, তারপর পুলিশকে সমর্থন করে ঘটনায় রঙ লাগালেন, সেটাকে খাল কেটে কুমীর আনাই বলা চলে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এদের ঢাকতে কি এত বাঁচিয়ে চলা উপাচার্যের? আর যে ঘটনা সত্যি ঘটেছে, তাকে নিয়ে কিছু না বলে দিনের পর দিন উপাচার্য আর সংবেদনশীল পুলিশকে এত সমর্থন কেন শাসক দলের? ২২ তারিখ পাল্টা মিছিলের আগের দিন শিক্ষামন্ত্রী আর শাসক আশ্রিত ছাত্র পরিষদের প্রধানকে নিয়ে নিগৃহীতার বাড়ি যাওয়ার আগে অবধি অ্যাপেল অফ ডিসকর্টকে নিয়ে তো একটা কথাও শোনা যায় নি তাদের মুখে। দুর্বলকে জব্দ করা তো খুব সহজ, তাই নিগৃহীতার বাবাকে পাল্টা মিছিলে টেনে নিতে অসুবিধা হয়নি শাসকদের। কিন্তু সেই মিছিলে হতভাগ্য ভদ্রলোকের একটি মন্তব্য ছাড়া আর কোনো বয়ান, শ্লোগান শুনে কিংবা প্ল্যাকার্ড দেখে মনেই হল না ছাত্রীর শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে আদৌ এরা সরব। একটাই উপজীব্য বিষয়, প্রতিবাদীদে নিন্দা (মিছিলের উদ্দেশ্য না-জেনে পা মেলানো মানুষদের কথা অবশ্য বাদ দিলাম)।
গত ২৪শে সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট কিছু নতুন নির্দেশিকা দিয়েছে। প্রথমে বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই নাকি পুলিশ ক্যাম্প থাকবে। পরে এই নির্দেশ প্রায় সাথে সাথেই পরিবর্তিত হয়ে ভিতর থেকে বাইরে এসেছে। বলা হয়েছে, বহিরাগতদের পরিচিতি না জেনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এইটুকু শুনেই হোক ক্যালানোপন্থীরা আহ্লাদে আটখানা। যেন বীর বিক্রমে ছাত্র আন্দোলন পরাস্ত করা হল। অথচ অনেক কলেজেই এই নিয়ম আছে। বাড়তি কিছু নয় এটা। আমি আমার প্রাক্তন কলেজ স্কটিশচার্চে এখন ঢুকতে গেলেও এতদিনের পরিচিত গেটরক্ষীদের কাছে খাতায় সই করে ঢুকি। আর নির্দিষ্ট জায়গায় বিক্ষোভ দেখানোর আদেশ যে সুন্দর করে লঙ্ঘন করা হয়েছে, তা তো সবাই জানেনই। কর্তৃপক্ষ ২ নম্বর গেট শুধু খুলে দিতেই বাধ্য হয়নি, আন্দোলনকারীদের ছড়িয়ে পড়া আটকাতেও অপারগ। অর্থাৎ, জনরোষের কাছে আইন কিছুই নয়। কোর্টের তলব দরকার হলে পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু অন্যায়ের বিরোধিতার পরিবর্তন হয় না। বহিরাগত ছেড়ে দিলাম, অন্তর্গতদেরও আইডেণ্টিটি কার্ড দেখানো নিয়ম হয়েছে। এ আইনের প্রতিবাদ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। একজন ইংরেজীর অধ্যাপক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিয়েছেন, তিনি পরদিন গেটের কাছে রাস্তার উপর বসে ওনার পরবর্তী ক্লাস নেবেন। তবু ভিতরে ঢুকবেন না। আশা করব, এসব অন্ধ কানুনের শীঘ্রপতন হবে, এর চিরস্থায়ীকরণ একদল মানুষের স্বপ্নদোষ হয়েই থাকুক।
অবশ্য হাইকোর্টের আগেই শিক্ষামন্ত্রী একটার পর একটা সমন জারি করেই চলেছেন। আন্দোলনকারী ছাত্র-শিক্ষক এবং অন্যরা ভয় তো তাতে পায়ইনি, বরং এক একটা উক্তি তাদের আরো তাতিয়ে তুলেছে, শেষ দেখে না ছাড়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী এর মাঝে কমিক রিলিফ দিতেও ছাড়েন নি। ওনার নির্দেশ, উপাচার্যকে পছন্দ না হলে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও ভর্তি হতে পারে। যেন পঠনপাঠনের সুযোগ এমনই এক বিরল প্রাপ্তি, যার ছাড়পত্রের লকেটটা ছাত্রদের সযত্নে ট্যাঁকস্থ করে রাখতে হবে আর পরিচালনতন্ত্র অনুকম্পার দৃষ্টিতে ডিগ্রী ভিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। কী করুণ অবস্থা! .... আসল ব্যাপার কী জানেন? ছাত্ররা পালিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবার হজম দূরের কথা, গলা দিয়ে নামবে কিনা সন্দেহ। সকলের জ্ঞাতার্থে কয়েকটা পুরনো কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। NAAC নিয়ে এই ভিসি-র নাক বেশ উঁচু। NAAC আসার আগে গুচ্ছ টাকা ঢেলে লাইব্রেরী থেকে মেইন গেট ঝকমকিয়েই ছাড়েননি, বিয়ে বাড়ির মত আলো দিয়ে ক্যাম্পাসটাকে সাজিয়েছিলেন। কোন কলেজে এসব ন্যাকামি হয় কেউ জানে না। আবার ন্যাকার্থে সেমিনার ক্যান্সেল হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। জীবনের কোনো বিশেষ দিনেও অভিজিৎবাবুর এত সাজো সাজো রব ছিল কি? তবে এত অবধি তাও না হয় মানা গেল। উনি NAAC-এর পরির্শক কর্তাকে একটা ট্যাব উপহার দিয়ে বসলেন। অনেকেই সেটা ভালো চোখে দেখেনি। তাদের অনুমান সত্যি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথা হেঁট করে ঠিক পরদিন পরিদর্শক সেটা ফেরও দিয়ে দিলেন উপাচার্যকে। এর ইঙ্গিত নিয়ে কারোর মনে সন্দেহ আছে কী? আর তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে এটাও তো স্পষ্ট যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটাস রক্ষার্থে ভিসি কেমন জুজুদর্শন করে বেড়ান। দুর্বলতা তাহলে কোথায়?
হ্যাঁ, এই সফট পয়েণ্টটা ধরিয়ে দিতে চাইছি। ছাত্র পালালে এদের হালুয়া টাইট হয়ে যাবে। বামন হয়ে চাঁদে হাত দিলে হাতের গৌরবের প্রতি অবসেসিভ হওয়াটা স্বাভাবিক। অস্থায়ী উপাচার্য নিজের সিটের জন্য তেমনটাই হয়েছেন। ২৭শে সেপ্টেম্বর যাদবপুরের পরিচালন সমিতি ছাত্রদের বিরুদ্ধে আইন ভাঙার মামলা ঠুকেছে। তাড়াতাড়ি ক্লাস শুরু করার আর্জি জানাচ্ছেন রাজ্যপাল থেকে হাইকোর্ট প্রত্যেকে। এর পিছনে ছাত্রদের যেমন স্বার্থ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। JU এর ট্যাগ ছাত্রদের কাছে যেমন লোভনীয়, তেমনি বিরাজমান গরিমায় ন্যূনতম কালি ছেটাও কর্তৃপক্ষের কাছে জানহানিকর মানহানি। এটা সবসময় মাথায় রাখা দরকার। পুজোর পরেই সেমিস্টার। ছাত্ররা প্ররোচনায় পা দিয়ে হঠাৎ সেই সময় যদি শৈথিল্য দেখিয়ে পিছিয়ে আসে, তাহলে কিন্তু চরম অসুবিধার মুখে পড়বে তারাই। ক্লাস হল না, অথচ পরীক্ষায় বসতে হবে। বরং পরীক্ষা বাতিল হলে সবার হবে। তবু একসাথে সবাই একই অবস্থায় আছি এই চিন্তা কারোর মধ্যে হতাশা আসতে দেবে না। যাদবপুরের ইতিহাসে পরীক্ষা বাতিল এর আগেও হয়েছে। বস্তুত কোনো ক্ষতিই হবে না তাদের। আন্দোলন থাকলে সুড়সুড় করে ব্যবস্থা হবে সেমিস্টারের। আর শিক্ষামন্ত্রীর কথা মেনে নিলে কেউ যদি যেতে চায় যাক না। যাদবপুরের বিখ্যাত এবং বিদগ্ধ অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা ছাত্রদের পাশে আছেন। অন্তত আমি যেটকু জানি, প্রত্যেক ডিপার্টমেণ্টের শিক্ষকরাই এগিয়ে এসেছেন। ছাত্রদের কেরিয়ার তৈরীর জন্য সাহায্য করতেও তাঁরা সবসময় পাশে থাকবেন। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কারোর কেরিয়ার নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে। ....তাহলে ভয় কিসের? ছেড়ে পালাও অন্য কোথাও। বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটি বসে বসে মাইনে পাওয়ার কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নয়। ছাত্র না থাকলে কর্তৃপক্ষ লাটে উঠবে। সেটা তারা ভালোমত জানেও।
তাই ছাত্রদের বারবার অনুরোধ করব, কোনোভাবে পিছিয়ে না আসতে। শাসক আর কর্তৃপক্ষ এখন সমার্থক হয়ে গেছে। ছাত্রদের সাথে লড়াইয়ে জিতে গেলে এদের ঔদ্ধত্যকে আর ঠেকানো যাবে না। এদের বশ করতে পারলে ক্ষমতার অহঙ্কারে এদের নৈরাজ্য বহু গুণ বেড়ে যাবে। ছাত্রদের মূল দাবী ভিসি-র পদত্যাগ। আগে সেটা হবে, তারপর বাকী কথা।

Friday, 26 September 2014

এদিকেও একটু দেখবেন?

এই ভাবে বেঁচে থাকা? 

সঞ্জয় পাঠক 

উত্তম দেবনাথকে কেউ চেনে না। আমরাও চিনতাম না। তাঁকে জানলাম তাঁর মৃত্যুর পর। গত ২১ সেপ্টেম্বর রবিবার বেহালা চন্ডীতলা অঞ্চলের ৩০০ নং মিলের ভিতরের একটি ছোট কারখানার শ্রমিক উত্তম দেবনাথ কর্মরত অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মারা যান। আরেকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ঐ কারখানায় তিনি ১০-১২ বছর পাউডার কোটিং-এর কাজ করছিলেন। মাসিক বেতন পেতেন চার হাজার টাকা। প্রায় প্রত্যেক রবিবার তাঁর মতো সবাইকে কাজে আসতে হত। এর জন্য কোন ওভারটাইম বা আলাদা কোন আর্থিক ব্যবস্থা ছিল না। এখানে প্রায় সব কারখানায় শ্রমিকদের জীবনের কোন নিরপত্তা নেই। শ্রম আইনকে কলা দেখিয়ে ‘মালিকী রাজ’ চলছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য যে ন্যূনতম নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, এখানকার মালিকপক্ষ তার তোয়াক্কা করে না। ফলে, ঘটল উত্তমের মর্মান্তিক মৃত্যু। শ্রমিক পরিবারের পক্ষ থেকে FIR করার জন্য বেহালা থানায় গেলে কার্যত তাঁদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই শ্রমিক পরিবারকে যাতে ক্ষতিপূরণ না দিতে হয়, তার জন্য এখানকার মালিকদের অ্যাসোশিয়েসন ময়দানে নেমে পড়েছে। এর প্রতিবাদে গোটা অঞ্চলে পোস্টার লাগানোর পর কিছু পোস্টার মালিকপক্ষ ভয়ে ছিঁড়ে দেয়। মালিকপক্ষ চেষ্টা করেও বিষয়টিকে চেপে দিতে পারেনি। গতকাল ৩০০ নং মিল সহ কয়েকটি অঞ্চলে দাপিয়ে প্রতিবাদ সভা করে এমকেপি। শ্রমিক পরিবারের লোক এই পথসভায় উপস্থিত ছিলেন। দাবি না মেটা পর্যন্ত লড়াই জারি থাকবে। মালিকপক্ষের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও শ্রমিক পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে ‘হোক হোক কলরব’।

Tuesday, 23 September 2014

অসুর মর্দিনী

শুধুই ঢক্কানিনাদ? 

অর্ধেন্দু আর্য বন্দ্যোপাধ্যায়



আজ মহালয়ার আনন্দমুখর সকাল। অর্থাৎ, প্রকৃতিতে অত্যাচারকারী সত্তার ধ্বংসের জন্য ক্ষমতাশালী নারীশক্তির প্রতি আহ্বান করার দিন। কিন্তু এই প্রথার কি কোনও যাথার্থ্য আজ আছে?
যাদবপুর, কামদুনি, কাটোয়া, গাইঘাটা, পার্ক স্ট্রিট, মধ্যমগ্রাম, বারাসাত, হরিহরপাড়া, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, বানতলা, ধানতলা সহ আরও কত শ্লীলতাহানির নাম যা সংবাদমাধ্যমে আসে না । শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতে - দিল্লী, বদায়ুন, আমেদাবাদ, কোয়েম্বাট্যুর, ব্যাঙ্গালোর, হরিয়ানার জিন্দে সর্বত্র এই বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়েছে । National Crime Records Bureau’এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গে ২০৪০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । নারী নিগ্রহ ৩০৯৪২টি । পশ্চিমবঙ্গ ভারতের শীর্ষে বামফ্রন্ট আমল থেকে। দেড় বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধা সকল বয়সের মহিলারাই ধর্ষণকান্ডের শিকার হয়ে চলেছেন । মহিলাদের প্রতি domestic violence ও human trafficking’এর কথা যদি ছেড়েও দিই তবে এই যে অদ্ভুত অবস্থা সারা ভারতে আজ কঠোর বাস্তব তার কথা ভুলে গিয়ে পটকা ফাটিয়ে হুল্লোড় করে মহালয়া পালন করতে বিবেকে যন্ত্রণা হয়।
এখানে আমি rape victimদের জীবনের কয়েকটি কথা বলতে চাইছি আজকের মাতৃপূজার সূচনালগ্নে। একজন ধর্ষিতা মানুষ পরবর্তী তিনটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে তবেই ন্যায়বিচার পেলেও পেতে পারেন আমাদের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় – পুলিশ, হাসপাতাল, আদালত। এছাড়াও থাকে বৃহৎ সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই।
দায়িত্বে পুলিশের ভূমিকা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে যা হয় তা হল FIR লেখাতে না চাওয়া, বিচারপ্রার্থীকে মানহানিকর কথা বলা, ভয় দেখানো এবং আপোস করে নিতে বলা। শামিনা শাফিক যিনি জাতীয় মহিলা কমিশনের একজন সদস্যা তাঁর মতে এটা হয় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে। উদাহরণ হিসেবে একটা ঘটনার কথা মনে করাতে চাই। বিহারের সমস্তিপুর থেকে আসা একটি পরিবারের ১৩ বছরের মেয়েকে মধ্যমগ্রামে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সাতজন মিলে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করে । পুলিশে রিপোর্ট লেখাতে গেলে দিনভর বসিয়ে রাখা হয় কিন্তু রিপোর্ট লেখা হয় না । এই মেয়েকে আবার ঐ লোকগুলো ধর্ষণ করে কারণ তারা পুলিশের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু এইবারেও তাঁদের রিপোর্ট লেখা হল না । ভয় পেয়ে এই পরিবার চলে গেল এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় । ২৩শে ডিসেম্বর ধর্ষকদের একটি দল এই মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে জীবন্ত আগুনে জ্বালিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে । এরপরে পুলিশ কী করে ? ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ মেয়েটির জবানবন্দী থেকে সবকিছু জানার পরেও ফরেন্সিক দল ডাকে না, তথ্যপ্রমাণ রক্ষার জন্য ঘটনাস্থল সিল করে না, কিশোরীর দেহের টিস্যু তদন্তের জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠায় না। তবে আশার কথা, শেষমেশ মেয়েটির পরিবার বিচার পেয়েছে এবং অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
দ্বিতীয় হল হাসপাতাল যেখানে Medical Test হয় প্রমাণ সংগ্রহের জন্য । ডাক্তারি শিক্ষার দ্বিতীয় বর্ষে ফরেন্সিক পড়ানো হয় কিন্তু এমনভাবে তা হয় যেন তা শুধু কয়েকটি নম্বরের প্রশ্ন । এছাড়া আর কোন কোর্স নেই । ডাক্তারি শাখায় বলা হয়েছে যে এই ধরনের ক্ষেত্রে Victimকে সন্দেহের চোখে দেখতে হবে নইলে সে তোমাকে ফাঁসাতে পারে । যেখানে শারীরিক চিকিৎসা ছাড়াও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এই মানুষটিকে সমবেদনা জানিয়ে সুচিকিৎসা করার দরকার সেখানে প্রথমেই সে ডাক্তারের কাছে সন্দেহের বিষয়। অনেক ডাক্তার তো এদের রুগী বলেই মনে করে না শুধু যেন তথ্যপ্রমাণ, ঘৃণার নজরে দেখে। ফলে অত্যাচারিতের প্রতি যে ব্যবহার করা হয় তা মর্মান্তিক ও অমানবিক, যেন সেই অপরাধী। ডাক্তাররা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মনে করেন যে যৌনাঙ্গের পরীক্ষা করাই যথেষ্ট কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যেমন পায়ুধর্ষণের ব্যাপার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এছাড়া সারা শরীরের ক্ষতগুলির কোনও অন্তর্ভূক্তিকরণ হয় না ফলে এই তথ্য যখন আদালতে যায় মনে হয় যেন Victimএর সম্মতি ছিল । এই যে ধর্ষণের পরীক্ষা তারও কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম আমাদের দেশে নেই। তাই বিভিন্ন ডাক্তার বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। যেমন বর্তমানে আইনত two finger test নিষিদ্ধ হলেও অনেকে তা করে চলেছেন। অনেক ক্ষেত্রে সিনিয়র ডাক্তার অত্যাচারিতকে গিনিপিগের মত ব্যবহার করে ছাত্রদের দেখান কিভাবে পরীক্ষা করতে হয়।
শেষে আসে আদালত। National Crime Records Bureauএর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে আদালতে Pending Cases হল ১,০১,০৪১ যার মধ্যে বিচার হয়েছে ৩৫৬৩টি ক্ষেত্রে । ১১৪৪৬টি কেস তুলে নেওয়া হয়েছে এবং ৮৬০৩২টি কেস বিচারাধীন। অর্থাৎ, শাস্তি পেয়েছে ৩.৫ শতাংশ। এটা যদি বিগত ১০ বছরে দেখি তাহলে সংখ্যাটা কোথায় যাবে তা বোঝা যায় অনায়াসে।
দেশের ক্ষমতা যাদের হাতে আমরা ভোটব্যবস্থার মাধ্যমে তুলে দিয়েছি তাঁদের প্রতিক্রিয়া দেখাটাও জরুরী । পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বানতলাতে প্রতিক্রিয়া - এমন তো কতই ঘটে । বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ তো ছোট ঘটনা । উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব বলেন, গুগল খুলে দেখতে । মুলায়ম সিংহ যাদব বলেন, ছেলেরা তো ছেলেই, ভুল করে মাঝে মাঝে ধর্ষণ করে ফেলে, তার জন্য ফাঁসি দেবার কী আছে ? মহারাষ্ট্রের আর আর পাতিল বলেছেন, যেহেতু গণমাধ্যমে অশ্লীলতা বাড়ছে তাই প্রতিটি বাড়িতে পুলিশ বসালেও ধর্ষণ রোখা যাবে না। মধ্যপ্রদেশের বাবুলাল গাউর বলেন, ধর্ষণ মাঝে মধ্যে সঠিক কাজ । ছত্তিশগড়ের রামসেবক পাইক্রা বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ধর্ষণ করে না, মনের ভুলে করে ফেলে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম ধর্মগুরু আশারাম বাপু দিল্লীর ঘটনায় মেয়েটিকেও দায়ী করেন। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, ইন্ডিয়াতে ধর্ষণ হয়, ভারতে হয় না।
আজকের দিনে আমাদের দেশে যেখানে মেয়েদের এই দশা সেখানে মহালয়া পালন করে ১২ কোটির হীরের প্যান্ডেল নির্মাণ করা কোন মানবিকতার পরিচয়? নারীকে পূজা করতে হলে আগে মনুষ্যরূপী নারীকে করা দরকার পরে মূর্তিরূপী। নয় কী? আজ সকাল থেকে ১৫টা চ্যানেল ১৫ রকমভাবে দেবী আগমন দেখাবে। খবরের চ্যানেল আজ সকালে ভুলে যাবে সব কথা, বসিয়ে দেবে বাঁজা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে টিভির সামনে হারমোনিয়াম নিয়ে, বাজাও কীর্তন বাজাও কাঁসর আমাদের মহান সংস্কৃতির। আমারা সাধারণ জনগণ পুব্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে বেড়াব যেখানে জীবনের সত্তা প্রতিদিন লাঞ্ছিত হচ্ছে তাদের ভুলে গিয়ে ।
নীরদ সি চৌধুরী তাঁর A Sterile Intelligentsia প্রবন্ধে লিখেছেন ,
Without a frank recognition of the failure, no change in the direction of improvement can come about.
কীসের ব্যর্থতা ? তিনি বলেন,
For something like seven hundred years, we had been yearning for political independence and power, and it came to us then. The realization of such an aspiration alone should have released sufficient energy and idealism to bring about a regeneration and reconstruction of our life. It should be added that until 1920, no Indian nationalist leader thought that this task was less urgent and necessary than the attainment of freedom from foreign domination. But by the time independence came, that awareness had disappeared. So we got the opportunity, but failed to make use of it.
এ প্রসঙ্গে আমাদের বুদ্ধিজীবী মহল ও আমাদের সম্পর্কে তাঁর ধারনা কী জানা দরকার -
It is throwing the blame on the leaders, on the politicians, on the parties… This reluctance to shoulder the blame is, in itself, significant. Stubborn reluctance to accept responsibility is always seen in weak character, who have lost self-confidence. In British days, the Indian intelligentsia was both assertive and creative. It has become almost wholly sterile today, and wholly defeatist. The member of the class are retiring more and more into private life, turning their back on public affairs, so that even public affairs have become a money-making racket for just adventurers…
মানতে কষ্ট হলেও সত্যি অস্বীকার করার দুঃসাহস মনে মনে কেউ দেখাতে পারবে কী? যেখানে ব্যবস্থাটাই পচে গেছে সেখানে প্রতিবাদের সঙ্গে পুনর্গঠন করার ভাবনাও রাখা দরকার । যাই হোক, আমি কোন হরিদাস পাল জ্ঞান দেবার । আমি শুধু একটা অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
আজ মহালয়া । আজ থেকে ১ বছর আগে এই দিনে আমার ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম । সে দিন থেকে আজ অবধি যা যা অনুভব করেছি তাই লিখেছি প্রায় প্রতি মাসে, কিছু মাস লিখতে পারিওনি । এই সময়কালে অনেকজন শুভেচ্ছা দিয়েছেন অনেকে সমালোচনা করেছেন আর বেশীরভাগ জন পড়ে দেখেনি । যদিও গুরুতর কিছু লেখা আমি এখানে লিখিনি, ছোটখাট অনুভূতি মাত্র । আজও একটা অনুভূতি থেকেই লিখছি তবে এটা আগেরগুলোর থেকে একটু আলাদা আর একটু গুরুত্বপূর্ণ । আমি মনে করি এই ইন্টারনেটের মাধ্যম থেকে যেটুকু সামাজিক পরিসর পাওয়া যায় তাকে ব্যবহার করা দরকার কিন্তু সঙ্গে এও মনে করি যে এই মাধ্যমে প্রকৃত commitments থাকে না। তাই যোগাযোগ ও সামান্যতম মত গঠনের যে সুযোগ পাচ্ছি তার নির্যাসটুকু নিচ্ছি। স্বাধীন ভারতের নাগরিকগণ একটু ভেবে দেখুন !

Saturday, 20 September 2014

The Student Power - More on Jadavpur

The Morning Deluge!

Anindya Bhattacharya



It was an unprecedented rally today. 30,000, 40,000, 50,000 – how much was the participation? How to count when you are in the midst of a sea!
It was all-out a students’ carnival – led by the `students.
When did Kolkata last observe such a colossal gathering by the students only? I asked many a person – nobody could really answer!
On 14 November 2007 Kolkata did see a mammoth rally against the brutal killing of peasants in Nandigram by the then government but that was a citizens’ rally. Today the students marched through the streets by their own power and strength.
The message was clear – brute force of the state can’t suppress your voice and dignity.

Out of all, as a participant in this rally I firmly believe, the central point of this enormous movement – Justice for the molested girl in JU - would affirm.

Friday, 19 September 2014

হোক কলরব




কলরবের দলরব

পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়

আশায় বুক এবং বিরক্তিতে কোমর বেঁধে কলকাতা আবার পথে নেমেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সরব শহুরে মধ্যবিত্ত। স্লোগানে, মিছিলে, গানে উত্তাল পথঘাট, ক্যাম্পাস, বৈঠকখানা, ফেসবুক, ট্যুইটার। #hokkolorobহ্যাশট্যাগ গত দুদিনে সোশ্যাল মিডিয়া চত্বর কাঁপিয়ে দিয়েছে। এসবই খুব আশার কথা। চলতি নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমজনতা এবং কচিকাঁচাদের শীতঘুম ভেঙ্গে রাস্তায় নামতে দেখলে রক্ত গরম হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এইসব তালগোল হইচই-এর মধ্যে মূল ইস্যুটা আড়ালে চলে যাবার সম্ভাবনাটাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আরও যেটা চিন্তায় ফেলেছে সেটা হ বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের উস্কানি এবং আগ্রহ, এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবার। লাইমলাইটলোভী হাওয়ামোরগ সুশীলেরা ইতিমধ্যেই ছাত্রদের পায়ে পা এবং সুরে সুর মিলিয়ে পথে ও চ্যানেলে হাজিরসকলেই ছাত্রদের ওপর পুলিশি হামলার ও ভিসি অভিজিৎ চক্রবর্তীর নিন্দায় সরব। এমনকি যে মিডিয়া এতদিন শ্লীলতাহানির বিষয়টাকে একেবারেই আমল দেয়নি, তারাও হঠাকরে হাতে গরম ছাত্র পেটানোর visuals পেয়ে হই হই করে মাঠে নেমে পড়েছে। বিরোধীরাও ঘোলাজলে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে খ্যাপলা বাগিয়ে তৈরি।
এই সুযোগে আসুন আমরা একটু গোটা ব্যাপারটা ঝালিয়ে নিই। বেনোজল ঢোকার আগেই।
যে মেয়েটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিল, তাঁর এবং যাঁদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, সেইসব ছাত্রের রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে গোটা ঘটনার তদন্ত হোক। তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক আইন মেনে। ভিসি’র খেয়ালখুশি মতো নয়। কমিটি রিপোর্ট জমা দেবার আগে অভিযুক্ত অথবা অভিযোগকারীর সম্বন্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করার মতো অনৈতিক কাজ থেকে কমিটি সদস্যদের, ছাত্রদের এবং মিডিয়ার বিরত থাকা উচিত। এবং অবশ্যই, প্রশাসক হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয়দেবার জন্য ভিসি অভিজিৎ চক্রবর্তীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
বিশেষ সতর্কবার্তা – মিছিল-প্রিয় ক্যামেরাভোগী রাজনৈতিক নেতা ও সুশীলদের থেকে দূরে থাকুন। এঁরা সুবিধাবাদ ও দ্বিচারিতার পরাকাষ্ঠা। নিজের স্বার্থের বাইরে কিচ্ছু বোঝেন না। যে কোনওস্বতঃস্ফূর্ গণ আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ক্ষীরটুকু খেয়ে বেরিয়ে আসায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেছেন।
ছাত্রদের বলছি, “এঁদের থেকে সাবধান! সাবধান! সাবধান!”